somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

--- ভ্যাঁ দিবস ---

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[একটি সাধু-চলিত মিশ্রিত ব্যর্থ রম্য প্রয়াস]






গুণীজনেরা কহেন, “ভালবাসা ভাল নহে, ইহা দেহ এবং মন উভয়ের জন্য পীড়াদায়ক।” মনের জন্যে পীড়াদায়ক বুঝিলাম, কিন্তু দেহের জন্য কিভাবে? যেই বালক মনের আকুলবিকুল ভালবাসা প্রকাশ করিতে গিয়া স্বীয় কপোলে পঞ্চ অঙ্গুলীর ছাপ নিয়া ফিরিয়াছে ইহা কেবলমাত্র সেই বুঝিবে এবং মর্মে মর্মে অনুধাবন করিবে। তাহার পরেও মনুষ্য প্রজাতি ভালবাসিয়া যায় এবং বাসিতে বাসিতে অর্থ-সম্পদ সমস্তকিছু হাস্যমুখে বিসর্জন দেয়। এক্ষেত্রে পুরুষের যায় অর্থ আর নারীর যায় সম্পদ। উভয়েই সব হারাইয়া আবার নতুন করিয়া বাঁচিয়া উঠে। কিন্তু নিতান্তই আফসোসের বিষয়, এই নতুন জীবনে দেহ-মন সবকিছুই তাহারা পায় শুধু আর ‘মজা’ পায় না।



ভ্যাঁ দিবসে কতিপয় মানুষ একত্রিত হইয়া ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিবে, ইহা আর নতুন কি? মূর্খ স্কুলবালক রিকশাভাড়া বাঁচাইয়া হলমার্কসের কার্ড কিনিয়া পার্শ্ববর্তী গার্লস স্কুলের সুন্দরী ছাত্রীকে উপহার দিবে। বালিকা তাহা গাম্ভীর্যের সাথে গ্রহণ করিবে এবং বাসায় ফিরিয়া কয়খানা কার্ড পাইল তাহা গণণা করিতে করিতে হাসিয়া কুটিপাটি হইবে। বৈকালে তাহার ভার্সিটি পড়ুয়া হোম টিউটর আসিয়া বলিবে, “আজকে একটা বিশেষ দিন? তুমি কি তাহা জানো?” চতুর বালিকা কৌতুকময় হাসি হাসিয়া বলিবে, “আজকে আমি ক্লাসটেস্টে হাইয়েস্ট পেয়েছি। এইজন্যে ইহা আমার কাছে একটা বিশেষ দিন।”



কলেজ বালক-বালিকা বয়সের দোষে কিংবা গুণে এইসব ব্যাপারে খানিকটা অগ্রসর। তাহারা এই দিনে সময় সুযোগ মিলিয়ে ভাসানী থুক্কু বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের আলো আধারীতে কিসমিস খায়। বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে পপকর্ণ খাইতে খাইতে হারাইয়া যায়, ডিজে ক্লাবে গিয়া ‘চাম্মাক চালো’ নৃত্য করে। তাহাদের অনেকেই এইদিন প্রথমবারের মতন অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়া আরো একটুস পরিপক্কতা লাভ করে। মতিঝিল এলাকার কলেজের মেধাবী ছেলেগুলো এইদিন সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় জ্যাম লাগাইয়া দেয়। ব্যাচে ব্যাচে যাহারা জ্ঞানার্জন করে তাহারা ঐদিন রসায়ন, পদার্থ আর বলবিদ্যা বাদ দিয়া প্রেমার্জন করিতে সর্বস্ব ঢালিয়া দেয়।



ভার্সিটি পড়ুয়ারা ঢের অভিজ্ঞ। কতিপয় হ্যান্ডসাম যুবক এবং ড্যাশিং সুন্দরীদের জন্য ইহা ঈদ বিশেষ। ঈদে যেইরূপ নতুন জামা কাপড় লওয়া হয়, ভ্যাঁ দিবসে তাহারা সেইরূপ নতুন গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড চুজ করিয়া লয়। তাহার পরে আর কি? সবাই মিলিয়া ইয়ো ইয়ো করে। ভ্যাবলাকান্তরা নিত্যদিনের মতন বসিয়া বসিয়া কবিতা লেখে আর বুড়োর গান রিভিশন দেয়। আগুনে পুড়িয়া পুড়িয়া অনেকে নজরুল হইয়া ওঠে। টিএসসিতে তাহারা আন্দোলন করিতে চায়, কিছুক্ষণ লোক হাসানো কাজ কারবার করিয়া ক্লান্ত হইয়া বইমেলায় গিয়া চা পান করে। ইস্মার্ট যুবকের দল কনসার্টে ঝাঁকানাকা করিয়া রূমে গিয়া পানি খাইয়া আবোল তাবোল বকে আর যাহারে তাহারে জড়াইয়া ধরে, নাউযুবিল্লাহ।



