somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম ভালোলাগা ইউ.এস.এ তে

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমার প্রথম ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স হলো ইউ.এস.এ তে। এক সপ্তাহ আগে লারনার্স পারমিট পেলাম, তাই ভাবলাম বেশি দেরি না করে ড্রাইভিং শিখি, কেননা ক্যালিফোর্নিয়াতে বাস ট্রানসিট / রুট আমার জন্য তেমন সুবিধাজনক না। নিজের গাড়ি না থাকা মানে হয় ট্রানজিট অথবা অন্য কারো উপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। আর এখানে প্রায় সবাই পার্সোনাল গাড়ি ব্যবহার করে। দুমাস হলো কাজ নিয়ে এখানে এসেছি। গাড়ি না থাকায় যে কি সমস্যা হচ্ছে টের পাচ্ছি। বাজার করা, ঘুরা ফিরা করা ভীষন কস্ট নিজের গাড়ি না থাকলে। তাই একটা ড্রাইভিং স্কুল এ এডমিট হলাম ১০ ঘন্টার চুক্তিতে $399 দিয়ে।

যাক প্রথম দিন মানে আজকেই আমার ফার্স্ট লেসন ছিলো। যথারীতি আমার ইন্সট্রাকটর মহোদয় সময়মত আমার অ্যাপার্টম্যান্ট এ এসে আমায় নিয়ে বের হলো। গাড়িতে বসেই প্রথম ধাক্কা। বাম পাশে ড্রাইভিং হুইল। দেশে টুকটাক যা গাড়ি ড্রাইভ করেছি তা যে এখানে কাজে আসবে না তা বুঝে গেলাম। তো আমার ইন্সট্রাকটর আগে তার পরিচয় দিল। তার নাম রন, প্রাক্তন শিক্ষক একটা স্কুলের (বায়োলজি ও কেমিস্ট্রির)। ভাবলাম না জানি আজকে কোন ইকুয়েশন এর মধ্যে পড়ি বাবা গাড়ি চালাতে গিয়ে। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়েই বুঝলাম ভদ্রলোক যথেস্ট অমায়িক এবং মিশুক। গাড়ি চালাতে চালাতে ইনস্ট্রাশনের পাশাপাশি আমরা গল্প করছিলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম আমি যখন বল্লাম আমি বাংলাদেশি। সে শুনেই বল্লো ও ইন্ডিয়ার পাশে তোমাদের দেশ। আমি বুঝলাম সে আগেও বাংলাদেশের নাম শুনেছে হয়তো। সে নিজেই আগ্রহ দেখিয়ে বল্লো যে, তোমরা কিভাবে ফসল ফলাও, সিজনের উপর ডিপেন্ড করো কিনা? বলে রাখি ভদ্রলোক সরকারি এগ্রিকালচার অফিসে ফুড এনালিস্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। আর আমার বাবাও বাংলাদেশে একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে। সুতরাং কিছুটা হলেও আলাপ জমাতে পারলাম এই ব্যাপারে। একপর্যায়ে সে আমাকে বল্লো তুমি কি এই দেশে গ্রীণ কার্ড নিয়ে এসেছ কিনা, আমি বল্লাম না এবং করতেও চাইনা আপাতদৃস্টিতে তাই মনে করছি। সে বল্লো, কেন থাকতে চাও না? আমি বল্লাম দেখ, আমরা আসলে দেশ / মায়ের কাছে থাকতে পছন্দ করি। আর সেটা আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখি। তাই দেশের জন্য একটা অন্যরকম ফিলিংস কাজ করে। যদিও জানি আমরা হয়তো দেশের জন্য প্রত্যক্ষ সহায়তা করতে পারিনা, তারপরও কেন জানি এটা কাজ করে আমাদের মধ্যে। আমাদের কালচারটাই এমন যে, সবসময় আত্মিয় স্বজনদের চারপাশে থাকতে পছন্দ করি। সে শুনে খুব খুশি হলো। বল্লো, তোমরা এশিয়ানরা আসলে খুব হৃদয়বান মানুষ। তারপর প্রসঙ্গক্রমে তাকে আমাদের স্বাধীনতার কথা বল্লাম। সে খুব অবাক হয়ে বল্লো তোমরা শুধুমাত্র ভাষার জন্য যুদ্ধ করে স্বাধীন হইছো? আরও একটা কথা সে বল্লো যা হলো: You guys are really sensitive and proud then. কথাটা আমার মনে ধরল খুব, চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। খুব গর্ব করে বললাম, হে আমরা তাই। ছোট দেশ কিন্তু আত্মসম্মানবোধ ও দেশের স্বাধীনতার চেতনাবোধ ভীষণ আমাদের। এভাবে সারাক্ষন কথা বলে বলে ড্রাইভিং করলাম পাক্কা দুঘন্টা।

আমাকে নামিয়ে দেবার সময় বলল, পরবর্তী লেসনেও উনি আমার ইন্সট্রাকটর হতে চান। আরও কিছু শুনতে চান বাংলাদেশ সম্পর্কে। আমিও বল্লাম আমি ফোন করে আপনার শিডিউলেই সময় চাইব আপনার অফিসে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:২১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×