somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাত্যহিকী-২

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত আট'টা বাজে। সবে মাত্র অফিস থেকে এসেছি। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখটা একটু বন্ধ করেছি। হঠাৎ উপরের তলা থেকে ধুমধাম শব্দে উঠে বসলাম। হালকা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দও কানে আসছে। ড্রয়িং রুমে এসে দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকালাম। এখন আরো বেশি শব্দ পাচ্ছি টিশার্ট টা গায়ে দিয়ে উপরের তলায় উঠলাম। সাথে সাথে হাত ধরে বাসার মধ্যে টেনে নিয়ে গেলো শেলী ভাবী।

বাসার ভিতরে ঢুকেই দেখি সোফায় বসে মাথা নিচু করে বসে আছে মকবুল ভাই। উনি একটা ব্রোকারেজ হাউজে চাকরি করে। বাংলা মোটরে তার অফিস। আমাকে দেখেই মকবুল ভাই বললঃ -দেখেন ভাই অফিস থেকে এই মাত্র আসলাম আর সাথে সাথে কি শুরু করছে।

আমি শেলী ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললামঃ -কি হইছে ভাবী?

-দেখেন ভাই আমার ছেলে-মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এরই মধ্যে আগামীকাল গ্রাম থিকা উনার বইন, বইনের জামাই বাসায় আসবো। কেমন লাগে? আমার বাসা হইলো একটা লংগর খানা, দুইদিন পর পর অমুকের চাকরির পরীক্ষা, তমুকের ডাক্তার দেখানো, অমুক বিদেশে যাবে, তমুকের পোলার ভর্তি পরীক্ষা। সব আমার বাসায় আইসা উঠে। বলি কতো আর সহ্য করুম ভাই বলেন।

আমি শেলী ভাবীকে থামিয়ে অন্য কিছু বলার চেষ্টা করলাম। তাতে কোন কাজ হলোনা। আবার বলা শুরু করলেন।
-শুনেন ভাই আপনের ভাই মাসের শুরুতে যে ট্যাকা দিসিলো সেইটা এক সপ্তা আগে শেষ আইজ কেবল বাইশ তারিখ। বাকি কয়দিন আমি কেমনে চলুম? এর মইধ্যে আমারে না জানাইয়া প্রতি মাসে উনার ফকিরনি আত্নীয় স্বজনদের জন্য বিকাশে টাকা পাঠায়। আমি সব জানি। মিশচা শয়তান ভাবছে আমি কিচ্ছু জানবো না।

এসব শুনতে শুনতে দেখি মকবুল ভাইয়ের মেয়েটা ট্রেতে করে বেকারি বিস্কুট আর পানির গ্লাস টি-টেবিলের ওপর এনে রাখলো। আবার শেলী ভাবীর বলা শুরু করলোঃ
-বলি কেন উনারতো আরো এক ভাই আছে হাজারিবাগে থাকে। সেখানে কেউ গ্রাম থিকা আইসা উঠে না কেন? কারন চান্স পায়না সেখানে। "আমি দেইখ্যা এই ব্যাডার সোংসার করলাম, আর কেউ হইলে................"।

সেই কমন ডায়লগ। আমি কি বলবো ঠিক করতে পারছিনা। তবুও বললাম ভাবী এসব আপনারা দুজনে রাতে খাবার দাবার শেষ করে আলোচনার করে মিটিয়ে নিতে পারেন। আশপাশ সজাগ করার কি দরকার। এই কথা শুনে আবার বলা শুরু করলোঃ
-মেয়ের একটা অংকের টিচার দিতে কই, রেখে দেয়না। বাসার ব্লেন্ডার মেশিন নষ্ট আজ চার মাস। আমি বসে বসে শীল পাটায় আদা রসুন বাটতে পারিনা আমার কোমরে ব্যাথা। আমি আর পারি না, মনে হয় গলায় দড়ি দিই। এসব বলতে বলতে কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ মুছতে শুরু করেছেন।

মকবুল ভাই ঠান্ডা কিসিমে’র মানুষ। এরকম ঘটনার মুখোমুখি মাসে এক দুই বার এ বাসায় আমি হই। আমারও গা-সওয়া হয়ে গেছে। আমি জানি এরপর শেলী ভাবী সংসারের খরচের ফিরিস্তি দেয়া শুরু করবে।

আমি এও জানি মকবুল ভাইকে গত মাসে অফিস থেকে নোটিশ দিয়েছে চাকরি রিজাইন দেয়ার জন্য। শেয়ার বাজারের অবস্থা ভালোনা। ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাই কর্মী ছাটাই করছে।

এই কথা শেলী ভাবী এখনো জানে না। জানিনা উনি জানলে কি হবে সিচুয়েশন। মকবুল ভাইয়ের জন্য আমি আমার পরিচিত দুইটা কোম্পানিতে সিভি জমা দিয়ে রেখেছি।

আমি এই ফাঁকে মকবুল ভাইকে বলে বাসায় চলে আসছি। আবারো বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে ভাবছি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পগুলো কি এমনই হয়? কেন এমন হয়??

ঢাকা, ০৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।



ছবিঃ অন্তর্জাল

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের ট্যাক্স এর টাকা খরচ করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা কি আমাদের সেবা দিতে পারছে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬



আমার আব্বুর চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় ঘুরা লাগে। তাই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনও বহুবার গিয়েছি। আমরা গুলিস্থান থেকে ঢাকা টু দাউদকান্দি বাসে চরে ভবেরচর যাই। এখন কথা হচ্ছে কমলাপুর এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....

লিখেছেন আমি সাজিদ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×