somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ কর্তৃপক্ষ ও ব্লগারদের তীব্র দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

১২ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দুই/তিন দিন ধরে সামুতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারন খুব সোজা কথায় দৃষ্টিকটু, আপত্তিজনক, অশালীন, অশ্লীল এধরনের ইঙ্গিতমুলক এবং গালাগালিমুলক পোষ্ট। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয় ব্লগে প্রায়ই এধরনের পোষ্ট, মন্তব্য ও পাল্টা মন্তব্যে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। যা আমার মতো সাধারন ব্লগারকে খুব ভাবায়।
সেজন্যই আমার এই আবেদন, দাবী ও প্রস্তাবমুলক পোষ্ট লেখা।
ব্লগে সাধারনত রাজনৈতিক ক্যারিক্যাচাল, ঝগড়া, বিবাদ, আস্তিকতা ও নাস্তিকতা এই বিষয়গুলোতেই চরম উত্তেজনা দেখা যায়। রাজনৈতিক আলোচনা ও মতপার্থক্য থাকবেই। কারন মানুষ জন্মগতভাবেই রাজনৈতিক প্রাণী। কিন্তু সহনশীলতা খোদ আমাদের জাতীয় রাজনীতির মতোই এখানেও অনুপস্থিত। আমাদের অনেকেই জাতীয় সংসদকে কমরেড লেনিনের ভাষায় শুয়োরের খোয়ার বলে থাকেন, কিন্তু ব্লগে আমরা যারা শিক্ষিত বলে নিজেদের দাবী করি আমাদের ও ব্লগকে তাহলে কী বলা হবে? এটা আমাকে খুবই পীড়া দেয়। এক্ষেত্রে বলতে হয়, ব্লগ কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই সতর্ক থাকলে আজকের এই অবস্থা হতোনা বলেই আমার মনে হয়।
আমার ভাবতে অবাক লাগে যারা ব্লগিং করি সকলেই শিক্ষিত, তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার জানি। তারমানে একেবারে অল্প শিক্ষিত কেউই নই। তারপরেও দেখা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেই চরম মানসিক দৈন্যতা। এটা আমাদেরকে খুব ভাবায়। ব্লগে আমাদের আচরন ও কথাবার্তা দেখলেই বুঝা যাবে আমরা আসলে কত সভ্য। ব্লগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো স্বতঃস্ফূর্ততা। সবাই নিজের ইচ্ছায় ব্লগিং করে। পত্রিকার সঙ্গে মৌলিক পার্থক্যও এখানেই। এর অর্থ আমরা নোংরামিও করি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। এটা ভাবাও আমার পক্ষে কষ্টকর। কিন্তু এটাই সত্য স্বীকার না করার উপায় নেই।
আজকে ব্লগে যে পরিবেশ বিরাজ করছে এটা আজকের তৈরি নয়। শুরু থেকে ধীরে ধীরে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছে। তাই যেকোন বিষয়ের ব্লগীয় হিসাব শুরু থেকেই করতে হবে। সামুর বিশাল সাফল্যের পাশাপাশি ছোটখাটো সমস্যাও সেই শুরু থেকেই আজকের পরিনতিতে এনে হাজির করেছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর বিবেচনায় সামু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো সকল অন্যায়ের গোড়া খুজে বের করতে। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। কে বা কারা প্রথম কবে থেকে এবং কী কারনে গালাগালি, অশ্লীলতা ও অসভ্যতা শুরু করেছিল সেটা খুজে বের করার জোর দাবী জানাই। দ্রুত স্বিদ্ধান্ত জানিয়ে মাথার উপরে ঝুলিয়ে দেওয়া হোক। তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে। কারন নতুন নতুন আইন তৈরি করে যেমন অন্যায় বন্ধ করা যায়না, আবার আইন তৈরি হওয়া মানেই অপরাধ কমে যাওয়াও নয়। অন্যায় হবে এটা মাথায় রেখেই আইন তৈরি করে সুশাসন নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। সুশাসন মানে অন্যায় না হওয়া নয়, বরং অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত হওয়াকেই সুশাসন বলে। সামু’র কাছেও আমার জোর দাবী সকল অন্যায়ের গোড়া খুজে বের করে শাস্তি দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করুন। নইলে সকল ব্লগীয় অন্যায়ের দায়ভার আপনাদেরও নিতে হবে।
অন্যায় সকল সময়েই অন্যায়। অন্যায়ের প্রকারভেদে শাস্তির মাত্রাই শুধু ভিন্ন। সুতরাং সকল অন্যায়েরই প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু সবাইতো প্রতিবাদ করবেনা। এটাই স্বাভাবিক। এত বিবেকবোধ সম্পন্ন জাতিতে আমরা এখনো পরিনত হইনি। প্রায় সকলেই নিজ নিজ ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেকে ব্যবহার করার জন্য উজাড় করে দেই। কাজেই এই দায়িত্বটা সামু কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। কারন এখানে একজন ব্লগারের চেয়ে তাদের স্বার্থই বেশি।

