somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ্যা জার্নি টু মেক্সলক্সিগঞ্জ

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাকরিটা যখন পাই তখন চাকরিটা নিব কি নিব না সেটা নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম। কাছের সবাই বলছিল ভালো কোম্পানি, ভালো সেলারি, সুতরাং কোন রকম ভাবা-ভাবি না করে যেন চাকরিটা নিয়া নেই। সব কিছু বিবেচনা করে অবশেষে চাকরিটা নিয়েই নিলাম। চাকরিটা নেয়ার পেছনে ভালো কোম্পানি, ভালো সেলারি ব্যতীত আরেকটা অন্যতম কারণ ছিল, সেটা হল- চাকরির পারপাসে প্রায়ই আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ট্র্যাভেল করতে হবে। আমি আবার একটু ভ্রমণ পাগল মানুষ। একটু সুযোগ পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। প্রথম পোস্টিঙটা দেশের একদম পশ্চিমে মেক্সলক্সিগঞ্জ নামের একটা শহরে হল। সে শহরের সব কিছু অপরিচিত, পরিচিত কোন বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনও সেখানে নেই ,সেখানে আমি কোনদিন যাইওনি। তাই প্রবল উৎসাহের সাথে খানিকটা উৎকন্ঠাসহ সেখানকার অফিসের ম্যানেজারের মোবাইল নাম্বার আর বাসার ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা দিলাম। ম্যানেজার সাহেবের কথা হল - উনার বাসায় গিয়েই প্রথমে উঠবো। পরে অন্য কোথাও মুভ করব।

মেক্সলক্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে বিকেলের ট্রেনে করে রওয়ানা দিলাম। ট্রেনে আমার পাশের সিটটা খালি পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে ভাবলাম - সারাটা পথ হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরাম করে বসে যাওয়া যাবে। কিন্তু আমার মনের আরাম করার ভাবনাটা অপূর্ণ করে দিয়ে পরের স্টেশনে একজন যাত্রী আমার পাশের সিটে এসে বসলেন। পাশের সিটের যাত্রীকে দেখে আমার মনের ভাবনাটা পরিবর্তন হল। মনে মনে ভাবলাম যাক উনার সাথে গল্প করে সারাটা পথ যাওয়া যাবে। কিছুক্ষণ উনার ভাবসাব লক্ষ্য করলাম। যাত্রীর ভাবসাব দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হল - উনার সাথে তেমন জমবে না। বাদামী রঙয়ের শাড়ি আর চোখে চশমায় উনাকে অনেকটা শিক্ষিকা শিক্ষিকা লাগছে। তারপরেও ট্রেন যখন পুরাদমে চলতে লাগলো আমিও পুরাদমে চেষ্টা করতে লাগলাম কোনভাবে গল্প শুরু করা যায় কিনা।
- জ্বি, আমি ফয়সাল রহমান। মেক্সলক্সিগঞ্জ যাব, ট্রেনের একদম লাস্ট স্টপ।
- আমি মারিয়া ভেলেন্তিনা। অরেঞ্জ ট্রেন স্টেশন, লাস্ট স্টপের আগের স্টপ।
- আপনে কি খ্রিস্টান?
- না আমি মুসলিম।

