somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে ?

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশ। একটা সময় যার নাম উচ্চারণ মানেই ছিল উন্নয়নের বিস্ময়, দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল,নারীর ক্ষমতায়নের উদাহরণ। শহর থেকে গ্রাম রাস্তা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি সবখানেই একটানা এগিয়ে চলার গল্প। এক সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছিল, তখন বাংলাদেশ যেন বলছিল, “আমরাও পারি”এমন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল জাতি।

এই উন্নয়নের পেছনে ছিল নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা, পরিকল্পনা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজে ধর্ম থাকবে, কিন্তু রাজনীতিতে নয় এই ছিল মূল দর্শন। সেই দর্শনেই জন্ম নিয়েছিল নারী কর্মসংস্থানের ঢেউ, গ্রামীণ অর্থনীতির উত্থান, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন, এবং মানবিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

প্রায় দেড় দশক ধরে দেশটি ছিল অর্থনৈতিক সূচকের ধারাবাহিক উত্থানে। মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে, মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

গ্রামে-গঞ্জে আলোর ছোঁয়া পৌঁছেছে, নদীর ওপর একের পর এক সেতু, আর শহরে উড়ালসড়ক সবকিছু মিলিয়ে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রতীক ছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে (The Economist, 2022) দেশের প্রবৃদ্ধিকে “miracle of South Asia” বলা হয়েছিল।

সময়ের স্রোত বদলাতে বেশি সময় লাগে না। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দৃশ্যপট বদলে গেল। বাজারে আগুন, বৈদেশিক রিজার্ভে ধস, শিল্পে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে ভাটা। যেখানে আগে মানুষ উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক করত, এখন করে চাল-ডাল-তেলের দাম নিয়ে। যেখানে তরুণরা স্টার্টআপ খুলে স্বপ্ন দেখত, এখন তারা বিদেশ যাওয়ার উপায় খোজে।

এই এক বছরে সংবাদপত্রের শিরোনামগুলো যেন একটাই বার্তা দেয়—আশা হারানোর গল্প। (প্রথম আলো, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: “বেকারত্ব বেড়েছে, বিনিয়োগ হ্রাস”) (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ জুলাই ২০২৫: “গ্রামীণ অর্থনীতি থমকে গেছে”)

যেখানে শূন্যতা, সেখানেই অন্ধকার জায়গা নেয়। সমাজবিজ্ঞান বলে যখন মানুষ হতাশ হয়, অনিশ্চয়তায় পড়ে, তখন ধর্মীয় চেতনা সহজেই রাজনৈতিক রূপ নেয়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। যখন কর্মসংস্থান নেই, যখন রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনা দুর্বল, তখন মানুষ নতুন রক্ষাকারী খোঁজে। এই সুযোগেই উত্থান ঘটে মৌলবাদি রাজনীতির যা ধর্মের আবেগকে ব্যবহার করে রাজনীতির মাঠ দখল করতে চায়। তাদের বক্তব্য: “সব খারাপ হয়েছে কারণ সমাজ ধর্ম থেকে দূরে গেছে।”এই এক বাক্যেই হতাশ মানুষদের বিশ্বাস জয় করা সহজ।
আর সেই বিশ্বাসই এখন ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে সংগঠিত শক্তিতে। (দৈনিক যুগান্তর, ১১ আগস্ট ২০২৫: “ধর্মভিত্তিক সংগঠনের কার্যক্রম বেড়েছে গ্রামীণ এলাকায়”)

বাংলাদেশের সামাজিক চরিত্র সবসময়ই উদার ও সহিষ্ণু ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক চাপ, কর্মসংস্থানের সংকট, ও রাজনীতির অনিশ্চয়তা সমাজের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। ধর্মীয় প্রতীকগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক অর্থ বহন করছে। বিপজ্জনক বিষয় হলো এই মানসিক পরিবর্তন ধীরে ধীরে তরুণ সমাজকে বিভাজিত করছে। একদল স্বপ্ন খুঁজে ফেরে উন্নয়নে, আরেক দল মুক্তির খোঁজে অতীতে ফিরে যেতে চায়।

দেশে এখন সবচেয়ে বড় অভাব দিকনির্দেশনার। যে আত্মবিশ্বাসে মানুষ এক সময় বলতঃ ‘বাংলাদেশ পারবে‘ সেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে বসেছে। নেতৃত্ব এখন খণ্ডিত, প্রশাসন অনিশ্চিত, আর রাজনৈতিক মাঠ চরম উৎকন্ঠায় ভরা। এই শূন্যতাই মৌলবাদি রাজনীতির সবচেয়ে বড় সুযোগ।

যে দেশে একসময় ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল গর্বের প্রতীক, যে জাতি মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল, যে দেশে তরুণরা কোডিং শেখে ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যাস্ত যে দেশে লোডশেডিং কি তা ভুলে গেছিলো মানুষ সেই দেশে এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে হাসপাতালের অপারেশন বন্ধ” (কালের কণ্ঠ, ২২ জুন ২০২৫)। সেই দেশে উন্নয়নের সোনালি রথটা হঠাৎ করেই বালুচরে আটকে গেছে।

বাংলাদেশ কি আবার প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় ফিরবে? নাকি মৌলবাদি আবেগের ঢেউ সমাজকে আরও বিভক্ত করবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে নাগরিক সচেতনতার ওপর। তবে যতদিন মানুষ বিশ্বাস করবে যে উন্নয়নই মুক্তির পথ, ততদিন প্রগতিশীলতার বাতি নিভবে না।

বাংলাদেশ অনেক কিছু হারাতে পারে অর্থনীতি, বিদেশি বিনিয়োগ, রাজনৈতিক স্থিতি কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর হবে বিশ্বাস হারানো। কারণ বিশ্বাসই ছিল এই জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ যদি সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়, তবে মৌলবাদি রাজনীতি টিকবে না। কারণ বাংলাদেশ নামের দেশটা গড়ে উঠেছিল এক মুক্তির আদর্শে যেখানে ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু ধর্ম রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।

এখন সময় আছে সেই বিশ্বাসে ফেরার তা না হলে হয়তো একদিন ইতিহাস বইয়ে লেখা থাকবে, “এক দেশে উন্নয়নের আলো ছিল, কিন্তু তারা তা সংরক্ষণ করতে পারেনি।”

ঢাকাঃ
২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছবিঃ অন্তর্জাল

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×