
আগের যমানায় কেউ লাখপতি হলে নাকি বাড়িতে লাখের বাতি জ্বালাতো। সেই হিসেবে হাজী তমিজের বাড়িতে কয়েকশ বাতি জ্বলার কথা। কিন্তু বিধি বাম, তিনি আজ বিছানায় এক প্রকার বেহুশের মতো শুয়ে আছেন, বয়স ৯০ ছুই-ছুই, উচ্চ মাত্রার ডায়াবেটিস, ছেলে মেয়েরা কেউ খোঁজ নেয় না। কোন নাতি যদি খোঁজ খবর নেয় বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, অন্যরা অভিসন্ধি খুঁজে পায়, মনে করে ফুসলিয়ে সম্পত্তি নেয়ার চেষ্টা ।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পত্তি বাটোয়ারা নিয়ে। তিনি তাঁর সম্পত্তির সিংহভাগ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। তার মধ্যে প্রায় ৮০ঁ% দিয়েছেন ছেলেদের বাকি অংশ মেয়েদের। তবে সব ছেলেদের সমান দেন নি বা এক দাগে দেন নি। এই নিয়ে ছেলেরা তার প্রতি ভয়ানক নাখোস। মেয়েদের তিনি যে যৎ সামান্য দিয়েছেন তাতে জামাই বাবুরা গোস্বা করেছেন। তবে মেয়েরা তো ছেলেদের মতো মারামারি করতে পারে না। হাজী সাহেবের স্ত্রী বেঁচে থাকলে সামাল দিতে পারতেন, ছেলেরা সম্ভবত এতটা বেপরোয়া হতো না। ২০ বছরের উপর তার স্ত্রী গত হয়েছে। এর পর হাজি সাহেব আরেকটা বিয়ে করাতে ঘৃতে অগ্নি সংযোজন। কপাল খারাপ তাঁর, ছেলে-মেয়েদের কথা ভেবে তিনি বয়স্কা-বন্ধ্যা একজনকে বিয়ে করেছিলেন। সেও এখন অসুস্থ্। বাতের ব্যাথায় কাতর। কোন মতে রান্না-বান্না করে হাজী সাহেবকে খাওয়ায়, কাজের মানুষ নাই। হাজী সাহেবের ওসুধ-ইনসুলিন ঠিক মতো দেয় না, যেন মরে গেলেই বাঁচে।
আসলে জীবিতবস্থায় কারো সম্পত্তির সম্পূর্ণ মালিকানা ও অধিকার তাঁর নিজের, তিনি যাকে ইচ্ছা যতটুকু ইচ্ছা তা লিখে দিতে পারেন। এমন কি তিনি ছেলে-মেয়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে পারেন কিংবা কোন মেয়ে/ছেলেকে কিছু নাও দিতে পারেন। ইসলামে বণ্টনের যে নিয়ম তা শুধু মৃত্যুর পর বর্তায়। তবে তিনি কাকে কতটুকু কেন দিলেন তার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
কে কার কতটুকু উপকারে আসে সেটার উপর ভিত্তি করে আল্লাহ মিরাসের আয়াত নাযিল করেছেন। কেউ যদি ব্যতিক্রম মনে করে তাহলে তা কম-বেশ করতে পারে। আমাদের বধ্যমূল ধারনা যে বাবা-মার সম্পত্তিতে সন্তানদের জন্মগত অধিকার, অনেকে আবার এক কাঠি এগিয়ে, মেয়েদের নাকি আল্লাহ ঠকিয়েছেন।
আমাদের ধারনা পরিবর্তন না করলে হাজি সাহেবের মতো আমাদের সবারই এই দুর্গতি পোহাতে হবে। যার যার অর্জিত সম্পত্তি সেটা শুধু তার। সে যাকে খুশি তাকে দিতে পারে। জীবিত অবস্থায় তা দাবি করা যাবে না। বাবা-মা যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে সন্তানকে বড় করে, ঠিক সেভাবে বাবা-মার সেবা করতে হবে। সম্পত্তির লোভে বাবা-মার সেবা করলে আল্লাহর কাছে তার বিনিময় বোধ করি পাওয়া যাবে না।
“আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে, যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিছ হয় তার মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


