১৯৭৯ সালের আগে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী মিত্র ছিল ইরান। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোকে খণ্ড বিখণ্ড করে বিভিন্ন নামে অনেক গুলো দেশের জন্ম দেয়। ভাষা ধর্ম সংস্কৃতি অভিন্ন হলেও গোত্রীয় বিভেদ ও বিভাজনকে পুজি করে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরব রাষ্ট্র মধ্যপ্রচ্যের মানচিত্রে জাহির হয়। এরই অংশ হিসেবে প্রাচীন হেজাজের নামকরণ হয় সৌদ গোত্রপতির নামানুসারে সৌদি আরব। প্রকৃতিক সম্পদ ছাড়াও ভৌগলিক ও জিওপলিটিক কারণে মধ্যপ্রচ্যের গুরুত্ব অপরিসিম। ফলে তেল সম্পদের লোভ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মোহে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে। অপর দিকে গোত্রপতি থেকে শাহানশাহ বনে যাওয়ার পর পাশ্চাত্য শক্তির পদলেহনে আত্মনিয়োগ করে আরব দেশগুলোর বর্তমান রাজাদের পূর্বসূরিরা, যা বংশানুক্রমে এখনো অব্যাহত আছে।
অপর দিকে প্রচীন সভ্যতার অধিকারী ইরানও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিগড় থেকে বাইরে থাকতে পারে নি। বৃটিশদের আশির্বাদে ইরানের রাজতন্ত্রের ক্ষমতায় আসিন হয় পাহলবী বংশ। ১৯৭৯ সালে আধ্যাত্মিক নেতা ইমাম খোনেনির নেতৃত্বে শক্তিশালী ইসলামী বিপ্লবে এই বংশেরই সর্বশেষ রাজা রেজাশাহ পাহলভীর পতন ঘটে।
আরবদের সাথে ইরানীদের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইরানীরা চার হাজার বছরের প্রচীন ও উন্নত সভ্যতার অধিকারী। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তির দিক থেকে ইরানীদের প্রচীন ঐতিহ্য রয়েছে।অপর দিকে ইসলামকে বাদ দিলে আরবদের উল্লেখ করবার মত কিছু থাকে না।ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের বর্বরতা অশিক্ষা ও কুসংস্কৃতি সর্বজনবিদিত। এছাড়া ধর্ম বিশ্বাসের দিক থেকে ইরানীরা শিয়া মুসলমান। অর্থাৎ তারা হযরত আলী , হাসান ও হোসাইনের অনুসরি। আর আরব দেশগুলো মূলত সুন্নিদের মধ্যকার ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী অর্থাৎ আমিরে মুয়াবিয়া এবং এজিদসহ পরিবর্তি উমাইয়া রাজত্বের অনুসারী। ফলে ইরানীদের প্রচীন সভ্যতা এবং শিয়া মুসলমান হিসেবে কারবালার আদর্শই দেশটির জনগণকে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা যুগায়। এরই পরিণতিতে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের বিজয় ঘটে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তিশালী মিত্রকে হারায়।
এর পর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইরান হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞান ও আন্তর্জতিক রাজনীতের অঙ্গনে। মহাশূণ্য গবেষণা,পরমাণু কর্মসূচি থেকে নিয়ে নানা বিষয়ে ইরান সাফল্যের পানে এগিয়ে ছুটেছে। কিন্তু আজকের একটি খবরে আমি বিষ্মিত হয়েছি। শুধু আমি কেন অনেকেই হয়তো বিষ্মিত হবেন। ইরান মর্কিন কর্মকর্তাদের একটি কালো তালিকা তৈরী করেছে ইরান। (সূত্র এখানে পাওয়া যাবে) এটি সম্ভবত ইরানী কর্মকর্তাদের বিষয়ে মার্কিন সরকারের পদক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবেই করা হয়েছে।
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে ইরান- যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং পাশ্চাত্য শক্তির সাথে একাই লড়ে যাচ্ছে। এ পথে ইরানের সাথে বিশ্বের কোন দেশ নেই এমন কি কোন আরব মুসলিম দেশও ইরানের পাশে নেই। কাজেই সবার মত আমারও জিজ্ঞাসা বা আশংকা ইরান এ পথে তার গন্তব্যে পৌছুতে পারবে তো ?