somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু শফিক।

১২ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(এক)

শফিক আমার গাঁয়ের বাল্য বন্ধু। রক্ষনশীল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার আর ওর বাড়ি পাশাপাশি। মধ্যিখানে কোন সীমানা আইলও ছিলোনা। তবুও যখন মন চাইতো খুব ভয়ে ভয়ে ওর বাড়ি যেতে হতো।

ছোটবেলায় ও আর আমি মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম, ঢালীদের বাগানে গাছে গাছে ঘুঘু আর শালিকের বাসা থেকে বাচ্চা খুজতাম, লাঠিম, ডাংগুলি, কাচের গুলি দিয়ে দান খেলা আবার কখনোবা খালে-খালে নৌকা বেয়ে আরেক গ্রামে চলে যেতাম।

কিন্তু আমি দেখছি ওসবের জন্য ওকে কতো পরিনাম ভোগ করতে হয়েছে সেই শিশুকাল থেকে। ওর বাবার নাম ছিলো রহম আলী। আমরা তাকে খালু ডাকতাম। যার গর্জনে আমি প্রবল ভয়ে পালিয়ে আসতাম ওদের সীমানা থেকে। কিন্তু আমার বন্ধু শফিক পালাতে পারতো না। ওর বাবার ছায়া দেখলেই প্রচন্ড রকম ভয়ে মুরগির বাচ্চার মতো থরথর করে কাপতো শফিক। সেটা দেখে আমার বুকও শুকিয়ে যেতো। তার কিছুক্ষন পর শুনতাম শফিকের মাগো বাবাগো বলে বুক ফাটা কান্না। আমারও চোখ ভিজে জেতো ওর কান্নার শব্দে।

পান থেকে চুন খসলেই প্রায়ই শফিকের মা'কে বেধড়ক পেটাতেন রহম আলী খালু। কতোদিন দেখেছি মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরে রিজিয়া খালার(শফিকের মা) মুখ চোখ লাল হয়ে আছে। মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছে এসে শুধু কাদতেন কোন কথা বলতেন না।

একদিন রাতে শফিকের খুব কান্নাকাটি শুনে পরের দিন সকালে ওকে জিগ্যেস করলামঃ কিরে কালরাতে আবার কেন মার খেলি?
-গতকাল বিকেলে আমার হাত থেকে পরে গিয়ে একটা খালি কাচের বয়াম ভেঙে গিয়েছিলো এজন্য বাবা আমাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে।

অতি ভোরে ঘুমলাগা চোখ নিয়ে আমি আর শফিক আরবি পরতে যেতাম পাড়ার মক্তবে বক্কর মওলানার কাছে। তার হাতে থাকতো জালি বেত। পরনে থাকতো সুন্নতি জুব্বা, মাথায় পাঁচ কল্লি টুপি। আমরা কফ-কাফ, মাখরাজ-গুন্না, যায়গা মতো তিন/চার আলিফ টান-টুন না দিয়ে পড়লে শপাং শপাং গায়ের জোড় দিয়ে বেতের বারি পিঠের উপর মারতেন। আমাদের চোখের জলে ছেপারা-কালাম ভিজে গেলেও হুজুরের মন কোনদিন ভিজতো না। অথচ আমাদের কারো বাড়ির মিলাদের পর দেখতাম তিনি আধা ঘন্টা ধরে মোনাজাত করতেন চোখের জলে দাড়ি ভিজিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের এনআইডি কার্ড পাবার জন্য। তার পর মহানন্দে ভুড়িভোজ করতেন গোগ্রাসে যেন হাবিয়ার দোযোগ তার পেটের ভিতরটা উষর মরুভূমি বানিয়ে রেখেছে কতোকাল।

(চলবে.........!)



ফটোঃ অন্তর্জাল
শফিক আমার গাঁয়ের বাল্য বন্ধু। রক্ষনশীল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার আর ওর বাড়ি পাশাপাশি। মধ্যিখানে কোন সীমানা আইলও ছিলোনা। তবুও যখন মন চাইতো খুব ভয়ে ভয়ে ওর বাড়ি যেতে হতো।

ছোটবেলায় ও আর আমি মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াতাম, ঢালীদের বাগানে গাছে গাছে ঘুঘু আর শালিকের বাসা থেকে বাচ্চা খুজতাম, লাঠিম, ডাংগুলি, কাচের গুলি দিয়ে দান খেলা আবার কখনোবা খালে-খালে নৌকা বেয়ে আরেক গ্রামে চলে যেতাম।

কিন্তু আমি দেখছি ওসবের জন্য ওকে কতো পরিনাম ভোগ করতে হয়েছে সেই শিশুকাল থেকে। ওর বাবার নাম ছিলো রহম আলী। আমরা তাকে খালু ডাকতাম। যার গর্জনে আমি প্রবল ভয়ে পালিয়ে আসতাম ওদের সীমানা থেকে। কিন্তু আমার বন্ধু শফিক পালাতে পারতো না। ওর বাবার ছায়া দেখলেই প্রচন্ড রকম ভয়ে মুরগির বাচ্চার মতো থরথর করে কাপতো শফিক। সেটা দেখে আমার বুকও শুকিয়ে যেতো। তার কিছুক্ষন পর শুনতাম শফিকের মাগো বাবাগো বলে বুক ফাটা কান্না। আমারও চোখ ভিজে জেতো ওর কান্নার শব্দে।

পান থেকে চুন খসলেই প্রায়ই শফিকের মা'কে বেধড়ক পেটাতেন রহম আলী খালু। কতোদিন দেখেছি মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরে রিজিয়া খালার(শফিকের মা) মুখ চোখ লাল হয়ে আছে। মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছে এসে শুধু কাদতেন কোন কথা বলতেন না।

একদিন রাতে শফিকের খুব কান্নাকাটি শুনে পরের দিন সকালে ওকে জিগ্যেস করলামঃ কিরে কালরাতে আবার কেন মার খেলি?
-গতকাল বিকেলে আমার হাত থেকে পরে গিয়ে একটা খালি কাচের বয়াম ভেঙে গিয়েছিলো এজন্য বাবা আমাকে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে।

অতি ভোরে ঘুমলাগা চোখ নিয়ে আমি আর শফিক আরবি পরতে যেতাম পাড়ার মক্তবে বক্কর মওলানার কাছে। তার হাতে থাকতো জালি বেত। পরনে থাকতো সুন্নতি জুব্বা, মাথায় পাঁচ কল্লি টুপি। আমরা কফ-কাফ, মাখরাজ-গুন্না, যায়গা মতো তিন/চার আলিফ টান-টুন না দিয়ে পড়লে শপাং শপাং গায়ের জোড় দিয়ে বেতের বারি পিঠের উপর মারতেন। আমাদের চোখের জলে ছেপারা-কালাম ভিজে গেলেও হুজুরের মন কোনদিন ভিজতো না। অথচ আমাদের কারো বাড়ির মিলাদের পর দেখতাম তিনি আধা ঘন্টা ধরে মোনাজাত করতেন চোখের জলে দাড়ি ভিজিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের এনআইডি কার্ড পাবার জন্য। তার পর মহানন্দে ভুড়িভোজ করতেন গোগ্রাসে যেন হাবিয়ার দোযোগ তার পেটের ভিতরটা উষর মরুভূমি বানিয়ে রেখেছে কতোকাল।

(চলবে.........!)

ফটোঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৫৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×