somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বজন লাশ হলেও বামরুনগ্রাদে ভাংচুর করতে পারি নাই..

৩১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন পেশাদার ডাক্তার এবং ব্লগে টুকটাক লিখি বলে এক বোন আমার কাছে জানতে চেয়েছেন--দেশে কোথায় ভাল হার্ট রোগের চিকিৎসা হয়। জবাবে আমি বলেছি--দেশে সত্যিকার অর্থে একাধিক প্রতিষ্ঠানে ভাল হার্ট ডিজিজ চিকিৎসা হয়। ন্যাশনাল হার্ট ডিজিজেস ইনস্টিটিউট--যার পোষাকি নাম--ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজেস--এনআইসি ভিডি--আমরা সহজে বলি হার্ট ইনস্টিটিউট-- সেখানে খুবই ভাল চিকিৎসা হয়। গেলে হয়তো দীর্ঘ সিরিয়ালের বিড়ম্বনা আছে। সেটা রাষ্ট্রনৈতিক সমস্যা। বেসরকারি ভাবে ইউনাইটেড, এ্যাপলো, ল্যাবএইড আছে। নানা অভিযোগ আছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারপরও সেসবের পেছনে নানা কারণও আছে। বিএসএমএমইউ-তে যেতে পারেন। সেখানে মূল্যবান পরামর্শ পাবেন। সবজায়গাতেই দেশ সেরা তথা বিশ্বমানের ভাল চিকিৎসক আছেন। দরকারি যন্ত্রপাতি আছে। হয়তো সর্বাধুনিক নেই। তারপরও আশা করি, সাধ্য মত সবাই ভাল সেবা দেবেন।

:( :( :(
প্রশ্ন হল--আমি কি সন্তুষ্ট করতে পেরেছি ওই ভুক্তভোগীকে। মনে হয় না। দেশীয় চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের এত ক্ষোভ! পত্রিকায় এত ভুল চিকিৎসা, অবহেলার রিপোর্ট!!মনে হয়না তিনি আমার কথায় আশ্বস্ত হবেন। আমাকে তিনি বিশ্বাস করবেন!!!

সুচিকিৎসার জন্য ভাল মানের সেবা ও ডাক্তারদের ভাল ব্যবহার অবশ্যই প্রথম শর্ত। আন-কন্ডিশনাল কন্ডিশন।ভাল ব্যবহার ডাক্তারির অংশ। আবশ্যিক অংশ। সেটা স্বীকার করে অপর পিঠের কিছু সমস্যাও বলতে হচ্ছে। না বললে এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রশ্ন হল--
দেশীয় চিকিৎসকদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন! কারন--ডাক্তার রোগী অনাস্থা। আগে থেকেই অবিশ্বাস তৈরী করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া। আবার অনেক চিকিৎসক অঅমরা আছি--রোগীকে ঘরের লোক ভেবে ঝগড়ায় লেগে যাই। বিদেশী রোগী ২/১ জন কালে ভদ্রে আসে। তাদেরও সহনশীলতা বেশী। আমরাও বেশী যত্ন নেই কেবল বিদেশী বলে নয়--তাদের ভদ্রতা ও সহনশীলতার চমৎকার নিদর্শন দেখে। সেকারনে ভাল চিকিৎসা পেতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে। আস্থা রাখুন আপনার চিকিৎসকের প্রতি ঠকবেন না।



:( :( :(

এ কটা ব্যাপার নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখবেন, যাদের অঢেল পয়সা আছে--তারা দেশীয় চিকিৎসার ওপর পুরো আস্থা হারিয়ে মহাবিরক্ত চিত্তে ব্যাংকক বামরুনগ্রাড/ সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ/অস্ট্রেলিয়া/ আমেরিকা চলে যান। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি--সেসব হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীর মৃত্যুর হার কম নয়। ব্যাংককে বামরুন গ্রাডে , সিংগাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথে অনেক রোগী মারা যায়। অনেকে চিকিৎসা নিতে রীতিমত আত্মীয় স্বজনের লটবহর নিয়ে চলে যান। একারনে এখন মেডিকেল ট্যুরিজম কথাটা চালু। কিন্তু সেখানে কিন্তু কোন রোগী মারা গেলে যতই তারা সপরিবারে যান না কেন--কোন ভাংচুর করতে পারেন না। চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ এনে মিডিয়া কভারেজ পান না।

চিকিৎসা অবহেলা আমার যে করি না , তা কিন্তু নয়। অবশ্যই করি। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ আসে, রোগী যখন মারা যায়। তখন দেশীয় হাসাপাতাল , দেশীয় পেশী শক্তি , দেশীয় মিডিয়ার সুবিধা ব্যাবহার করে আমরা তান্ডব চালাই। পুলিশের মাঝারি কর্মকর্তা হলেও ডাক্তার পেটাই। আবার ডাক্তাররাও দেশীয় সন্তান। তারা বাইরে থেকে এদেশে আসেন নি। এদেশের আলোহাওয়া , রাগ-বিরাগ-উত্তেজনা-মাস্তানি-প্রিয়তা তাদের মধ্যেও থাকবে। তারা তো দেশটাকে সৌদী আরব, ইরান বা আমেরিকা ভেবে নিজেদের প্রবাসী ভেবে চিকিৎসা করেন না। তারাও তাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক শক্তিমত্তা দেখান। যে কারনে দুহাতে তালি বেজে যায়। সংঘাত মারপিট লেগে যায়।

/:)/:)/:)
ব্যাংককের বামরুনগ্রাদের অভিজ্ঞতা....

গেল বছরই অঅমি যখন ব্যাংককে একটা চিকিৎসা সম্মেলনে ছিলাম; তখন একজন শীর্ষ ব্যাংকিং পেশাজীবী সেখানে বামরুনগ্রাদে হার্ট রোগে মারা যান। অনেকদিন ধরে বিপুল টাকা পয়সা খরচ করে তার চিকিৎসা হয়েছে। তিনি ডাক্তার সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি নিয়ে যান নি--তবুও বামরুনগ্রাদের কাছাকাছি এলাকায় তার পরিচিত অন্তত একশত বাংলাদেশী ছিল। তিনি মারা গেলে দেশের রোগীদের স্বজনদের মত আমাদের নানা অবহেলা-সমস্যার কথা মনে হয়েছে। শোকের পাশাপাশি ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। কই আমরা তো সেখানে বামরুনগ্রাড হাসপাতাল ভাংচুর করে ক্ষোভ মেটাতে পারি নি। বরং বিশাল অঙ্কের বিল --যা বাংলাদেশের তুলনায় ৪/৫ গুন বেশী--তা মিটিয়ে লাশ নিয়ে দেশে এসেছি।

আমাদের মধ্যে অনেক রাগ হয়েছিল। যেহেতু অনেক চিকিৎসক নানাভাবে সেখানে ছিলাম, দেশের একজন বিশিষ্ট হার্ট সার্জনও তখন সপরিবারে সেখানে ছিলেন--তারও পর্যালোচনা ছিল--রোগীকে বামরুনগ্রাদ প্রাথমিক প্রাথমিকভাবে সঠিক পর্যবেক্ষন দিতে ব্যার্থ ছিল। এ ক্ষেত্রে দেশের চিকিৎসকদের মত ঠিক ছিল। সেই অনুযায়ী দেশের বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট দিলে তার আরও দীর্ঘ আয়ু অবশ্যই আশা ছিল। ভাবুন , বামরুনগ্রাদে তথা ব্যাংককে বসে তখন রোগীর আত্মীয় স্বজনদের মনের কি অবস্থা। শুধু তাদের কেন, শুভানুধ্যায়ীদের সকলের মনে হয়েছে--বামরুনগ্রাদ ধুলায় মিশিয়ে দেই। একটা অভ্যুথ্থান ঘটিয়ে ফেলি। কিন্তু মনের রাগ মনেই রাখতে হয়েছে। মুখে রা টি করতে পারি নাই। অথচ ভাবুন, এটা বাংলাদেশে হার্ট ইনস্টিটিউটে কি হত!! ডাক্তারদের ওপর হামলা করতাম। ভাংচুর করতাম। রোগী মারা গেল কেন, পরদিন সব কাগজে--সেই রাতে সব টিভিতে গরম খবর হত।
আমরা ভুলে যেতে পারি না--ডাক্তাররা মানুষ। দেবতা নয়। দেশের ডাক্তারদের যেমন ভুল হয়। বিদেশেও তাই হয়।

অপারেশনের ক্ষেত্রে থাই ল্যান্ডের বা ভারতের হাসপাতাল গুলোর ডেথ রেটের চেয়ে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের ডেথরেট কম। মানে রোগী বাচে বেশী। তারপরও ভাংচুর কম হয় না। এর কারন কোনভাবেই আমরা মৃত্যুকে মেনে নিতে পারি না। ক্ষুব্ধ হই। প্রতিক্রিয়া করি সহিংস। দেশের বাইরে ও রাগ হয়। সেখানেও পুলিশ-অঅর্মি-রাজীতিবিদদের আত্মীয়রাও মারা যায়। কিন্তু রাগ দেখাতে পারে না। পেশী শক্তি দেখাতে পারে না। ভুল যে ডাক্তারদের হয় না। অবশ্যই হয়। সেজন্য আমরা ব্যাথিত হই। অপারগতায় দিনের পর দিন অনেক সার্জন অনুশোচনা করেন। সেটা কেউ দেখে না। আরেকটা ব্যাপার ভাংচুর যখন হয়-- শক্তি প্রদর্শন, মিডিয়ার শক্তি প্রদর্শন যখন ঘটে, তখন তরুন ডাক্তাররাও পাল্টা উত্তেজনা দেখান। বাইরে রোগীরাও শান্তি থাকেন; তা দেশে যতবড় শক্মিান হন না কেন; ডাক্তাররাও অঅপন মনে কাজ করেন। কিছুদিন আগে বিএনপির এক বড় নেতার লাশও তো বিদেশ থেকে এল। তার পুত্ররাও তো অনেক ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনেছিল সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথের বিরুদ্ধে। কই আর কি কিছু পেরেছেন!! দেশে হলে হাসপাতাল তো রনক্ষেত্রে পরিনত হত। বিষয়টা দুপক্ষ কেই বুঝতে হবে। অধৈর্য হলে চলবে না। আস্থা রাখতে হবে। সফলতাকে যেমন সহজভাবে নেন; ব্যার্থতার শোক সেভাবে নেয়া হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু সেই শোকের রুপ সহিংস, ধংসাত্মক হওয়া কাম্য নয়।

/:)/:)/:)
আরেকটি ব্যাপার বলতেই হয়--বামরুনগ্রাদে যে লাশ গ্রহনের ঘটনাটি ঘটল--সেখানে সেই সময় দেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিকও আমাদের সফর সঙ্গী ছিলেন। তাকেও হাসপাতালের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। এত বড় সাংবাদিক--কোন পরিচয় কাজে লাগে নাই। তিনি নির্ধারিত এলাকার এক ইঞ্চি ভেতরেও যেতে পারেন নাই। দর্শার্থী লবিতে অসহায় বসে থাকতে হয়েছে। আমরা ডাক্তার হয়েও ভেতরে যেতে পারি নাই। সবদেশেই এমন ভয়ংকর কড়াকড়ি। আর দেশে তো অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত টিভি ক্যামেরা পৌছে যায়। এপোলো, ইউনাইটেড কোথাও বাধা মানেন না। বিএসএমএমইউ; ঢাকা মেডিকেল তো ডালভাত। ভাইরে, ডাক্তারদের কাজ ডাক্তারদের করতে দিতে হবে। ডাক্তারদের ভুল নিয়ে অবশ্যই রিপোর্ট করবেন। একশ বার করবেন। কিন্তু সবাই পারস্পরিক শ্রদ্ধা সহনশীলতা দেখান। রোগীও দেখান। তরুন ডাক্তারদের কেউ দায়িত্ব দেয় নি হাসপাতালের রক্ষী হওয়ার। তাদের সেটা মনে রাখতে হবে। তবে তারাও অপরপক্ষের বাড়াবাড়ির প্রতিক্রিয়া দেখালে ঠেকান মুশকিল সিনিয়রদের পক্ষে। উত্তেজনা এমনই জিনিস, বাদানুবাদে বাড়েই । কমে না।/:)/:)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×