আরেক দল আছে, কামলা বা শ্রমিক বিশেষ। তাহাদের মধ্যে যাহারা তখনো প্রেমে মশগুল, ভ্যাঁ দিবস আসিলে তাহারা ভ্যাঁ করিয়া কাঁদিয়া দেয়। কিভাবে বসের নিকট হইতে অর্ধদিবস ছুটি মিলিবে, খাদ্য-বস্ত্র-দৈনন্দিন খরচ বাঁচাইয়া গিফট খরিদ করিবে, টুনিকে আরকটাদিন সবুর করিতে বলিবে ইত্যকার টেনশনে তাহাদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। এই শ্রেণীর অনেকে ভাবে, ঢের হইয়াছে, আর নহে। তাহারা আর লাইসেন্স বিহীন সম্পর্কে আগ্রহ দেখায় না, যেকোন মূল্যে একখানা ড্রাইভিং লাইসেন্স আয়ত্ব করিতে চায়। আগের জন্মে যাহারা অধিক মাত্রায় ইয়ো ইয়ো করিয়াছিল তাহারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া কহে, লাইফ সাক্স।



বিবাহিতের দল ভ্যাঁ দিবস আসিলে ফিক করিয়া হাসিয়া দেয়। অতীতকালের মূর্খামির কথা ভাবিয়া আর চতুর্পাশ্বের পরিবেশ অবলোকন করিয়া মনে মনে বলে, রে মূর্খের দল, কবে তোরা মানুষ হইবি? বাসায় ফিরিয়া যখন আয়েশ করিয়া মধু মিশ্রিত গলায় শুধায়, “সোনাবউ আজ কি রাঁধিয়াছ?” উত্তর আসে, ঝাঁটার বাড়ি। নির্লজ্জ পুরুষ খ্যাক করিয়া হাসিয়া ক্যাটরিনাতে মনোনিবেশ করে। মৎস্য একবার ধরিবার পরে ছিপ ফেলিয়া বসিয়া থাকা নিরর্থক। রমনীরা মিষ্টি মধুর স্মৃতি জাবর কাটিতে কা্টিতে ভাবে, আমাদের যেই দিন গিয়াছে, তাহা কি চিরতরেই গিয়াছে?



সর্বশেষ যে হতভাগার দল, কোনকালেই যাহারা ভ্যাঁ দিবসে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিতে পারে নাই, আগুনে পুড়িয়া কয়লাও হইতে পারে নাই তাহারা কি করে? কেউ ঈর্ষান্বিত, ক্রোধান্বিত হইয়া হম্বিতম্বি করে, “রূপসী মেয়েগুলোর মস্তিষ্কে যদি তিল পরিমাণ ম্যাটারিয়ালস থাকিত তাহলেও তাহারা আশেপাশে চক্ষু ঘুরাইয়া অমূল্য মানিক রতন খুঁজে পাইত। কিন্তু জগতের নির্মম পরিহাস তাহাদের চক্ষু নাই।” বেকুব যুবকের দল বুঝিতে পারে না, পরিশ্রম বিনা সিকি মিলে না যেইখানে, সেইখানে অমৃত কিভাবে মিলিবে! স্বীয় প্রজাতিতে আকৃষ্ট হইতেও অনেকে পিছপা হয় না, তাহারা ভাবে, দিন বদলাইছে না, আমাদিগের ও স্বীকৃতি মিলিবে। আর চিরকালীন আশাবাদীরা নিজেদের প্রবোধ দেয় - সামনের বার, সামনের বার এমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিব, এক্কেবারে হতচ্ছাড়াদের দেখাইয়া দিব, হুমম।




সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×