প্রতিটা সময় আমার বিষণ্ণতার একটা অংশ মৃত্যু। সংজ্ঞাহীন এই বিষয় যার থেকে যত জল্পনাকল্পনার শুরু। শিশু বয়সে মৃত্যুকে নিয়ে কেউ ভাবে না। আমিও ভাবিনি কিন্তু বয়স হতে মৃত্যু আমার সব কিছুর এক বিরক্ততম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বিষয় যাকে না এড়িয়ে চলতে পারছি না মানতে পারছি।
রাতে যখন চোখ বন্ধ করি আর ঘুমানোর জন্য চেষ্টা করি তখন মৃত্যুর কথা আমার বেশি মনে পড়ে। যদি কারো কাছে আমি এই সব বলি, তারা উত্তরে বলে এসব নিয়ে যাতে আমি না ভাবি। মাঝে মাঝে হইতও ভুলেও যাই কিন্তু পর মুহূর্তে আবার আমাকে তাঁর ভয় আঁকরে ধরে।
সেদিন একজনের ব্লগে মৃত্যুকে জয় করার কথা পড়লাম। ভালো লিখেছেন তিনি কিন্তু তা সম্ভব নয় তা আমিও জানি আর যে লিখেছেন সেও জানেন। মৃত্যু এমন এক সর্তা যাকে মানতেই হবে যাকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। পৃথিবী এমন এক স্থান যেখানে অতিতের কথা বলা যায়, বর্তমানকেও বুঝা যায় তবে ভবিষ্যতকে বলা যায় না। যদিও ভবিষ্যৎবানী করা যায় তবুও তা পুরোপুরি সত্য কখনও হয় না। মৃত্যুকে জয় করা ঠিক সেই রকমই এক রুপকথা। যাকে কেউ সংজ্ঞায়িত করতে পারবে নয়তো নিশ্চয়তার সাথে তাঁকে জয় করার কথা বলতে পারবে।
মৃত্যুর সাথে যে জিনিষটা নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত তা হলও ধর্ম। বিজ্ঞানের কাছে মৃত্যু এক প্রাকৃতিক নিয়ম তবে ধর্মের মাঝে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ধর্ম বিশ্বাস মানুষের মাঝে মৃত্যুর জন্যই আছে আর তা রবে।
যদি আমি মৃত্যুকে প্রাকৃতিক নিয়ম ভাবি তবে তা কি ঠিক হবে। ঠিক হতও যদি জানা যেত মৃত্যুর পর কি হয় শিও আত্মার। কোথায় যায় পুরো পৃথিবীর সেকেন্ডে সেকেন্ডে মারা যাওয়া মানুষ গুলো। মানুষ তো শক্তির রুপান্তর দেখাতে পারে। আত্মার রুপান্তর কি কোনদিনও সম্ভব। যদিও পৃথিবীর অনেক মানুষ পূর্ণজন্মও বিশ্বাস করে। যদি তাই চিন্তা করি তবে পৃথিবীর জনসংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে সেইদিক দিয়েও তা সম্ভব না।(পূর্ণজন্মও যারা বিশ্বাস করেন তাদের আমি আঘাত করছি না।আমি শুধু আমার মত তুলে ধরছি)
মানুষের ভিতরে দুধরনের মত কাজ করে। এক মত যা মানুষকে ভালো কাজ করার নির্দেশ দেয় আর অপরটি খারাপ কাজের। মানুষ যে কোন একটিকে কাজে লাগিয়ে ওনেক ভালো অথবা খারাপ হয়ে বেঁচে থাকে। যখন সে মারা যায় এই ভালো আর খারাপ কাজের ফলশ্রুতি হিসাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁকে মনে রাখে। যেমনঃ হিটলারকে খারাপ হিসাবে আর মাদারতেরেসাকে ভালো হিসাবে। তারা মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। তবুও আমরা আজ তাদেরকে মনে রাখছি। ভবিষ্যতের মানুষও রাখবে।
