‘ফেল মারো?’
‘হ্যাঁ।’
‘থাক বলতে হবে না, জানি। এক লোক এসে তোমাকে বললো, ফরেন
অফিসে একটা চাকরি দিতে পারে সে। ব্যাপারটা ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই
জড়িয়ে পড়লে তুমি...
কিসের সাথে? না, এসপিওনাজের সাথে।’
মাথা ঝাঁকালো মন্টেরা। ‘প্রায় তাই, তবে আমাকে ওরা আমার ভাষা জ্ঞানের
জন্যে নিলো। তারপর কমপিউটার সায়েন্সে একটা ডিগ্রী নিলাম। ওরা আমাকে
ডিউটি করতে পাঠালো রিজেন্ট পার্কের কাছাকাছি একটা অফিসে...
অফিস না বলে
ওটাকে পাতালপুরী বলাই ভালো।’
রানা জানে। রিজেন্ট পার্ক থেকে অফিস বিল্ডিংটা দেখা যায়। আণ্ডারগ্রাউণ্ড
পার্কিং-এর নিচে গোপন একটা কমপিউটার রুম আছে বিএসএস-এর।
অত্যাধুনিক কমপিউটার দিয়ে সাজানো। ‘ওখানে পাঠাবার পর ওদের মনে পড়লো
তুমি একজন ভাষা বিশেষজ্ঞ?’
‘অনেকটা তাই। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত অফিস, আমার সর্দি লেগে যায়।’
‘তুমি পাতাল থেকে বেরুতে চেয়ে আবেদন-পত্র জমা দিলে। কিন্তু তোমার
মতো হাস্যময়ী, লাস্যময়ী সুন্দরী একটা মেয়ে বুলেটের টার্গেট হবার জন্যে আগ্রহী
হলো কেন বলো তো?’
রানার কাঁধে হেলান দিলো মন্টেরা, তার মুখ রানার মুখের কাছ থেকে মাত্র কয়েক
ইঞ্চি দূরে। ‘কারণ, রানা, বিপদ আর রোমাঞ্চ সাংঘাতিক প্রিয় আমার। তাছাড়া,
হালকাভাবে নিয়ো না, আমার দেশকে আমি ভালোবাসি। দেশের জন্যে নিজের
সামর্থ্য অনুসারে কিছু করতে চাই আমি। বুলেটের কথা যদি বলো, পিস্তলে আমার
হাত খুব ভালো।’
‘তা তুমি এরইমধ্যে প্রমাণ করেছো।’ নিজের সাথে মেয়েটার অনেক মিল
খুঁজে পাচ্ছে রানা।
‘আমার আরো একটা উপযুক্ততা আছে, কর্তৃপক্ষ সেটারও খুব দাম দেয়।’
‘আচ্ছা? কি সেটা?’
‘জবাবটা একটু ঘুরিয়ে দিলে শোভন লাগবে,’ সকৌতুক হাসির সাথে বললো
মন্টেরা। ‘আমাকে তোমার কাছে পাঠানো হয়েছে শুধু বডিগার্ড হিসেবে নয়।
আমাকে দেখতে হবে তুমি যাতে খুশি থাকো, টেনশন-মুক্ত থাকো।’
‘মানে?’
দুটো মুখ এক হলো। দু’জোড়া ঠোঁট ঘষা খেলো, ব্যাপারটা সেরকম নয়, বা
জনপ্রিয় রোমান্টিক উপন্যাসে যেমন দেখা যায় অস্থির আবেগ আর উত্তেজনায়
পরস্পরকে খামচে ধরেছে নায়ক-নায়িকা, ছিঁড়ে ফেলছে ব্রেসিয়ার, সেরকম কিছুও
নয়। ওদের বেলায় ব্যাপারটা দাঁড়ালো, দুটো মুখের মাধ্যমে ভাবাবেগ বিনিময়।
এক মিনিট পর ওদের শরীর আর হাতও বিনিময় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করলো।
পাঁচ মিনিট পর মন্টেরা বললো, শুকনো খসখসে গলায়, যে-গলার সাথে মন-
মাতানো তার গায়ের গন্ধটা দারুণ মানিয়ে যায়, ‘প্রিয় রানা, তুমি কি ভালোবাসবে
৩৩
আমাকে?’
‘তোমার সাথে কাজ করে আনন্দ আছে, মিস ক্লডিয়া বিয়েট্রিচ মারিয়া দ্য
মন্টেরা।’
‘মিস্টার রানা, জীবনে অন্তত একবার এমন পুরুষের সান্নিধ্যে সব মেয়েকেই
বোধহয় আসতে হয়, যাকে না বলা যায় না।’
‘নিজেকে আমার ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।’
‘অবশ্যই তুমি ভাগ্যবান। তোমার হাতের মুঠোয় জানো এটা কি সম্পদ?’
