somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেরেসা এবং বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার: একটি সত্য বর্ণনা

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তেরেসা যেদিন আমার ওয়ার্ডে এলো, ঐদিন তার ১৮ তম জন্মদিন ছিল। এতোদিন সে শিশু-কিশোর মানসিক কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিল, আজ যেহেতু তার ১৮ বৎসর পূর্ণ হলো তাই তাকে আর ঐ শিশু-কিশোর মানসিক কেন্দ্রে রাখা যাবে না! সে এখন বড় হয়ে গেছে, তাই বড়দের মানসিক ওয়ার্ডে তার স্হান হলো।পাতলা স্লীম তেরেসার চেহারাটা বেশ মিস্টি। বেশ সাজুগুজু করা তেরেসাকে দেখলে বোঝার উপায় নাই যে,

তার মধ্যে একটা আত্মঘাতি কাঁটাকাঁটির একটা মনোভাব লুকিয়ে আছে! তেরেসার মা-বাবা দুজনেই সুইডিশ। মা একটা মাল্টিন্যাশনাল আইটি কোম্পানীতে কাজ করেন, আর বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। এজন্যে তাকে মাসে দুবার সুইডেনের বাহিরে এমন কি বাংলাদেশ, ভারত, চায়নাতে যেতে হয়। আর তেরেসা তাদের একমাত্র সন্তান। তেরেসার এই অসুস্হ্যতার কারণে তাকে থেরাপীর অংশ হিসাবে কয়েকবার ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশেও ঘুরাতে নিয়ে যায়, যাতে করে সে তার নিজের জীবনধারাটা উপলব্দি করতে পারে ! কিন্তু দিল্লীতে সেই ভ্রমনকালীন সময়েও তেরেসা তার হাতের বাহু কেঁটে ফেলে রক্তাক্ত করে, যা নাকি তার বাবা-মার আত্মসম্মানে প্রচন্ড একটা আঘাত লাগে। যার ফলাফল তাকে আর তার বাবা-মাও বিশ্বাস আর করেন না এবং সাথে কোথাও নেন না।

কি সমস্যা তেরেসার? তেরেসা একজন বর্ডারলাইন রোগী। সে কারণে-অকারনে নিজের হাত কাঁটে, পা কাঁটে, মুখ কাঁটে, যা কিছু পায় তাই দিয়েই সে চেষ্টা চালায়। এমনও হয়েছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই তাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হয়েছে; যাতে করে সে কোনভাবে নিজের ওপর কোন ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম না চালাতে পারে! তারপরও দেখা গেছে,আলপিন, পিন, সেফটিপিন, চায়ের কাপ ভেংগে কাঁচের টুকরা, পাথরের টুকরা, কটনবাডের চিকন প্লাস্টিকের সুঁচালো অংশ, টুথপিকের অংশ, চুলের ক্লিপ, এমন কোন জিনিস নাই যে নিজেকে রক্তাক্ত করার চেস্টা করতো না! তাই তার কাছে বসে আই কক্টাকে গার্ড দিয়ে রাখতে হতো। একটু অসতর্ক হলেই সে অঘটন ঘটাতো। এমনকি লেপ কম্বলের নীচে হাত রেখে তারপরও কাঁটাকাটি করতো। এ কারনে তাকে লেপ, কম্বলের নীচেও হাত রাখতে দেয়া হতো না! অবস্হা এমন হতো যে, বাথরুম- টয়লেটে গেলে তার দরজা আটকানোর অনুমতিও ছিল না। দরজা খোলা রেখেই তার টয়লেট-গোসল সারতে হতো, আর বাইরে একজন পাহারায় থাকতো। একটু পরপরই তার অবস্হান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে হতো! টয়লেট করা শেষ হলো কিনা, গোসল করা শেষ হলো কিনা? আর এ সময়ে মেয়ে স্টাফরা তাকে গার্ড দিত। এই বর্ডারলাইন রোগীদের আবার অন্য বর্ডারলাইন রোগীদের সাথে প্রায়ই খুবই ভাল যোগাযোগ থাকে। একজন যদি বড় কোন অঘটন ঘটায় সাথে সাথে অন্য বর্ডারলাইন রোগীরা তার খবর পেয়ে যায়। এমনকি তাদের মধ্যে পয়েন্ট বন্টনও হয়। যেমন, হাতের কব্জির ওপরে কাঁটলে যে পয়েন্ট অন্যান্য যায়গায় কাটঁলে পয়েন্ট অনেক কম। কে কত পয়েন্ট সংগ্রহ করলো তা নিয়েও এরা আলোচনা করে।

তেরেসা আমাদের ওয়ার্ডে পার্মানেন্ট রোগী হয়ে গিয়েছিল।প্রায়ই মাসের পর মাস তার থাকা হতো। দেখা গেল ২ মাস পরে ওষুধ আর থেরাপী দিয়ে ভাল করলাম, আবার ৪/৫ পরই এ্যামবুলেন্সে এসে হাজির।

তাকে কয়েকবার ইলেকট্রিক শক Electroconvulsive therapy (ECT) ও দেয়া হয়। কিছুদিন ভালো থাকে, হাসপাতাল থেকে রিলিজ করলে কয়েকদিন পরে আবার এসে হাজির! এই ভাবেই চলছিল। একদিন তার কোন গার্ড নেই এ অবস্হায় (কি ভাবে যে জানালার লক খুলে ফেলে আজও সে রহস্য উদ্ধার করতে পারিনি) সে সেই খোলা জানালা দিয়ে ৫ তালার উপর দিয়ে লাফ দেয়। যা হবার তাই হলো, গুরুতর আহত অবস্হায় তাকে পাশেই ইমারজেন্সীতে নেয়া হলে তাকে ইনটেনসিভে নেয়া হয়, ওখানে সে মারা যায়।

একবার তেরেসাকে প্রশ্ন করে ছিলাম, "তুমি এমন করে হাত পা কাঁটাকাঁটি করো কেন?" উত্তরে মিস্টি হেসে লাজুক বালিকার মতো লজ্জায় মাথা নীচু করে বললো, "ভাল লাগে, তাই করি। আবার পরক্ষনেই বলে উঠে আমি ঠিক জানি না!" লক্ষ্য করে দেখেছি, থেরাপী চলা কালীন তাকে যে জিনিসটা করতে বলতাম সেটা সে মোটামুটি ভাল ভাবেই করার চেস্টা করতো। আবার থেরাপীর গ্যাপ পড়লেই তার কাঁটাকাঁটি শুরু হত!

(সংগত কারনেই এটা তেরেসার আসল নাম নয়)

আরো দেখুনঃ Click This Link

ফেসবুকেঃ ttps://www.facebook.com/Psychobd
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×