কলেজে যাওয়ার সময় বাসের ঝক্কি। কলেজে ক্লাস করতে গিয়ে ক্লাস না করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। ফাকে শুধু ধোয়া ছোড়ার মহড়া। ফুসফুসের ভেতরে ধোয়াগুলোর ঘুরপাক। হঠাৎ মাঝে কোনো ফকিরের হাত। তাকে তুচ্ছতার সাথে বলা, মাফ করো। ফকির যাবে না। তার হাত ও চোখ তখনও আমাদের ছেলেগুলোর দিকে। আবার বলা, মাফ করো তো ভাই। স্টুডেন্ট মানুষ পয়সা নাই। কিন্তু তখনও সবার হাতে একটা করে মৃত্যু কাঠি।
আমার ভালোবাসার মানুষটি প্রায়ই বলে, এটা না খেলে কি হয়? প্রশ্নটার উত্তর জানা নাই। তাও মাঝে মাঝে ভাবের সাথে বলে উঠতাম, এটা না খেলে মনে হয় ভেতরটা ফাঁকা। মনে আমি নিঃসঙ্গ।
টিউশনি করতে যাই। দুই ভাই একসাথে আমার ছাত্র। অনেকদিন আগে তাদের মা আমাকে বলেছিল, সিগারেটটা ছেড়ে দিও। আর যদি না ছাড়তে পারো তবে এখানে পড়াতে আসার সময় দুটো চকলেট খেয়ে এসো। অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই এখন থেকে ঢোকার সময় চকলেট খেয়ে ঢুকি। যাইহোক তাকে পড়ানোর এক ফাকে তাদের মা ঘরে ঢুকলো। আমার হাতে ফিসটা তুলে দিলো। মনে বড় শান্তি পেলাম। ভাবলাম বই মেলা থেকে কিছু বই কেনা যাবে। এসব খরচ নিজেরই বহন করতে হয়। বাড়ি থেকে শুধু ঢাকায় থাকা খাওয়ার খরচটাই আসে। কিন্তু এসব উটকো খরচ আসে না। সেটা আমাকেই ম্যানেজ করতে হয়।
যাইহোক। মনের আনন্দে মেলায় গেলাম। রিক্সা থেকে নামতেই এক বৃদ্ধ ফকির পিছে লাগলো। তার হাত-পা দুটোই আমাকে উদ্দেশ্য করে চলছে। ভাবলাম একটা সিগারেট খেয়ে মেলায় ঢুকি। তখনও বৃদ্ধ তাকিয়ে।
বাবা, সকাল থেকা ভাত খাই নাই। বাবা......
বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে বললাম, যাও তো....বিরক্ত কইরো না। মেলাই আইছি মেলায় ঘুরবার দাও।
বৃদ্ধ অসহায় হয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। আমার সিগারেট টানা শেষ। মাটিতে ফেলে সেন্ডেলটা দিয়ে তাকে নিভাচ্ছি। হঠাৎ বৃদ্ধ আমাকে বলল, বাবা পিরথিবীতে বই জরুরী নাকি মাইনষের খিদা?