‘আমি জানবো, আমাকে জানতে হবে।’
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বেডরূমে ঢুকলো ওরা। বাইরে ইতিমধ্যে সূর্য
উঠেছে। মেইন গেটে কাজ শুরু করেছে তাদানো, নতুন তালা আর ইলেকট্রনিক
সেনসর ফিট করছে। আবার যদি কেউ তালা ভাঙার চেষ্টা করে, অ্যালার্ম বেজে
উঠবে।
ধূসর রঙের, দুর্গ আকৃতির মেইন ভিলার ওপরের একটা কামরায় দ্বিতীয় লোকটা,
টেরেল, ছায়ার ভেতর দাঁড়িয়ে বাগান আর সামনের পাথুরে দিগন্তরেখার ওপর
কড়া নজর রাখছে। আবার যদি হামলা হয়, লোকগুলো ওদিক থেকেই আসবে,
মেইন গেট দিয়ে নয়। সামনে থেকে আক্রমণ বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে।
টেরেল ভাবলো, তার নতুন বস্, যে মেয়েটার সাথে মাত্র দু’দিন আগে পরিচয়
হয়েছে, যার ব্যক্তিত্ব ও কর্তৃত্ব অস্বীকার করার সাধ্য কোনোদিনই হবে না তার,
সামনে থেকে আক্রমণ করা হলে সে কি অসহায় বোধ করবে? বোধহয় করবে,
অনুমান করলো সে, তবে আক্রমণটা ভাড়াটে লোকদের তরফ থেকে পরিচালিত
হলে পাল্টা আক্রমণের শিকার হতে হবে অর্থাৎ নির্ঘাত জুতো খেতে হবে, সন্দেহ
নেই।
বহুদূরে প−াইমাউথে, নিজের পাপের কথা ভেবে শাস্তি পাচ্ছে পেটি অফিসার জনি।
রাতটা দুই বন্ধুর সাথে একসাথেই কাটালো সে। প্রচুর মদ খেলো তারা। দুই
বন্ধুর একজন লম্বা কালো এক মেয়েকে নিয়ে সময় কাটালো, পরে তার মুখ থেকে
শোনা গেল, এতোদিন যা সে ফ্যান্টাসি বলে ধারণা করে এসেছে, মেয়েটা নাকি
তা বাস্তবে করে দেখিয়েছে।
‘সময়ের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে,’ জনিকে মনে করিয়ে দিলো মাইকেল,
চেহারা বিষণœ ও গম্ভীর।
‘বিবেক বিসর্জন দিয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করার সময় হয়েছে,’ নরম সুরে
মন্তব্য করলো বিল।
দু’হাতের মুঠোয় মাথার চুল মুচড়ে ধরলো জনি। ‘ওহ্, গড!’ এটা-সেটা নানা
অজুহাত দেখিয়ে সময় নিয়েছে সে, কিন্তু জানে বিপদটা এড়াবার কোনো উপায়
তার নেই। ক্রিসমাস ঈভ, পকেটে রয়েছে ট্রেনের টিকেট, স্ত্রী ও বাচ্চাদের কাছে
ফিরে যেতে চায় সে।
‘ব্যাপারটা সিরিয়াস, জীবন-মরণ সমস্যা,’ বললো বিল, উদ্বেগে ঝুলে পড়েছে
তার মুখ।
‘সিরিয়াস মানে!’ বিড়বিড় করে উঠলো মাইকেল। ‘সমাজে মুখ দেখাবো
কিভাবে? আÍীয়স্বজনরাই বা কি বলবে? ছি-ছি-ছি, কি কুক্ষণেই যে তোমার শখ
চাপলো আর আমরাও সাহায্য করতে রাজি হয়ে গেলাম...
।’
‘জানি, সব আমার দোষ...
।’
‘তবে, সমস্যা যেমন আছে, তেমনি তার সমাধানও আছে। শুধু সমাধান নয়,
কিছু টাকাও পাওয়া যাবে। কিছু নয়, বেশ মোটা টাকা। ওগুলো তোমার, জনি।’
‘হ্যাঁ, তা-ও জানি। আমি শুধু
...
’
‘শোনো, জনি।’ বিল তার লোমশ হাতটা দিয়ে জনির কব্জি চেপে ধরলো,
ব্যথা পেয়ে কাতরে উঠলো জনি। ‘শোনো, ভেবো না যে তোমাকে কিছু চুরি
করতে বলা হচ্ছে। লোকগুলোর মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় দরকার, তার বেশি কিছু
না।’
‘জানি...,’ থামলো জনি, চোখে আকুল দৃষ্টি নিয়ে কামরার চারদিকে
তাকালো। ‘আমি জানি। এর কোনো বিকল্প নেই, তাই না?’
