বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয়মাস অতিবাহিত হল।
আবির আহমেদের মনে বিষন্নতার ছায়া।
যেন এ বিয়েতে সে সুখী নয়, তা অবশ্য প্রকাশ হয়নি।
ইচ্ছে করেই প্রকাশ করা হয়নি, হয়তবা প্রকাশ করা লজ্জার ব্যাপার তাই।
.
সকালে অফিসে যাবে আবির।
মিলি এসে অফিসের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রতিদিনই সে এটা করে।
আবির অফিসে যাওয়ার আগে সে টাই বেধে দিতে চায়।
কিন্তু আবির সেটা চায়না, মনমরা হয়ে সে অফিসে যায়,
এটা দেখে মিলি খুব কষ্ট পায়, কোন কোন দিন কান্নাও করে।
তবে এতে আবিরের কিছু আসে যায়না।
( মিলি হচ্ছে আবিরের বিবাহিত স্ত্রী)
.
আবিরের সহকর্মী জাবেদ কয়েকমাস আগে বিয়ে করেছে।
সে অনেক সুখী সুখী মনে হয়, শশুড় বাড়ি থেকে
গিফট পাওয়া পালসার মোটরসাইকেলযোগে তার
অফিসে আসা হয় প্রতিদিন।
সে তো সুখী হবেই, তাছাড়া আরও অনেক কিছু সে পেয়েছে গিফট হিসেবে।
যেমন: ফ্রিজ, ৩২" রঙিন টেলিভিশন, দামী দামী আসবাবপত্র,সাথে আবার এক লক্ষ টাকাও।
তাহলে তো তার সুখী হওয়ারই কথা।
.
আজও মিলি দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলবে বলে।
ওকে কিছু বলার সুযোগ দেয়া যাবেনা, ওর মুখের
একটি শব্দও শুনতে রাজি না আবির।
আবির চলল, যেই দরজার বাহিরে পা দিবে তখনই
মিলি বলল।
একটি কথা বলব, শুনেন প্লিজ।
আবির বিষন্ন মনে ফিরে তাকালো।
তোমাকে না বলেছি অফিসে যাওয়ার সময় কোন প্রকার বিরক্ত করবেনা।
তোমার কোন কথা শুনাত ইচ্ছে আমার নেই।
আমাকে বিরক্ত করবেনা।
.
মন খারাপ নিয়ে বসে আছে আবির।
পাশের কক্ষে সহকর্মী জাবেদ কাজ করে।
জাবেদের কাছে তার কিছু সুখের গল্প শুনে আসি
সেই ভেবে সহকর্মী জাবেদের রোমে কক্ষে প্রবেশ করল আবির।
একি আজ জাবেদেরও মন খারাপ,
কি হয়েছে জাবেদ? ( প্রশ্নে আবির)
আর বলনা ভাই, বিরাট ঝামেলায় আছি। ( উত্তরে জাবেদ)
আরে ভাই তুমি তো সুখী মানুষ, তোমার কিসের ঝামেলা? ( আবির)
জাবেদ বলল:- ঝামেলা কি আর হবে, সংসারে শান্তি নাই ভাই,
.
দুইমাস হল বিয়ে করেছি, কিন্তু বউএর কাছে কোন মুল্য পাইনা।
বল কি? হয়েছে কি খুলে বল? ( আবির)
জাবেদ বলল:- ভাই আমার স্ত্রীর কাছে আমার কোন মুল্য নেই,
কিছু বললেই সে বলে : আমার বাপের বাড়ি থেকে এটা এনেছি, সেটা এনেছি।
তোমার কিছু কি আমি ব্যাবহার করছি, আমি আমার সব কিছু ব্যাবহার করছি।
এমনকি আমার বাবা তোমাকে এক লক্ষ টাকাও দিয়েছে,
কিছু বললেই সে এসব বলে, এভাবে কি সংসার
সুখী হয় ভাই?
শশুড় বাড়ির লোকেরাও আমার কোন মুল্য দেয়না।
এরাও কথায় কথায় এসব বলে।
না ভাই আমি সুখী নই।
এভাবে কোন মানুষ সুখী হয়না, কান্নারত কন্ঠে আবিরকে বলতে লাগলো জাবেদ।
.
জাবেদের এতক্ষণে হুশ ফিরেছে।
সে বুঝতে পেরেছে, শুশুড় বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে বা
যৌতুক নিয়ে কখনো লাভ হয়না।
যৌতুক একটা অভিশাপ।
একটি সংসারকে নষ্ট করতে পারে যৌতুক।
আবির আহমেদ ভাবতে লাগলো, নাহ আমিই সুখী,
আমার স্ত্রী অনেক ভাল।
না খেয়ে থাকবো তবুও যৌতুক নয়।
আর নয় যৌতুক।
.
আবির নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলো।
এবং সুখী জীবনের যাত্রা শুরু করলো।
.
মোরাল: যৌতুুকে কখনো একটি সংসার সুখে রাখতে পারেনা।
শুধুই পারে নষ্ট করতে।
তাহলে কেন আমরা যৌতুক নিচ্ছি।
যৌতুক নেয়া পাপ। সবাই যৌতুককে না বলুন।
.
লিখা : Al-Amin Ahmed
( কাজী নজরুলের ছাত্র)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪২