somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

ছোটগল্পঃ একটি চশমা

২২ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবাদত স্যার আমাকে ইশারা দিয়ে ডেকে বললেন, যা তো, স্টাফ রুম থেকে আমার চশমাটা নিয়ে আয়।

ফার্স্ট বেঞ্চে বসার সুবাদে আর ক্লাসের ক্যাপ্টেন হওয়াতে সব স্যারের সব রকম হুকুম আমাকেই পালন করতে হয়। অন্য সব স্যারদের বেলায় খুব উৎসাহ নিয়ে গেলেও এবাদত স্যারের কোন কথা শুনতে আমাদের কারোরই কোন আগ্রহ থাকে না।সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকরা ছাত্রদের প্রিয় হন না।আর এবাদত স্যার ক্লাসে অনেক শাস্তি দেন।তাই এবাদত স্যারের কোন কথাই আমাদের ভালো লাগে না।

এবাদত স্যার আমাদের অংক ক্লাস নেন। ক্লাস নাইন আর টেনের অংক ক্লাস শুধুমাত্র এবাদত স্যারই নেন। মানে স্কুলের সিনিয়র দুইটা ক্লাস সবসময় এবাদত স্যারের হাতে বন্দি। ক্লাস তো ক্লাস তার উপর আবার অংক ক্লাস!

চশমা আনতে গিয়ে স্টাফ রুমে ঢুকতেই অনিল বাবুর সাথে দেখা।স্টাফ রুমে অনিল বাবু আর এবাদত স্যারের চেয়ার পাশাপাশি।উনাদের দু'জনের সম্পর্ক আবার অন্যরকম। অনিল বাবু জুনিয়র ক্লাসে অংক করান। যেদিন অনিল বাবু আসেন না সেদিন উনার এবসেন্টি ক্লাসগুলো নেন এবাদত স্যার। এবাদত স্যার একমাত্র সিনিয়র শিক্ষক যিনি তার জুনিয়র কোন শিক্ষকের এবসেন্টি ক্লাস নেন।এবাদত স্যারের কোন এবসেন্টি ক্লাস কখনো নিতে হয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করলে অনিল বাবু বলেন, তোমাদের স্যারের এই স্কুলই হচ্ছে বাড়িঘর। বাড়িতে না এসে কেউ থাকতে পারে রে, বোকা?

এবাদত স্যারকে নিয়ে অনেক গল্প করতেন অনিল বাবু। আমরা যখন জুনিয়র ক্লাসে ছিলাম তখন যদি অনিল বাবু স্টাফ রুমে পাঠাতেন আর দেখতাম এবাদত স্যার উনার চেয়ারে বসে আছেন তাহলে পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যেত। মনে হতো যমের হাতে পড়েছি!

ক্লাস সিক্সের একটা ঘটনা। একবার আমাকে দেখে ডাক দিলেন এবাদত স্যার। আমিতো ভয়ে প্যান্টে প্রস্রাব করে দেই এই অবস্থা।

আমাকে ডেকে বললেন, অনিল বাবুকে একটু বলবি আমি "আদাব" বলেছি।

আমি ক্লাসে গিয়ে বললাম, স্যার, এবাদত স্যার আপনাকে "আদাব" জানাতে বলেছেন।

অনিল বাবু শুনেই ক্লাস থেকে বের হয়ে এলেন। আমাকে বললেন, তুই সবাইকে এই অংকটা বুঝিয়ে দে। আমি আসছি। খবরদার! কেউ কথা বলবি না ক্লাসে।

অনিল বাবু সেদিন আর ক্লাসে আসেন নি।পরদিন আমাকে ডেকে বললেন, আমার অংক বইটা তোদের ক্লাসে রেখে আসছিলাম।

আমি ব্যাগ থেকে বইটা বের করে স্যারের হাতে দিলাম। স্যারকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। আমি বোকার মত প্রশ্ন করে বসলাম, স্যার, কোন সমস্যা? অনিল বাবু আমাদের সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলেন। সেই সুবাধে স্যারের সাথে টুকটাক কথাবার্তা হতো।

অনিল বাবু আমার দিকে তাকিয়ে খুব আপন ভাবে বললেন, হ্যাঁ। তোদের এবাদত স্যারের মেয়েটার বিয়ে ভেংগে গেছে।

আমি বললাম,কেন স্যার?