‘সত্যি নেই।’ মাইকেল শান্ত, তার কণ্ঠস্বর কোমল, চেহারায় সহানূভূতি।
মাথা ঝাঁকালো পেটি অফিসার। ‘ঠিক আছে। কাজটা আমি করবো।’
‘কথা দিচ্ছো তো?’ বিলের প্রশ্ন।
‘দিচ্ছি।’
‘ওরা তোমাকে সময়টা জানাবে, জায়গাটা কোথায় বলবে, ইকুইপমেন্ট
দেবেÑতুমি এখান থেকে চলে যাবার আগেই। তুমি যদি তোমার কথা রাখো,
টাকা পাবে, ফটোগুলোর সমস্ত পজিটিভ আর নেগেটিভ নষ্ট করে ফেলা হবে,
তোমার সামনেই। আর যদি অকারণে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাও...
ঈশ্বরই বলতে
পারবে কি ঘটবে তারপর। তোমার সুখের সংসার যে ধ্বংস হয়ে যাবে, এটুকু
নিশ্চিত। আমার আর বিলের অবস্থা? লুকিয়ে বেড়ানোর অভ্যেস আছে আমাদের,
ওদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারবো। কিন্তু তোমার লুকোবার কোনো
জায়গা নেই। কি বলছি বুঝতে পারছো তো? ওরা তোমার খোঁজে দেশটা চষে
ফেলবে, জনি!’ শিউরে উঠলো সে। ‘মরে যাওয়াটা কঠিন কিছু নয়, কিন্তু নির্যাতন
সহ্য করাÑওরে বাপরে!’
‘বললাম তো, কাজটা করবো,’ আবার বললো পেটি অফিসার। সত্যি কথাই
বলছে সে। জানে, তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
নাইন এমএম ব্রাউনিং অটোমেটিক পিস্তল শরীরে লুকিয়ে রাখা সহজ নয়।
সেজন্যেই ‘ক্লোজ প্রোটেকশন’ এক্সপার্টরা ছোটো আর হালকা অস্ত্র রাখার পরামর্শ
দেয়। ছোটো একটা পিস্তলও একই কাজ করবে।
মন্টেরা তার পিস্তল বহন করছে শোল্ডার ব্যাগে। রানা ব্যবহার করছে
শোল্ডার-হোলস্টার, এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করেছে যাতে বাম শোল্ডার বে−ডের
সরাসরি পিছনে থাকে অস্ত্রটা।
শহরে কেনাকাটা করতে যাচ্ছে ওরা। টেরেল আর তাদানো আড়ালেই
৩৪
থাকলো, ওরা বেরিয়ে যাবার পর নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন।
শহরটা ছোট্ট। আজ শনিবারে রাস্তায় প্রচুর যানবাহন, স্থানীয় পুলিস হিমশিম
খেয়ে যাচ্ছে। ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করার আজই শেষ দিন। দোকানে
দোকানে প্রচণ্ড ভিড়, ক্রেতারা হন্তদন্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে মনের মতো
জিনিসটার খোঁজে।
নির্ধারিত জায়গাটায় কোনো রকম একটা ফাঁক পেয়ে গাড়ি রাখলো ওরা।
কেনাকাটার তালিকাটা রয়েছে মন্টেরার হাতে। ইতিমধ্যে ঠিক হয়েছে, তার
হাতের রান্না খাবে রানা। অর্থাৎ কোনো রেস্তোরাঁয় না ঢুকে বাজার থেকে রান্নার
উপকরণ কিনবে। এতে করে আরেকটা লাভ হবে, সারাটা দিন ভিলায় অলস
সময় কাটাতে হবে না। মন্টেরা রাঁধবে, তাকে সাহায্য করবে রানা।
প্রায় নাকে দড়ি দিয়ে রানাকে ঘোরাতে শুরু করলো মন্টেরা। বাজারের
অলিগলি কোথাও ঢুকতে বাকি রাখলো না মেয়েটা, তার নাকি তাজা আর টাটকা
শাকসব্জি ছাড়া চলবে না। আধ ঘণ্টা লাগলো কাঁচা বাজার সারতে, ট্রলিতে তোলা
হলো সব। কেনা-কাটায় মনোযোগী হলেও, লক্ষ করলো রানা, মন্টেরার সতর্ক
চোখ দুটো খানিক পরপরই চারপাশে চক্কর দিচ্ছে। নেতৃত্বের গুণই হলো, নিজের
দায়িত্ব কখনো ভোলা যায় না। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে রানাকে আগাম জানিয়ে
দিলো সে, বিড়বিড় করে। তার একটা হাত সব সময় ঢুকে থাকলো শোল্ডার-
ব্যাগের ভেতর।
মন্টেরা যে প্রফেশনাল, মনে মনে স্বীকার করলো রানা। তার প্রতিটি আচরণ
সিকিউরিটির নিয়মে বাঁধা, এবং মনে হলো মাথার পিছনেও তার যেন একজোড়া
