somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠিখানা পড়ে কান্না ধরে রাখতে পারিনি

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিঠিখানা পড়ে কান্না ধরে রাখতে পারিনি।
হাত জোর করে সবাইকে অনুরোধ করবো পুরো চিঠিটি পড়ুন।

আসমা বেলতাগী!
মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখার জেনারেল সেক্রেটারী মোহাম্মাদ বেলতাগীর ১৭ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে যিনি হায়েনার বুলেটের আঘাতে ঐতিহাসিক রাবেয়া স্কয়ারে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বাবার চিঠির বাংলা অনুবাদ।

প্রিয় কন্যাকে উদ্দেশ্য করে বাবার চিঠি -

আমার প্রিয় মা আসমা !

তোমার মৃত্যুর পরেও আমি তোমাকে বিদায় জানাবোনা। তোমাকে শেষ বিদায় জানাবোনা কারণ তোমার সাথে বাবার আবার দেখা হবে। দেখা হবেই ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ। দেখা হবে জান্নাতে।

মা আমার, তুমি বেঁচে ছিলে তোমার শির উচু করে। সেই উচু শিরের নীচে চাপা পড়ে গিয়েছিলো স্বৈরতন্ত্রের ধারক বাহকেরা। তুমি ছিলে এক নীরব বিপ্লবী যে কিনা নতুন এক প্রভাতের স্বপ্ন দেখতো। তুমি স্বপ্ন দেখতে নতুন এক মিশরের যা কিনা ইসলামের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে অনন্ত কাল ধরে।

সমবয়সীদের মতো, আর কয়েকটা ছেলে মেয়ের মতো, তোমার চাওয়া পাওয়া ছিলোনা। তোমার চাওয়া পাওয়া সবসময়ই ছিল ভিন্ন। ক্লাসে প্রথম স্থানটা সবসময় তোমারই ছিলো।

বাবার এ ব্যস্ত জীবনে তোমাকে আমি খুব বেশী সময় দিতে পারিনি। তোমার সাথে বাবার খুব একটা বসা হয়ে উঠেনি। কারণ, আল্লাহ্‌ আমাকে ব্যস্ত রেখেছেন তাঁর কাজের জন্য। তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয় রাবা আল আদাওইয়া স্কয়ারে। তুমি আমাকে বলেছিলে ‘বাবা, আমাদের সাথে থাকলেও তোমাকে সব সময় ব্যস্তই দেখি। আমাদের জন্য কি কিছু সময় হবেনা?’ জবাবে আমি বলেছিলাম ‘এ ছোট্ট জীবনটা মনে হয় আমাদের দেখা সাক্ষাতের জন্য বা কিছু স্নেহের মুহূর্ত কাটানোর জন্য খুব কম। তাই আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করি বেহেস্তে যেন আমাদের দেখা হয় যেখানে সময় হবে অফুরন্ত’।

তোমার শাহাদাতের দুদিন আগের ঘটনা। স্বপ্নে দেখি তুমি ধবধবে সাদা বিয়ের ড্রেস পরে আছো। সফেদ ড্রেসে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিলো। তুমি যখন আমার পাশে বসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘ আজ কি তোমার বিয়ের রাত?’ তুমি হেসে জবাব দিলে ‘ না বাবা, এটা রাত নয়। এখন বিকেল’।

আমাকে যখন বলা হলো বুধবার বিকেলে রাবা স্কয়ারে তুমি শাহাদাত বরণ করেছো, আমি বুঝলাম কেনো সেদিন তুমি বলেছিলে এটাতো রাত নয়, বিকেল। এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহর দরবারে তুমি শহীদ হিসেবে কবুল হয়েছো।

আমি তোমার জানাজায় শরীক হতে পারিনি। সে এক অব্যক্ত কষ্ট ও কান্না। আমি তোমার মুখ শেষবারের মতো জানাজা শেষে দেখতে পাইনি। কপালে শেষ চুমু দেয়ার সুযোগ আমি পাইনি। বড় ইচ্ছে ছিলো তোমাকে বলি ‘আসমা, বিপ্লব শেষ হয়নি। শুরু মাত্র। আমরা হয় জিতবো অথবা তোমার মতো শহীদ হবো’।

তোমার শরীর এবং আত্মা এখন অনেক উঁচুতে। অনেক উঁচুতে। ফেরাউনের বংশধরেরা বুলেট দিয়ে তোমাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তোমার আত্মাকে তারা হত্যা করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস মহান আল্লাহ তোমার আত্মাকে অনেক সম্মানিত করেছেন।

মা আমার,
আমি তোমাকে চিরবিদায় দেবোনা। তবে বিদায়। দেখা হবে ওপারে। আল্লাহর অসীম ভালোবাসা আর দয়ায় তোমার সাথে দেখা হবে বাবার জান্নাতে ইনশাল্লাহ। আপাতত এ ধুসর পৃথিবী থেকে বিদায়।

প্রিয় কন্যাকে উদ্দেশ্য করে বাবা মোহাম্মাদ বেলতাগীর মূল চিঠি এখানে-

Click This Link
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×