
অক্টোবর ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে আমেরিকার কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশন এজেন্টরা আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে ৬,৫০০ এরও বেশি চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এই সংখ্যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ১৫ গুণেরও বেশি।
চীনা নাগরিক যারা চীন থেকে পালাতে চায় তাদেরকে ল্যাটিন আমেরিকা হয়ে আমেরিকা আসতে একটি দীর্ঘ, ব্যয়বহুল এবং কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়।
চীন থেকে আমেরিকাতে আসতে চীনাদের ২,৩০০ মাইল পারি দিতে হয়। প্রথমে তারা চীন থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে বিমানে করে আসে। তারপর সেখান থেকে ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ হয়ে মেক্সিকোতে আসে। চীন থেকে ইকুয়েডর হয়ে মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে আমেরিকাতে প্রবেশ করতে এজেন্টরা প্রতি জন চীনার কাছ থেকে ৬০ হাজার ডলার করে নেয়।

কম অর্থ সম্পন্ন চীনা নাগরিকরা সাধারণত ৭ থেকে ১০ ডলার খরচ করে। তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক কিছু এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে দারিয়েন গ্যাপ জঙ্গল এবং মেক্সিকোর কুখ্যাত হাইওয়ে ১০১ যা "মৃত্যুর মহাসড়ক" নামে পরিচিত। চীনা অভিবাসীরা প্রায়ই গাড়ি জ্যাকিং, ডাকাতি, যৌন নিপীড়ন এবং অন্যান্য সহিংস অপরাধের শিকার হয়।
অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণে চীনা নাগরিকরা দীর্ঘ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পথ পারি দিয়ে আমেরিকাতে আসে। ২০১২ সালে শি জিনপিং ক্ষমতায় এসে চীনের নাগরিকদেরকে উন্নয়নের স্বপন দেখাতে শুরু করেন। এতে চীন থেকে আমেরিকাতে অবৈধ অভিবাসন কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ধীরে ধীরে চীনারা বুঝতে পারে চীনা স্বপ্ন আসলে দুঃস্বপ্ন।

মাও সেতুং-এর পর শি হচ্ছেন সবচেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় স্বৈরশাসক। তিনি জাতিগত সংখ্যালঘু, ধর্মীয় বিশ্বাসী, রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণকারী এবং দলীয় কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে দমন করেছেন। তিনি চীনা জনগণের চিন্তাভাবনা এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চীনের প্রতিটা নাগরিকের উপর নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছেন।
চীনারা আশায় আশায় ছিল যে দুই মেয়াদের পর শি এর শাসনের অবসান হবে। কিন্তু শি সংবিধান পরিবর্তন করে তৃতীয় মেয়াদে আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। এতে চীনারা হতাশ হয়ে গেছে।
অধিকাংশ চীনা জনগণ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিনিময়ে সীমিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নজরদারি বাড়ানোর কারণে এবং অনেক ভুল নীতির কারণে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য ভাবে মন্থর হয়েছে গেছে।
সফল চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিরুদ্ধে চীনের ক্র্যাকডাউন বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে এবং উদ্যোক্তাদের মনোবল নষ্ট করে দিয়েছে। সম্পত্তির বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে চীনের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পতন হয়েছে। যে সব চীনা নাগরিক তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এপার্টমেন্ট বা সম্পদ কিনেছিল তারাও পথে বসেছে।
চীনের কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার স্থবির হয়ে পড়েছে এবং ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী লোকদের বেকারত্বের হার ২০.৪% এ পৌঁছেছে।
রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব অনেক চীনাকে চীন ছেড়ে চলে যাওয়ার প্ররোচিত করেছে। আগে উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা স্বাধীনতার জন্য চীন ছেড়ে আমেরিকায় পারি জমাত। এখন মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ চীনা নাগরিকদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
যদিও অবৈধ চীনা অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আমেরিকার সীমান্ত সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে, তারপরেও অনেক নীতিনির্ধারক এটাকে চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার একটা সুযোগ বলে মনে করে।
শীতল যুদ্ধের সময় কিউবান অভিবাসীদের সাথে বিশেষ আচরণের প্রস্তাব দিয়ে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমেরিকার অভিবাসন নীতি ব্যবহার করা হয়েছিল। আমেরিকার অর্থনীতিতে অসাধারণ অবদান রাখার পাশাপাশি অনেক কিউবান অভিবাসী আমেরিকার সবচেয়ে সোচ্চার কমিউনিজম-বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
কিউবার রাজনৈতিক উদ্বাস্তুদের সমর্থন করার লক্ষ্যে আমেরিকার অভিবাসন নীতির ঐতিহাসিক শিক্ষাটি আজকের চীনা অভিবাসীদের জন্য প্রয়োগ করা আমেরিকার স্বার্থের পক্ষে।

ভবিষ্যতে চীনাদের জন্য আমেরিকার অভিবাসন নীতি আরো সহজ এবং উদার করা হলে সহজেই অনেক চীনা চীন ছেড়ে আমেরিকাতে চলে আসবে। এতে আমেরিকা আরও বেশি উৎপাদনশীল এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক লাভ করবে এবং সেই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করবে।
চীনা আমেরিকানরা যখন আমেরিকার পতাকা নেড়ে এবং আমেরিকার বিধান রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিবে তখন চীন সহ বিশ্বে এই বার্তাটি যাবে যে আমেরিকান স্বপ্ন বেঁচে আছে এবং আমেরিকা স্বাধীনতা-প্রেমী মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