চোখ আছে। একবার, রানার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে
মন্টেরা, ফিসফিস করে বললো, ‘না, রানা। ওগুলো বেলজিয়ামে তৈরি, নিয়ো না।
দেখো ফ্রেঞ্চ ওয়াইন আছে কিনা। কয়েক লিরা বেশি দাম পড়বে, কিন্তু ঠকতে
হবে না।’ আরেকবার, রানার পিছন থেকে ফিসফিস করলো সে, রানার দিকে
পিঠ, ‘টিনের কৌটা নয়, রানা, বোতল। কৌটা একবার খুললে সবটুকু ব্যবহার
করতে হবে, কিন্তু বোতল হলে ছিপি লাগিয়ে বন্ধ করা যাবে।’
মন্টেরা এমনকি ছোটো একটা গাছও কিনলো। ‘এবারের ক্রিসমাসটা
স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একজন অ-খ্রিস্টানকে সব দিয়ে ফেললাম।’ রানার দিকে
ফিরে হাসলো সে, হাসিটায় কোনো খেদ নেই, আছে আমন্ত্রণ, যেন বলতে
চাইছে, চলো তাড়াতাড়ি ফিরে যাই ডেরায়, মজার খেলাটা আবার শুরু করি। এই
একবারই রানার দিকে ভালো করে তাকালো মেয়েটা।
জিনিস-পত্র সব গাড়িতে তোলা হলো। রানা আবদার ধরলো, কয়েক
মিনিটের জন্যে একা ছেড়ে দিতে হবে তাকে, গোপন কিছু কেনাকাটা আছে ওর।
ব্যাপারটা পছন্দ হলো না মন্টেরার, তবে দোকানের সামনে পাহারা দেয়ার
সুযোগটা আদায় করে নিলো।
জুয়েলারের দোকানে ভিড় খুব বেশি, রানাকে ঢুকতে দেয়ার আগে নিজে
একবার ভেতরটা দেখে এলো মন্টেরা, দোকানের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালো।
ভেতরে ঢুকে চেইনসহ হৃৎপিণ্ড আকৃতির একটা লকেট কিনলো রানা। অনেক দাম
পড়লো, তবে ওর ছুটির যাবতীয় খরচা বিএসএস বহন করছে যখন, পুষিয়ে
যাবে। দোকানের বাইরে দাঁড়ানো মন্টেরাকে লক্ষ করলেও, দোকানি জানে না
ক্রেতা রানার সাথে মেয়েটার কোনো সম্পর্ক আছে। অলঙ্কারটা প্যাকেট করার
সময় একগাল হাসলো লোকটা, বললো, ‘আপনার ডার্লিং যদি সাংঘাতিক সুন্দরীও
হয়, এটা পরলে তার রূপ আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে।’
হেসে ফেললো রানা। তারপর ওর মনে পড়লো, অনেক দিন পর কোনো
মেয়ের জন্যে এতো দামী উপহার কিনলো ও। সন্দেহ নেই, মেয়েটাকে মন থেকে
ভালো লেগেছে।
গাড়ি চালাচ্ছে রানা, পাশে বসে পথ-নির্দেশ দিচ্ছে মন্টেরা। একটা মোড়ে
পৌঁছুলো ওরা, যানজট লেগে আছে। বিষণœ, ক্লান্ত চেহারার একজন পুলিস
অফিসার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
পিস্তলটা বের করে কোলের ওপর রাখলো মন্টেরা। তার চোখ-জোড়া সদা
সতর্ক, চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে তীক্ষèদৃষ্টি।
লাইনবন্দী গাড়ি, এক এক করে এগোচ্ছে সাদা স্টপ-মার্কারের দিকে। রানা
তাকিয়ে রয়েছে পুলিস অফিসারের দিকে, হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেই এগোতে
পারে ফিয়াট। ঠিক এই সময় অনুভব করলো ও, সরাসরি সামনে থেকে, এক
জোড়া চোখ অপলক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। নড়ে উঠলো রানা, সাথে সাথে
দেখতে পেলো তাকে, পরমুহূর্তে বিস্ময়ে পাথর হয়ে গেল।
একটা মেয়ে। ঝট্ করে ঘুরে পিছন ফিরলো ওর দিকে। তারপর হন হন
করে এগোলো। কিন্তু এক পলক দেখেই তাকে চিনে ফেলেছে রানা। তার হাঁটার
পরিচিত ভঙ্গিটাও ধরা পরে গেছে ওর চোখে।
পিছন থেকে হর্নের শব্দে কান ঝালাপালা হবার জোগাড় হলো, সেই সাথে
ড্রাইভারদের চিৎকার। সবকিছুকে ছাপিয়ে উঠলো মন্টেরার তীক্ষè কণ্ঠস্বর, ‘রানা,
অফিসার তোমাকে এগোতে বলছেন! ফর হেভেনস সেক, মুভ!’
