সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার। এখানে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ৩০লক্ষ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।দেশের ভিটেমাটি বিক্রি করে সবাই এখানে আসে অল্প সময়ে কিছু টাকা আয় করে বাকি জীবনটা আরাম আয়েশে পার করার জন্য। কিন্তু এখানে এসেও প্রবাসীদের পড়তে হচ্ছে নানান ঝক্কি ঝামেলায়। আর সেটা যদি হয় নিজ দেশের মানুষের দ্বারা তাহলেতো দু:খের শেষ নেই!
ইতিপূর্বে বাংলাদেশিরা সৌদি আরবে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে সেদেশের পত্রিকায় খবরের শিরোনামও হয়েছে।সৌদি আরবের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে সেই অপরাধপ্রবণতা কিছুটা কমলেও এখন এক শ্রেণীর বাংলাদেশি নিজ দেশের মানুষ অপহরণের মতো জঘন্য কাজ ঘটাচ্ছে ।
একটি কুচক্রী মহল বাংলাদেশিদের পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে বিশাল অংকের মুক্তি পণের মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। কখনো কখনো মুক্তপণের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অপহৃতদের জীবনহানি ঘটছে।বাংলাদেশিদের দ্বারা বাংলাদেশিদের অপহরণের এহেন ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে।গত ২মাসে শুধু রিয়াদ থেকেই অপহরণের শিকার হয়েছেন চারজন।এই ঘটনায় বাংলাদেশে একাধিক ব্যাক্তি আটক হলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে খুব সহজেই।
অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যবহার করছে আত্নীয়স্বজন অথবা ব্যাংক একাউন্ট । অপহরণকারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরিচিত নাম্বার ব্যবহার করে অপহৃত ব্যক্তির বাংলাদেশে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে দাবি করছে বিশাল অংকের মুক্তিপণ ।এমনকি যথাসময়ে মুক্তিপণ না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও জানা যায়।
ফেনীর ফুলগাজী থানার গতুমা গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুল খালেক। প্রায় ৭বছর আগে দ্বিতীয় দফায় সৌদি আরবে আসেন।ব্যবসা করেন রিয়াদের নাসিম হারেজ মার্কেটে।গত নয় মার্চ শুক্রবার স্থানীয় সময় মাগরিবের পর কে বা কারা তার মোবাইলে ফোন করে তাকে দোকানের বাহিরে যেতে বলে। আব্দুল খালেক বাহিরে গেলে তাকে গাড়ীতে ঊঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় সময় রাত এগারোটার দিকে বাংলাদেশে খালেকের ভাই হালিমকে(০১৮২২৪৮৬৫৯৬)ফোন করে খালেকের মুক্তিপণ বাবদ চল্লিশ হাজার সৌদি রিয়ালের(প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি টাকা)দাবি জানানো হয়, অন্যথায় খালেককে মেরে ফেলার হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।খালেকের ভাই মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হলে অপহরণকারীদের লোক কুমিল্লা সদর দক্ষিণে টাকা নিতে আসে। টাকা নিতে আসা চার ব্যক্তিকে পরবর্তীতে পুলিশ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের বাড়ি ঢাকার নরসিংদী এবং বরিশাল বলে জানা যায়।গ্রেফতারকৃতরা বর্তমানে কুমিল্লা জেলা কারাগারে আটক আছে।
এদিকে অপহৃত খালেকের স্বজনরা সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বিষয়টি জানালে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আইয়ুব আলী একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে তা কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করেন এবং অপহৃতের স্বজনকে সাথে নিয়ে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেন। সৌদিআরব পুলিশ মামলাটি আমলে নিয়ে তা স্পেশাল ব্রাঞ্চে প্রেরণ করে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম