somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

ডয়েচে ট্যাগবুখ- জার্মান ডায়েরিঃ ১

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত সাড়ে দশটায় আমি যখন রুম থেকে বের হলাম তখন চারপাশে শুভ্রতার মেলা। গতকালের তুষার ঝড়ের আচঁ সর্বত্র দেখা যাচ্ছিল। শুধু যেখান দিয়ে মানব পদচিহ্ন পড়েছে সেখানে কালো বা ময়লা দেখা যাচ্ছিল বেশ। আমি নিশ্চিত আজকে আরো একটা ঝড়ের পর কাল আবার সেই মানব কলংক মুছে যাবে। এরপর আবার শুভ্রতা রাজত্ব করবে। মানুষের পদচিহ্ন যেখানে পড়বে সেখানে তো একটু আধটু কলংক লাগতেই পারে!

২০১২ সালে যখন হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন তখন আমি উচ্চমাধ্যমিকে পড়ি। আমি তখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের কোয়ার্টারে থাকতাম। খুব সম্ভবত দুপুরের দিকে টিভিতে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু সংবাদটা দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি নি। গল্পের যাদুকর আর লিখবেন না এটা ভাবতেই এক ধরণের হাহাকার পেয়ে বসে আমাকে। আমার জীবনে তখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিয়োগের নাম ছিল "হুমায়ূন আহমেদ" ।

২০১৪ সালের কথা। রকমারি ডট কম থেকে হুমায়ূন আহমেদের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট আর নোটবুক বিক্রি শুরু হয়। অনেক কষ্ট করে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা দিয়ে আমি সেই টিশার্ট আর নোটবুক সংগ্রহ করি। নোটবুকটা এখনো আমার পাশেই থাকে আর টিশার্টটা আমার বাড়িতে আছে এখনো।

সে বছর ঈদে আমি একটা হলুদ পাঞ্জাবি কিনি। সদ্য এইছ এস সি পাস করা ছেলেটা হিমু হতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক। সেই পাঞ্জাবিতে যদিও পকেট ছিল। আর খালি পায়ে ঢাকা শহরে হাঁটা যায় নাকি! আমার আর হিমু হয়ে উঠা হয় নি। কোন থানার ওসির সাথে থানায় গিয়ে রসিকতাও করা হয় নি।

আজকে অনেক দিন পর আমার খালি পায়ে হাঁটার শখ জাগলো। খালি পায়ে না হলেও অনেকক্ষণ বাহিরে হেঁটে তারপরই বাসায় ফিরলাম। আমি যেখানে বসে ছিলাম সেটা আমি যেই শহরে থাকি সেই শহরের মূলকেন্দ্র। এখানকার ভাষায় "স্ট্যাডমিটে"। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে "রুর নদী"। আমি নদীর উপর ব্রিজটায় বসে ছিলাম। অনেকক্ষণ হাঁটার পর মনে হলো এবার একটু বসা দরকার। খালি পায়ে হাঁটার শখ পূরণ সম্ভব না হলেও হাঁটার শখ তো পূরণ হয়েছে।

এখন তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা অনুভূত হচ্ছে মাইনাস ১১ ডিগ্রির মত।আর বাতাস বয়ে যাচ্ছে ঘন্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। সারা শহরে তুষার পড়ে একাকার। এরমধ্যে বাল্যকালে হিমু হতে চাওয়া একজন চাইলেও খালি পায়ে হাঁটতে পারবে না। সত্যিকারের হিমুরা হয়তো পারতে পারে। আমি পারব না।

প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটার পর আমি হাতে গোনা অল্প কিছু মানুষের দেখা পাই। ভাবা যায় একটা শহরের মূলকেন্দ্রে ২-৩ জন মানুষ? এদের দেখে বুঝা যায় কাজ থেকে ফিরছেন কিংবা কারো বাসায় যাচ্ছেন। অথচ আমাদের ঢাকা শহরে রাতে হাঁটতে বের হলে কত রকম চরিত্রের সাথে সাক্ষাৎ হয়। কেউ কেউ জীবনের কাছে হারতে হারতে জীবনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ হয়তো জীবনটাকে ভুলে গিয়ে একটা অদৃশ্য জীবন নিয়ে বসবাস করছেন। ফুটওভার ব্রিজের উপর সাজুগুজু করা মেয়েটা একজন খদ্দেরের আশায় বসে থাকে। তারচোখে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন কেউ দেখেছে বলে দাবি করতে পারবে না। হয়তো খাদ্যের জোগান দিতে কিংবা পরিবারের ঘানি টানার জন্য সেই এই জায়গায় চলে এসেছে।কিংবা জীবন তাকে এখানে ফেলে গেছে।ক্লান্ত রিকশাওয়ালা সারাদিন রিকশা চালিয়ে শেষ ট্রিপের আশায় বসে থাকে। একদিন এক রিকশাওয়ালাকে বললাম -মামা, কতদূরে যাবেন। উনি বললেন -যতদূর আপনি যেতে চান। আমি মিরপুর থেকে ধানমণ্ডি রিকশা চড়ে আসতাম মাঝেমধ্যে।আরো সহজ করে বললে যেদিন আমি টিউশনের টাকা পেতাম।সেদিন রিকশাওয়ালাদের গল্প শুনতাম। আমাদের শহরে কত গল্প! আর এখানে? সব গল্পের একই প্যাটার্ন। সারারাত হাঁটলেও কোন গল্প পাওয়া যাবে না।

তবে একটা গল্প আমি পেয়েছি। এই গল্পটা কেন জানি বলতে ইচ্ছে করছে না। কিছু গল্প বলার জন্য একজন ব্যাক্তিগত মানুষের প্রয়োজন হয়। সেই গল্প শোনার অধিকার শুধু সেই ব্যাক্তিগত মানুষের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৪১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×