ক্লাচ ছেড়ে দিয়ে বাঁকটা ঘুরলো রানা, লক্ষ করলো পুলিস অফিসার মাথা
ঝাঁকিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে, যেন বলতে চায় ফিয়াটের ড্রাইভারকে ড্রাইভিং
লাইসেন্স দেয়া উচিত হয়নি।
একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ভিলা কাপ্রিসিয়ানিতে ফিরলো রানা। ভাবছে, এতো
জায়গা থাকতে এখানে কি করছে ফার্স্ট অফিসার রুবি বেকার? বিশেষ করে এই
শহরে কি কাজ তার, যেখান থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরে রয়েছে সে?
আট
কয়েক সেকেণ্ড ধরে বোঝার চেষ্টা করলো রানা, মনের খুঁতখুঁতে ভাবটা বিবেকের
দংশন কিনা। খুব কম করেও যদি বলা হয়, রুবি বেকারের রূপ-যৌবনের প্রতি
আকৃষ্ট হয়েছিল ও, সেটা নানাভাবে প্রকাশও করেছে, তবে ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মেরে
৩৫
যায় মেয়েটা অনিশ্চিত সিকিউরিটি রিস্ক প্রতিপন্ন হওয়ায়। ফার্স্ট অফিসার রুবি
বেকারের মধ্যে কি যেন একটা জিনিস ঠিক মেলে না। এই মুহূর্তে কাছে পিঠে
তার শারীরিক উপস্থিতি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ওকে। মন্টেরাকে বিষয়টা সম্পর্কে
জানানো দারকার, তবে এখন নয়, সময় হলে। পরে।
ভিলা কাপ্রিসিয়ানির গেট খোলা দেখলো ওরা। ছোটোখাটো, শক্ত-সমর্থ এক
লোক ধাপগুলোর কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিনস্ পরেছে লোকটা, টি-শার্টে লেখা
রয়েছে-‘দ্য ম্যান হু ডাইজ উইথ দ্য টোস্ট টয়েজ উইনস’। সোনালি চুল
লোকটার, ফুলে থাকা বাহুর পেশী দেখে যে-কোনো বক্সারের মনে ঈর্ষার উদ্রেক
করবে। লোকটা যে পেশাদার রক্ষক, একবার তাকিয়েই বোঝা যায়।
‘তাদানো,’ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করলো মন্টেরা।
গাড়ি থেকে জিনিস-পত্র নামাচ্ছে রানা, তাদানোর সাথে বিড়-বিড় করে কথা
বললো মন্টেরা। এক সময় এগিয়ে এলো লোকটা, গেট বন্ধ করলো, তালা দিলো,
ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গিতে চোখ মটকালো, তারপর রানার হাতে ধরিয়ে দিলো চাবিটা।
পাঁচিলের গায়ে একটা বোতামের দিকে ইঙ্গিত করলো সে, আইভি লতায় প্রায়
ঢাকা পড়ে আছে। মূকাভিনয়ের সাহায্যে বোতামে চাপ দেয়ার ভঙ্গি করে বুঝিয়ে
দিলো, কেউ গেট বা তালাটা নাড়াচাড়া করলে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
এরপর সবাই ওর ভিলায় উঠে এলো, পিছনের ফ্রেঞ্চ উইণ্ডো দিয়ে বড়
ভিলাটার দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল তাদানো। তার চেহারা আর আচরণের মধ্যে
এমন একটা বেপরোয়া ভাব আছে যেন দরজা ব্যবহার করার দরকার করে না,
দেয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারে, মুহূর্তের জন্যে যদি বা থামে, তা শুধু চুল থেকে
ধুলো ঝাড়ার জন্যে।
খাবার আর পানীয় মন্টেরার দায়িত্বে রেখে ধাপ বেয়ে আবার নিচে নামলো
রানা, গাড়িটায় তালা দিলো, ভেতরের গেট বন্ধ করে ফিরে এলো।
‘আমাদের আর কোনো কাজ নেই।’ রানার কাছে চলে এলো মন্টেরা,
দু’হাতে আলগাভাবে ধরলো ওকে, শরীরে শরীর ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে চাপ
বাড়ালো।
‘ব্যাপারটা ওরা পছন্দ করবে না,’ বললো রানা। ‘না করারই কথা। যার
জন্যে এতো খাটাখাটনি করছে ওরা, সে যদি ফুর্তিতে মেতে থাকে...।’
‘কি যে বলো না তুমি, রানা!’ দীর্ঘশ্বাস ফেললো মন্টেরা, রানার মধ্যে
অপ্রত্যাশিত একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছে সে।
‘ঠিকই বলছি।’
‘আমার কথা শোনো। বেচারা টেরেল আর তাদানো জানে এবারের ক্রিসমাস
উৎসবে তাদেরকে পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কাজ কাজই,
এর মধ্যে মন খারাপ করার কিছু নেই। তাছাড়া, আসল কাজটা ডোবারম্যানরাই
করবে। মোটকথা, কে কি ভাবলো বা অনুভব করলো তাতে আমার কিছু আসে
