somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ নিলু

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইসিইউতে নিলুর ডাক্তার দেখছেন তার রোগীর দুই চোখের কোণায় একটু একটু করে জল জমে আছে।এই জল কিসের জন্য? তার ডাক্তার সেটা জানার চেষ্টা করবেন না।

এই জলটা নিলুর মরে যাওয়া সন্তানের জন্য। সবাই এতক্ষণ জেনে গেছে।শুধু নিলু জানে না আসলে তার বাচ্চাটা মারা গেছে।কিন্তু আসলে কি তাই? একজন মা জানবে না তার সন্তান মারা গেছে? অবশ্যই জানবে। টেলিপ্যাথিকে কেউ বিশ্বাস নাই বা করতে পারে কিন্তু নিলুর চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল যে তার মরে সন্তানের জন্যই।মেয়েরা নাকি মা হলে নিজের জন্য আর চোখের জল ঝরায় না।

সম্ভবত নিলুর বাচ্চাটা মারা গেছে গতকাল রাতেই।আর তাকে হাসপাতাল আনা হয়েছে একটু আগে। গত রাতের এক্সিডেন্ট থেকে এখন পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা। যদি ধরি নিলু বাথরুমে মধ্যরাতে গিয়েছিল তবে তা ১২ ঘন্টা হবেই। হুট করে বাথরুমের টাইলসে পড়ে যায় নিলু।ঘটনা সেখানেই শেষ নয়। নিলু যখন সাপোর্ট হিসেবে পানির কল ধরেছিল তখন সেটাও ভেঙে যায়। বাথরুমে পানি অনবরত পড়তেই থাকে। বাসায় নিলু আর তার ভাবী ছিলেন ।উনি টেরই পাননি কি হয়েছে।নিলুর ভাবী ফজর নামাজ পড়তে উঠলে দেখেন তার ননদ বাথরুমের মেঝেতে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ভদ্রমহিলা তখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে হয়তো আজ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না তাদের।

হনুফা বেগম প্রায় দুপুর পর্যন্ত ননদকে নিয়ে বাসায় বসে রইলেন। তেল-রসুন গরম করে হাতে পায়ে মাখলেন। কিন্তু নিলুর একটু জ্ঞান ফিরলেও সে ব্যাথায় কাৎরাচ্ছিল । দুপুরের দিকে হনুফা বেগম এক ওঝাকে ডাক দিয়ে আনলেন বাসায়।এই ওঝার চিকিৎসা চলল ঘন্টা দুয়েক।ওঝার কাজ হচ্ছে জীন তাড়ানো। সেই ওঝা একবার আগুন জ্বালিয়ে রাখে। একবার এটা পোড়ায়। একবার সেটা পোড়ায়।কিন্তু নিলুর কোন উন্নতি হয়না।নিলু চিৎকার করে আর ভাবীর দিকে তাকিয়ে থাকে।নিলু কিছু বলে না।একটা সময় ওঝা হাল ছেড়ে ছেড়ে পালিয়ে যায়।এই বাংলাদেশে কত শত মা এভাবে জীনদের খপ্পরে পড়েছেন তার হিসাব এসব ওঝারা রাখেন। আমি বলি কি, জীনদের কি আর কোন কাজ নাই ?

হনুফা বেগম তার স্বামীকে ফোন করেন আবার। আদিল সাহেব অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছেন।নিজের বোনের অবস্থা শুনে তিনি পাগল হয়ে যাবেন অবস্থা। তিনি তখনও জানতেন না তার বোন কাল মধ্যরাত থেকেই কতটা কষ্টে পার করেছেন।

তিনি দ্রুত ফোন করেন একটা এ্যাম্বুলেন্স পাঠান।নিলুকে তার ভাবী নিয়ে যান একটা হাসপাতালে। সেখানে নিলুর বাচ্চাটার ডেলিভারি হলে সে ক্রিটিকাল অবস্থায় চলে যায়।ডাক্তাররা তাকে দ্রুত ঢাকায় রেফার করেন।নিলুর বাচ্চাটা মারা যাওয়ার সময় নিলু অচেতন ছিল। নিলু ছিল ঢাকাগামী এ্যাম্বুলেন্সে আর বাচ্চাটা কুমিল্লায় একটা হাসপাতালে। যে বাচ্চাটা এতগুলো দিন তার নাড়ির সাথে আটকে ছিল আজ সে অনেকদূরে চলে গেল। বন্ধনগুলো ছুটে গেলে এত দূরে চলে যায় কেন?

