‘এখন এই প্রশ্নের মূল্য নেই’
জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক দিন ধরেই, ছিলেন সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরেও। জিম্বাবুয়ে সফর এবং এই সফর শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা হচ্ছে, সেসব নিয়েই কথা বলেছেন তানজীব আহসান সাদ
জিম্বাবুয়ে সিরিজে আপনি ম্যানেজার ছিলেন। এই সিরিজের পর যা হচ্ছে, নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না?
তানজীব আহসান সাদ: আমি কিন্তু গত বিশ্বকাপের পরই বলেছিলাম, আমি আর ম্যানেজার থাকব না। ২৫ মার্চ আমার চুক্তি শেষ। বিশ্বকাপের পরপরই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থাকায় বোর্ড থেকে আমাকে অনুরোধ করা হলো ওই সিরিজেও ম্যানেজার থাকতে। জিম্বাবুয়ে সফরেও একই ব্যাপার ঘটল। আমি ম্যানেজার হতে চাইনি। কিন্তু যাওয়ার ১০-১২ দিন আগে থেকে আমাকে তারা বলা শুরু করল, এই সিরিজের পরই নাকি নতুন ম্যানেজার নেবে। আমি যেন অন্তত এই সিরিজটা করে দিই। যাওয়ার তিন কি চার দিন আগে আমি কিছু লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছি।
কিন্তু বিসিবি থেকে বলা হয়েছিল, জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর সাকিব-তামিমের মতো আপনাকেও অপসারণ করা হয়েছে...
তানজীব: না, ঠিক না। বোর্ডও তো পরে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়েছে, আমাকে অপসারণ করা হয়নি।
ম্যানেজার হিসেবে দলটাকে অনেক দিন ধরেই কাছ থেকে দেখছেন। মাঠের বাইরে তাঁদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
তানজীব: যেসব অভিযোগ এসেছে, কোনোটাই দলের ভেতরের সমস্যা নয়। সব বাইরের। দলের ভেতরে কোনো গন্ডগোল নেই। যত দিন একসঙ্গে ছিলাম, দলের প্রত্যেকের সঙ্গ আমি দারুণ উপভোগ করেছি। আমাদের প্রতিটি ছেলেই খুব ভালো, শৃঙ্খলাপরায়ণ।
কিন্তু তার পরও তো অভিযোগ উঠছে...
তানজীব: কোনটা, কোনটা? কোন অভিযোগ...?
এই যে বলা হচ্ছে, কোচের সঙ্গে তামিমের তর্ক বা কর্মকর্তাদের ড্রেসিংরুমের বাইরে থাকতে বলা...
তানজীব: আপনি একটু দেরি করে প্রশ্নটা করলেন। এখন আর এই প্রশ্নের কোনো মূল্য নেই। কোচ নিজেই এসবের স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিয়েছেন।
সাকিবের মাঠের বাইরের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনার অভিজ্ঞতা কী?
তানজীব: এবারেরটাই বলি। এবার সাকিব ওয়াজ মোর দ্যান এক্সেলেন্ট। তাকে দেখেছি খেলোয়াড়দের নিয়ে মিটিং করতে। আর সাকিব খেলোয়াড়দের সঙ্গে মেশে, কথা বলে। এখন একটা ২২-২৩ বছরের ছেলে তো আমার-আপনার মতো হবে না। ওদের আলাপ-আলোচনা, কথার ধরন, উচ্ছ্বাস—সবই অন্য রকম হবে। ম্যানেজার হিসেবে আমি দারুণ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছি তার কাছ থেকে। সাকিব সব সময়ই মিডিয়ার সঙ্গে কম কথা বলতে চাইত। এবার সে নিজ থেকে আগ্রহী হয়ে কথা বলেছে। অনেক পরিবর্তন দেখেছি তার মধ্যে এবার।
অভিযোগ আছে, সাকিব-তামিম আত্মকেন্দ্রিক। অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেন। আপনিও কি তাই বলবেন?
তানজীব: আপনার সব সহকর্মীর সঙ্গে কি আপনার এক রকম সম্পর্ক? হ্যাঁ, সাকিব-তামিমের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব থাকতে পারে। তার মানে এই না যে বাকিরা একদম আলাদা।
তাহলে সিরিজ হারের পর ক্রিকেটীয় ব্যর্থতার কথা বাদ দিয়ে এসব আলোচনাই কেন আসছে?
তানজীব: পত্রিকায় তো আসলে এগুলো নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছে। সফরের সময় ওখানে বসেই এসব জেনেছি। সাকিব সম্পর্কে, তামিম সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে বা অন্য খেলোয়াড়দের সম্পর্কে...।
আপনার কি ধারণা মিডিয়ায় এসব আসাতেই বোর্ড সাকিব-তামিমকে নেতৃত্ব থেকে সরাল?
তানজীব: সবচেয়ে ভালো হতো বোর্ড যদি এসব তদন্ত করে দেখত। কেউ একজন বলল আর সেটা ফতোয়ার মতো মেনে নেওয়া ঠিক হয়নি। তদন্ত করলে আসল জিনিসটা বেরিয়ে আসত—কেন আমরা খারাপ করলাম?
সফর নিয়ে তো আপনিও একটা রিপোর্ট দিয়েছেন। আপনার রিপোর্টে এসব বিষয়গুলো কীভাবে এসেছে?
তানজীব: আমি আমার রিপোর্ট নিয়ে কিছু বলব না। অন্যদের রিপোর্ট পত্রিকায় আসায়, বোর্ডের আগে সবাই জেনে যাওয়ায় আমি নিজেই বিস্মিত।
ছয় মাসের মধ্যেই আবার নতুন অধিনায়ক আসছে। সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবির এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখেন?
তানজীব: সত্যি বলতে কি, ওরা ভালো করছে না খারাপ করছে সেটা বুঝে ওঠার আগেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলা হলো। বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়েতে কতটা খারাপ করেছে, কেন খারাপ করেছে এগুলোও বিবেচনা করতে হবে। সব দোষ কি তাদেরই নাকি আমাদেরও কিছু দোষ ছিল, এসব ভেবে দেখা দরকার ছিল।
সূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-09-11/news/184726