দালালির তীর সব সময়ই আওয়ামিলীগের দিকে। আওয়ামীলীগের বিরোধীরা সব সময় এই দলটির বিরুদ্ধে ভারতের দালালির অভিযোগ তুলতে তুলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। এটাই এতকাল আওয়ামীলীগের জন্য কাল হয়েছে। ৭৫ এর আগে ও পরে আওয়ামীলীগের জনপ্রীয়তায় ব্যাপক ধস নামার অন্যতম প্রধান কারণ এই দালালি , অর্থাৎ ভারতের দালালি।
দালালি দুই ধরণের হতে পারে। এক-নিজের স্বার্থ রক্ষা করে দালালি করা। দুই-নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দালালি করা।
এখন প্রশ্ন আসবে আওয়ামীলীগ কোন ধরনের দালালী করে ?
আওয়ামী নেতারা সব সময় বলেন,বিএনপিই আসলে ভারতের দালাল। আমাদের মহামান্য বাচাল প্রধানমন্ত্রীও কিছু দিন আগে বলেছেন, ভারতের বিষয়ে সামনে ও পেছনে ওদের চেহারা দুই রকম।
আমরা যদি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব,শেখ হাসিনার কথা যথার্থ। তিনি অন্তত এ ক্ষেত্রে নির্ভুল বলেছেন।
তবে আমি একটু আগে দালালির যে সজ্ঞা দিয়েছি সে অনুযায়ী বিএনপি ভারতের দালালির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থের কথা সামান্য হলেও বিবেচনায় রাখে। আর আওয়ামীলীগ ভারতের দালালির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ কি তা বিন্দু মাত্র বিবেচনায় আনারই পক্ষপাতি নয়।
আমি এ বিষয়ে আজ বিশ্লেষণে যাব না। বিএনপি’র আমল এবং আওয়ামীলীগের গত তিন বছর কেউ গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করলে আশাকরি কেউ আমার সাথে অমত করবে না।
বর্তমানে হট ইস্যু হচ্ছে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর ততপরতা প্রসঙ্গ। মার্কিন শীর্ষপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তা পবিত্র সংসদ (!) কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন অবকাশ নেই। যদিও আজ ভারত ও নেপাল এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধিনতাপন্থী (?) প্রধানমন্ত্রীর সরকার এখনো কোন মন্তব্য করে নি। মন্তব্য কেনই বা করবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা। কাজেই পুরা জাতিই তো তার গোলাম। কাউকে ব্যাখ্যা দেয়ার কি কোন প্রয়োজন আছে ?
এখানেও আমি প্রশ্ন তুলছি না। চার দলের আমল থেকে স্বাধীনতার তল্পিবাহীদের বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পর্যন্ত আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা নিয়মিতই বাংলাদেশে জঙ্গী জঙ্গী বলে মাঠ গরম করার কাজে লিপ্ত ছিলেন। এমন কি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের সুযোগ্য বিমানমন্ত্রী(বর্তমানে) ফারুক খান বারবারই ওই হত্যাকাণ্ডের সাথে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার কথা জোড়েশোরেই বলেছিলেন। মানুষ তখন এর অর্ন্তনিহিত তাতপর্য উপলিব্ধ করতে পারে নাই।
অবশ্য তখনই অনেককেই বলতে শোনা গেছে, ভারত,পাকিস্তান এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে যেভাবে জঙ্গী হামলা হয় তাতে সেসব দেশে জঙ্গী হুমকি কিন্তু অনভব করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ? এক শায়খ সাব কিছু পটকা ফুটিয়েছিল। আসলে শায়খ সাবের পেছনে কারা ছিল তা পরিস্কার হওয়ার আগেই তার সাঙ্গপাঙ্গসহ সবাইকে শেষ করে দেয়া হলো।
এখন হয়তো সচেতন মানুষ বুঝবেন , শেখ হাসিনা কেন শুধু জঙ্গি জঙ্গি করতেন। আসলে তিনি এই ধুয়া তুলে মার্কিন বিশেষ বাহিনীকে বাংলাদেশে কাজ করার প্রেক্ষাপট তৈরী করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনী উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুনিরুজ্জামান ও সাবেক সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ। (এখানে ক্লিক করুন)
এখন আমাদের প্রশ্ন তোলা উচিত শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইদের মত চুনোপুঠিদেরকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য যদি মার্কিন বিশেষ বাহিনীকে দেশে আনতে হয় তাহলে আমাদের সেনাবাহিনী কি ঘোড়ার ঘাস কাটছে ? দেশের বাজেটের একটা বড় অংশ সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়। সেনা কর্মকর্তারা গরীব জনগোষ্ঠির ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে মৌজ করে বেড়াবে আর আমাদের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে মার্কিন বাহিনীকে ডেকে আনা হবে। কেন ? এই প্রশ্ন বিএনপি ও জামাত তুলবে না। কারণ ওরাও দালাল। তুলতে হবে জনগণকে। যেমন তুলেছে মিশর ও তিউনিশিয়ায়।