যারা আগের অংশ পড়েননি তাদের আগের অংশ পড়ার অনুরোধ রইল।
.
আজ আর ফুল বিক্রি হচ্ছেনা,
মনে হয় আজ অযথা বসে থেকে লাভ নেই ' মনে মনে ভাবছিল জহির আহমেদ '
গতকাল যা ফুল বিক্রি হয়েছে তা গত একবছরের চেয়েও বেশী।
গতকাল বিজয় দিবসে সবাই ফুল কিনেছে,পতাকা কিনেছে।
তাই বলে কি আর আজ এসব ফুলের ও পতাকার দরকার আছে।
যাইহোক কি আর করার?
বেচারা বিষণ্ণ মুখখানি নিয়ে দোকান বন্ধ করতে লাগলো।
.
বিজয়ের আজ অনেক ঘুরতে হবে,
গতকাল বিজয় দিবসে অনেকে আনন্দ ফুর্তি করেছে,
এটা ওটা খেয়েছে, আজ খালি বোতলে, ছেঁড়া ফারা কাগজের অভাব হবেনা মনে হয়।
' ভাবতে ভাবতে সামনে এগুচ্ছে বিজয় নামের পথ শিশু।
পথ শিশু আমি বলি না, এ যুগের আধুনিক সভ্য মানুষরাই তাদের নাম পথ শিশু দিয়েছেন।
.
শিতে কাঁপতে কাঁপিতে সামনের দকে এগুচ্ছে আর এটা ওটা খুঁড়াচ্ছে।
তাকে সৌহরাওয়ার্দী জাতীয় উদ্যানে যেতে হবে।
সেখানে নিশ্চয় গতকাল পার্টি হয়েছে, অনেক নাচ গান, ডিজে ফিজে আরও কত কিছু।
তারপর সৃতি সৌধে, সেখানে গতকাল যাওয়া হয়নি, আজ সে যাবে ও দেখবে
মানুষ কিভাবে শহীদদের স্বরণ করে,
তার ও ইচ্ছে ছিল শহীদদের মাজারে ফুল দিয়ে তাদের শ্রদ্ধেয় করতে কিন্তু গতকাল তো বলেছি তার অবস্থাটা।
.
সে শীতে কাঁপছে আর সামনেপিছনে বস্তা টানাটানি করছে।
মানুষ বড় অদ্ভুত, শিতে যারা মরে তাদের জন্য একহাত কাপড় হয়না,
অকারণ কত টাকা নষ্ট করে,অবশ্য এর মাঝেও একটা আনন্দ থাকে, বিজয়ের আনন্দ।
.
জহির আহমেদও যাচ্ছেন ওই দিকেই,
ওনারও ইচ্ছে, গতকাল কত ফুল ও পতাকা বিক্রি করলাম।
একবার দেখে আসি এগুলে তারা কিভাবে সাজিয়েছে,
জহির নিজেও ফুল সাজাতে পারে,তবে নিজের দোকানে কাস্টমারদের আকর্ষণীয় করার জন্য।
.
হায় হায় একি!! এত এত ফুল আজ রাস্তার পাশের নালায় কেন?
বিজয় ভাবলো ফুল মনে হয় বেশী হয়েছিল তাই ফেলে দিয়েছে।
বেশী হলে ফুল কিনবে কেন, ফুলের টাকা আমাদের মত গরিবদের দিলে কি হত?
না, সৃতি সৌধেও আজ কোন ফুল নেই,কিন্তু কেন?
গতকালের মানুষগুলা আজ কোথায়? ফুল ও পতাকা কোথায়?
.
আপন মনে সে আবার বস্তা কাদে নিয়ে ঘুরতে লাগলো।
শীতে কাঁপতে কাঁপতে সে আবার এক জায়গায় থমকে দাঁড়ালো।
আরে এগুলা কি?
এগুলা তো পতাকা,অনেক ফুলও পরে আছে ওখানে।
পাশে আছে কত রংএর বোতল, কাচের বোতল, এর মাঝে আবার বিভিন্ন ভাষায় লেখা,
কোনটা চাইনিজ, কোনটা ইন্ডিয়ান, কোনটা আবার ইংরেজি তে।
.
আহারে মানুষ কত উল্লাস করে পতাকা আর ফুল কিনে শহীদদের শ্রদ্ধা ভক্তি করল আর বিজয়ের পতাকা উড়ালো।
আর আজ সেইসব ফুল ও পতাকা ডাস্টবিনে জায়গা পেল।
(ডাস্টবিন : যেখানে থাকে আবর্জনা, মদ ও বিয়ারের বোতল, ফুলএবং অনেক মুল্যবান জিনিশ,
যেটা টোকাইর মত ছেলেরা খুড়াতো।)
সেটা দেখে বিজয়ের আর সহ্য হল না।
সে অনেক গুলা পতাকা ও ফুলেরতোড়া পরিষ্কার করে তার বস্তার ভিতরে ভরতে শুরু করল।
শীতে কাঁপতে কাঁপতে সে একটি পতাকা তার গায়ে জরিয়ে একটু আনন্দ উপভোগ করল।
বিজয়ের আনন্দ, শীতের সকালে গায়ে পতাকা জড়িয়ে বিজয় আনন্দ উপভোগ করল।
.
লিখা: Al-Amin Ahmed
( কাজী নজরুলের ছাত্র)