somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাসুদ রানার বই আক্রমণ এর (র্পব-৮) প্রকাশ করলাম...

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিখুঁতভাবে সফল হয়।’
‘সামনের সাপ্তাহিক ছুটিতে কাজটা শেষ করবো আমরা, আমাদের লোকজন
কাজে নেমে পড়েছে। এ-ব্যাপারে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। সব ঠিকঠাক
মতোই ঘটবে।’
‘আর মাসুদ রানা? তার কি হবে?’
‘মঞ্চ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়াই বোধহয় ভালো। ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের
একজন উপদেষ্টা সে। তবে এটাও নাকি তার আসল পরিচয় নয়। ইনফরমাররা
বলছে, রানা নাকি এসপিওনাজ জগতের কিংবদন্তী, অত্যন্ত দক্ষ সংগঠক, যে-
কোনো ঝুঁকি নিতে পারে। লিডার হিসেবে তার নাকি তুলনা হয় না। কিলার
হোয়েলের ত্রিরতèকে যারা পাহারা দেবে, রানা যে তাদের লিডার হিসেবে থাকবে
তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
‘ঘটনাটা ঘটার আগে যদি তাকে আমরা সরিয়ে দিই?’ জিজ্ঞেস করলো
কেনেথ কালভিন। ‘সে মারা গেলে তার জায়গায় কি নতুন আরেকজনকে পাঠানো
হবে, তার মতো যোগ্য কাউকে?’
‘তার বদলে অন্য কেউ তো আসবেই,’ বললো ফারাজ লেবানন। ‘তবে তার
মতো যোগ্য লোক পাবে কোথায়? বলা হচ্ছে রানার নাকি জুড়ি নেই। আরেকজন
যে ছিলো জেমস বণ্ড, সে গুরুতর অসুস্থ।’
আবার দীর্ঘ কয়েক সেকেণ্ডের বিরতি। ছাগলের ডাক শোনা গেল, একজন
২০
রাখাল খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। লোকজন, সম্ভবত চাকর-বাকররা, তর্ক করছে দূরে
কোথাও।
‘লোকটা মুসলিম, তাই না?’ অবশেষে জিজ্ঞেস করলো কেনেথ কালভিন।
‘হ্যাঁ,’ বললো ফারাজ লেবানন। ‘কেন জানতে চাইছেন?’
‘আগামী মাসে ক্রিসমাস,’ বললো কেনেথ কালভিন। ‘লোকটা খ্রিস্টান হলে
নিশ্চয়ই কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতো।’
‘খ্রিস্টান হোক আর না হোক, ছুটি তো পাবেই,’ বললো লেবানন। ‘আর ছুটি
পেলে ন্যাভাল বেস ছেড়ে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাবেই। কিন্তু কি ভাবছেন
বলুন তো?’
চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কেনেথ কালভিনের। ‘কোথাও বেড়াতে যাবে,
তাই না? ভেরি গুড।’ হঠাৎ কঠোর হয়ে উঠলো তার চেহারা। ‘খোঁজ নিয়ে জানুন
কোথায় ছুটি কাটাতে যায় লোকটা। আমি তাকে বিড়ালের হাতে তুলে দেবো।
আমাদের ব্যর্থ হবার আশঙ্কা তাতে কমবে।’
রিজেন্ট পার্কের কাছাকাছি, ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের হেড-কোয়ার্টারে,
প্রতিলিপিটা পড়ছে জন মিচেল, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মারভিন লংফেলো।
মিচেল খুব দ্রুত পড়তে পারে, তবু ধৈর্য হারিয়ে ডেস্কের ওপর আঙুল নাচাচ্ছেন
তিনি। মিচেল শেষ করতেই ভারি গলায় জানতে চাইলেন তিনি, ‘কি বুঝলে?’
‘প্রচুর তথ্য জানে ওরা,’ ¤−ানকণ্ঠে বললো মিচেল। ‘ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের
বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুপারিশ করবো, স্যার।
গোটা ব্যাপারটা বাতিল করে দিন।’
‘হুম!’ একটা দীর্ঘশ্বাস চাপলেন মারভিন লংফেলো। ‘কিন্তু, চীফ অভ স্টাফ,
কল্পনা করতে পারো আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে? কি ধরনের কি জড়িত
জানি, সেজন্যেই ভয় পাচ্ছি গোটা ব্যাপারটা বাতিল করার চেষ্টা করলেও ঝুঁকি
আছে।’
নিজের প্রিয় জায়গা অর্থাৎ খোলা জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো জন
মিচেল, ‘হুম’ আওয়াজটা এবার তার গলা থেকে বেরুলো। নিচের পার্কের দিকে
চোখ রেখে বললো সে, ‘সমস্যাটা আমি বুঝি, স্যার। কিন্তু খারাপ কিছু যদি
ঘটে...’
‘আমাদের সামনে একটা রাস্তাই খোলা আছে, খারাপ কিছু ঘটতে না দেয়া।
রানাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করার একটা সুযোগ দেখতে পাচ্ছি আমি। ঝুঁকি
আছে, মারাÍক ঝুঁকি, কিন্তু এ-ধরনের ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত রানাÑএতো বড় এজেন্ট
তো আর এমনি এমনি হয়নি ছেলেটা। ক্রিসমাস সম্পর্কে কেনেথ কালভিন কি
বললো শুনলে তো। ওদেরকে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিয়ে একটা ফাঁদ
পাততে অসুবিধে কি আমাদের? ওরা প্রকাশ্যে তৎপর হলে লাভ আমাদেরই, তাই
না?’
‘রানাকে আপনি বাঘের টোপ হিসেবে ছাগল বানাতে চান, স্যার?’
‘ছাগল বলতে রাজি নই আমি, বরং স্টকিং-হর্স বলা যেতে পারেÑঘোড়া বা
ঘোড়ার ডামির আড়ালে থেকে শিকারীরা শিকারের দিকে এগোয়, জানো তো?
অবশ্য আগে ওর অনুমতি পেতে হবে। দেরি করো না, জন, রানার সাথে
সাক্ষাতের আয়োজন করো। কিন্তু সাবধান, শতকরা একশো ভাগ নিরাপদ হওয়া
চাই। বুঝতে পারছো তো?’
