somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ এলাকায় হরাইজনটাল এবং ভার্টিকেল গৃহ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সৃজনের লক্ষ্যে একটি রূপকল্প

১৫ ই জুলাই, ২০২০ ভোর ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার পুর্বের পোষ্ট পরশ পাথর প্রাপ্তি ১ম পর্বে দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাটির ঘরের পুনরুজ্জীবন প্রসঙ্গ আলোচনায় অনেক পাঠকই গঠনমুলক অসংখ্য মুল্যবান মতামত রেখেছেন। মাটির ঘরকে সকলেই ভালবাসেন ও অকুণ্ঠচিত্তে ঐতিহ্যমন্ডিত এ ঘরের প্রসংসা করেছেন । তবে স্থায়ীত্বতা ও আধুনিক গৃহনির্মাণ প্রযুক্তির তুলনায় মাটির ঘর অনেক পশ্চাতে থাকার পাশাপাশি আগামী দিনগুলিতে দেশে জনসংখা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বর্দ্ধিত গৃহায়নের চাপের মুখে অনুভুমিক ভাবে মাটির ঘরের সম্প্রসারনের ফলে কৃষি জমির পরিমান আশংকাজনক ভাবে কমে যাওয়ার কথাও উঠে এসেছে । এ প্রসঙ্গে এ ব্লগের জনপ্রিয় গুনী ব্লগার শ্রদ্ধেয় আহমেদ জী এস এর বক্তবটি গুরুত্বের সাথে প্রনিধান যোগ্য । আমি একান্ত ভাবে তাঁর মুল্যবান বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করি। নীচে তাঁর বক্তব্যটি তুলে ধরা হলঃ

বাংলাদেশের সীমিত বসতস্থলের ( আবাসিক ) কারণে শহর অঞ্চলে মাটির ঘর এখন অযৌক্তিক । কারন মানুষ বাড়ছে "নাফ নদীর বানের লাহান"। সীমিত আবাসিক জায়গার কারনেই এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিন্ন ভিন্ন , আলাদা আলাদা করে গৃহ নির্মান সম্ভব নয়। তাহলে চাষের জমি সব যাবে ঘরবাড়ী তোলার রাক্ষসী ক্ষুধার পেটে। তাই এখন মানুষের গৃহায়নে হরাইজন্টাল স্প্রেড এর সুযোগ নেই-ই বলতে গেলে । সেক্ষেত্রে লংজিচুডিনাল ( আকাশমুখী ) বাড়ী নির্মান সময়ের দাবী , সেটা সরকারী ভাবেই হোক আর বেসরকারী লেভেলেই হোক।

তাঁর এই মুল্যবান মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই ব্লগের আরেক গুণী ব্লগার জনাব ঠাকুর মাহমুদ প্রায় একই ধরনের মতামত রেখেছেন। সেই পোষ্টে দুজনের দুটো মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার কিছু কথা বলতে গিয়ে ( সাথে প্রাসঙ্গিক চিত্রসহ ) দেখি এর কলেবর একটি পুর্ণাঙ্গ পোষ্টের থেকেও বড় হয়ে যাচ্ছে । তাই সেখানে এত বড় মন্তব্য না লিখে এখানে তুলে নিয়ে এসে পৃথক একটি পোষ্ট আকারে তুলে ধরলাম । এছাড়া গৃহায়ন প্রসঙ্গে এ ব্লগের আর একজন গুনী ব্লগার সকলের সুপ্রিয় কবি সেলিম আনোয়ারের সম্ভাব্য ভুমিকম্পের কথাটি মনে রেখে গৃহায়নের পরামর্শ সম্বলিত মন্তব্যটিও খুবই গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করেছি । তাই একদিকে কৃষি ভুমি গ্রাসকারী আবাসন কর্মকান্ড, অন্যদিকে হাইরাইজ দালানের উপ্র ভুমিকম্পের সম্ভাব্য আঘাতের বিষয়টিকে মাথায় রেখে বাংলাদেশে হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহায়নের বিষয়টি বেশ ভাবনায় ফেলে , কোন দিক রেখে কোন দিকে যাই ।

একথা অনস্বীকার্য যে ঘনবসতিপুর্ণ কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে গৃহায়নের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে কৃষি জমির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দেশের সীমাবদ্ধ মোট আবাদযোগ্য কৃষি ভুমির ব্যবহার প্যাটার্ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের সাথে ক্রমবর্ধমান আবাসন চাহিদার প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত । এপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ মেয়াদে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের সাথে সঙ্গতি রেখে দেশের মোট খাদ্য শস্যের চাহিদা ও যোগানের দিকটি আলোচনার বিশেষ প্রয়োজন আছে । তাই প্র দীর্ঘ মেয়াদে দেশে জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ধারাটি কেমন হবে তা একটু খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতের জন্য গৃহায়ন রুপকল্প প্রনয়ন এখন সময়ের দাবী বলে অনেকেই মনে করছেন।

বাংলাদেশে গৃহ নির্মানের গতি অনুভুমিক না উলম্ব হবে এবং মানুষ গ্রামমুখী হবে না শহরমুখী হবে তা আলোচনার পুর্বে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলির দিকে একটু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো গ্রামীণ ও নগর সমাজের একটি সমন্বিত রূপ । যদিও দেশের ৭০ ভাগ মানুষ (অনেকেই বলে থাকেন ৬৫ ভাগ) এখন গ্রামে এবং অবশিষ্ট মানুষ আরবন/ উপজেলা ভিত্তিক সেমি আরবানে বসবাস করেন । তাই বাংলাদেশে এখন কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পাশাপাশি আধুনিক শিল্প ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থাও কার্যকর অবদান রাখছে । কৃষির পাশাপাশি দেশের শিল্পোৎপাদন ব্যবস্থা ক্রমশ বিকষিত হচ্ছে । দেশের মোট শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ শিল্প খাতে নিয়োজিত । অবশ্য দেশে এখন ব্যক্তিগত মালিকানায় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থায় পুঁজিবাদের প্রভাবে শ্রেণী শোষণ ও বৈষম্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেশ প্রকট আকার ধারণ করছে ।দেশের পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ধনী আরো ধনী হচ্ছে ,দরিদ্র হচ্ছে আরো নিঃশ্ব , সবার মাথাপিছু গড় আয় বাড়লেও ধনীর আয় দরিদ্র মানুষের তুলনায় অনেক গুণ বেশি, ফলে ধনীদের বিলাসবহুল জীবন যাত্রার পাশেই ছিন্নমূল মানুষের বসবাস পরিলক্ষিত হয় ।অপর দিকে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার ভিত হচ্ছে বর্ধিত ও যৌথ পরিবার । কিন্তু সামাজিক পরিবর্তনের অনিবার্য ফল হচ্ছে অনু পরিবার। গ্রাম কিংবা শহর, শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর, কৃষক শ্রমিক কিংবা পেশাজীবী সবাই অনু পরিবারের অংশ। বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো থেকে যৌথ পরিবার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং স্থান করে নিয়েছে অনু পরিবার।শিক্ষা, শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর ফলে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিকশিত হচ্ছে। সমাজকাঠামোর এ সমস্ত উপাদান গুলিকে বিবেচনায় রেখেই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গতির সাথে মিল রেখে তাদের নীজের জন্য একটি স্বপ্নের বাসগৃহ নির্মাণ প্রসঙ্গে হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহায়নের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, কেননা ভার্টিকেল আবাসিক ভবন নির্মান বেশ ব্যয় বহুল সে তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় কম দামী জমির উপরে হরাইজনটাল গৃহনির্মাণ কম ব্যয়বহুল এবং গ্রামীণ সমাজের সিংহভাগ মানুষের কাছে তা অনেকটাই এফর্ডেবল ।

উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহায়ন প্রসঙ্গে অলোচনার প্রয়াস নেয়া হয়েছে । আলোচনার সুবিধার্থে লেখাটিকে তিনটি শাখা যথা(ক)দেশে জনসংখ্যা ও খাদ্যশষ্য উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ধারা,(খ) ভবিষ্যত গৃহায়ন চাহিদা,(গ)ক্রমবর্ধমান জনসংখা ও খাদ্য নিরাপত্তার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশে ভবিষ্যত গৃহায়ন চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে একটি রূপকল্পের প্রস্তবনা, সে সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বিকেন্দ্রীকরনের একটি রূপরেখাও সংক্ষেপে তুলে ধরে সচিত্র এই নিবন্ধটির কাঠামো বিন্যাস করা হয়েছে।

(ক) দেশে জন সংখ্যা বৃদ্ধির গতি ধারা

বাংলাদেশ হিসাবে পরিচিত এখনকার এই অঞ্চলটিতে বিগত ১১০ বছরে জনসংখার চিত্রটি নীচের লেখ চিত্রে দেখা যেতে পারে।
ছবি-১ : Population figure of the territory now forming Bangladesh , 1901-2011( source : Click This Link)


লেখ চিত্রে দেখানো তথ্য হিসাব করে দেখা যায় যে বিগত ১৯০১ সন হতে ২০১১পর্যন্ত ১১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫গুণ ।
পক্ষান্তরে জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে ২০১১ সন হতে ২০২০ সন পর্যন্ত জনসংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১.১৭ গুন ।
২০১১ সনের আদম শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪কোটি ২৩লক্ষ ১৯ হাজার । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৬ কোটি ৪৬ লাখ ও ১৬ কোটি৬৫লাখে । ফলে ২০১৯ সালে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৯ লাখ। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ২০১৮ সালে ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সে তুলনায় ২০১৯ সালে জনসংখ্যা দশমিক ০১ শতাংশ কমেছে বলেও বিবিএস প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
এছাড়া জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি হার সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক এর এক প্রতিবেদনে নিন্মরূপ লেখ চিত্র দেখা যায় ।
ছবি-২ :Population growth (annual %) Bangladesh (Click This Link )
Derived from United Nations Population Division. World Population Prospects: 2019


ছবি-৩ :Population growth (annual %) Bangladesh ( সুত্র :https://data.worldbank.org/indicator/SP.POP.GROW?locations=BD )
Derived from United Nations Population Division. World Population Prospects: 2019


উপরে দেয়া বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনের লেখ চিত্র দুটি হতে দেখা যায় ১৯৭৯ সনে বাংলাদেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার ছিল ২.৭১৮% যা মাত্র ৪০বছরে কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১.০৫% এ, যা ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার কমারই দিক নির্দেশনা দিচ্ছে । মোদ্দা কথা হল বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন হতে দেখা যায় যে দেশে মোট জনসংখ্যা বাড়লেও জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার পুর্বের বছরগুলির তুলনায় ক্রমেই কমছে।
বিবিধ প্রকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কর্মসুচী বাস্তবায়ন সেসাথে পরিবারের আকার ছোট রাখার জন্য মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার কমছে । বাংলাদেশে ১৯৯১ সনে পরিবারের আকার ছিল ৫.৫০ জন , এখন সেটা কমে ৪.৪০ জনে নেমে এসেছে। পরিবারের আকার আরো কমবে সে সাথে তাদের বসবাসের জন্য গৃহের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে বলে ধারনা করা যায়।এখন একটু দেখা যাক কৃষি জমি ও খাদ্যশষ্য উৎপাদনের গতি ধারাটি কি রকম।

দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির গতি ধারা

ছবি -৪ : বিবিএস প্রণীত কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ ২০১৭ অনুসারে এক নজরে কৃষি পরিসংখ্যান


দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমান ৮৫.৭৭ লক্ষ হেক্টর , এর মধ্যে নিট ফসলি জমির পরিমান ৭৯.৪৭ লক্ষ হেক্টর ।এই নীট ফসলি জমির মধ্যে এক ফসলী ২২.৫৩ লক্ষ হেকটর, দুই ফসলি ৩৯.১৪ লক্ষ হেক্টর , তিন ফসলি ১৭.৬৩লক্ষ হেক্টর ও চার ফসলি ০.১৭ লক্ষ হেক্টর , সব মিলিয়ে মোট ফসলি জমির পরিমান ৭৯. ৪৭ লক্ষ হেক্টর ।

আজ থেকে মাত্র ৫০ বছর আগে দেশে হেক্টর প্রতি ধানের গড় ফলন ছিল মাত্র ১.৬০টন এখন তা হেক্টর প্রতি গড়ে ৩ টনের কাছাকাছি । দেশে প্রধান খাদ্য শষ্যের (ধান গম ভুট্টা ) উৎপাদন গত ৪৫ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে তিনগুণের বেশী । ১৯৭০-৭১ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য( ধান গম ও ভুট্টা ) উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্যশস্য নিয়ে করা সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। গত ৫০ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণের সামান্য বেশি বাড়লেও এ সময়ে খাদ্য উৎপাদন তিনগুণের বেশি বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। নীচে দেয়া সারনী-১ এ ২০১৬-১৭ সনে দেশে খাদ্য শস্য উৎপাদন পরিসংখ্যান দেখা যেতে পারে।
সারণী-১ : কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ ২০১৭ অনুযায়ী খাদ্য শস্যের আবাদি জমির পরিমান ও উৎপাদন ২০১৬-১৭


ছবি-৫ : বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট


অপরদিকে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনসস্টিটিউ কতৃক বর্তমানে হেক্টর প্রতি ৯ টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চফলনশীল বোর ব্রিহাইব্রিড ধান৫,
হেক্টরপ্রতি ৭ টন ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন রোপা আউস ব্রি হাইব্রিড ধান৭ এবং এবং হেক্টর প্রতি ৬.৫০ টন ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন রোপা আমন ব্রি হাইব্রিড ধান৬ উদ্ভাবিত হয়েছে।
ছবি-৬: বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের জাত


সে হিসাবে সচেষ্টহলে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান/গম/ভুট্টা চাষ করে এই মহুর্তেই দেশে ৮ কোটি ৭৫ লক্ষ টন খাদ্য শস্য ফলানো যেতে পারে। নিন্মের সারণী-২ এ তৈরীকৃত হিসাবটি দেখা যেতে পারে।
সারনী-২ :বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের শস্যের বাৎসরিক উৎপাদন সম্ভাবনা


বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট উদ্ভবিত উচ্চফলনশীল জাতের ধান ফলনের তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত ২ সারণীতে দেখানো তথ্য অনুযায়ি দেখা যায় দেশে যে পরিমান জমি আছে তাতে সচেষ্ট হলে এখনই প্রায় আরো দ্বিগুনেরও বেশী ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে। তবে এ হিসাব অনুযায়ী উচ্চফলনশীল জাতের ফলন পেতে হলে আইডিয়েল কন্ডিশন প্রয়োজন হবে । প্রয়োজন হবে উপযুক্ত মানের সয়েল কন্ডিশন, প্রয়োজনীয় সেচ ব্যবস্থা, যথাসময়ে যথাযথ মানের ব্যলেন্সড সার প্রয়োগ, যথাসময়ে কীট নাশক প্রয়োগ, আগাছা দুরীকরন ,ফসলের পরিচর্যা ও সহায়ক আবহাওয়া যা নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরী কন্ডিশনেই সম্ভব হতে পারে । তাই আমাদেরকে ফসল উৎপাদন প্রক্ষেপনে অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে।

