somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদিকরণ আতংক: খালি হাতে ফিরছেন শত বাংলাদেশি

১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত ৩১ মে ২০১১ সৌদি সরকার সৌদি নাগরিকদের বেকারত্ব কমানোর লক্ষে নিতাকাত বা সৌদিকরণ বিল পাশ করেছে। সে অনুযায়ী এখানকার সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সৌদি কর্মীদের পার্সেন্টেজ হিসাব করে তার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ক্যাটাগরি ৩টি হলো, লাল ক্যাটাগরি, হলুদ ক্যাটাগরি ও সবুজ ক্যাটাগরি।
এদিকে, নিতাকাত বা সৌদিকরণের পভাব পড়তে শুরু করেছে অসহায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর।
নিতাকাতের পেছনে সৌদি নাগরিকদের বিলাসিতাকেও একটি বড় কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেক বেকার সৌদি নাগরিক তাদের বিলাসিতার জন্য ভুয়া বা প্রয়োজন নাই এমন সব খাত দেখিয়ে ভিসা উঠিয়ে ফ্রি ভিসা বলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করেছে। শর্ত হচ্ছে- তারা এখানে এসে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ি বাহিরে কাজ করবে ইকামা, মেডিকেল, ইনস্যুরেন্সসহ যাবতীয় খরচ সে নিজেই বহন করবে এবং প্রতি মাসে ২০০/৫০০ রিয়াল অনেকাংশে বার্ষিক ৫০০০/৮০০০ রিয়াল সেই কফিলকে (সেলামি হিসেবে) দিতে হবে।
তাতেও প্রবাসীদের কোনো সমস্যা ছিলোনা। প্রবাসীরা তাতে রাজী হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলো এবং এখনও আছে। শত কষ্টে কয়েও এর মাঝেও সীমিত সুখ খুঁজে নিত সৌদি প্রবাসী শ্রমিকরা। কিন্তু এখন তাতেও বাধ সাধলো নিতাকাত বা সৌদিকরন প্রকল্প।
নিতাকাত পব্ধতিতে আকামা ট্রান্সফারের কথা বলা হলেও বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে তা শুধু কাগজপত্রেই শোভা পাচ্ছে। বাংলাদেশিদের আকামা ট্রান্সফার বাস্তবে আদৌ হবে কি না তা নিয়ে প্রবাসীদের মনে যথেষ্ট সংশয়ের জন্ম নিয়েছে।
যেসব বেকার সৌদি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভিসা বের করে ফ্রি ভিসা নামে বিক্রি করছিলো সেসব সৌদি নাগরিকদের অনেকেরই এখন সরকারি চাকরি হয়েছে। এখানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য শর্ত হলো- তাদের ব্যক্তিগত কোনো আমেল (শ্রমিক সরবরাহ) প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবেনা এমনকি ব্যক্তিগত কোনো আমেল (শ্রমিক) থাকতে পারবেনা। এ ধরনের সৌদিরা তাদের চাকরি পাকাপোক্ত করার জন্য নিজেদের স্পন্সরশিপে আসা সব শ্রমিককে ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ বেঁধে দিচ্ছে। অন্যথায় খুরোজ (ফাইনাল এক্সিট বা দেশে ফেরত) এ পাঠিয়ে দেয়ার কথা জানিয়ে দিচ্ছে। এরই মাঝে অনেককে হুরুফ (আকামা নবায়নে নিষেধাজ্ঞা) লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলানিউজকে এমনই কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিযেছেন তাদের মনোকষ্ট আর হতাশার কথা। তারা অপেক্ষা করছেন চকরি জীবনের করুণ পরিণতির জন্য। দেশে গিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেকেরই রাতের ঘুম চলে গেছে।
লক্ষ্ণীপুরের আব্দুল মতিনের ছেলে লোকমান। আজ থেকে চার বছর আগে কথিত ফ্রি ভিসায় সৌদি আরব আসেন। ভিসায় তার পেশা ছিলো অটোমেকানিক।
সে আসার পর থেকেই বাইরে কাজ শুরু করে আর বছর শেষে আকামা নবায়নের জন্য কফিলকে দেয় ৭০০০হাজার রিয়াল। লোকমান বাংলানিউজকে বলেন, ভালোই চলছিলো। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে ফোন করে কফিল আমাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। দেখা করতে গেলে আমাকে বলে, আমার এখন সরকারি চাকরি হয়েছে। তাই এখন থেকে আমার কোনো আমেল থাকতে পারেবে না। তাই তোমাদেরকে চলে যেতে হবে।
কফিলের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা। তাকে বুঝিয়ে বললাম, আমার আকামা শেষ হতে এখনো ১৮মাস বাকি। এই মেয়াদ শেষ হলে আমি নিজ থেকেই একেবারে চলে যাবো। সে আমার কথায় রাজি হলো না। আমি তার কাছে ১৫ দিনের সময় চাইলাম তাতেও সে রাজি নয়। শেষ পর্যন্ত আমাকে এক্সিট লাগিয়ে আমার হাতে পাসপোর্ট ধরিয়ে দিলো। এখন আর আমার দেশে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
আরেকজন লক্ষ্ণীপুরের রায়পুরের আব্দুর রহমানে ছেলে সাইফুল। তিনি সৌদি আরব আসেন ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ১ তারিখ। সাইফুল বাংলানিউজকে বলেন, আমার এখনো ১বছরের আকামা আছে। কফিলের সরকারি চাকরি হওয়াতে সে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। অনেক কান্নাকাটি করে তানাজ্জুল (ট্রান্সফার) হওয়ার জন্য ১মাসে সময় চাইলে সে আমাকে ১৫দিনের সময় দিয়েছে। এর মধ্যে তানাজ্জুল না হতে পারলে একেবারে দেশে চলে যেতে হবে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, তানাজ্জুলের কোনো ব্যবস্থা করতে পারি নাই!‍
আশ্চর্যের ব্যপার হলো যারা ফ্রি ভিসায় এসে এখানে কাজ করতো এখন তাদের কফিল তাদেরকে খবর দিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়ে একসাথে ৪/৫ বছরের বেতন ভাতা পেয়েছেন মর্মে স্বাক্ষর এবং টিপসই নিচ্ছেন। যাতে করে ওই শ্রমিকরা লেবার কোর্টে (শ্রম আদালতে) না যেতে পারে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াদে বাংলাদেশ দুতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মোহাম্মদ আইয়ুব আলী টেলিফোনে বাংলানিউজকে জানান, এই সমস্যাগুলো আমাদের নলেজে আছে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য আমাদের লিগ্যাল উইং কাজ করছে । যারা এই সমস্যার সম্মুখিনে হয়েছেন তাদেরকে হতাশ ন হয়ে দুতাবাসে লিগ্যাল উইং এর সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন এই দুতাবাস কর্মকর্তা ।
এই গ্যাঁরাকলে পড়া এমন অনেক লোকমান আর সাইফুল আছেন যারা একই সমস্যার কারণে খালি হাতে দেশে ফেরার প্রহর গুণছেন। দেশে গিয়ে বাড়াবেন বেকারত্বের বোঝা। নিজের পরিবার এবং দেশ-- উভয়ের জন্যই অনাকাঙ্ক্ষিত এই বোঝার বিষয়ে কেউ কি ভাবছেন? সরকার বা বিরোধীদলের কেউ এ নিয়ে কি চিন্তিত?
এ প্রশ্ন এখন সৌদি প্রবাসী সাধারন বাংলাদেমীদের সবার। তবে উত্তর কে দেবে জানা নেই তাদের!
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এ প্রকাশিত
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×