‘পারছি, স্যার।’
‘বিড়াল,’ যেন আপনমনে বিড়বিড় করছেন মারভিন লংফেলো।
‘বাস্টÑভাইপারের ওপর চড়ে আছে তিনমাথা নিয়ে একটা দানব। একটা মাথা
মানুষের, একটা সাপের, তৃতীয়টা বিড়ালের। বিড়াল, জন।’
‘গে−নডা বার্ক, তাই না?’
‘কি আছে ফাইলে?’
‘খুবই সামান্য, স্যার। আমরা জানি, এক সময় মোসাড-এর সাথে চুক্তিতে
কাজ করেছে সে। বৈরুতে ফ্রি-ল্যান্সার স্পাই হিসেবে বিভিন্ন গ্র“পের হয়ে
স্যাবোটাজ চালিয়েছে। কারণ যাই হোক, আজ পর্যন্ত তার কোনো ফটো কোথাও
পাওয়া যায়নি। গে−নডার বয়স সাতাশ বা আটাশ হবে। আমরা আরো জানি,
অপূর্ব সুন্দরী সে। ছদ্মবেশে, ছদ্ম-পরিচয়ে গোপন কাজ করে অভ্যস্ত। তার
চেহারার বর্ণনা আজও আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি।’
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে মারভিন লংফেলো বললেন, ‘রানার দুর্বলতা টের
পেয়ে গেছে ওরা। সুন্দরী মেয়েদের সান্নিধ্য ভালোবাসে ও। তবে একটা তথ্য
সম্ভবত জানা নেই ওদের, সুন্দরী মেয়ে মাত্রই রানার দৃষ্টিতে সন্দেহের পাত্রী।
গে−নডা বার্ক সম্পর্কে আরো তথ্য পাবার চেষ্টা করো, জন। তারপর রানার সাথে
আমার দেখা করার ব্যবস্থা করো। আবার বলছি, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে
আয়োজনটা করতে হবেÑকোনো ফাঁক থাকা চলবে না, নিরাপত্তার ব্যবস্থা হওয়া
চাই নিñিদ্র।’
মাথা ঝাঁকালো জন মিচেল। অফিস কামরা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় গম্ভীর
এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দেখালো তাকে।

হ্যারিয়ার কোর্স ক্রমশ আরো বেশি সময় কেড়ে নিচ্ছে রানার। প্রতিদিন দূরত্বের
সীমা আগের দিনের চেয়ে বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিবার নতুন বম্বিং রেঞ্জে বোমা
ফেলে আসছে রানা। ফাইটার পাইলট হিসেবেও নতুন নতুন দায়িত্ব চাপছে ওর
ঘাড়ে।
প্রথমে সিমুলেটর-এ, তারপর আরো বিপজ্জনক বাস্তব ক্ষেত্রে, নিয়মিত
ডগÑফাইট টেকনিক শিখছে ওÑকখনো অন্য পে−নে ওর ইনস্ট্রাকটর থাকছে,
কখনো কোর্সমেটরা।
কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে রানাকে, তার ওপর রুবি বেকারকে নিয়ে
উদ্বেগের অন্ত নেই। ওর নির্লিপ্ত ব্যবহারে উল্টো ফল ফললো, রানার প্রতি আরো
ঝুঁকে পড়লো মেয়েটা। প্রায় প্রতিদিন আকাশ থেকে পে−ন নিয়ে নামার পর তাকে
ওর জন্যে অপেক্ষা করতে দেখলো রানা। কিংবা হয়তো অ্যান্টিরুমে ঘুর ঘুর
করছে, অথবা রানার ডিনার টেবিলে উদয় হলো। ওর ভালো-মন্দ, স্বাস্থ্য, মন-
মেজাজ সম্পর্কে সব সময় খোঁজখবর নেয় রুবি, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে। যদিও
২১
ভদ্রতার সীমা কখনোই লঙ্ঘন করে না।
‘মক্ষিরানী, আমরা যাকে এই ন্যাভাল বেসের অনুপ্রেরণা বলি, তোমার জন্যে
দেখছি পাগল!’ মার্কিন নেভি পাইলট একদিন খেতে বসে মন্তব্য করলো। ‘সত্যি,
রানা, তোমার ভাগ্য দেখে ঈর্ষা হয়।’
‘তাই নাকি? পাগল?’ চেহারায় অবাক ভাব নিয়ে বললো রানা। ‘সত্যি যদি
তাই হয়, খুব খুশি হবো কেউ যদি তাকে নদীতে ঝাঁপ দিতে বলে।’
‘জানি কি বলতে চাইছো, ক্যাপটেন। এই যান্ত্রিক পাখিতে চড়ে সারাটা দিন
আকাশ চষার পর, উদ্যম বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকে নাÑদু’পেয়ে রক্তমাংসের
পাখিটা যতোই উপাদেয় হোক না কেন।’
‘ঠিক তাই,’ আড়ষ্ট হাসি হেসে টেবিল ছেড়ে চলে গেল রানা।
দু’দিন পর একটা পোস্টকার্ড পেলো রানা, কার্ডে ছাপা রয়েছে অক্সফোর্ডের
‘মার্টায়ার্স’ মেমোরিয়াল। উল্টোদিকের লেখাগুলো পড়লো রানা, কার হাতের
লেখা চিনতে পারলো না। লেখাটা হুবহু এরকম:
‘কমপি−টেড টোয়েনটি-টু পেজেস অভ নোটস অন বিয়ার-বেইটিং ইন দ্য
সিক্সটিনথ্ সেঞ্চুরি, ভিজিটেড বে−নহেইম প্যালেস টু টেক আ লুক অ্যাট দ্য
আর্কাইভস হুইচ কেপ্ট মি বিজি ওভার দ্য উইকএণ্ড। হোপ টু সী ইউ সুন। লাভ
অ্যাজ এভার। জুডিথ।’
কথাগুলো সাঙ্কেতিক, তবে সাধারণ জ্ঞান থাকলে অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব।
জুডিথ হলো জরুরী মিটিঙের নোটিস। মিটিঙটা কখন আর কোথায় সহজেই
বুঝতে পারলো রানা: বিয়ার হোটেলে, উডস্টকে, অক্সফোর্ডের কাছে। রবিবার
রাত আটটায়, বাইশ নম্বর কামরায়Ñকামরার নম্বরটা হুবহু উলে−খ করা হয়েছে,
সময় হলো ১৬.০০ ঘণ্টা, যোগ চার। হয় মারাÍক কিছু ঘটেছে, নয়তো প−্যান
বদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উডস্টকে পৌঁছুলো রানা, কিন্তু উঠলো সিলেটিদের ‘শ্রীমঙ্গল’ হোটেলে, খানিকটা
নিরাপত্তার কথা ভেবে, খানিকটা স্বদেশপ্রীতির কারণে।
হোটেলে নাম লিখিয়ে হাঁটতে বেরলো রানা। শ্রীমঙ্গলে ফিরে এসে ঘণ্টা
কয়েক বিশ্রাম দিলো পা দুটোকে, তারপর কাছাকাছি বিয়ার হোটেলের উদ্দেশে
বেরিয়ে পড়লো। সামান্য পথ, হেঁটেই রওনা হলো ও।
উডস্টক শহরটা ছোটো, তবে লোকসংখ্যা প্রচুর। বাংলাদেশীরা এখানে
ভালো ব্যবসা করছে। বাতাসে পটেটো চিপস আর ধোঁয়ার গন্ধ ভালো লাগলো না
ওর। বিয়ার হোটেলের সামনের দরজা দিয়ে শান্তভাবে ভেতরে ঢুকলো ও, সরু
প্যাসেজের শেষ মাথায় রিসেপশন, সেটাকে এড়িয়ে এন্ট্রান্স হলের ভেতর দিয়ে
চলে এলো ছোটো একটা এলিভেটরের সামনে। এই এলিভেটারই ওকে বাইশ
নম্বর কামরায় পৌঁছে দেবে।
ওর জন্যে অপেক্ষা করছেন বিএসএস চীফ মারভিন লংফেলো। সাথে তাঁর
চীফ অভ স্টাফ জন মিচেল।
‘আমাদের ইলেকট্রনিক বিশেষজ্ঞরা খানিক আগে কামরাটা সার্চ করেছে,’
কুশলাদি বিনিময়ের পর মারভিন লংফেলো বললেন। ‘কোনো আড়িপাতা যন্ত্র
নেই, যদিও আজকাল জোর দিয়ে কিছু বলা যায় না।’
মারভিন লংফেলো এবং বন্ধু জন মিচেলের উদ্দেশ্যে স্মিত হাসলো রানা।
দু’জনের চেহারায় গাম্ভীর্য লক্ষ করে বুঝলো, খবর ভালো নয়।
ইঙ্গিতে একটা চেয়ার দেখালেন মারভিন লংফেলো। রানা বসার পর তিনি
প্রশ্ন করলেন, ‘বাস্ট-এর কথা মনে আছে তো?’
‘ভুলি কি করে। তারাই তো আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ।’
‘আজরাইলের ভূমিকা নিয়েছে ওরা, রানা। তোমার জান কবজ করতে
চাইছে।’
‘এখন তাহলে আপনি বিশ্বাস করেন মিসাইলটা আমাকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া
হয়েছিল?’
‘করি। তবে এবার আমরা অন্তত ওদের একজনকে ধরার সুযোগ পাবো।
আমরা জানি কখন ওরা তোমার ওপর হামলা করবে। কে করবে, তা-ও জানি।
শুধু জানি না কোথায়।’
‘জানি না, আবার জানিও, স্যার,’ বললো জন মিচেল। রানার দিকে তাকালো
সে। ‘কোথায়, সেটা নির্ভর করে তোমার ওপর, রানা। তোমার পছন্দ মতো যে-
কোনো জায়গায়।’
‘আমার পছন্দমতো?’ রানা বিস্মিত। ‘আমার পছন্দ করা জায়গায় আমাকে
আক্রমণ করবে?’
‘হ্যাঁ,’ মারভিন লংফেলোর পরিষ্কার বাদামী চোখ দুটো রানার মুখে স্থির হয়ে
আছে। ‘ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে তোমাকে আমরা ছুটি দিতে চাই, রানা।’
‘রশি দিয়ে বাঁধা ছাগল, বাঘের টোপ?’
‘স্টকিংÑহর্স,’ শুধরে দিলো জন মিচেল। ‘অথবা বলা যায় ক্রিসমাস হর্স,
বাস্ট যাতে তোমার চিমনি বেয়ে নেমে এসে পা থেকে মোজা দুটো খুলে নিতে
পারে। আলোচ্য ক্ষেত্রে, রানা, বাস্ট নারীমূর্তির আকৃতি ধরে আসবে তোমার
দ্বারে।’
‘আচ্ছা,’ ঠোঁটে আড়ষ্ট হাসি ফুটলো রানার, ‘বুঝেছি। খেলাটা হবে মন্থরগতি
ঘোড়া আর দ্রুতগতি নারীর মধ্যে, তাই কি?’
‘এর আগেও এ-ধরনের ভূমিকায় সাফল্যের সাথে উতরে গেছো তুমি, রানা,’
হাসা তো দূরের কথা, মারভিন লংফেলোর চোখের পাতা পর্যন্ত কাঁপলো না।
‘আমার নিজস্ব কোনো মতামত থাকতে পারে না?’
‘অবশ্যই আছে, কিন্তু আমরা জানি তুমি আমাদের সাথে এক-মত হবে।’
মাথা নাড়লেন মারভিন লংফেলো। ‘এরইমধ্যে অনেক বেশি জেনে ফেলেছে
বাস্ট। অ্যাটাক এইটিনাইনের সময় ছোবল তারা মারবেই, কিন্তু তোমাকে তারা
প্রবল বাধা বলে মনে করছে। তবে, এখনো তারা আয়োজন সম্পর্কে বিশদ কিছু
জানে না। যেমন, বডিগার্ড অপারেশনে ছয়জন এসএএস এজেন্টের নেতৃত্ব
দিচ্ছো তুমি।’
‘ভারি অদ্ভুত ব্যাপার তো,’ বললো রানা। ‘মি. লংফেলো, আমি নিজেও তো
২২
ওদের সম্পর্কে এই প্রথম শুনছি।’ থামলো রানা, জন মিচেলের ওপর থেকে চোখ
ফিরিয়ে আবার বিএসএস চীফের দিকে তাকালো। ‘এতো সব যখন জানেন
আপনারা, ওদের সাথে ওদের ভাষায় কথা বলছেন না কেন? কাজে হাত দেয়ার
আগে ওদের হাতগুলো ভেঙে দিলেই তো পারেন।’
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মারভিন লংফেলো। ‘ওদের রিঙ লিডারদের নাম জানি
আমরা। তাদের মধ্যে দু’জনের চেহারা কি রকম তাও জানি, কিন্তু ব্রাদারহুড
সংগঠনটা আসলে কতো বড় সে-সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, ধারণা নেই কি
রকম ফ্যানাটিক তারা। লিডারদের চারজন যথেষ্ট হিংস্র, জানি, তবে নেতাদের
নেতা লোকটা, যাকে মাস্টারমাইণ্ড বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের
চাইতে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পেতে বেশি আগ্রহী সে।’
‘একেবারে বাধ্য না হলে তোমাকে আমরা বিপদের মুখে ফেলতে চাইবো না,
রানা,’ শুরু করলো জন মিচেল।
‘বলো খুব বেশি বিপদে।’
‘বিশেষ করে যখন অ্যাটাক এইটিনাইনের সময় ঘনিয়ে আসছে,’ বললেন
মারভিন লংফেলো। ‘কিলার হোয়েলে তোমাকে একান্তভাবে দরকার আমাদের।
তবে, তার আগে, ওদের একজন লিডারকে আমরা মুঠোর ভেতর পেতে চাইছি।
সুযোগ যখন একটা পেয়েছি, সেটা হাতছাড়া করি কেন। এখন তুমি কি বলো?
