সুত্রঃ Click This Link
আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
আবদুর রহিম সেলিম, উখিয়া
কক্সবাজারের দু’রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়েছে। এর ফলে পুরো শিবির এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। একদিকে রোহিঙ্গা শিবিরে বিরাজ করছে দ্রারিদ্র, ক্ষুধা, অপুষ্টিজনিত সমস্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে অবকাঠামোগত সমস্যা। বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবির অভ্যন্তরে রয়েছে যাতায়াত, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সংকট, পুলিশ ফাঁড়ি ও জনবল সংকটের মুখে পড়ে এক প্রকার ত্রাহি অবস্থায় পড়েছে। কুতুপালং শরনার্থী শিবির ইনচার্জ মীর শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, জনসংখ্যা নিরূপনে সরকারী ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা পরিবার পরিকল্পনার উপর কাজ করে যাচ্ছে। শরনার্থীদের অসাবধানতার ফলে দ্রুত জনসংখ্যার বিস্তার হচ্ছে। শরনার্থীদের বহুমুখী সমস্যার ব্যাপারে শিবির ইনচার্জ মীর শওকত আলী আরো বলেন, শরনার্থীদের আবাসিক সংকট উত্তরণের জন্য তাদের প্রয়োজনে শেড নির্মাণ করা হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ম্যাডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার জন্য প্রতিটি ব্লকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছে ২লক্ষাধিক অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। বিশেষ করে শিবির অভ্যান্তরে কোন কাজ কর্ম না থাকায় এমনকি তালিকাভুক্ত শরনার্থী না হওয়ায় তারা রেশন পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে। অপর দিকে টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে রয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সহ প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা কোন কাজ কর্ম না থাকায় গ্রামে গঞ্জে ঢুকে বিভিন্ন বাসা বাড়ীতে দিন মজুর হিসাবে কাজ করে থাকে। কাজ না পেলে ক্ষুধার জ্বালায় বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের দিকে পা বাড়ায়। যার ফলে দিন দিন উখিয়া টেকনাফের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উখিয়া টেকনাফের শরনার্থী শিবিরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা শিবিরের জনসংখ্যার অস্থিরতার প্রতিফলন বন্ধ না হলে অচিরেই রোহিঙ্গাদের কবলে পড়বে উখিয়া টেকনাফ। জীবিকার সন্ধানে রোহিঙ্গার এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলার কারণে জনসংখ্যার দিক থেকে উখিয়া টেকনাফ হয়ে পড়েছে ভারসাম্যহীন। আর এ নীতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা দলে দলে দেশে প্রবেশ করে কুতুপালং শরনার্থী শিবির ও টেকনাফের নয়াপাড়া শিবির এলাকার আশপাশে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে নির্বিঘেœ চিকন পাতার গাছ নিধন করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় এসব অবৈধ রোহিঙ্গারা বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি দখল করে নিয়ে বনা বিভাগের জায়গা বেচা-বিক্রি করে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে উখিয়া সদর বিটের আওতায় কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের পশ্চিম পাশে সৃজিত আগর বাগানের ছোট ছোট কচি প্রায় ১ লক্ষাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হাসু মিয়া সওদাগর জানান। কিন্তু বন বিভাগ এখনো সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের হাতে দলিল হস্তান্তর করে নাই। এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপকারভোগী জানান, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুষ্ট ভাবে বরাদ্ধকৃত আগর প্লটের দলিল হস্তান্তর বিষয়টি কেন বন বিভাগ ঝুলিয়ে রেখেছে তা নিয়ে উপকারভোগী উদ্বিগ্ন। উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ জালাল বলেন, বন বিভাগের জায়গার উপর সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। গাছ কাটার খবর পেলেই দ্রুত অভিযানে যাচ্ছি। উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা উখিয়া টেকনাফ বাসীর জন্য বিষপোঁড়া হয়ে দাঁিড়য়েছে। তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:০০