আমাকে নেক্সট প্রশ্ন করার কোন সুযোগ না দিয়ে মিস মারিয়া ভেলেন্তিনা উনার হাতের বই খুলে চোখের চশমাটা ঠিকঠাক করে মুখের সামনে মেলে ধরলেন। আমিও সাথে-সাথে বুঝে গেলাম - একটা কঠিন রকম ভাবে বোরিং জার্নি করতে যাচ্ছি। পাশে একজন মহিলা মুখের সামনে বই ধরে রাখছে এরকম দৃশ্য পাশাপাশি নিয়ে তো আর সুখের ভ্রমণ আশা করতে পারিনা। তাই আমিও কানে হেড-ফোন লাগিয়ে বাহিরের আকাশ বাতাস গাছগাছালি দেখতে লাগলাম। গান শুনতে শুনতে কখন যে হাল্কা ঝিমুনি চলে আসছিল সেটা খেয়াল ছিলনা। হঠাৎ শুনলাম আমার পাশের সীটের মিস মারিয়া ভেলেন্তিনা আমাকে বলছেন - এই যে ফয়সাল সাহেব শুধু ঝিমালে চলবে? উঠুন - ঐ যে দেখুন সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সূর্য ডুবার দৃশ্য যদি নাই দেখলেন তাহলে বিকেলের ট্রেনে উঠেছেন কেন? আমি তো বিকেলের ট্রেনে উঠি সূর্য ডুবার দৃশ্যে ডুব দেয়ার জন্য। আর কোন কারণ নাই, আমার কোন গন্তব্যও নাই। উনার কথাগুলা শুনে আমার ঝিমানি দৌড়ে পালাল। থতমত করে বলতে লাগলাম - জ্বি ঠিক বলছেন, সূর্য ডুবার দৃশ্য ছাড়া বিকেলের ট্রেন জার্নি কল্পনা করা যায় না। ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য। তা না হলে তো এই অপরূপ দৃশ্য মিস করে ফেলতাম। এই বলে আমি বাহিরে সূর্য ডুবা দেখা শুরু করলাম। আসলে আমার এই অতিরিক্ত করে বলা, অপরূপ দৃশ্য, সূর্য ডুবা দেখা এসব কোন ব্যাপার ছিলনা। আসল ব্যাপার ছিল উনার সাথে গল্প জমানো। এক সময় সূর্য ডুবে গেল। এদিকে উনিও উনার বইয়ের মাঝে ডুব দিলেন। আবারও আমার ভাবনার গুড়ে-বালি হল। আমিও বাহিরের অন্ধকার দেখেদেখে গান শুনায় মনোযোগ দিলাম।

ট্রেন মাঝেখানে একটা স্টেশনে ১০ মিনিটের জন্য এসে থামল। আমি চায়ের পিপাসায় বাহিরে বেরুবার আগে মিস মারিয়া ভেলেন্তিনাকে ভদ্রতা দেখানোর জন্য জিজ্ঞেস করলাম - চা খেতে বাহিরে যাচ্ছি, আপনি চা খাবেন? খাইলে আপনার জন্যেও এক কাপ নিয়ে আসতে পারি। এখানে মনে হচ্ছে লাল চা পাওয়া যাবে। লেবু আর হাল্কা বিট লবণ দিয়ে লাল চা অসাধারণ লাগে। উনি বললেন - আমি চা খাই না। আমি কফি খাই। জানেন ফয়সাল সাহেব স্টারবাক্সের কফির মাঝে স্বর্গীয় একটা ঘ্রাণ আছে, যে ঘ্রাণ চোখ বন্ধ করে নিলে জীবনের ঘুমন্ত মূহুর্তগুলো জেগে উঠে। আমি উনার কথা শুনে মনেমনে ভাবলাম এই তো গল্প জমানোর সুযোগ পেয়েছি। যদি কোনভাবে এক কাপ কফি জোগাড় করে নিয়ে আসতে পারি তাহলে গল্প জমানো যাবে। কিন্তু ভাগ্য আমার অনুকুলে ছিলনা, আমি ষ্টেশনের কোথাও কফি পেলাম না। তাই আমার গল্প জমানোর গোপন ভাবনাটাও অপুরণ থেকে গেলো।