ক্রিসমাসের ছুটিতে যাচ্ছো কোথাও?’
‘বছরের এই সময়টা ভারি অস্বস্তিবোধ করি আমি,’ নিজের নাকের ডগা
অনুসরণ করে তাকালো রানা। ‘ক্রিসমাসের ছুটিতে আমার খ্রিস্টান বন্ধুরা যে
রকম বাড়াবাড়ি করে, কখনোই পছন্দ করতে পারিনি। সেজন্যেই ইউরোপ-
আমেরিকায় থাকলে এ-সময়টায় আমি দূরে কোথাও, নির্জন কোথাও পালিয়ে
যাই।’ কয়েক সেকেণ্ড বিরতি নিলো রানা, তারপর চোখ তুলে সরাসরি মারভিন
লংফেলোর দিকে তাকালো। ‘আপনি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে কোনো জায়গার কথা
ভেবেছেন, তাই না?’
সতর্কতার সাথে মাথা ঝাঁকালেন বিএসএস চীফ, জানেন না তাঁর বাছাই করা
জায়গায় যেতে রানা রাজি হবে কিনা। ‘বেশ কয়েক বছর আগের কথা, মনে
পড়ে, কি একটা কারণে গা ঢাকা দেয়ার দরকার হয় তোমার? কারণটা অবশ্য
তোমরা, মানে মি. রাহাত খান বা তুমি আমাকে বলোনি। আমি তখন বিএসএস-
এর ডেপুটি ডিরেক্টর। বে অভ নেপলস-এ, ইজকিয়া-র একটা ভিলায়
পাঠিয়েছিলাম তোমাকে।’
‘গরমের দিন ছিলো
...
,’ পরিষ্কার মনে আছে রানার। গোটা এলাকাটা নির্জন
আর নিরিবিলি, অপরূপ মহিমায় সেজে আছে প্রকৃতি। মাত্র দু’মাইল গাড়ি চালিয়ে
গেলেই ভালো হোটেল পাওয়া যায়। দিনভর সুইমিং পুলে সাঁতার কাটো, কেউ
উঁকি দেয়ার নেই। সাথে একজন কুক থাকতে পারে, থাকতে পারে
মেইডসার্ভেন্ট। ‘খরচাটা, যতো দূর মনে পড়ছে, আপনারাই দিয়েছিলেন। কিন্তু
ভিলাটা তো খোলা থাকে শুধু গরমের দিনে।’
‘আমি বোধহয় মালিকপক্ষকে রাজি করাতে পারবো,’ চেহারায় একটা জেদ
ফুটে উঠলো মারভিন লংফেলোর।
রানার হার্টবিট বেড়ে গেছে। ‘ক্রিসমাসের ছুটিতে ইজকিয়া
... মন্দ কি! বলুন,
কি করতে হবে আমাকে।’
‘প্রথম শর্ত,’ শুরু করলেন বিএসএস চীফ, ‘ওখানে তোমাকে নিঃসঙ্গ, একা
থাকতে হবে। তুমি যেন একটা সিটিং ডাক, চোখ বুজে ডালে বসে থাকা পাখি,
দেখামাত্র গুলি করার লোভ হবে শিকারীর। তোমাকে আমরা খুব সামান্যই
কাভার দিতে পারবো। অবশ্যই লোকাল পুলিসকে ডাকবো না
...
,’ পরবর্তী এক
ঘণ্টা ধরে কথা বলে গেলেন তিনি, সেই সাথে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করলো রানা,
গোটা ব্যাপারটা নির্ভর করবে ওরই ওপর। ওখানে টোপ সেজে বসে থাকতে হবে
ওকে, একটা মেয়ে এসে কখন ওকে খুন করার চেষ্টা করে তার অপেক্ষায়।
মেয়েটা যদি একাও আসে, সম্ভবত তার একজন ব্যাক-আপ থাকবে। মেয়েটা
এবং তার ব্যাক-আপের অ্যাসাইনমেন্ট ব্যর্থ করে দিতে হবে রানাকে, তাকে বা
তাদেরকে ধরে আনতে হবে ইংল্যাণ্ডে, বহাল তবিয়তে ফিরে আসতে হবে
নিজেকেও।
‘কাজটায় ঝুঁকি আছে,’ মারভিন লংফেলো থামতে বললো রানা।
‘কিন্তু এ-ধরনের কাজ আগেও তুমি করেছো। এখন বলো, কি দরকার
তোমার?’