তাহলে আমি আপনি কি দোষ করছি যে আমাদের মৃত্যুর পর কেউ মনে রাখছে না। হইতও ১০০ বছর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে তারপর আমরা হারাব কালের স্রতে। এতো ক্ষুদ্র আমাদের জীবন।
বুঝ হতে লাগে ২০ বছর, পড়াশুনা শেষ করতে বয়স হয় ৩০ বছর, চাকরি জীবন শেষ করতে ৫০-৬০ বছর। মানুষের গড় আয়ু ৬০-৭০ বছর। বুড়ো হতেই স্বভাব হয় আবার শিশুর মতো। তারপর মৃত্যু, এইটাই কি প্রাকৃতিক নিয়ম। আপনি আপনার জিবনে যেঁসব ভালো খারাপ কাজ করলেন, যেগুলো সবার অগোচরে আছে সেগুলোর কি হবে। আপনি আপনার মনের সেই ভালদিক থেকে একটু চিন্তা করুন এইটা কি ঠিক হবে, এরকম হওয়াটা কি পুরো উদ্দেশ্যহীন নয়।
‘’আমরা সবাই জানি পৃথিবীর কোন কাজ উদ্দেশ্য ছাড়া ঘটে না’’ এটিকে বিজ্ঞানও মানে আর ধর্মও মানে। আপনার জন্মরও উদ্দেশ্য ছিলও তাই আপনি জন্মিয়েছেন।
আমরা বিজ্ঞানের জগতের মানুষরা প্রমান ছাড়া কিছু মানতে নারাজ। আমরা বিজ্ঞানকে নিয়ে এতই গর্বিত যে আমরা আজ সৃষ্টিকর্তাকেও ভুলে গেছি। আমরা নাস্তিকতার বিশ্বাসের মাঝে হারাচ্ছি(আমি কারো বিশ্বাস নিয়ে কথা বলছি না, শুধু জাহ ভাবি তা তুলে ধরছি)।
আমরা নাস্তিকতাতে বিশ্বাস করছি কারণ ‘’আমরা স্রস্টাকে নিয়ে ভাবি অথচও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবি না’’।
যেই পড়ছেন আমার লিখা একটু ভাবুনতো (যদি আপনি নাস্তিকও হন কিছুক্ষণের জন্য স্রস্টাকে বিশ্বাস করুন), যে এই বিশাল মহাবিশ্ব চালনা করছেন, যে পৃথিবী এতো হাজার হাজার সুত্র দ্বারা চালনা করছেন, যে আড়ালে থেকেও এতোটা সূক্ষ্মতার সাথে সবকিছু চালনা করছেন......আমাদের কতটুকু ক্ষমতা আছে ‘’আমরা তারই সৃষ্টি হয়ে তাঁর(স্রস্টা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছেন) তাঁকে নিয়ে চিন্তা করি।
যেখানে আমাদের জন্মের পর অন্যদের সঙ্গও ছাড়া বাঁচতে পাড়ি না। পৃথিবীর সব জিনিষের উপর নির্ভরশীল। স্রস্টার তৈরি পৃথিবীর খাবারপানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পাড়ি না। অদৃশ্য অক্সিজেন ছাড়া আমরা ১ মিনিটের বেশি বাচা সম্ভব না।
তাহলে কোন হিসাবে এতো সংক্ষিপ্ত জ্ঞান নিয়ে আমরা স্রস্টাকে নিয়ে ভাববো। আর যদি ভাবিও তবে সঠিক উত্তর আমরা কোনদিনও পাবো না। একটা মানুষ যদি মহাবিশ্বও নিয়ে ভাবতে থাকে তাহলে সব দেখতে দেখতে সে পাগল হয়ে যাবে। তাঁর মস্তিষ্কও এতো কিছু নিতে পারবে না। আর সেই বৃহৎ মহাবিশ্বর মালিকে নিয়ে ভাবে তো তাঁর কি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০