somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাত্যহিকী-৩

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রেনুকে গতকাল হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বাসায় নিয়ে এসেছেন মতিন ভাই। এটা রেনুর তৃতীয় ইস্যূ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিন তিনটা বাচ্চা। বিরাট ধকল গিয়েছে রেনুর শরীরের উপর দিয়ে। শেষের ইসুটা একদম অপ্রত্যাশিত। বছরের এ মাথায় আর ওমাথায়। এ নিয়ে ডাক্তারের বেশি কথা শুনতে হয়েছে রেনুকে । তবে ডাক্তার শেষ বারে লাইগেশন করার পরামর্শ ছিল এবং মতিন ভাইও সেটাতে সম্মতি দিয়ে এবার সিজারের সময় লাইগেশন করে নিয়েছে।

ঢাকায় রেনুর কোন আত্মীয় সজন নেই মতিন ভাইয়েরও নেই বললেই চলে। গ্রাম থেকে পার্মানেন্ট কোনো কাজের লোকও আনতে পারছে না। এই অবস্থার মধ্যেও রেনুর রান্না-বান্না করতে হচ্ছে, ছেলে মেয়েদের গোসল, খাওয়ানো, অসুখ-বিসুখ সবই একহাতে সামলাতে হচ্ছে।
মতিন ভাই একটা ঔষধ কোম্পানিতে সেলসে চাকরি করে। সারাদিন টার্গেট নিয়ে টেনশন। এরমধ্যে সে সংসারের কোন কাজে রেনুকে ঠিকমতো সাহায্যও করতে পারছে না।

সন্ধ্যার পর বাজার করে নিয়ে বাসায় ফিরে মতিন ভাই। মাছ-মাংস তো বাজার থেকে কাটিয়ে আনা যায় কিন্তু তরকারি কোটা, ঘরের ফ্লোর মোছা, বাচ্চাদের কাপড়-চোপড় কাঁচা, বিছানা বালিশ গোছানোর কাজ মতিন ভাই করে দেয়ার চেষ্টা করে। আর সকালে বড় বাচ্চাটাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে অফিসে চলে যায়।

সংসারে নানান ধরনের টানাটানি থাকলেও কোনদিন কোন উচ্চ স্বরে বাক্যালাপ হয়নি বাসায়। তবে ইদানীং রেনুর বিরাট কষ্ট হচ্ছে সব সামলাতে।

গত সপ্তাহে মতিন ভাইয়ের বড় বোন চৌদ্দ-পনের বছরের একটা মেয়েকে রেনুর বাসার কাজের জন্য ঠিক করে দিয়ে গেছে। মেয়েটির নাম শেফালি। ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত পড়েছে। শেফালির মায়ের সাথে চুক্তি হয়েছে থাকা-খাওয়া সহ মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে । আর দুই তিন বছরের মধ্যে একটা ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।

শেফালী এ বাসায় আসার পর রেনুর আসলেই একটু উপকার হয়েছে। ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়া, ঘর মোছা, থালা-বাসন ধোঁয়া, শেফালীই করে দেয়। শেফালি মতিন ভাইকে আব্বু ডাকে আর রেনুকে আম্মু।

ভালোই চলছে শেফালির ঢাকা শহরের জীবন। সামনেই রোজার ঈদ। ঈদের সময় বাড়ি যাবে। এজন্য শেফালি তার বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য নতুন কাপড়, সেমাই-চিনিও কিনেছে।

মতিন ভাই ফ্যামিলি নিয়ে প্রতি রোজার ঈদেই গ্রামের বাড়ি যায়। এবারও সবাই মিলে সাতাশে কদরের পর দিন গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলো। আবার ইদের পর সবাইকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে। পুরো দমে চালু হয়ে গেছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবকিছু।

দেখতে দেখতে দেড় বছর কেটে গেল শেফালির ঢাকা শহরের জীবন। তবে ইদানিং শেফালির মতি-গতি খুব একটা ভালো ঠেকছে না। উত্তর দিকের ব্যালকনিতে ঘন ঘন গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, দূর থেকে কাকে যেন ইশারা ইঙ্গিত করে। এটা টের পেল রেনু।
একদিন শেফালির ব্যাগের ভিতর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। পাওয়া গেল একটা মোবাইল ফোন। রেনু আর ঝুঁকি নিতে রাজি হলো না, যা দিনকাল পড়েছে যদি পালিয়ে টালিয়ে যায় তাহলে কি জবাব দিবে তার মা-বাবার কাছে? কি জবাব দেবে বড় ননদের কাছে। তাই লোক মারফত পাঠিয়ে দেওয়া হল শেফালিকে তার গ্রামের বাড়িতে।

একমাস পর খবর হল, ঢাকা থেকে যে ছেলের সাথে যোগাযোগ করে গিয়েছিল তার সাথেই শেফালির বিয়ে হবে। বিয়ের খরচ বাবদ কিছু টাকা যেন শেফালির মা'কে দেয়া হয়। খরচ বাবদ দশ হাজার টাকা পাঠানো হলো।

ফরিদপুরের কোন এক গ্রামে শেফালির বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ের চার মাসের মাথায় শেফালি পোয়াতি হলো,পাঠিয়ে দেয়া হলো বাপের বাড়িতে, কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে বাচ্চা হলো।

কয়েক মাস পর হঠাৎ একদিন শেফালির ফোন এলো রেনুর মোবাইলে-
-আম্মু কেমন আছেন? আব্বু কেমন আছে?
-হ্যাঁরে শেফালি সবাই ভালো আছি তুই কেমন আছিস?
-ভালো না আম্মু, পোলার বয়স এখন ছয় মাস হইছে, এখন পর্যন্ত তার বাপে তারে দেখতে আসে নাই। মোবাইল করলে খালি গাইল দেয়। কোন খোঁজ খবর নেয় না, কয় তালাক দিয়া দিবো।

তারপর অপরপ্রান্ত থেকে কান্নার সুর ভেসে আসতে থাকলো কিছুক্ষণ........!

ছবিঃ অন্তর্জাল।
ঢাকা, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

(পোষ্টের সকল চরিত্র স্থান কাল পাত্র সম্পুর্ন কাল্পনিক। কারো সাথে হুবহু বা আংশিক মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।


প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪১
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×