‘একটা নাইন এমএম।’
*
মারভিন লংফেলোর সাথে রানা যখন ক্রিসমাসের ছুটি নিয়ে আলোচনা করছে,
প্রায় ওই একই সময়ে মাইকেল আর বিল তখন তাদের নতুন বন্ধু পেটি অফিসার
এঞ্জিনিয়ারকে একটা দুঃসংবাদ পরিবেশন করলো। ‘ভেবো না আমরা তোমার
শুভানুধ্যায়ী নই, জনি,’ বিল বললো। ‘বিশ্বাস করো, তোমাকে সত্যি আমাদের
ভালো লেগেছে, এবং আমরা তোমার ভালো বৈ মন্দ চাই না। কিন্তু আমরাও খুব
চাপের মুখে আছি, ভাই।’
‘ওই ক্লাবে যে ওরা গোপনে ফটো তোলে, জানাই ছিলো না আমাদের। কী
সর্বনেশে ব্যাপার, ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠছে। একটা নয়, দুটো নয়,
দু’ডজন ফটোÑবিশ্বাস না হয়, এই দেখো না!’ বলে এঞ্জিনিয়ার জনি পার্কারের
সামনে ফটোগুলো ছড়িয়ে দিলো মাইকেল। যৌনমিলনের অশ−ীল ছবি,
সাদাকালো।
মাইকেলের হোটেল কামরায় রয়েছে ওরা, প−াইমাউথে। ফটোগুলো
উত্তেজনাকর হলেও, ওগুলোর দিকে কাতর, বিষণœ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো পেটি
অফিসার। ‘এগুলো তোমরা আমার স্ত্রীর কাছে পাঠাবে?’ ঠিক প্রশ্ন নয়, কাতর
বিলাপের মতো শোনালো।
‘না, আমরা কেন পাঠাতে যাবো!’ অভয় দেয়ার সুরে, নরম গলায় বললো
মাইকেল। ‘তোমার মতো আমরাও তো একই বিপদে পড়েছি, তুমি বুঝতে
পারছো না? বলছি তো, আমরা জানতাম না।’
‘দু’চারশো নয়, এক বস্তা টাকা!’ নতুন বন্ধুর মতোই বিমর্ষ হবার ভান করলো
২৩
বিল। ‘বলতে চাইছি, সমস্ত খরচা আমরা দেবো বলে ক্লাবকে জানিয়েছিলাম,
এখন ওরা বিল চাইছে। বিল তো নয়, একে ব−্যাকমেইলিং বলে। তোমার সাথে
এখন আমরাও ফুটো নৌকায়।’
‘অথচ আমরা ধরে নিয়েছিলাম ক্লাবটায় রাত কাটালে শুধু কামরার ভাড়া
দিতে হয়, ফাও পাওয়া যায় মেয়েমানুষ। এর আগে কখনো এক পেনিও বিল
করেনি ওরা।’
‘ক-কতো টাকা চাইছে ওরা?’ সাদা হয়ে গেছে পেটি অফিসারের চেহারা।
অনুভব করলো, মুখ থেকে সব রক্ত নেমে আসছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাইকেল। ‘এগারো হাজার আটশো পঁচিশ পাউণ্ড।’
‘সাথে আছে আরো বাষট্টি পেন্স।’
‘কিন্তু
...
অসম্ভব, এতো টাকা যোগাড় করা অসম্ভব!’ আতঙ্কে চোখ দুটো
বিস্ফারিত হয়ে উঠলো পেটি অফিসারের। ‘প্রশ্নই ওঠে না! নেই! বউ আমাকে খুন
করে ফেলবেÑভাগ্য যদি খুব ভালো হয়, ডিভোর্স করবে। কোনো ভাবেই এতো
টাকা যোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
‘বাড়িটা দ্বিতীয় বার মর্টগেজ দেয়া যায়?’ মাইকেল নরম সুরে জানতে
চাইলো।
‘প্রথম মর্টগেজের টাকাই তো শোধ করা হয়নি।’ প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা
পেটি অফিসারের।
ফটোগুলো নিখুঁতভাবে এক করলো মাইকেল। ‘ওরা একটা উপায় বাতলে
দিয়েছে আমাদের, মুক্তি পাবার একটা সুযোগ পেতে পারি আমরা। কিন্তু
ওদেরকে আমি বলে দিয়েছি, প্রস্তাবটা তুমি শুনতে পর্যন্ত রাজি হবে না।’
‘মুক্তির উপায়? কি?’
‘উঁহুঁ, তুমি শুনতে রাজি হবে না।’
বিল, তিনটে গ−াসে নির্জলা হুইস্কি ঢালছে, বাধা দিলো। ‘ওদের প্রস্তাবে
আমাদেরকে টাকা দেয়ার কথাও আছে। ওকে বলাই ভালো, মাইকেল।’
‘বেশ,’ আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাইকেল। ‘তুমি রাজি হলে, সবাই আমরা
এই বিপদ থেকে বাঁচতে পারি। দু’হাজার পাউণ্ড আয়ও হবে তোমার, জনি,
যেহেতু ঝুঁকিটা তুমি নেবে।’
‘দু’হাজার পাউণ্ড আয় হবে? আমি পাবো? দু’হাজার পাউণ্ড? বলো, কাকে
খুন করতে হবে আমার?’
‘আরে ধুর, খুন-খারাবির ব্যাপার নয়,’ কাছে সরে এলো মাইকেল, ফিসফিস
করে প্রস্তাবটা ব্যাখ্যা করতে শুরু করলো। জানে, প্রত্যাখ্যান করার উপায় নেই
পেটি অফিসারের।



ছয়
নেপলস্ মাসুদ রানার প্রিয় শহর নয়। হারবারে পৌঁছুতে হলে সরু একটা রাস্তা
ধরে যেতে হয়, রাস্তাটার প্রায় সার্বক্ষণিক অসহনীয় যানজট গুলিস্তানের
যানজটকেও হার মানাবে। দীর্ঘ যানবাহনের লাইন পড়েছে, লাইনের শেষের দিকে
আটকা পড়েছে ও, চারদিকে ড্রাইভারদের গালিগালাজ, হর্নের কান-ফাটানো শব্দ,
পুলিসের ছুটোছুটি আর হুইসেলের আওয়াজ, যাকে বলে নরক একেবারে
গুলজার। অবস্থা আরো দুর্বিষহ করে তোলার জন্যে শুরু হয়েছে ঝম ঝম বৃষ্টি।
এ যেন এমন একটা শহর, সময় যার কথা ভুলে গেছে। ভাড়া করা একটা
ফিয়াট নিয়ে এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে সামনে বাড়ছে রানা। ওর সামনে একটা
ট্রাকে পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে আছে মিনারেল ওয়াটার ভর্তি অসংখ্য বোতল।
