
রাত আট'টা বাজে। সবে মাত্র অফিস থেকে এসেছি। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখটা একটু বন্ধ করেছি। হঠাৎ উপরের তলা থেকে ধুমধাম শব্দে উঠে বসলাম। হালকা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দও কানে আসছে। ড্রয়িং রুমে এসে দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকালাম। এখন আরো বেশি শব্দ পাচ্ছি টিশার্ট টা গায়ে দিয়ে উপরের তলায় উঠলাম। সাথে সাথে হাত ধরে বাসার মধ্যে টেনে নিয়ে গেলো শেলী ভাবী।
বাসার ভিতরে ঢুকেই দেখি সোফায় বসে মাথা নিচু করে বসে আছে মকবুল ভাই। উনি একটা ব্রোকারেজ হাউজে চাকরি করে। বাংলা মোটরে তার অফিস। আমাকে দেখেই মকবুল ভাই বললঃ -দেখেন ভাই অফিস থেকে এই মাত্র আসলাম আর সাথে সাথে কি শুরু করছে।
আমি শেলী ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললামঃ -কি হইছে ভাবী?
-দেখেন ভাই আমার ছেলে-মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এরই মধ্যে আগামীকাল গ্রাম থিকা উনার বইন, বইনের জামাই বাসায় আসবো। কেমন লাগে? আমার বাসা হইলো একটা লংগর খানা, দুইদিন পর পর অমুকের চাকরির পরীক্ষা, তমুকের ডাক্তার দেখানো, অমুক বিদেশে যাবে, তমুকের পোলার ভর্তি পরীক্ষা। সব আমার বাসায় আইসা উঠে। বলি কতো আর সহ্য করুম ভাই বলেন।
আমি শেলী ভাবীকে থামিয়ে অন্য কিছু বলার চেষ্টা করলাম। তাতে কোন কাজ হলোনা। আবার বলা শুরু করলেন।
-শুনেন ভাই আপনের ভাই মাসের শুরুতে যে ট্যাকা দিসিলো সেইটা এক সপ্তা আগে শেষ আইজ কেবল বাইশ তারিখ। বাকি কয়দিন আমি কেমনে চলুম? এর মইধ্যে আমারে না জানাইয়া প্রতি মাসে উনার ফকিরনি আত্নীয় স্বজনদের জন্য বিকাশে টাকা পাঠায়। আমি সব জানি। মিশচা শয়তান ভাবছে আমি কিচ্ছু জানবো না।
এসব শুনতে শুনতে দেখি মকবুল ভাইয়ের মেয়েটা ট্রেতে করে বেকারি বিস্কুট আর পানির গ্লাস টি-টেবিলের ওপর এনে রাখলো। আবার শেলী ভাবীর বলা শুরু করলোঃ
-বলি কেন উনারতো আরো এক ভাই আছে হাজারিবাগে থাকে। সেখানে কেউ গ্রাম থিকা আইসা উঠে না কেন? কারন চান্স পায়না সেখানে। "আমি দেইখ্যা এই ব্যাডার সোংসার করলাম, আর কেউ হইলে................"।
সেই কমন ডায়লগ। আমি কি বলবো ঠিক করতে পারছিনা। তবুও বললাম ভাবী এসব আপনারা দুজনে রাতে খাবার দাবার শেষ করে আলোচনার করে মিটিয়ে নিতে পারেন। আশপাশ সজাগ করার কি দরকার। এই কথা শুনে আবার বলা শুরু করলোঃ
-মেয়ের একটা অংকের টিচার দিতে কই, রেখে দেয়না। বাসার ব্লেন্ডার মেশিন নষ্ট আজ চার মাস। আমি বসে বসে শীল পাটায় আদা রসুন বাটতে পারিনা আমার কোমরে ব্যাথা। আমি আর পারি না, মনে হয় গলায় দড়ি দিই। এসব বলতে বলতে কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছতে শুরু করেছেন।
মকবুল ভাই ঠান্ডা কিসিমে’র মানুষ। এরকম ঘটনার মুখোমুখি মাসে এক দুই বার এ বাসায় আমি হই। আমারও গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমি জানি এরপর শেলী ভাবী সংসারের খরচের ফিরিস্তি দেয়া শুরু করবে।
আমি এও জানি মকবুল ভাইকে গত মাসে অফিস থেকে নোটিশ দিয়েছে চাকরি রিজাইন দেয়ার জন্য। শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালোনা। ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাই কর্মী ছাটাই করছে।
এই কথা শেলী ভাবী এখনো জানে না। জানিনা উনি জানলে কি হবে সিচুয়েশন। মকবুল ভাইয়ের জন্য আমি আমার পরিচিত দুইটা কোম্পানিতে সিভি জমা দিয়ে রেখেছি।
আমি এই ফাঁকে মকবুল ভাইকে বলে বাসায় চলে আসছি। আবারো বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে ভাবছি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পগুলো কি এমনই হয়? কেন এমন হয়??
ঢাকা, ০৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ছবিঃ অন্তর্জাল
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


