
রাষ্ট্রের নাগরিকরা বলছে কালো টাকার উপর ১৫% কর এবং বৈধভাবে উপার্জিত আয়ের উপর ৩০% কর ধার্য করা হয়েছে—এটা অন্যায়, জুলুম এবং অবিচার।
তাহলে কি কালো টাকার উপর ৩০% এবং সাদা টাকার উপর ১৫% কর হলে ন্যায্য হতো? কালো টাকার উপর যত কর ধার্য করুক না কেন তা কোন অবস্থাতেই ন্যায্য এবং বৈধ হবে না।
প্রকৃতির বিধান এবং লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্সের সর্বসম্মত নীতি হলো, কোনো অবৈধ, বেআইনি বা অনৈতিক কাজকে বৈধ কাজ হিসাবে গণ্য করা বা স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। অন্যায়কারীকে তার অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হবে; ক্ষেত্র বিশেষে অপরাধীকে ক্ষমা করা যেতে পারে। কিন্তু অপরাধমূলক কাজকে বৈধতা দেওয়া যাবে না।
অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যে নাগরিকদের কালো টাকার মালিকদের উপর কোনো রাগ নেই। অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করার ব্যাপারেও তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তাদের অভিযোগ হচ্ছে বা বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, সাদা টাকার মালিকরা কালো টাকার মালিকের চেয়ে বেশি কর দেবে কেন?
যারা অবৈধভাবে কালো টাকা উপার্জন করে, যারা কালো টাকাকে বৈধ করার উপায় বের করে দেয়, যে আইন প্রণেতাগণ এই ধরনের আইন পাশ করে, যে অর্থনীতিবিদগন এই নীতিকৌশল সমর্থন করে এবং যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই নীতি সমর্থন করে তারা অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় জন্মগত অপরাধী।
জন্মগত অপরাধী আইন প্রণেতা:
অবৈধ কাজকে বৈধতা দেওয়ার কাজটি করেছে আইন প্রণেতাগণ। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স অনুসারে কোনো বিদ্যমান অপরাধকে আইন প্রণয়ন করে বৈধতা দেওয়া যায় না। তাছাড়া অপরাধ সংক্রান্ত আইনকে রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট দেওয়া যায় না। অর্থাৎ আজকে যে কাজটা বিদ্যমান আইনে অপরাধ, সেটাকে আগামীকাল বৈধ বলে গতকালের কাজকে বৈধ বলা যাবে না। এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তারা সবাই লিগ্যাল জুরিসপ্রুডেন্স এবং ক্রিমিনোলজির সংজ্ঞা অনুসারে জন্মগত অপরাধী।
জন্মগত অপরাধী অর্থনীতিবিদ:
একদল জন্মগত অপরাধী অর্থনীতিবিদ ব্যাপক গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন যে যদি কালো টাকাকে করের আওতায় এনে সাদা করা যায় তাহলে এই কালো টাকা দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখবে। অর্থনীতির দৃষ্টিতে এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ ভুল এবং অবান্তর। আমি অর্থনীতিবিদ নই তাই অর্থনীতির আলোকে আলোচনা না করে এই দুর্বৃত্তদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
কোন অর্থনীতিবিদ কোনো অনৈতিক বা বেআইনি কাজকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপায় হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন না। যে চোরাকারবারি করে সেও তো কারবারি মানে ব্যবসায়ী, কিন্তু তার পরিচয় চোরাকারবারি। যে ওজনে কম দেয় সেও তো দোকানদার, কিন্তু তার পরিচয় অসাধু ব্যবসায়ী। এইসব অসাধু মাধ্যমেও অর্থনীতির কিছু অবদান রাখতে পারে, কিন্তু এজন্য কোনো অর্থনীতিবিদ এই নীতিকে সমর্থন করবেন না।
জন্মগত অপরাধী নাগরিক:
নাগরিকদের ক্ষোভ ১৫% আর ৩০% নিয়ে। কালো টাকা এবং কালো টাকার মালিকদের নিয়ে তাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমি মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও এমন কোনো লেখা পাইনি যেখানে বলা হয়েছে ১৫% না ১০০% কর দিলেও কালো টাকাকে কালো টাকা হিসাবেই গণ্য করতে হবে। কালো টাকা কোনো অবস্থাতেই সাদা বা বৈধ হবে না। প্রতিটি কালো টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে এনে কালো টাকার মালিককে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে।

সারসংক্ষেপ:
কালো টাকা, কালো টাকার মালিক, যারা কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে, যেসব অর্থনীতিবিদ এই অবৈধ ব্যবস্থাকে তাত্ত্বিকভাবে সমর্থন করেছেন এবং যারা যেকোনো যুক্তিতে অবৈধ কালো টাকাকে সমর্থন করছে, তাদেরকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃণা করুন। এই সম্পদের মালিক রাষ্ট্রের জনগণ। পৃথিবীতে এমন কোনো আইনি প্রক্রিয়া বা নীতিমালা নেই যাতে কালো টাকা সাদা হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