পর্যটকদের আকর্ষণ হিসেবে নেপলস্ তার আগের মর্যাদা কখনোই ফিরে পায়নি।
পরিবর্তে শহরটা ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে। লোকজন এয়ারপোর্টে নামে,
হয়তো দু’এক রাত শহরে কাটায়, তারপর পম্পেই শহরের দিকে কেটে পড়ে বা
আনন্দ-ফুর্তি করার জন্যে ছোটে সোরেন্টোর দিকে, অথবা ফেরি ধরে চলে যায়
ক্যাপ্রি নয়তো ইজকিয়া অভিমুখে। ক্যাপ্রি আর ইজকিয়াকে বে অভ নেপলস্-এর
গেট বলা হয়।
দ্বীপ দুটোকে বহুকাল ধরে বসবাসের অযোগ্য বলে গণ্য করা হচ্ছে, যদিও
নিয়াপোলিটান-রা মাটি কামড়ে পড়ে আছে আজও। পর্যটক অবশ্য এখনো
আসে। আর আছে ন্যাটো-র নাবিকরা, বিভিন্ন জলযান থেকে ছুটি পেয়ে দ্বীপ
দুটোয় ঢুঁ মারে তারা। তাদেরকে টানে বারগুলো,সস্তা বিনোদনেরও কোনো অভাব
নেই।
দু’এক হাত এগোয় ট্রাফিক, তারপর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, এভাবে চলছে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নেপলসের রাস্তায় ধুলোর পাহাড় আছে, বিশেষ করে
শীতকালে। শহরের মাথার ওপর ঝুলে আছে ভিসুভিয়াসের রোমহর্ষক হুমকি।
অবশেষে ফেরির কাছাকাছি পৌঁছুলো ফিয়াট। পিছনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে
আছে অসংখ্য প্রাইভেট কার আর মালপত্র বোঝাই ট্রাক বহর। একটা ট্রাক
ওভারটেক করে এগোবার চেষ্টা করছে দেখে একজন পুলিস অফিসার তেড়ে
এলো, পাদানিতে উঠে জানালা দিয়ে ট্রাকের ভেতর মাথা গলিয়ে দিলো সে,
সকৌতুকে রানা দেখলো ড্রাইভারকে কষে একটা চড় মারলো লোকটা। শহরটা
লণ্ডন হলে পুলিস অফিসারের ক্যারিয়ার খতম হয়ে যেতো, কিন্তু এখানের অবস্থা
আলাদা, ড্রাইভার জানে অভিযোগ করলে নেপলসে আর গাড়ি চালাতে হবে না
তাকে।
এক সময় ফেরিতে চড়ার সুযোগ পাওয়া গেল। ইতিমধ্যে মেজাজ বিগড়ে
গেছে রানার, শরীরের প্রতিটি পেশী আড়ষ্ট। ভেহিকেল ডেকে গাড়ি রেখে
ফেরিতে উঠলো ও, দাঁড়াবার মতো ভালো একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।
লোকজনকে ধাক্কা দিয়ে পথ করে নিতে হলো, ছোটো একটা বারে ঢুকে অর্ডার
দিয়ে কানা চোখের পানির মতো যে জিনিসটা পাওয়া গেল তার নাম নাকি কফি।
অতিরিক্ত মিষ্টি, তবে গলা ভেজাবার প্রয়োজনটা মিটলো। এই বলে নিজেকে
প্রবোধ দিলো রানা, ভিলা কাপ্রিসিয়ানি-তে পৌঁছে সব জিনিসই নিজের পছন্দ ও
২৪
চাহিদা মতো পাওয়া যাবে।
ফেরি যতো এগোলো, পিছনের উপকূল রেখা যেন কুঁচকে ছোটো হয়ে
এলো। পেশাগত জীবনে আগেও বহুবার গা ঢাকা দিয়েছে রানা, যদিও এবারের
গা ঢাকা দেয়াটা ভান মাত্র। এবার যে বিপদের ঝুঁকি নিয়েছে, তার মাত্রা সম্পর্কে
পুরোপুরি সচেতন রানা, জানে কোথাও একটু ভুল হয়ে গেলে পৈত্রিক প্রাণটা
হারাতে হবে। এরকম ঝুঁকি আগেও বহুবার নিয়েছে রানা, প্রতিবার হয় ভাগ্যগুণে
নয়তো বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেছে। কিন্তু ভাগ্য বা বুদ্ধির সহায়তা সব সময় না-ও
পেতে পারে ও।
প্রথমবার এখানে এসেছিল রানা গরমের দিনে, শুধু গা ঢাকা দেয়া উদ্দেশ্য
ছিলো না, বিশ্রামগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবার বিপদ
মাথায় করে এসেছে রানা। হারবে নাকি জিতবে জানা নেই। জিতলে বেঁচে
থাকবে ও, হারলে মারা পড়বে। যোগ অংকের মতো সহজ ব্যাপার।
ফেরির কিনারায় দাঁড়িয়ে, এক ঘণ্টা পর, একটা দুর্গ দেখতে পেলো রানা।
দুর্গের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেছে রাস্তাটা, পৌঁচেছে ইজকিয়ার দিকে। আর দশ
মিনিট যেতেই ডকে ভিড়লো ফেরি, আবার সেই চেঁচামেচি, হুড়োহুড়ি শুরু হলো।
সবগুলো গাড়ির হর্ন বাজছে। কাঠের পাটাতন ফেলে গাড়ি নামাবার ব্যবস্থা,কিন্তু
কে কার আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ায় কেউই এক ইঞ্চি
এগোতে পারছে না। বৃষ্টি থামেনি, ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠলো।
আরো আধ ঘণ্টা পর ঝামেলা থেকে খানিকটা মুক্তি পাওয়া গেল। ফিয়াটের
ড্রাইভিং সিটে বসার আগে গাড়িটাকে ভালো করে পরীক্ষা করে নিলো রানা, কারণ
জানে নিরীহ মানুষের প্রতি কোনো দরদ নেই বাস্ট-এর। ধীরে ধীরে, লাইনের
বাইরে না গিয়ে, ফেরি থেকে নেমে এলো ও। পশ্চিম দিকে গাড়ি ছোটালো,
নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় নিজেকে খানিকটা অসহায় লাগছে। সতর্কতার
সাথে ক্ষেত্র তৈরি করেছে রানা, ইয়োভিলটন ন্যাভাল বেসের ভেতরে ও বাইরে বহু
লোককে কথাচ্ছলে জানিয়েছে ছুটি কাটাতে কোথায় যাচ্ছে সে। বে অভ