যায় নাÑআমি তোমাকে, মাই ডার্লিং রানা, কোনো অবস্থাতেই চোখের আড়াল
করছি না, যদি না আরেকটা বাস্ট টিম আবার হামলা চালায়।’
‘দগ্ধে মরো, তাদানো আর টেরেল।’
হাসির সাথে কেঁপে উঠলো মন্টেরার পেট, নিজের শরীরে সেটা অনুভব করে
পুলকিত হলো রানা।
‘শুনছো,’ বললো মন্টেরা। ‘বড় ভিলাটায় যাচ্ছি আমি। ওদেরকে সব বুঝিয়ে
দিতে হবে। একটা ফোন করারও সময় হয়েছে। ফিরে এসে উৎসব উদ্বোধন
করবো, কেমন?’ আস্তে করে রানার ঠোঁটে চুমু খেলো সে, রানা অনুভব করলো
আগে কখনো এভাবে কেউ ওর মুখচুম্বন করেনি। চুমো খাওয়াটা যেন একটা
আর্ট, মন্টেরা যেন দক্ষ একজন আর্টিস্ট, মুখটা যেন ওর গোপনতম অস্তিত্ব।
চুম্বন, উপলব্ধি করলো রানা, আজকের এই ধসে পড়া দুনিয়ায়, হারিয়ে যাওয়া
একটা শিল্প। মন্টেরা সেটাকে পুনরাবিষ্কার করার পর কৌশলে ব্যবহার করছে।
পিছনের টেরেসে দাঁড়িয়ে থাকলো রানা, পাথুরে পথ থেকে ভেসে আসা
মন্টেরার পায়ের আওয়াজ শুনছে, ভাবছে আসলে তার হয়েছেটা কি। হৃদয়গত
ব্যাপারে কখনোই দ্রুত, গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না ও। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ
সিদ্ধান্ত পেশাগত জীবনে দরকার হয়, মেয়েদের ব্যাপারে নয়। অথচ অস্বীকার
করার উপায় নেই মন্টেরা নামের ইটালিয়ান মেয়েটা জাদু করেছে ওকে। মাত্র
একটা দিন কাটিয়েই মনে হচ্ছে কতো যুগ ধরে যেন চেনে।
ব্যাপারটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যায় না। সেটাই উদ্বেগের কারণ।
মন্টেরা ওর হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে। রানার স্বভাবে শৃঙ্খলা এতোই
প্রবল, এ-ধরনের ঘটনা কদাচ ঘটে। এমনকি সোহানাকে ভালোবাসতেও প্রচুর
সময় নিয়েছিল ও। ওই একটা দৃষ্টান্ত ছাড়া, মেয়েদের ব্যাপারে স্বাভাবিক পে−বয়
ব্যাচেলর বলা যায় তাকেÑপছন্দ হলে কোন মেয়েকে কাছে টানে, সতর্ক করে
দিতে ভোলে না যে কোনো বাঁধনে জড়ানো তার পক্ষে সম্ভব নয়, তার পেশা ও
চরিত্র ব্যাপারটা অনুমোদন করে না। কারো ওপরই কখনো জোর খাটায় না রানা।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, আগ্রহটা মেয়েটারই বেশি। তারপরও, কোনো
মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানোর সময়, অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয় ওকেÑ
জানে, ওকে বধ করার জন্যে সুন্দরী মেয়েদেরই পাঠানো হবে। ওকে কাছে পাবার
জন্যে তারাই ব্যগ্রতা প্রকাশ করবে।
বাঁধনে জড়াতে চায় না রানা, কারো সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক করতে চায় না,
কারণ এ-সবের সাথে ওর নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। ওর একার নয়, সংশি−ষ্ট
মেয়েটারও। রানার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, শুধু কাভারের প্রয়োজনে ফিল্ড অফিসারদের
বিয়ে করা উচিত। ওর বিশ্বাসের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে মন্টেরা।
বিষয়টা নিয়ে আরো কিছুক্ষণ দ্বন্দে¡ ভুগলো রানা, তারপর ওর মনে পড়লো,
নতুন কোড সংগ্রহ করতে হবে ওকে। ভিলায় ফিরে এসে লণ্ডনে ফোন করলো
ও।
তিন বার বেল বাজতে অপর প্রান্তে রিসিভার তোলা হলো। ‘মাছরাঙা,’
বললো রানা। ‘দ্বিতীয় দিন।’
‘ড্রাগনটূথ,’ বহুদূর থেকে পরিষ্কার যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ‘রিপিট।
ড্রাগনটূথ।’
‘অ্যাকনলেজ।’ রিসিভার নামিয়ে রাখলো রানা। তারমানে, ভাবলো ও, বি
৩৬
এস এস-এর কোড এক্সপার্টরা আবারও দান্তেকে ব্যবহার করেছে। ছাত্রজীবনে
লেখাপড়ায় ফাঁকি দেয়নি রানা, এখনও অবসর সময়ে পচুর পড়াশোনা করে ও।
তাছাড়া, ওর স্মৃতিও খুব প্রখর। সব ক’টা লাইনই মনে করতে পারলো ও।
দান্তের দ্য ডিভাইন কমেডির ইনফার্নোয় আছে।
‘ফ্রন্ট অ্যাণ্ড সেন্টার হিয়ার, গ্রিজলি অ্যাণ্ড হেলকিন...