স্যার বললেন, টাকা-পয়সার জন্য। কালকে ক্লাসের মাঝখানে বের হয়ে গেলাম দেখলি না? স্যার 'আদাব' বলেছেন মানে জরুরি কিছু।উনি খুব অসুস্থ বোধ করছেন। আমি যেন উনাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। এবাদত স্যার হয়তো একা একা বাড়িতে যেতে পারতেন। আমাকে ডেকেছেন যাতে যেতে যেতে আমাকে কথাগুলো বলতে পারেন। এবাদত স্যার আমাকে খুবই ভালোবাসেন। উনার ধারণা, এই উপজেলায় আমার চেয়ে ভালো কেউ অংক বুঝাতে পারবে না। এবাদত স্যার যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিবেন না। এদিকে মেয়েটার বিয়েও হচ্ছিল না।

যাক, এবাদত স্যারের মেয়ের বিয়েটা শেষমেশ হয়েছিল। খুবই ভালো একটা ফ্যামিলিতে।মেয়েটা সুখে আছে এই গল্প অনিল বাবু আগে প্রায়ই ক্লাসে বলতেন।সেসব গল্প অন্য কোন সময় করা যাবে। আপাতত এবাদত স্যারের চশমা নিয়ে বাকি গল্পটা বলা যাক।

এবাদত স্যারের চশমা আনতে গিয়ে দেখি অনিল বাবু বসে আছেন।

'কিরে ক্যাপ্টেন, কি খবর? আছিস কেমন?'

'স্যার, এইতো ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। '

'পড়ালেখা করিস তো ঠিকমতো? '

' জ্বী, স্যার।'

'পড়বি ঠিকমতো। অংক করিস তো রেগুলার?'

' জ্বী, স্যার।'

'রেগুলার অংক করবি।তাহলে মাথায় থাকবে।অংক হলো প্র‍্যাক্টিসের জিনিস।যত করবি তত ভালো।'

' আচ্ছা,স্যার।'

' তা স্টাফ রুমে কি মনে করে?'

'স্যার, এবাদত স্যার পাঠিয়েছেন উনার চশমাটা নিয়ে যেতে।'

অনিল বাবু চশমটা টেবিলের উপর থেকে নিতেই একটা ডানা খুলে পড়লো।

আমার হাতে দিতে দিতে বললেন, স্যারকে কতদিন বললাম এই চশমাটা এবার পাল্টান। নাহ,এটা নাকি উনার প্রিয় চশমা তাই আর ফেলবেন না।

এর কিছুদিন পর আমাদের এস এস সি পরীক্ষা। স্কুল থেকে একটা বিদায়ী সংবর্ধনা বা ফেয়ারওয়েল দেয়া হবে আমাদের। আমরা সবাই বেশ কিছু টাকা চাঁদা তুললাম স্যারদের জন্য গিফট কেনার জন্য।আমাদের স্যারদের বেশিরভাগই ইয়াং শুধু এবাদত স্যার ছাড়া।স্যারের প্রায় রিটায়ারমেন্টের সময় হয়ে গেছে।

আমরা সবাই মিলে চিন্তা করছিলাম স্যারদের কি দেয়া যায়। এক একজনের এক এক রকম মতামত। আমি হুট করে বললাম স্যারদের একটা করে সানগ্লাস দিব। সবাই হো হো করে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দেয় অবস্থা। আমি মেজাজ খারাপ করে বললাম, সানগ্লাসই দিব। এটাই ফাইনাল।

সজীব পকেট থেকে ওর সানগ্লাস টা বের করে বলল, এই সজীব, এ প্লাস বি হোল স্কয়ারের সূত্রটা বলতো।

আরিফ মুখকে একটু কেমন করে বলল, একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের সমষ্টির সমান। বুঝলি? উপপাদ্য-২৩। এটা যে মুখস্থ করতে পারবি সে অংকের মাস্টার।

সজীব আরিফের কথা টেনে বলল, মাস্টার এবাদত। হা হা হা।

আমি সব টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলাম। এরা এমন ভাবে মজা নিচ্ছিল ব্যাপারটা আর ভালো লাগছিল না। গিফট কেনার দায়িত্ব আমার, এটা বলে বের হয়ে গেলাম আমি।

ফেয়ারওয়েলের দিন সব স্যার-ম্যাডামদের হাতে একটা করে বক্স দিলাম। এবাদত স্যার আমাকে বললেন, কিরে এটা। আমি বললাম স্যার খুলে দেখেন।

সব স্যার-ম্যাডামরা বক্স খুলে কালো রঙের সানগ্লাস পরে পোজ দিতে লাগলেন।শুধু এবাদত স্যার কোন সানগ্লাস পান নি। তিনি মোটা ফ্রেমের একটা নতুন পাওয়ার চশমা পেলেন। একটু এদিক সেদিক দেখে স্যার চশমাটা পরলেন। আশ্চর্য! স্যারের চোখগুলো যে এত মায়াবী তা আমরা কখনো খেয়াল করি নি কেন?
.
.

[পুনশ্চঃ এবাদত স্যারকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান অনিল বাবু। স্যারকে একবার বলাতেই স্যার রাজি হয়ে যান।স্যারের প্রতি অনুরোধ ছিল স্যার যাতে এবাদত স্যারকে তখনি কিছু না জানান।উনি কিছু জানান নি।অনুরোধ রাখার জন্য স্যারকে ধন্যবাদ।]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×