বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের
প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকায় বেকাদায় প্রশাসন
এনএনবি:
কক্সবাজারের দুটি শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ক্রমশই জটিল হতে শুরু করেছে। কখন এসব শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন করা হবে তার কোন সদুত্তর নেই বাংলাদেশী কর্মকর্তা এবং ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষের কাছে। সম্প্রতি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী একটি বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেদেশে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ গড়ে ওঠেনি বলে অভিমত ইউএনএইচসিআরের। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন এ বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নিয়ে রয়েছে নানা সংকটে।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং, ও টেকনাফের নয়াপাড়ার ২টি শরণার্থী শিবিরে ইউএনইচসসিআরের হিসেব মতে বর্তমানের প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। অপরদিকে আরআরসি অফিস সুত্র জানায়, কুতুপালং শিবিরে এক হাজার এক শত ৯৮টি পরিবারের ১০ হাজার ১২৬ জন এবং নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে এক হাজার ৭৭১টি পরিবারের ১৪ হাজার ৭২৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ১৪ পরিবারের একশ’ ১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল। এরপর থেকেই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ এবং শরণার্থীদের ছাড়পত্র না দেয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের পরে একটি বেসামরিক সরকারও গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগ্রহেরও কমতি নেই। তবে নব-গঠিত এ সরকারের প্রতিও কোন ভরসা নেই তাদের। ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীরা মনে করছেন, এটি পূর্বের সরকারের ন্যায় বেসামরিক ছদ্মাবরণে নতুন একটি সামরিক সরকার। শরণার্থীরা আরো জানান, বাংলাদেশের এ দুটি শিবিরে অবস্থান করতে গিয়ে তারা নানা নিঃগ্রহ ও কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্র্থী শিবির পরিদর্শন করে গেলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পশ্চিমা বিশ্বের চৌদ্দটি দেশ এবং সংস্থার ১৯ জন রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক। তারা শরণার্থীদের সাথে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের জীবন যাত্রার মান ও তাদের লেখাপড়া পর্যবেক্ষণ করেন। ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখনো গড়ে ওঠেনি বলে জানান। মিয়ানমারের নতুন সরকারের পক্ষ থেকেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি অবশ্যই শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় এবং শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে বলে জোর দেন। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ দুটি ক্যাম্পে ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ছাড়াও এ ক্যাম্পের আশপাশে আরো ৪০ হাজারের মতো আনরেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
তবে মিয়ানমারে নতুন সরকার আসায় বাংলাদেশি কর্মকর্তারাও আশাবাদী শীঘ্রই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার ফিরোজ সালাহ উদ্দিন। তবে মিয়ানমারের নতুন সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে নতুন কোন আলোচনার ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
দীর্ঘদিনের শরণার্থী সমস্যা নিয়ে জর্জরিত বাংলাদেশের এ অঞ্চলের মানুষ। দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে রয়েছে নানা দ্বিধায়। মিয়ানমারের পরিবর্তিত এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে তাদের রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার উপরও গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মহল। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার নিবাস মাঝি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা খুব ঝামেলায় আছি।
খবর সুত্রঃ Click This Link
দেশের খবর - ৯ এপ্রিল, ২০১১