somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

ছোটগল্পঃ বসবাস

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুট করে গ্লাস ভাংগার শব্দ হলে আমরা তিন ভাই-বোন একসাথে যার যার রুম থেকে দৌড়ে আসলাম ডাইনিং রুমে। নিতু ডাইনিং রুমের লাইট জ্বালাতেই দেখল বাবা একটা চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ফ্লোরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাংগা গ্লাসটি। বাবাকে প্রচন্ড বিমর্ষ দেখাচ্ছে। এই মধ্যরাতে বাবাকে এইভাবে দেখতে আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।

বাবা আমাদের দেখে বললেন,কিরে তোরা ঘুমাস নি?

নিতু চিৎকার দিয়ে বলল, বাবা, তোমার পায়ে রক্ত!

বাবা আমতা আমতা করে বললেন, চশমাটা যে কই রেখেছি! হয়েছে কি বেশ পানির পিপাসা লেগেছে। একটু পানি খেতে এসেছিলাম।গ্লাসটা কোনদিকে ছিল দেখি নাই। হাতের ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে।গ্লাস ভাংগার পর পা ফেলতেই পা টা ভাংগা টুকরার উপর পড়ে।একটু কেটেছে। যা তোরা ঘুমাতে যা।

বাবা বেশ অপরাধীর মত ভাংগা ভাংগা গলায় বর্ণনা করছিলেন। নিতুর হঠাত মনে পড়লো বাবার রুমে কাল রাতে পানি রাখতে ভুলে গিয়েছে সে। সাধারণত এই কাজগুলো আম্মা করতেন।আম্মা কখনোই এমন ভুল করতেন না। আম্মা প্রতি রাতেই একটা গ্লাস আর এক জগ পানি এনে শোয়ার রুমে রেখে দিতেন। নিতুর এই অভ্যেস নেই বলে সে ভুলে গেছে। অন্য যেকোন সময় হলে নিতুকে বাবা কড়া কথা শুনিয়ে দিতেন।

"সারাদিন মোবাইল আর মোবাইল। বাপকে পানি খাওয়াতেই ভুলে যায়।তোদের দিয়ে যে কি হবে।"

কিন্তু আম্মা মারা যাওয়ার পর বাবা কেমন জানি হয়ে গেছেন।আমাদের আগের মত বকাবকি করেন না। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে এই মেজাজে। আম্মা মারা যাওয়ার পর বাবা এখনো আমাদের কাউকে উচ্চস্বরে কিছু বলেন নি।

আমাকে তো মাঝেমধ্যে তুমি বলেও সম্বোধন করেন।

এই যেমন সেদিন বাবা বলছিলেন,
তোমার নানাবাড়িতে একটু যেতে হবে তোমাকে। তোমার আম্মা চেয়েছেন তার সন্তানেরা তার মৃত্যুর পরও নিয়মিত সে বাড়িতে যাবে। তুমি একটু তোমার নানা-নানীর কবরটা জেয়ারত করে আসবে। পারবে তো?

আমি সেদিন হা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাবার দিকে। ইনি আমার বাবা? এই মানুষটা আমাকে কোনদিন তুমি করে বলেন নি। এই তুমি করে বলাটা আমার কাছে একটা ধাক্কা হয়ে এসেছে। চেনা মানুষটার অচেনা রুপ।

বাবা আগে কখনোই আমাদের রুমে আসতেন না। দেখা গেছে মাসে একবার আসতেন তাও আমরা বুঝতাম সেদিন আমাদের কপালে দুঃখ আছে।আম্মা মারা যাওয়ার অনেক আগে একবার আমার রুমে এসেছিলেন।আইরিনের সাথে আমার সম্পর্কের কথা বাবা জেনে গিয়েছিলেন। আমার রুমে এসে সে কি ধমকা ধমকি!

"পড়ালেখার তো গন্ধও নাই রুমে।শুধু প্রেমের গন্ধ। পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাস নাই এই লজ্জা কেটে গেছে?
আমার এতগুলো টাকা নষ্ট করে কি তোরে প্রেম করার জন্য ভার্সিটিতে পাঠাচ্ছি?
মন দিয়ে পড়ালেখা কর।
নাইলে তোর পড়ালেখাই বন্ধ করে দিব।
দুইটা বলদ কিনে দিব।তিন বলদ মিলে হাল চাষ করবি। "

আহ! বাবার সেই মারমুখী স্বভাবটা আর নাই। বাবা এখন প্রতি রাতে আমাদের রুমে আসেন কয়েকবার করে। যদি দেখেন রুমের লাইট জ্বলে তাহলে আর রুমে আসেন না। লাইট বন্ধ দেখলেই রুমে এসে গায়ের কাঁথাটা টেনে দেন।এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে।
আগে আম্মা এমনটা করতেন। রাতে এসে দেখতেন।গায়ের কাঁথাটা ঠিকঠাক করে দিতেন। আর সব ঠিকঠাক থাকলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। আমি তো মাঝেমধ্যে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। একদিন আম্মা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি ভাবলাম আমি সজাগ আম্মা তা বুঝতে পারেন নি।

'কিরে ঘুমাস নি? আমি উঠে বসে গেলাম।'
'তুমি ঘুমাও নি।'
'ঘুম আসছে না।'

এরপর আমাকে বললেন, তোরা কত বড় হয়ে যাচ্ছিস! আর আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আমি মারা গেলে তোদের কে দেখে রাখবে? তোর বাবা তো নিজেকেই দেখে রাখতে পারেন না। আমি না থাকলে তোদের আর তোদের বাবার যে কি হবে!

আম্মার সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে।আম্মা মারা যাওয়ার পর বাবা কেমন জানি আমাদের উপর বেশ দায়িত্বশীল হয়ে পড়েছেন। আম্মা যে কাজগুলো করতেন বাবা এখন নিজে সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করেন। একদম হুবহু আম্মার মত করেই। তার মানে কি বাবা সবকিছু আগেও খেয়াল করতেন?

বাবা রাতে আমার রুমে আসেন। নিনা আর নিতুর রুমেও যান। নিনা আর নিতু আমার দুই বোন। নিতু এবার ইন্টারমেডিয়েটে পড়ে আর নিনা ক্লাস নাইনে। আর আমি একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। বাসা গুছিয়ে রাখার কাজটা অনেকটাই নিনা করতো। নিতু হয়েছে অগোছালো টাইপের। বড়বোন হয়েও ওর সব কাজ ও নিনার উপর চাপিয়ে দেয়। অন্যদিকে নিনা হয়েছে একদম মায়ের মত। সবকিছু গুছিয়ে রাখে।
আম্মা থাকতে নিতুকে প্রায়ই বকা দিতেন আর বলতেন, বড় টা হইছে বাপের মত আর আমার ছোট মেয়েটা আমার মত। ভাগ্যিস ওইটাও বাপের মত হয় নাই।

নিতু আসলেই একদম বাবার মত হয়েছে। প্রচন্ড রাগী আর অগোছালো। কারো কথা শুনে না। তবে আম্মা মারা যাওয়ার পর বাবার মধ্যে যেমন আমূল পরিবর্তন এসেছে নিতুর মধ্যেও তেমন পরিবর্তন এসেছে। নিতুও এখন বাবার মত আর উচ্চস্বরে কথা বলে না।একদম চুপচাপ থাকে। আর নিনা? দিনের একটা সময় আম্মার জন্য তার বরাদ্ধ থাকবেই। কখনো আমাকে, কখনো নিতুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করবে সে।
একদিন রাতে বাবা আমার রুমে আসলেন। এসে আমার পাশে বসলেন।অন্ধকারে বাবার চেহারাটা আবছা দেখা যাচ্ছিল।

-ঐ মেয়েটার কি খবর রে?
-কোন মেয়েটা?
-ঐ যে তোর গার্লফ্রেন্ড।
-তুমি না করার পর তো ওর সাথে সেই কবেই ব্রেক আপ করে ফেলেছি।
-তো বাসায় আসতো কেন?
-কই!
-তোর মা থাকলে তো আনতি। আমি অফিসে গেলে মেয়েটা আসতো তাই না? আমার ভয়ে তোর মা তখন আসতে বলতো।আমি কি বেশ রাগী? তোর মা কি এজন্যই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে রে?

এরপর বাবা উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।

তোর মা কি এজন্যই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে রে? - এই কথাটা বলার সময় বাবার কন্ঠে এক ধরণের অভিমান বা হাহাকারের সুর পাওয়া গেছে।বাবা এখনো মেনে নিতে পারছেন না আম্মার চলে যাওয়াটা।

আমাদের প্রিয় মানুষদের ক্ষণিকের চলে যাওয়া বা দূরত্ব আমাদের হয়তো ভাবায় না। কিন্তু কেউ একজন চিরতরে চলে যাবে এই দৃশ্য ভাবা গেলেও এর সাথে বসবাস করা বেশ কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:৩১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×