আজকের একটি নিষ্ঠুর ও নির্লজ্জকর ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না।আজকে পরিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম।বাসটিতে পলিটিক্যাল দলের ছত্রছায়ায় লালিত ছাত্র নামধারী কিছু কুকুর বাসের দরজায় দাড়িয়ে রিক্সায় চেপে যাওয়া সুন্দরী মেয়েদেরকে টিজ করছিল। এই কুকুরগুলো বাসে সিট থাকলেও দরজায় ঝুলতেই বেশী পছন্দ করে।মেয়েদেরকে টিজ করা, তুচ্ছ কারনে বাস ড্রাইভার, রিক্সাচালকদের মারধর আর গাড়ি ভাংচুর করাই এদের কাজ।আর এইসব নেড়ী কুকুরদের শেল্টার দেয় পলিটিক্যাল বড়ভাই নামধারী বুলডগেরা।এজন্য সাধারন ছাত্রেরা এদের অনৈতিক কাজ দেখে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।
যাহোক বাস ক্যাম্পাস ছাড়ার কিছুক্ষন পরই এরা এদের নিত্ত-নৈমিত্তিক কাজ শুরু করে দিল। এদের কয়েকজন মেয়েদের দিকে হাত নাড়িয়ে অশ্লীল মন্তব্য ছুড়ছিল।দরজার কাছাকাছি সিটে বসা অনেকই ঘৃনাভরে এদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করছিল।আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম এর থেকে নিকৃষ্ট কিছু যেন না ঘটে! বাসটি মানিকনগর পার হয়ে মুগদা স্টেডিয়ামের কাছে আসতেই ঘটে গেল আমার জীবনে দেখা নির্লজ্জকর ঘটনাটি।একটি রিক্সা করে একজন আধাবয়স্ক মহিলা, একজন অল্পবয়সী মেয়ে আর ক্লাস ৭/৮ পড়ুয়া এক ছেলে মানিকনগরের দিক থেকে মুগদার দিকে যাচ্ছিল। সবাইকে সম্ভ্রান্ত পরিবারেরই মনে হল।বয়স দেখে মা, ভাই ও বোন সম্পর্কের মত মনে হল।
এই কুকুরগুলো! না থাক ‘কুকুর’ এখানে অনেক ভাল শব্দ ‘জারজ’ উপমাটা এদের বেলায় খুব ভাল মানায়।এই জারজগুলো মা ও ছোট ভাইয়ের সামনে বোনটিকে টিজ করতে ছাড়ল না। এটা দেখে কোমলমতি ছোট ভাইটি রাগ ধরে রাখতে পারেনি।আস্তে করে বলে ফেলল ‘ছোটলোকের বাচ্চা’।যদিও এই শব্দটিকে রাগ মেটানোর জন্য আমার কাছে যথেষ্ট মনে হলো না। কিন্তু আস্তে করে বললেও কথাটি ঐ জারজগুলোর কান এড়াল না।এদের একজন বাবার বয়সী ড্রাইভারকে ধমকের শুরে বলে উঠল, “এই গাড়ি থামা!’’ ওমনি মনটা কেমন যেন অজানা আতঙ্কে শিউরে উঠল।গাড়ির গতি কমাতেই এদের একজন গাড়ির দরজার পাশে থাকা গ্লাস পরিষ্কার করার বড় ব্রাশ দিয়ে রিক্সার উপরের দিকে বসা ছেলেটির মাথা লক্ষ্য করে সজোরে বাড়ি মারল।ছেলেটি মাথা সরিয়ে নিলেও দুপাশে বসে থাকা মা আর বোনের কাধ রেহাই পেলনা। জারজটির পেছনে পেছনে আরও কয়েকটি জারজ নেমে গিয়েছিল।ওরা রিক্সার পেছনের দিক থেকে এলোপাথাড়ি কিলঘুসি মারতে লাগল। আমরা কয়েকজন যতক্ষনে “মারবেন না, ও ছোট!!’’ বলে চিৎকার করতে করতে থামাতে নামলাম, ততক্ষনে শেষ সবকিছু। মূহতের মধ্যে ঘটে গেল ঘটনাটি।
আপনাদের কী অনুভূতি হচ্ছে জানিনা। তবে আমার চোখের সামনে ভাসছে ছেলেটির মায়ের ক্ষোভ আর কষ্টমাখা মুখখানি।মায়ের সামনে নির্দোষ ছেলেকে এমন নির্দয় প্রহারের কষ্ট, এটা বুঝি শুধু ওই মা ই জানে! আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের এমন ‘মহান কর্ম’ দেখে লজ্জা আর ক্ষোভে মাথা হেট হয়ে আসছে।
জনগনের রক্ত পানি করা পরিশ্রমের কোটি কোটি টাকায় গড়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের আজ এমন নিকৃষ্ট পর্যায়ের নৈতিক অধপতন হলে কী হবে দেশে ভবিষ্যৎ? আর কে হবে দেশ গড়ার কারিগর?