somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আপু আমার জান বাঁচা” ইরান-তুরস্ক সীমান্তে বন্দি অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি

০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“আপু আমার জান বাঁচা, তোরা টাকা দে, আমি তোদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাই। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে!” এভাবেই বোনের কাছে আঁকুতি জানান ওমান প্রবাসী আতাউল্লাহ ওরফে সানাউল্লাহ(২২)। অভাব অনটনের সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ আনার তাগিদে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওমানে পাড়ি জমান সানাউল্লাহ।
সানাউল্লাহ’র বাবা মাওলানা আব্দুল হাই ফেনী শাহজালাল ইসলামিয়া তামিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি জানান, তার ছেলেকে ইরান-তুরষ্ক সীমান্তে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে সেলফোনে জেনেছেন। সে ওমানে শ্রমিক হিসেবে চাকরি করছিল। সেখান থেকে দালালচক্র তাকে গ্রিস পাঠানোর কথা বলে প্রলুব্ধ করে।
এ ধরনের কমপক্ষে অর্ধশত মৎস শ্রমিককে ট্রলারযোগে গ্রিস নিয়ে যাবার কথা বলে দালালচক্র বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ থেকে দেড় লাখ করে টাকা নেয়। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। তারা ওমান ও দুবাইর সমুদ্র উপকূলে জেলের কাজ করতেন। পরে তাদের সবাইকে ইরান ও তুরস্ক সীমান্তের দুর্গম এলাকায় নিয়ে জিম্মি করে।
মঙ্গলবার ফেনী থেকে সেলফোনে বাংলানিউজকে একথা জানান সানাউল্লাহর বড় বোন উম্মে সালমা।
তিনি জানান, প্রায় দশদিন আগে তার ভাইসহ অন্যদের ওই দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি হওয়ার কথা জানতে পারেন।
সূত্রমতে, আদম পাচার এবং জিম্মি চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পুলিশ ও কোস্টগার্ড জাড়িত রয়েছে।
সালমা জানান, ওমানে আয় রোজগার কম হওয়ায় ওমানে থাকা দুলাল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি গ্রিসে যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং তাদের দেড় লাখ টাকাও দেন।

দালাল দুলাল আতাউল্লাহ ও তাদের আরেক আত্মীয় তোফাজ্জল হোসেন মানিককে (২৫) গত ২৭ মে গ্রিসে নেওয়ার নাম করে ইরানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদের বন্দি করে রাখে তারা।
দালাল চক্র তাদের হাতে বন্দি ব্যক্তিদের বাড়িতে (বাংলাদেশে) ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা স্বজনদের কাছে ফোন করে জানায়, তাদের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৩ লাখ করে টাকা করে দিতে হবে, না হলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এরই মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব থেকে আতাউল্লাহর ভাই ফয়েজুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ০০৯৮৯১৬৫১৭৫৩৮৪ নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে তারা টাকা চায় এবং আমার ভাইকেও এই নাম্বার দিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলিয়েছে। তারা বাংলাদেশি মোবাইল নাম্বার এবং ইন্টারনেট ফোন থেকেও কল করে কথা বলে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সানাউল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সময়ও ওই নাম্বার থেকে ফোন করা হয়। এসময় দুর্বৃত্তরা দেড় লাখ টাকা দিলে তার ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায়।
এদিকে, গ্রিসে যাবার আশায় প্রতারক চক্রের হাতে জিম্মি হওয়া এসব হতভাগ্যদের স্বজনদের অধিকাংশই বিষয়টি গোপন রেখেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে বন্দি স্বজনের ক্ষতি হতে পারে এ ভয়ে তারা ঘটনা গোপন রাখা চেষ্টা করছেন। অনেক পরিবার জমি, স্বর্ণালংকার বিক্রি করে, সুদে টাকা নিয়ে ইতিমধ্যে দুর্বৃত্তদের কথা মত নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছে। কিন্তু পরে তারা আরও টাকা চাচ্ছে।
এদিকে সালমা জানান, দালালদের ভাষা শুনে বোঝা যায় তারাও বাংলাদেশি।
এছাড়া সৌদি আরব, ওমান ও দুবাইয়ের বিভিন্ন সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, সিলেটের ‘নানাভাই’ সহ ২জন, নোয়াখালীর ‘দুলাল’, চাঁদপুরের মতলবের ‘জনি’ এবং ভোলার দুইজন ওই দুর্বৃত্তচক্রে রয়েছে। তবে এগুলো তাদের আসল নাম নয় বলে ধারণা করছেন অহৃতদের স্বজনরা।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দালালরা সেলফোনে জানায়, তারা বন্দি বাংলাদেশিদেরকে ইরানিদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে। এখন ইরানিরা ওই টাকা চাচ্ছে। টাকা না দিলে তাদেরকে হত্যা করা হবে আর টাকা দিলে ইরানের কোথাও ছেড়ে দেওয়া হবে।
ঢাকা থেকে একটি সূত্র জানায়, নরসিংদীর আশিক নামে এক তরুণ মাত্র ৬ মাস আগে দুবাই যাবার পর সম্প্রতি ওই চক্রের ফাঁদে পড়েন। এরপর ইরান থেকে বাংলাদেশে আশিকের পরিবারের কাছে ফোনে যোগাযোগ করে দুর্বৃত্তরা একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা নেয়।
জানা গেছে, প্রবাসে যাওয়ার ৩ মাস আগে বিয়ে করেছেন আশিক।
এরপর তাকে তুরষ্ক নিয়ে বন্দি করে রাখে। সাড়ে ৩লাখ টাকা না দিলে কিডনি রেখে দেবে বলে সেলফোনে দুর্বৃত্তরা হুমকি দেয় আশিকের স্বজনকে।
বন্দিদের স্বজনরা তাদের পরিবারের বন্দি সদস্যদের উদ্ধারে বাংলাদেশ সরকার এবং একইসঙ্গে ইরান, তুরস্ক, ওমান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের ত্বরিৎ পদক্ষেপের আশায় আছেন। অনেকের বাড়িতে গত দশদিন ধরে চলছে কান্নার রোল।
দুর্বৃত্তদের হাতে বান্দি আতাউল্লাহর ভাই ফয়েজুল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ভাই কি করবো বুঝতে পারছি না। তারা আরও দেড়লাখ টাকা চেয়েছে। নয় তো ভাইকে...
তিনি বলেন, নিজ দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে সরকার কিছু তো করবে...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×