ট্রেন চলছে, আমি গান শুনছি, উনি বই পড়ছেন। মনের সেই গোপন ইচ্ছা নিয়ে আমি উনার দিকে মাঝেমাঝে তাকাই। হঠাৎ মনে হল উনার চেহারায় মাঝে কি যান একটা মায়াবী গোপন ব্যাপার আছে। যে গোপন ব্যাপারটা উনার গায়ের রঙ তেমন উজ্জ্বল না হলেও উনাকে বেশ উজ্জ্বল লাগছিল। আমি যখন এসব ভাবছিলাম তখন উনি বই বন্ধ করে ব্যাগে ভরতে ভরতে আমাকে বলে উঠলেন - জানেন আমার ক্লাসে একটা মেয়ে আছে, যার গায়ের রঙ তেমন উজ্জ্বল না হলেও তাকে বেশ উজ্জ্বল দেখায়। সবাই মনে করে হয়ত সে স্পেশিয়াল কোন স্নো পাউডার মেখে হয়ত সে তার গায়ের রঙকে এরকম উজ্জ্বল করে। অথচ মেয়েটা কোনদিন স্নো পাউডারের ধারে কাছেও যায় না। এবার আমার কিছুটা অবাক হওয়ার পালা। কারণ আমি উনাকে নিয়ে ঠিক একি রকম কিছু একটা ভাবছিলাম। কিন্তু আমাকে সেটা প্রকাশ করলে চলবেনা, কারণ আমার ইচ্ছে তার সাথে গল্প জমিয়ে বাকিটা পথ যেতে। তাই আমি সেটা প্রকাশ না করে আমার মনের সেই ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করতে লাগলাম।
- এর মানে আপনি শিক্ষকতা করেন?
- জ্বি আমি শিক্ষকতা করি। যদিও জীবনে পর্যটক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। ঘুরে বেড়াবো পৃথিবীর আনাচে কানাচে। সামারে ভার্জিনিয়া বিচ হয়ে ওয়েস্ট ভারজিনিয়ায় হিল ক্লাইম্বিং, মায়িমি বিচ হয়ে ডিজনি ওয়াল্ড, লাস ভেগাসের স্কাই ড্রাইভিংয়ের পর ক্যাসিনোতে ব্লাক জ্যাক অথবা পোকার।

এত সময় পর একদম পারফেক্ট একটা পথ খুঁজে পেলাম গল্প জমানোর। কারণ আমিও ভ্রমণ বিলাসী। জানেন আমিও ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। আমারও পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানোর খুব শখ। তো আপনি কোথায় কোথায় ঘুরে বেরিয়েছেন? আমি প্রশ্ন শুনে উনি মুচকি হেসে বললেন - তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। একবার পিরামিড দেখতে মিশরে গিয়েছিলাম। আমার খুব ইচ্ছা আমার মৃতদেহটা মমি করে রাখার। সেই মমির পাশে একটা চিরন্তন শিখা জ্বলবে। কারণ আমি অন্ধকার খুব ভয় পাই।তাই আমার মমির পাশে সারাক্ষণ আলো জ্বলবে। ভাবছিলাম সাময়িক ভদ্রতা দেখাতে হয়ত উনিও জানতে চাইবেন আমি কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু উনি তা না করে আবার ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করলেন। এবার আমি পুরাটাই আশা ছেড়ে দিলাম, না আর গল্প জমানো যাবেনা। লাস্ট স্টপের আগের স্টপে উনি নেমে গেলেন। নেমে যাওয়ার আগে আমাকে দ্বিতীয়বারের মত অবাক করে দিয়ে বলে গেলেন - ফয়সাল সাহেব সারাটা পথ আপনি খুব চেষ্টা করেছেন আমার সাথে গল্প জমানোর কিন্তু আপনি পারেন নি। এই নেন আমার মোবাইল নাম্বার, ফোন দিয়েন জমিয়ে গল্প করা যাবে। উত্তরে আমি কিছু বলার আগে উনি নেমে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলেন। আমি শুধু বললাম ধন্যবাদ, আমি আপনাকে ফোন দিব। পিছন ফিরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন - আচ্ছা। আমি উনার উজ্জ্বল মুখখানি শেষবারের মত দেখলাম।