ইউ টূ, ডেডডগ...
কার্লিবিয়ার্ড, টেক চার্জ অভ আ স্কোয়াড অভ টেন।
টেক গ্রাফটার অ্যাণ্ড ড্রাগনটূথ অ্যালঙ উইথ ইউ।
পিগফাস্ক, ক্যাট্ক্ল, ক্র্যামপার অ্যাণ্ড ক্রেজিরেড।’
কয়েকটা পিশাচের নাম। নরকে থাকে ওগুলো, মুখে ধারালো দাঁত, হাতে
ছুঁচালো নখ, আগুন আর ফুটন্ত পানিতে বসবাসরত দোজখীদের খেদিয়ে বেড়ায়।
তার মানে, ভাবলো রানা, প্রাচীন, রহস্যময়, আধিভৌতিক বাস্ট শব্দটার দ্বারা
প্রভাবিত হয়েছে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের অফিসাররা। তিন মাথাঅলা দানব,
একটা ভাইপারের পিঠে চড়ে আছেÑওগুলোকে নরকের কীট বলে কল্পনা করা
হয়েছে।
‘ড্রাগনটূথ, রানা।’ ওর পিছনে ফ্রেঞ্চ উইণ্ডো দিয়ে কখন ফিরে এসেছে
মন্টেরা বলতে পারবে না রানা, কোনো শব্দই পায়নি। বিড়ালের মতোই নিঃশব্দ
সে।
‘হ্যাঁ। ড্রাগনটূথ,’ বললো রানা, চিন্তামগ্ন। বিড়াল, ভাবলো ও। ফার্স্ট
অফিসার রুবি বেকার কি বাস্ট-এর বিড়াল হতে পারেÑগে−নডা বার্ক? ‘ড্রাগনটূথ,’
আবার বললো ও, মন্টেরার উদ্দেশ্যে বিষণœ হাসলো। হাসিটার পিছনে ওর মস্তিষ্ক
হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।
গে−নডা বার্কের ফাইলে দেখা যায়, সেই কৈশোর থেকে নিবেদিতপ্রাণ
টেরোরিস্ট সে। দুটো ঘটনায় ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস তার কাছাকাছি পৌঁছুতে
পারে, তবু অন্যান্য বাস্ট নেতাদের মতোই, আজও ভূতের মতো অদৃশ্য একটা
অস্তিত্ব হয়ে রয়েছে গে−নডা বার্ক। তার আকৃতি ও আকার সম্পর্কে তেমন কোনো
তথ্যই পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি বিশ্বাসযোগ্য চেহারার বর্ণনা। কিন্তু রুবি
বেকারের একটা ইতিহাস আছে। রানা এমনকি রুবির চাচাকেও চেনে, ওয়েস্ট
কান্ট্রিতে বেকারটন ন্যাব-এর মালিক। রুবির চাচাতো ভাই-বোনকে দু’একবার
দেখেওছে রানা। ব্যাকগ্রাউণ্ডটা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। নাকি ভুল করছে রানা?
