somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খলিফা প্রজাদের সেবক..

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত উমর (রা)।
মহান এক খলিফার নাম।
ইসলামী খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা তিনি।
অর্ধ পৃথিবীর মহান বাদশাহ হযরত উমর (রা), অথচ নিজের সুখ শান্তি নিয়ে তিনি মোটেও ভাবতেন না।
তার শুধু চিন্তা দেশের জনগণকে নিয়ে, তাদের সুখ ও কল্যাণ নিয়ে।
কিভাবে প্রজাদের কল্যাণ করা যায় সেটাই ছিল তার সারাক্ষণের চিন্তা।
প্রজাদের চিন্তায় তিনি রাতেও ঘুমাতে পারতেন না। সবাই যখন নিদ্রায় থাকত হযরত উমর (রা) তখন ঘুরে বেড়াতেন শহরের অলিতে গলিতে।
রাতের আঁধারে কেউ জেগে নেই, অথচ উমরের দু’চোখ দিব্যি জেগে থাকত। সারাদিন কাজের পরও রাতে তিনি বিশ্রাম নিতেন না। বরং রাতের আঁধারে তিনি বেরিয়ে পড়তেন রাস্তায়।
চাঁদনী রাতের সৌন্দর্য দেখতে নয়, কিংবা নির্মল আকাশের রূপ দেখতেও নয়। বরং প্রজাদের অবস্থা দেখতে তিনি ঘুরে বেড়াতেন। দিনে সরকারী কাজে খলিফা ব্যস্ত থাকতেন। তাই রাতের অবসর সময়টাকে তিনি বেছে নেন।
এমনিভাবে হযরত উমর (রা) এক রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মদীনার রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। নির্জন নীরব প্রকৃতি।
খলিফা একাকী হেঁটে চলছেন একমনে। ঘুরতে ঘুরতে একটা তাঁবুর পাশে এসে তিনি দাঁড়ালেন।
তাঁর কানে কান্নার শব্দ ভেসে আসল। তাঁবুর ভেতরে কারা যেন কাঁদছে।
উমর (রা) ঘটনা জানার চেষ্টা করলেন। তাই তিনি কাছে এগিয়ে গেলেন। খলিফা দেখলেন এক মহিলা উনুনে হাঁড়ি বসিয়ে তাতে জ্বাল দিচ্ছে। বাচ্চাদের কান্না দেখে খলিফার মন ভারী হয়ে উঠলো। তিনি এবার মহিলাকে কাছে ডাকলেন।
তাকে জিজ্ঞেস করলেন, বুড়ি মা! ছেলেমেয়েরা কাঁদছে কেন? উনুনের উপর দেখছি হাঁড়িতে জ্বাল দিচ্ছেন। এটা কেন করছেন?
মহিলা জবাব দিলেন, বাবা, তিন দিন যাবত ছেলে-মেয়েদের কিছুই খেতে দিতে পারিনি। ঘরে কোন খাবার নেই। আমি বিধবা মানুষ, খাদ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই ছেলে-মেয়েদের ভুলিয়ে রাখার জন্য শূন্য হাঁড়িতেই আগুন দিচ্ছি। ভাবছি ওরা কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখনই আগুন নিভিয়ে দেব।
মহিলার কথা শুনে হযরত উমরের হৃদয় মন কেঁপে উঠল। মনের গভীরে রক্তক্ষরণ হলো। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না।
দু‘চোখ বেয়ে তাঁর নেমে এল অশ্রুধারা।
তাঁরই সাম্রাজ্যের মানুষের এত কষ্ট! তিনি ভাবতেই পারছেন না।
তাঁর শুধু ভাবনা, কি জবাব দেবেন তিনি মহান আল্লাহর নিকট। আল্লাহর ভয় তাকে পেয়ে বসল। আর দেরী করলেন না উমর।
মহিলাকে সান্ত্বনা দিয়ে দ্রুত তিনি ফিরে এলেন খাজাঞ্চির কাছে। কিছু ময়দা, ঘি, গোশত ও খেজুর নিয়ে একটা বোঝা বাঁধলেন।
তারপর খাদেম আসলামাকে বললেন, বোঝাটা আমার কাঁধে তুলে দাও।
খলিফা নিজ কাঁধে বোঝা নেবেন?
আসলামা তা মেনে নিতে পারলেন না। তাই আসলামা বললেন, বোঝাটা আমাকে দিন। আপনি আমাদের সম্মানিত খলিফা। এ কাজ মানায় না।
কিন্তু উমর (রা) নাছোড় বান্দা।
তিনি আসলামাকে বললেন, না, আসলামা, তা হয় না।
তুমি তো হাশরের মাঠে আমার পাপের বোঝা বহন করবে না, তাই আমার বোঝা আমাকেই বহন করতে দাও।
খাদেম আসলামা এবার চুপ হয়ে গেল। সে আর কিছুই বলতে পারল না। বরং খলিফা উমরের কাঁধে বোঝাটা তুলে দিয়ে শুধু তাকিয়ে থাকল খাদেম। উমর (রা) বোঝা কাঁধে নিয়ে দ্রুত ছুটে গেলেন মহিলার তাঁবুতে।
গাঢ় অন্ধকার রাত। মদীনার পথে-ঘাটে মানুষ জন নেই।
খলিফা ঊর্ধ্বশ্বাসে তাঁবুতে ছুটে এলেন।
খাদ্যভর্তি বোঝা নিয়ে তিনি বুড়ির সামনে গিয়ে হাজির হলেন। মহিলাকে তাড়াতাড়ি রান্না করতে বললেন। মহিলা ময়দা দিয়ে রুটি তৈরী করল। আর খলিফা নিজে হাতেই তা সেঁকে দিলেন।
তারপর কচি ছেলে-মেয়েদেরকে নিজ হাতে খাওয়ালেন উমর (রা)। ওদের কান্না এবার থেমে গেল। মহিলার চোখে-মুখে অপরিসীম তৃপ্তির রেখা ফুটে উঠলো। আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায় আত্মহারা হলো মহিলা।
এবার বিধবা মহিলা উমরকে (রা) উদ্দেশ্য করে বলল,
উমর খলিফা না হয়ে যদি তুমি খলিফা হতে তাহলে দুঃখী মানুষের কতই না উপকার হত। আমাদের আর উপোস থাকতে হত না। আমাদের সব অভাব-অনটন ঘুচে যেত।
মহিলার কথা শুনে খলিফা হা হয়ে গেলেন। তারপর জবাব বললেন,
দোয়া করবেন মা। উমর যেন এভাবেই জনগণের খেদমত করতে পারে।
লোকটার কথা শুনে মহিলা তো হতবাক।
অর্ধ দুনিয়ার মালিক উমর (রা) তারই সামনে দাঁড়িয়ে। তৎক্ষণাৎ মহিলার মাথা শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ল খলিফার সামনে।
হযরত উমরের কল্যাণকর কাজের জন্য বুক ভরে দোয়া করলেন মহিলা।
উমর (রা) তৃপ্তির মন নিয়ে যখন তাঁবু হতে বিদায় নিলেন রাত তখন গভীর। এতক্ষণে দরিদ্র মহিলার ছেলে-মেয়েরাও খাবার ধেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ মানুষের বাদশাহ উমর (রা) একাকী পথ চলছেন বাড়ীর দিকে।
তিনি হয়তো ঘুমুতেই পারেননি সে রাতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×