নেপলসে, একা। সন্দেহ নেই বাস্টকে যে লোক তথ্য যোগান দেয় তার কানেও
খবরটা পৌঁছে গেছে।
ইয়োভিলটন থেকে বাস্ট যে তথ্য পাচ্ছে, জানে ওরা। আরো জানে, কেনেথ
কালভিনই চিহ্নিত করেছে রানাকে। বিড়ালকেÑগে−নডা বার্ককে লেলিয়ে দিয়েছে
ওর দিকে। কেনেথ কালভিন, ফারাজ লেবানন বা ডন বাম্বিনোর কোনো ফটো
শত চেষ্টা করেও যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকেও
পরিষ্কার কোনো বর্ণনা পাওয়া যায়নি, কারণ বাস্ট-এর নেতাদের তারা দু’এক
পলকের জন্যে দেখেছে কি দেখেনি। রানা শুধু নিশ্চিতভাবে জানে যে দা ক্যাট বা
বিড়াল একটা মেয়ে। কেউ বলছে, মেয়েটা লম্বা, কেউ বলছে খাটো। একবার
শোনা গেল, মোটা। আরেক সূত্র থেকে জানানো হলো, একহারা। শুধু সবার
একটা বর্ণনা মেলে, তার চুল কালো। ঘন কালো।
ভাড়া করা গাড়ি নিরাপত্তার জন্যে একটা হুমকি। ভিলা কাপ্রিসিয়ানিতে না
পৌঁছুনো পর্যন্ত রানার কাছে কোনো অস্ত্রও থাকছে না। মারভিন লংফেলো যখন
চূড়ান্ত প−্যানটা ব্যাখ্যা করছেন, মনে পড়ে যাওয়ায় রানা নিজেও তখন উপলব্ধি
করে, নিরাপত্তার দিক থেকে ভিলাটা আসলে দুঃস্বপè বিশেষ। সরু, খানা-খন্দে
ভরা রাস্তাটা ধরে গাড়ি চালাবার সময় সারাক্ষণ ভিউ মিররে একটা চোখ রাখলো
ও। ফেরিতে দেখা কয়েকটা গাড়ি রয়েছে পিছনেÑএকটা ভলভো, একটা
ফোক্সওয়াগেন। তবে কোনোটাই ওর পিছু নিয়েছে বলে মনে হলো না।
ছোট্ট দুই শহরের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সরু গলিটা, এই রাস্তা ধরেই
ভিলায় পৌঁছুতে হবে রানাকে। বাঁক নেয়ার পর গলি থেকে সরে ঝোপ-ঝাড়ের
ভেতর দিয়ে জঙ্গলে ঢুকলো ফিয়াট। দশ মিনিট অপেক্ষা করলো রানা, ফেলে
আসা পথের দিকে তাকিয়ে আছে। স্বাভাবিক গতিতে চলে গেল কয়েকটা গাড়ি,
ফেরিতে ওগুলোকে দেখেছে ও, একটারও গতি শ−থ হলো না বা সরু গলিটার
ভেতর ঢুকলো না। তবু আবার ভিলার পথ ধরার পর ভিউ মিররে সতর্ক নজর
রাখলো ও।
দ্বীপের কোনো কিছুই বদলায়নি, যেমন মনে আছে তেমনি দেখতে পেলো
সব। বাঁক নেয়ার আগে পর্যন্ত এলাকাটাকে নোংরা আর অযতèলালিত বলে মনে
হলো, তারপর অপ্রত্যাশিতভাবে, প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখে নেচে উঠলো
মন। পাহাড়গুলো গাঢ় উজ্জ্বল সবুজ, ঢালগুলো নরম ঘাসে ঢাকা, গড়াগড়ি খেতে
ইচ্ছে করে। গলিটা সরু হলেও, পিচঢালা, কোথাও কোনো বড় গর্ত নেই। সামনে
কয়েকটা বিল্ডিং দেখা গেল, দোকানগুলোর চওড়া দরজা পুরোপুরি খোলা, এক
পাশে পরিচ্ছন্ন পেট্রোল স্টেশন। এতোক্ষণে ভিলার গেটটা দেখতে পাচ্ছে রানা।
ডান দিকে, ধূসর রঙের পাথর। মনে মনে আশা করলো, ভিলাটা খুব একটা
বদলায়নি।
গেটটা খোলা, বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢুকলো ফিয়াট, এঞ্জিন বন্ধ করে নেমে
পড়লো রানা। ওর সামনে বড়সড় একটা পদ্মদীঘি। ডান দিকে, দীঘির লাগোয়া
আরেকটা গেট, লতাপাতায় ছাওয়া ধাপগুলো উঠে গেছে ওপরদিকে, চোখ
তুলতেই ভিলার সাদা গম্বুজটা দেখতে পেলো রানা। কয়েকটা ধাপ বেয়ে উঠেছে,
এই সময় কে যেন ডাকলো ওকে।
‘সিনর মাসুদ রানা?’
গলা চড়িয়ে জবাব দিলো রানা, ধাপগুলোর মাথায় উঠে এলো, দেখলো ওর
সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে উদ্ভিন্ন যৌবনা এক নারী। কি কারণে সঠিক বলতে পারবে
না, মেয়েটাকে দেখে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করলো ও। বাঙালী মনের সংস্কার
হতে পারে, নির্জন একটা বাড়িতে পূর্ণ যৌবনা যুবতীর সাথে নিজেকে একা দেখে
দেহ-মনে প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক, বিশেষ করে যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন
জড়িত। মিষ্টি চেহারা মেয়েটার; গোপন করার চেষ্টা করলেও, দুষ্টামির ঝিলিক
চাপা থাকছে না চোখে। স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেও, রানার মনে হলো ভারি চঞ্চল
মেয়েটা। ট্যাংক টপ আর জিনস্ পরে আছে, পরিচ্ছন্ন, তবে এখানে-সেখানে
এক-আধটু ছেঁড়াÑআধুনিক ফ্যাশন কিনা বলতে পারবে না রানা। হাঁটুর উপরে
জিনসের পায়া দুটো চোখে পড়ার মতো ফুলে আছে, ভেতরটা নিরেট
আর সুগঠিত, পরিষ্কার বোঝা যায় জিনসের আড়ালে রয়েছে চমৎকার গোলগাল
২৫
একজোড়া ঊরু। সাদা-কালো চোখ, ছোটো নিখুঁত নাকের চারপাশে মিষ্টি
মুখ নীরব হাসিতে উদ্ভাসিত। গোটা অবয়বকে ঘিরে রেখেছে কালো, কোঁকড়ানো
চুল।
ভিলার কাঁচ-মোড়া, বড়সড় ¯−াইডিং দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে মেয়েটা,