হাসপাতালে এখনো এসে পোঁছায়নি নিলুর স্বামী। ফেনী থেকে ঢাকা আসা খুব কঠিন কোন কাজ না।কিন্তু গতরাতের ঘটনার পরও নিলুর স্বামী নির্বিকার ।হনুফা বেগম সকালেই জানিয়েছিলেন মিলনকে।এরপরও মিলন ব্যাপারটাকে খুব সাধারণ ভাবেই নিয়েছিল।মিলন একটু সিরিয়াসলি বললেই হয়তো এভাবে নিলুকে বাচ্চা হারিয়ে আইসিইউ তে অনিশ্চিত জীবনের অপেক্ষায় থাকতে হতো না।

নিলুর সাথে মিলনের বিয়ে হয় দুই বছর আগে।আর আট দশটা মেয়ের মত নিলু নয়।নিলু প্রচন্ড ইন্ট্রোভার্ট একটা মেয়ে।এমন মেয়ে যে ইচ্ছে করলেই সব কিছু বলতে পারে না।নিলুর ব্যাথার তীব্রতাও তার ভাবীকে বুঝাতে পারে নি সে। এই পৃথিবীতে ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষগুলো নিজেদের পৃথিবীতে নিজেরা সর্বেসর্বা হলেও অন্যের পৃথিবীতে তারা বড্ড অসহায় , বড্ড বেমানান। তবু অন্তর্যামী জানেন তারা কতটুকু হন্যে হয়ে চেষ্টা করে একটু মানিয়ে নিতে কিংবা একটু সংগ পেতে। নিলু কাউকে পায় নি। যাকে পাবে বলে ৯ মাস অপেক্ষায় ছিল সে চলে গেছে পরপারে।

নিলু মনে মনে তার বাচ্চার নাম ঠিক করে রেখেছিল। মেয়ে হলে নাম রাখবে প্রশংসা।এটা নিলু কখনো কাউকে বলে নি। কিন্তু মনে মনে চাইছিল তার মেয়ে হবে। লোকজন ডাকবে, প্রশংসার মা, এই প্রশংসার মা ! নিলু কি জানে, নিলু না ফিরলে এই নাম কখনো কেউই জানবে না ? প্রশংসা হারিয়ে গেছে। প্রশংসার মা হারিয়ে যাওয়াদের দরজায় কড়া নাড়ছে।

মিলন বিয়ের কদিন পর থেকেই কেমন জানি নিলুর ব্যাপারে উদাসীন। নিলু ঠিক মত খেয়েছে কিনা এটা জানার জন্যও মিলন কখনো ফোন দিত না। সে কি নিয়ে যেন নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু গত রাতে যে ঘটনাটা ঘটল সেটার পরও মিলন কেন এত নির্বিকার সে উত্তর খুঁজে পায় নি কেউ।

নিলু কুমিল্লায় তার ভাইয়ের বাসায় থাকে। ওদের পরিবার বলতে শুধু একটা বোন আর একটা ভাই।বাবা- মা গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগে ।নিলুকে বিয়ে দিয়েছে নিলুর ভাবী। ভদ্রমহিলা মনে করেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তার খালাত ভাই মিলনের কাছে তার ননদকে বিয়ে দেয়া।আর এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তাকে এখনো। মিলন বিয়ের কদিন পরই বলে সে বউ নিয়ে ফেনীতে থাকতে পারবে না। তার বেতন কম।এই সেই বলে সে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেত। নিলুর ভাই বউকে কিছু বলতে গিয়েও সেদিন বলে নি। শুধু বলেছিলেন, ঠিক আছে।নিলু আমাদের সাথেই থাকুক।

নিলু হয়তো আর কারো সাথেই থাকতে চাইবে না। নিলুর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষার মাঝেই তার স্বামী আসল।
ডাক্তার বললেন, রোগী কামব্যাক করার পসিবিলিটি খুবই কম।
মিলন তবুও নির্বিকার।ওইদিকে নিলু হয়তো ভাবছে সে আর ফিরবে না। নিলু যদি জানে নিলুর বাচ্চাটা মারা গেছে তবে কি ফিরতে চাইবে? চাইবে না। নিলু হয়তো মৃত্যু যমকে ডেকে বলবে,এই যে, চলো। নিলুদের এই একটা সুবিধা। মৃত্যুকে খুব আপন করে ডাকতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×