সেজন্য আমি চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করুক। সেই কমিটিতে ব্লগারদের পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে, আইনজীবী থাকবে এভাবেই তদন্ত করা হোক। সময় যতই লাগুক এভাবে একটা স্বিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারলে সমগ্র বাংলাদেশের জন্যই অনুকরনীয় হয়ে থাকবে। সামুর প্রতিযোগী অন্যান্য ব্লগ কর্তৃপক্ষও বিষয়টি অনুসরন করবে হয়ত। ব্লগেরও সুনাম বাড়বে। ব্লগারদের স্বচ্ছতাও প্রকাশিত হবে। অন্যান্য পত্রিকা কেন্দ্রিক ব্লগের সঙ্গে সামুর পার্থক্য হলো সামুতে ব্যক্তিস্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে সামুতে ব্লগাররা মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ পেয়ে অশ্লীলতাও ছড়ায় বেশি। যা আমাদেরকে আহত করে বরাবরই।
সম্প্রতি অনলাইন পত্রিকা ও ব্লগের জন্য আইন প্রনয়নের বিষয়টি খুব আলোচিত হচ্ছে। এই আলোচনার মুল কারন কিন্তু আমাদের ব্লগারদের অসহনশীল আচরনই। সম্প্রতি এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। বলা হয়ে থাকে, অনলাইন মাধ্যমে আইন না থাকায় বেশি তথ্য ক্রাইম হচ্ছে। আমাদেরকেই স্বিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা নিজেরাই ব্লগের পরিবেশ ঠিক রাখবো নাকি অশ্লীলতা করে সরকারকে দ্রুত আইন করতে উৎসাহিত করবো? সবাই খেয়াল করে দেখুন, আজ যদি আইন থাকতো তাহলে অশ্লীলতা কেউই দেখাতে পারতো না। অশ্লীল ইঙ্গিতের পোষ্ট এবং গালি দুটোই চলছে। দুটোই অপরাধ। এখানে সরকার নিরুপায়। আইনের থাকলে তার স্বাভাবিক গতিতে এই কাজ বেআইনি হতো। এরকম ছোট-বড় অপরাধ করে ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একবার ক্ষমা করলেই যে পরবর্তীতে আরও বড় অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত হবেনা সেটার নিশ্চয়তা কোথায়? কাজেই আমাদের কাজের মধ্য দিয়েই প্রমান করতে হবে, নিজেরাই ব্লগ কর্তৃপক্ষ ঘোষিত নিয়ম মেনে চলবো নাকি সরকারী আইনকে দ্রুত মুবারকবাদ জানাবো! আশাকরি আমার কথা সবাই বুঝতে পারছেন।
তারপরে অতি সম্প্রতি শুধু অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নয় খোদ সাংবাদিকদের জন্যই একটি সংস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচনায় এসেছে। যে সংস্থাটি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট প্রভৃতির মতো একাডেমিক সনদের বাইরে আলাদা একটি সনদ দিবে এই মর্মে যে, ইনি একজন সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতা করার জন্য সে উপযুক্ত। এটা কিন্তু আলোচনা হচ্ছে খোদ কিছু ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের পেশাগত অসদাচরণের কারনেই। এখন যদি কোনদিন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও ব্লগের জন্য আইন তৈরি হয় তাহলে অদুর ভবিষ্যতে হয়ত ব্লগিং করার জন্যও সনদের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠতে পারে। সেটাও কিন্তু ব্লগারদের অসদাচরণের কারনেই আলোচিত হবে।
এরকমভাবে আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের আইনের কবলে বেঁধে রাখতে বাধ্য করি তখন নিশ্চয়ই বলতে পারবো না যে, বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। ব্লগের বিভিন্ন ব্যক্তির কর্মকাণ্ড দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে, অতীতে সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে যেসব মিডিয়া বন্ধ করেছিল সেগুলোর কারনটাও হয়ত এরকই।
আমি আবারো সামু কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাই, মুক্ত মত প্রকাশের তীর্থভূমি এই ব্লগকে নির্ভেজাল রাখতে, অনলাইন মিডিয়াকে কোনরকম আইনের আওতায় যাতে সরকার নিতে বাধ্য না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে সকল ব্লগীয় সংঘাতের গোড়া খুজে বের করুন। সবাইকে জানান। উপযুক্ত শাস্তি দিন। গোড়া না খুজে একটু আধটু শাস্তি দেওয়াতে ব্লগের পরিবেশ রক্ষায় কোন উপকারই আসবে না। এটা আমি নিশ্চিত। বাংলাদেশেও সকল অপরাধের জন্য আইন আছে, শাসন যন্ত্রও আছে কিন্তু সুশাসন নেই। আপনারা ব্লগে সেই সুশাসনটা প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে দিন, আমরাও পারি।
অন্যরা কিভাবে ভাবছেন জানিনা। আমি মনে করি সংকটের গোড়া খুজে বের করে সেখানেই আঘাত করতে হবে। বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সুবিধা নিয়ে যারাই কুকর্মে লিপ্ত হোক তাদের অন্যায়ের মূল খোজার দাবী জানানো সকল বিবেকবানের দায়িত্ব। অশালীন পোষ্টও পোষ্টদাতাকে প্রশ্রয় দেওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক দৈন্যতা। এটাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। সকলকেই সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। যে যে পক্ষেরই হোক।

প্রিয় জানা আপা ও কর্তৃপক্ষ, আপনারা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে এইসব সংকটের স্থায়ী সমাধান করুন।

সবার মতামত প্রত্যাশিত এবং শুভকামনা রইল।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×