আরেকটা চিন্তা ঢুকলো মাথায়।
‘কি হয়েছে, রানা?’ চিন্তায় বাধা পড়লো, ওর কাছে এসে দাঁড়ালো মন্টেরা,
ওর গলাটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টানলো ওকে, কালো মায়াভরা
চোখ দিয়ে রানার মুখে কি যেন খুঁজলো। ওই চোখ দুটো প্রায় দুর্বল করে ফেললো
রানাকে, চোখ জোড়ার তলাবিহীন কালো গভীরতা ওকে যেন মন্টেরার মস্তিষ্কে
টেনে নিতে চাইছে, যাতে মেয়েটার সাথে নিজের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎই শুধু দেখতে
পায় ও। বিপদ আর দায়িত্ব থেকে মুক্ত একটা সুখময় ভবিষ্যৎ।
পিছু হটলো রানা, লম্বা করা হাত দিয়ে ধরে আছে মন্টেরাকে। ‘শহরে
একজনকে দেখলাম। ওখানে তার থাকার কথা নয়।’
মুখের চেহারা সামান্য বদলে গেল মন্টেরার। উদ্বেগের ক্ষীণ একটা ছায়া
পড়লো মাত্র। বুঝতে অসুবিধে হলো না রানার, যে-কোনো অপ্রত্যাশিত
পরিস্থিতির জন্যে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখে মেয়েটা, কোনো কিছুতেই অস্থির
হয় না বা ঘাবড়ে যায় না। রানাকে আরামকেদারার দিকে টেনে নিয়ে গেল সে,
শান্তসুরে একের পর এক প্রশ্ন করলো। তার প্রতিটি প্রশ্ন সমস্যার মধ্যিখানটাকে
লক্ষ্য করে উচ্চারিত হলো, যে-কারণে ভিলা কাপ্রিসিয়ানিতে রয়েছে রানা। বোঝা
গেল, আর সব কিছুর মতো, ইন্টারোগেটর হিসেবেও অত্যন্ত দক্ষ মন্টেরা।
এক এক করে সব কথাই বললো রানা। ইয়োভিলটনে যেভাবে দেখেছে
ফার্স্ট অফিসার রুবি বেকারকে, সিকিউরিটির ব্যাপারে তার অবহেলা, একদল
রেন-কে তার নেতৃত্বে ইনভিনসিবলে পাঠানো হবেÑরয়্যাল নেভি সাধারণত যা
কখনো করে না।
‘তাছাড়া, তোমাকেও যে পাঠানো হবে তা-ও সে জানতো?’ জিজ্ঞেস করলো
মন্টেরা।
‘কোথায়?’ পাল্টা প্রশ্ন করলো রানা, জানানোর দরকার না থাকলে জানানোর
দরকার নেই, এই নিয়ম সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি সচেতন ও।
‘কোথায় আবার, ইনভিনসিবলে। রানা, তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো না পুরোপুরি
ব্রিফিং না করে এই অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাকে? আক্রমণ ’৮৯
উপলক্ষ্যে তোমাকে ইনভিনসিবলে পাঠানো হবে, মেয়েটা তা জানতো, তাই না?’
মাথা ঝাঁকালো রানা। ‘হ্যাঁ, জানতো। ব্যাপারটা যে গোপন রাখা দরকার,
এটা যেন সে বুঝতে পারেনি। ব্যাপারটা ছিলো ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন গসিপ
কলামিস্টকে বলে দেয়ার মতো। সিকিউরিটির সাধারণ জ্ঞানটুকুও নেই তার।’
‘সেটা তার অভিনয়ও হতে পারে, কারণ শত্র“পক্ষের এজেন্ট হলে সিকিউরিটি
সম্পর্কে সাধারণ কেন, সমস্ত জ্ঞানই তার থাকতে হবে, তা না হলে তাকে রোপণ
করা হবে কেন।’ চিন্তা করছে মন্টেরা, কপালে খুদে দু’একটা রেখা ফুটলো
উদ্বেগের। রানা লক্ষ করলো, দুশ্চিন্তায় পড়লে আরো সুন্দর দেখায় মিষ্টি
চেহারাটা। ‘শোনো, রানা,’ বলে রানার ঊরুর ওপর একটা হাত রাখলো মন্টেরা,
বৈদ্যুতিক ধাক্কার মতো রানার সারা শরীরে পুলকের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো,
ফলে শরীরের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটা মাথাচাড়া দিয়ে
উঠলো। ‘শোনো, বড় ভিলায় একটা রেডিও আছে, সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ এমন
একটা বিষয়, দেরি করে রিপোর্ট করা চলে না। বেশিক্ষণ লাগবে না আমার।
দু’একটা কাজ সেরে রাখবে তুমি, তারপর আমি ফিরে এসে বাকিটা সারবো।
কাল ডিনারের জন্যে যদি ভেজিটেবল না চাও তাহলে অবশ্য আলাদা কথা।’
দেশীয় অর্থে যাদেরকে সাহেব বা বাবু বলা হয়, কোনোভাবেই তাদের দলে
পড়ে না রানা। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে ও, প্রায় সব রকম কাজ
কিছু কিছু জানাও আছে। আর রান্নাবান্নায় তো রীতিমতো ভালো হাত ওর। এর
আগেও নিজের হাতে রান্না করে অনেক মেয়েকে খাইয়েছে ও।
মুখে কিছু না বলে শুধু মাথাটা কাত করলো একদিকে, মন্টেরা চলে যাবার
চলবে.. ।