প্রায় মাঝরাতে ট্রেন এসে শেষ স্টেশনে এসে থামল। ট্রেন থেকে নেমে আমার অফিসের ম্যানেজার কে ফোন দিলাম। উনি বললেন ট্যাক্সি নিয়ে উনার বাসায় চলে যেতে। স্টেশনের বাহিরে ২/৩ টা ট্যাক্সি পেলাম। কিন্তু ঠিকানা দেখানোর পর কেউই যাইতে চাইলো না। চোখের সামনেই দেখলাম অন্যরা ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার ম্যানেজার কে ফোন দিলাম। উনি বললেন একটু বেশি ভাড়া অফার করেন দেখবেন আসবে। আর যদি না আসে হেঁটে চলে আসবেন। তেমন বেশী সময় লাগবে না। আমি আবার ট্যাক্সির কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি একটা ট্যাক্সি আছে। ড্রাইভারকে বেশী টাকা অফার করলাম। ড্রাইভার বলল ঠিক আছে যাব তবে আমি আরেকজন যাত্রী নিব। আমি প্রথমে রাজি হয়নি, কিন্তু কোন উপায় না দেখে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ এই ব্যাগ লাগেজ নিয়ে এত রাতে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে আমি যে এলাকায় যাব সেই এলাকার আরেকজন যাত্রী পেয়ে গেল। ট্যাক্সির ভিতরে আমার সহযাত্রীর সাথে পরিচয় হল। উনার নাম মুনির হাসান, পেশায় ব্যবসায়ী। কি ব্যবসা করেন সেটা জিজ্ঞেস করতে তিনি একটা অদ্ভুত উত্তর দিলেন। বললেন - সময়ের ব্যবসা করি। নষ্ট হওয়া সময়, হারিয়ে যাওয়া সময় ফেলে আসার সময় খুঁজে বের করে সেগুলারে মডিফাই করে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করি। কথাগুলা অদ্ভুত লাগলেও সেদিকে মন না দিয়ে আমি আমার পরিচয় দিয়ে যখন ঠিকানাটা দেখালাম, ম্যানেজারের নাম বললাম। তখন ঠিকানা দেখে উনি বললেন আরে এটা তো আমার পাশে বাসা, আর ম্যানেজার সাহেবকেও উনি ভালো করে চিনেন। মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে - এই মাঝরাতে রাস্তায় কোন রকম বিপদ বা বাড়ীর ঠিকানা খুঁজে বের করার ঝামেলা করা লাগবেনা।

অবশেষে আমি ঠিকঠাক ম্যানেজার সাহেবের বাসায় পৌঁছলাম। মুনির হাসান সাহেবই আমাকে নামিয়ে দিলেন। উনি আমাকে আমার ট্যাক্সি ভাড়াটাও দিতে দিলেন না। মুচকি হেসে বললেন আপনে আমাদের মেহমান মানুষ, আপনে ভাড়া দিলে হবে ! বাসায় ঢুকে ম্যানেজার সাহেবের সাথে পরিচয় পর্ব শেষে হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসলাম। পাশের চেয়ারে ম্যানেজার সাহেবও খেতে বসলেন, উনি আমি আসব জেনে আমার জন্য না খেয়ে বসে আছেন। খেতে খেতে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আসতে রাস্তায় কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, বাসা চিনতে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা!আমি বললাম - আমার ভাগ্য ভালো, স্টেশন থেকে আসার সময় আপনার পাশের বাসার মুনির সাহেবকে পেয়ে গেলাম। উনিই আমাকে আপনার বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে গেলেন। তা না হলে হয়ত বাসা বের করতে একটা ঘুরতে হত। আমার কথা শুনে উনি হেচকি খেয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কে? কে আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়েছেন? আমি বললাম আপনার বাসার মুনির সাহেব! আমার কথা শুনে উনি খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বললেন - ফয়সাল সাহেব আপনার শরীর ভালো আছে তো, আপনে ঠিক আছেন তো? উনার এসব প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনে কেন আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছেন?

এরপর ম্যানেজার সাহেব যা বললেন তা শুনার পর আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না, ভিতরে ভিতরে বেশ কিছুদিন ভীষণভাবে অসুস্থ ফিল করছিলাম। সেই কারণে মেক্সলক্সিগঞ্জে আমি বেশিদিন থাকতে পারলাম না। এক মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে নিজের হোম টাউনে চলে আসলাম। সেদিন ম্যানেজার সাহেব বলেছিলেন - উনার পাশের বাসা ঠিকই মুনির হাসান সাহেবের বাসা। কিন্তু মুনির হাসান সাহেব বেঁচে নেই। প্রায় সাত বছর আগে সে তার বউকে খুন করে, সে খুনের দায়ে তার ফাঁসি হয়। সেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর যে অল্প কিছু মানুষ তার কবর দেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল, তার মধ্যে ম্যানেজার সাহেবও ছিলেন। এখন সে বাড়িতে মুনির হাসানের বৃদ্ধ মা এবং মুনির হাসানের তের বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন।