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে দীঘিটার পাশে। তার ডান দিকে কয়েকটা পাম আর
ঝাঁকড়া মাথা অন্যান্য গাছকে সঙ্গী করে স্থির হয়ে রয়েছে সাদা মার্বেল পাথরের
একটা দেবী মূর্তি, সম্পূর্ণ নগ্ন, যৌনতার প্রতীক যেনÑপাশে দাঁড়ানো মেয়েটাও
যেন হুবহু তারই প্রতিচ্ছবি।
‘সিনর রানা,’ আবার বললো মেয়েটা, গলা নয় যেন সেতারের সুরেলা
ঝংকার। ‘আমি ক্লডিয়া মন্টেরা।’ নামটা ইটালিয়ান, উচ্চারণ ভঙ্গিতেও তার ছাপ
পাওয়া গেল। ‘এখানে আমি আপনাকে স্বাগত জানাবার জন্যে রয়েছি। আপনার
দেখাশোনার দায়িত্বও আমার ওপর। আমি একজন মেইড।’
মেইড কিনা বাজি ধরতে রাজি নয় রানা, ধীর পায়ে চওড়া টেরেস ধরে
এগোলো ও। টেরেসটা সবুজ ক্যানভাস দিয়ে ছাওয়া, যাতে গরমের দিনে সুইমিং
পুলে যেতে পা দুটো সেদ্ধ না হয়। শীতকালে কখনোই খোলা থাকে না ভিলাটা,
মারভিন লংফেলো কিভাবে ভাড়া করলেন কে জানে। মালিকের সাথে নিশ্চয়ই
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তাঁর, গোপন চুক্তি হয়েছে। কিংবা হয়তো চাপ দিয়ে কাজ
হাসিল করেছেন তিনি।
যেন রানার চিন্তাধারা বুঝতে পেরেই, হাতটা লম্বা করে অপ্রত্যাশিত শক্ত
মুঠিতে রানার কব্জি চেপে ধরলো ক্লডিয়া মন্টেরা। ‘সিনোরা চলে গেছেন।
ক্রিসমাসটা মিলানে কাটাবেন। আমি এখানে আছি ভিলাগুলো পাহারা দেয়ার
জন্যে।’
‘ভাবছি বাস্ট-এর হয়েও পাহারা দিচ্ছো কিনা,’ ভাবলো রানা।
‘আসুন, আপনাকে সব দেখাই।’ রানার হাতে সামান্য টান দিলো মেয়েটা,
যেন একটা চঞ্চল বাচ্চা মেয়ে। কয়েক পা এগিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো সে।
‘ইস, ভুলে গিয়েছিলাম! কাকে কি দেখাবো! আপনি তো চেনেনই। এখানে
আগেও আপনি এসেছেন, তাই না?’
মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালো রানা, তার পিছু পিছু বড় একটা সাদা কামরার
ভেতর ঢুকলো। খিলান আকৃতির সিলিং, তার সাথে মিল রেখে সোফা আর চেয়ার
সাজানো হয়েছে, কাভারগুলো ক্রীম কালারের। কাঁচ ঢাকা তিনটে টেবিল রয়েছে।
চারটে ল্যাম্প, ফোটা পদ্ম আকৃতির সাদা কাঁচ ঘিরে রেখেছে। দেয়ালে চারটে
পেইন্টিং দেখলো রানা, একটা হুকনি-র বলে মনে হলো, এক লোক নির্জন সুইমিং
পুলের ধারে বিষণœ চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাকি তিনটেতে বাগানের দৃশ্য।
কোন্ বাগানের জানা আছে রানার।
ভিলাটা রানার পরিচিত, জানা সত্ত্বেও পথ দেখিয়ে রানাকে নিয়ে চললো
ক্লডিয়া মন্টেরা, প্রায় ঝড়ের বেগে। এক এক করে তিনটে বিশাল আকারের
বেডরুমই দেখালো ওকে। ‘কোন্টা ছেড়ে কোন্টা ব্যবহার করবেন সিদ্ধান্ত নিতে
পারছেন না, কেমন?’ গালে একটা আঙুলের ডগা ঠেকিয়ে ভান করলো চিন্তিত,
হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো চেহারা, ‘পেয়েছি! একেক রাতে একেকটা!’ হাততালি
দিলো সে। ‘ভারি মজার ব্যাপার হবে সেটা, কি বলেন?’ তারপরই বিস্ফোরিত
হলো মিষ্টি সুরেলা ঝংকার।
মেইন রুম থেকে তিনটে বেডরুমে যাবার দরজা, অপর একটা দরজা দিয়ে
সরু প্যাসেজে বেরুনো যায়। প্যাসেজের গায়ে ছোটো-বড় খোপ, সে-সবে
সুষ্ঠুভাবে সাজানো রয়েছে দুটো রেফ্রিজারেটর, কাটলারি, তৈজসপত্র, তৈরি করা
খাবার ইত্যাদি। প্যাসেজের শেষ মাথায় কিচেন। মেইন রুমের পিছনটা বাঁকা
হয়ে আরেক দিকে ঘুরে গেছে, ওদিকটা ডাইনিং এরিয়াÑপুরনো এবং আধুনিক
আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। ডাইনিং এরিয়ার পিছনে একজোড়া ফ্রেঞ্চ উইণ্ডো,
দ্বিতীয় টেরেসে বেরুনো যায়। টেরেসের বামদিক থেকে উঠে গেছে ধাপগুলো,
তিন দিক ঘেরা সমতল একটা ছাদে। মাথার ওপর কাঠের ফ্রেমের সাথে টালি
সাজানো, নিচে লম্বা একটা টেবিলÑগরমের দিনে এখানে বসে খানাপিনা করতে
দারুণ ভালো লাগে। ছাদের খোলা দিকে মুখ করে দাঁড়ালে দূরে দেখা যায়
ঝলমলে শহর ফোরিও। শহরের প্রাচীন গির্জাটা নতুন করে মেরামত করা হয়েছে,
দুধের মতো সাদা সেটা, হেডল্যাণ্ড থেকে সাগরে বেরিয়ে থাকা খয়েরি পাথরের
কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।
বৃষ্টি থেমেছে, মেঘের ফাঁক থেকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। সাদা গির্জার গায়ে লেগে
প্রতিফলিত রোদ চকচক করছে পানিতে। শহরটার দিকে আবার তাকালো রানা,
মাথার ওপর সবুজ বনভূমি ঘেরা পাহাড় ঝুলে আছে। শীতকালে ওই পাহাড়ে
পিকনিক করতে যায় মানুষ। রানার দৃষ্টি গির্জার ওপর ফিরে
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×