(এক)
শফিক আমার গাঁয়ের বাল্য বন্ধু। রক্ষনশীল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার আর ওর বাড়ি পাশাপাশি। মধ্যিখানে কোন সীমানা আইলও ছিলোনা। তবুও যখন মন চাইতো খুব ভয়ে ভয়ে ওর বাড়ি যেতে হতো।
ছোটবেলায় ও আর আমি মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম, ঢালীদের বাগানে গাছে গাছে ঘুঘু আর শালিকের বাসা থেকে বাচ্চা খুজতাম, লাঠিম, ডাংগুলি, কাচের গুলি দিয়ে দান খেলা আবার কখনোবা খালে-খালে নৌকা বেয়ে আরেক গ্রামে চলে যেতাম।
কিন্তু আমি দেখছি ওসবের জন্য ওকে কতো পরিনাম ভোগ করতে হয়েছে সেই শিশুকাল থেকে। ওর বাবার নাম ছিলো রহম আলী। আমরা তাকে খালু ডাকতাম। যার গর্জনে আমি প্রবল ভয়ে পালিয়ে আসতাম ওদের সীমানা থেকে। কিন্তু আমার বন্ধু শফিক পালাতে পারতো না। ওর বাবার ছায়া দেখলেই প্রচন্ড রকম ভয়ে মুরগির বাচ্চার মতো থরথর করে কাপতো শফিক। সেটা দেখে আমার বুকও শুকিয়ে যেতো। তার কিছুক্ষন পর শুনতাম শফিকের মাগো বাবাগো বলে বুক ফাটা কান্না। আমারও চোখ ভিজে জেতো ওর কান্নার শব্দে।
পান থেকে চুন খসলেই প্রায়ই শফিকের মা'কে বেধড়ক পেটাতেন রহম আলী খালু। কতোদিন দেখেছি মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরে রিজিয়া খালার(শফিকের মা) মুখ চোখ লাল হয়ে আছে। মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছে এসে শুধু কাদতেন কোন কথা বলতেন না।
একদিন রাতে শফিকের খুব কান্নাকাটি শুনে পরের দিন সকালে ওকে জিগ্যেস করলামঃ কিরে কালরাতে আবার কেন মার খেলি?
-গতকাল বিকেলে আমার হাত থেকে পরে গিয়ে একটা খালি কাচের বয়াম ভেঙে গিয়েছিলো এজন্য বাবা আমাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে।
অতি ভোরে ঘুমলাগা চোখ নিয়ে আমি আর শফিক আরবি পরতে যেতাম পাড়ার মক্তবে বক্কর মওলানার কাছে। তার হাতে থাকতো জালি বেত। পরনে থাকতো সুন্নতি জুব্বা, মাথায় পাঁচ কল্লি টুপি। আমরা কফ-কাফ, মাখরাজ-গুন্না, যায়গা মতো তিন/চার আলিফ টান-টুন না দিয়ে পড়লে শপাং শপাং গায়ের জোড় দিয়ে বেতের বারি পিঠের উপর মারতেন। আমাদের চোখের জলে ছেপারা-কালাম ভিজে গেলেও হুজুরের মন কোনদিন ভিজতো না। অথচ আমাদের কারো বাড়ির মিলাদের পর দেখতাম তিনি আধা ঘন্টা ধরে মোনাজাত করতেন চোখের জলে দাড়ি ভিজিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের এনআইডি কার্ড পাবার জন্য। তার পর মহানন্দে ভুড়িভোজ করতেন গোগ্রাসে যেন হাবিয়ার দোযোগ তার পেটের ভিতরটা উষর মরুভূমি বানিয়ে রেখেছে কতোকাল।
(চলবে.........!)
ফটোঃ অন্তর্জাল
শফিক আমার গাঁয়ের বাল্য বন্ধু। রক্ষনশীল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার আর ওর বাড়ি পাশাপাশি। মধ্যিখানে কোন সীমানা আইলও ছিলোনা। তবুও যখন মন চাইতো খুব ভয়ে ভয়ে ওর বাড়ি যেতে হতো।
ছোটবেলায় ও আর আমি মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম, ঢালীদের বাগানে গাছে গাছে ঘুঘু আর শালিকের বাসা থেকে বাচ্চা খুজতাম, লাঠিম, ডাংগুলি, কাচের গুলি দিয়ে দান খেলা আবার কখনোবা খালে-খালে নৌকা বেয়ে আরেক গ্রামে চলে যেতাম।
কিন্তু আমি দেখছি ওসবের জন্য ওকে কতো পরিনাম ভোগ করতে হয়েছে সেই শিশুকাল থেকে। ওর বাবার নাম ছিলো রহম আলী। আমরা তাকে খালু ডাকতাম। যার গর্জনে আমি প্রবল ভয়ে পালিয়ে আসতাম ওদের সীমানা থেকে। কিন্তু আমার বন্ধু শফিক পালাতে পারতো না। ওর বাবার ছায়া দেখলেই প্রচন্ড রকম ভয়ে মুরগির বাচ্চার মতো থরথর করে কাপতো শফিক। সেটা দেখে আমার বুকও শুকিয়ে যেতো। তার কিছুক্ষন পর শুনতাম শফিকের মাগো বাবাগো বলে বুক ফাটা কান্না। আমারও চোখ ভিজে জেতো ওর কান্নার শব্দে।
পান থেকে চুন খসলেই প্রায়ই শফিকের মা'কে বেধড়ক পেটাতেন রহম আলী খালু। কতোদিন দেখেছি মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরে রিজিয়া খালার(শফিকের মা) মুখ চোখ লাল হয়ে আছে। মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছে এসে শুধু কাদতেন কোন কথা বলতেন না।
একদিন রাতে শফিকের খুব কান্নাকাটি শুনে পরের দিন সকালে ওকে জিগ্যেস করলামঃ কিরে কালরাতে আবার কেন মার খেলি?
-গতকাল বিকেলে আমার হাত থেকে পরে গিয়ে একটা খালি কাচের বয়াম ভেঙে গিয়েছিলো এজন্য বাবা আমাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে।
অতি ভোরে ঘুমলাগা চোখ নিয়ে আমি আর শফিক আরবি পরতে যেতাম পাড়ার মক্তবে বক্কর মওলানার কাছে। তার হাতে থাকতো জালি বেত। পরনে থাকতো সুন্নতি জুব্বা, মাথায় পাঁচ কল্লি টুপি। আমরা কফ-কাফ, মাখরাজ-গুন্না, যায়গা মতো তিন/চার আলিফ টান-টুন না দিয়ে পড়লে শপাং শপাং গায়ের জোড় দিয়ে বেতের বারি পিঠের উপর মারতেন। আমাদের চোখের জলে ছেপারা-কালাম ভিজে গেলেও হুজুরের মন কোনদিন ভিজতো না। অথচ আমাদের কারো বাড়ির মিলাদের পর দেখতাম তিনি আধা ঘন্টা ধরে মোনাজাত করতেন চোখের জলে দাড়ি ভিজিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের এনআইডি কার্ড পাবার জন্য। তার পর মহানন্দে ভুড়িভোজ করতেন গোগ্রাসে যেন হাবিয়ার দোযোগ তার পেটের ভিতরটা উষর মরুভূমি বানিয়ে রেখেছে কতোকাল।
(চলবে.........!)
ফটোঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৫৪