হোম টাউনে ফিরে আসার পর নিজেকে ব্যস্ত করে তুলার চেষ্টা করতে লাগলাম। বন্ধু-বান্ধব,হৈ-হুল্লোড় আড্ডায় নিজেকে ব্যস্ত করে নিয়ে সেই ভয়ংকর ফিলিংসটা ভুলে থাকার অপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। এক পড়ন্ত বিকেলে শহরের একটু বাহিরে নদীর তীরে ঘুরতে গেলাম। সেখানে গিয়ে পড়ন্ত লাল সূর্য দেখে মিস মারিয়া ভেলেন্তিনা'কে মনে পড়ে গেল। ভাবলাম একটা ফোন দিয়ে দেখি একটু গল্প জমানো যায় কিনা! ফোন দেয়ার পর ও প্রান্ত এক মহিলা'র কণ্ঠ ভেসে আসলো।
- হ্যালো, জ্বি আমি একটু মিস মারিয়াকে চাচ্ছিলাম
- তুমি কে বলছ?
- আমি মারিয়া'র এক পরিচিত বন্ধু
- তুমি কেমন বন্ধু !! যে তার বন্ধুর মৃত্যুর তিন বছর পর ফোন করে তাকে খুঁজ নেয়!
- এটা শুনার পর কি বলব বুঝতে পারছিনা, থতমত করে বললাম আপনে এসব কি বলছেন? এই মারিয়া কি মারিয়া ভেলেন্তিনা? যে শিক্ষকতা করেন?
- হ্যাঁ এই সেই মারিয়া, আর আমি হলাম সে মারিয়ার মা!
- উনার কি হয়েছিল?
- তার বিয়ে হয় এক আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে। বিয়ের সাত মাসের মাথায় সে আমেরিকা চলে যায়। সে তার স্বামী সংসার নিয়ে খুব সুখী ছিল। প্রায় প্রতিদিন সে আমাকে ফোন করে তার সুখের গল্প করত। আমার মেয়েটার ঘুরে বেড়ানোর খুব শখ ছিল। তাই প্রায় প্রতি উইকেন্ডে তারা কোথাও না কোথাও বেড়াতে যেত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের ঘুরে বেড়ানোর সেই ছবিগুলা আমাকে দেখাতো। খুটিয়ে খুটিয়ে সেই ছবিগুলা দেখানোর পর নেক্সট উইকেন্ডে কোথায় যাবে তার প্লান করতো। আমার মেয়ের নাম ছিল মারিয়া আহমদ। সে ছিল আমার একমাত্র মেয়ে। সেখানে যাওয়ার পর সে মজা করে তার নাম বদলে নিয়েছিল। তার নাকি স্প্যানিশ নাম খুব পছন্দ। সেটা অবশ্য কাগজে কলমে ছিলনা, মুখে মুখে বদল। আমি তাকে মারিয়া নামে ডাকলে আমাকে প্রায়ই হেসে-হেসে বলত - মা আমাকে মারিয়া না ডেকে ভেলেন্তিনা বলে ডাকবে। আমেরিকায় নাকি শিক্ষকতা পেশাটা মেয়েদের জন্য খুব সুইটেবল। তাই টিচিং কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল কোর্স শেষ করে শিক্ষকতায় ঢুকবে। কিন্তু আমার মেয়েটা আর কোর্স শেষ করতে পারল না, তার আগেই উপরওয়ালা তাকে তুলে নিলেন!
-কিন্তু উনি কিভাবে মারা গেলেন?
- গ্রীষ্মের ছুটিতে তারা দুজন মিশরের গিয়েছিল। সেখানে পিরামিড দেখে রাতে হোটেলে ফিরার পথে এক্সিডেন্ট করে তারা দুজনেই মারা যায়।
- এসব শুনে কি বলব ভেবে না পেয়ে ফোনের লাইনটা কেটে দিলাম।

আমি ফোন কেটে দেয়ার পর মাথায় চিনচিন করে ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম। মনে হল মেক্সলক্সিগঞ্জে সেই অসুস্থ ফিলিংসটা আবার আমার কাঁধে এসে ভর করছে। আমি সূর্য ডুবার দৃশ্য দেখার অপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু বারবার মনে হতে লাগলো সূর্য আজ আমার দিকে চেয়ে মুচকি হাসি হাসছে। যে মুচকি হাসিতে একবার মুনির হাসান'কে দেখছি আর একবার মিস মারিয়া ভেলেন্তিনা'কে দেখছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×