প্রমঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে দেশের দুইজন বিজ্ঞ কৃষিবিদ প্রফেসর ড.এস এম ফকরুল ইসলাম ও প্রফেসর ড.রেজাউল করিম তালুকদার প্রনীত
projection of food demand and supply in Bangladesh:Implications on food security and water demand
প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরিমাপক মডেল বিশেষ করে Household demand model : almost ideal demand system ( AIDS)model প্রয়োগ করে তৈরীকৃত হিসাবে আগামী ২০৫০ সনে দেশে মোট খাদ্য শস্যের ( ধান ,গম ভুট্টা) চাহিদার পরিমান দেখানো হয়েছে ৪ কোটি৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। অপর দিকে ঐ সময়ে দেশে মোট খাদ্য শস্য যোগানের পরিমানও দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন। তার মানে ৫০ বছর পরেও খাদ্য শস্যের চাহিদার সাথে যোগানের (দেশীয় ভাবে)ভারসাম্য থাকবে, তাই উক্ত সময় পর্যন্ত আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে তেমন ভাবতে হবে না বলেই মনে হয়।বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষনায় ভবিষ্যতে আরো উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবিত হবে তা আশা করাই যায় । উল্লেখ্য ইজরাইল হেক্টরে প্রায় ৩০০ টন আলু ফলাচ্ছে যদিও They don't have fertile soil and they have only little water, yet the Israeli farmers in Arava, the southernmost part of the Negev desert in Israel, are producing just that । প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি হার কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আল্লাই জানেন। তবে বাংলাদেশ নানাবিধ কারণে জমির পরিমান কমে যাওয়াসহ অপরিকল্পিতভাবে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়া, সেচের পানির অভাব, দক্ষিনাঞ্চলে লবনাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ফসলের জমি ও ফলনের উপরে মারাত্বক প্রভাবের ফলশ্রুতিতে দীর্ঘমেয়াদে দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না ।
এ কথা সত্য যে প্রতি বছর গৃহ, শিল্পকারখানা, রেলপথ ও সড়ক প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে ১(এক) শতাংশ হারে কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি জমি হারাতে হচ্ছে, লবণাক্ততা, বন্যা, খরাসহ নানা কারণে কৃষিজমি কমছে। তার পরেও বলা যায় যে দেশে এখন শস্য উৎপাদন নিবিরতা (cropping intensity)১.৯৪%, এটাকে আরো বাড়ানোর জন্য অব্যাহত প্রয়াসের সাথে গবেষনার মাধ্যম উচ্চ্ফলনশীল জাতের খাদ্য শস্য উদ্ভাবন ক্রমান্বয়ে আরো বাড়বে বই কমবেনা । সে সাথে সরকার অনুমোদিত ডেল্টা প্লান ২১০০ বাস্তবায়িত হলে সাগর মোহনায় ভেসে উঠা বিভিন্ন চর মিলিয়ে আরো প্রায় কয়েক হাজার হাজর বর্গমাইল এলাকা আবাদি কৃষি ভুমিতে পরিনত হতে পারে ।

উল্লেখ্য বিভিন্ন সূত্রমতে গত ৫০ বছর ধরে বঙ্গোপসাগর মোহনায় ভূমি জাগরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ছয় লাখ হেক্টর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। কখনও প্রকৃতির আপন খেয়ালে আবার কখনও ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ সকল ভূমির কিছুটা উদ্ধার হয়েছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা সমীক্ষা-২০০১ এর মতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ হেক্টর ভূমি এ মোহনায় জেগে উঠছে। তবে বর্তমানে এর পরিমাণ আশাতীতভাবে বেড়ে চলছে। সন্দ্বীপের তিন পাশে গড়ে উঠা নতুন চর ছাড়াও এর পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপ, চর কবিরা, চর কালাম, চর আলীম, চর সাগরিকা, উচখালী, নিউ ঢালচরসহ প্রায় ৫০০০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও চর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতে, উক্ত এলাকায় প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১৫-২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চরের সন্ধান মিলছে।( সুত্র : Click This Link )
ছবি-৭: বঙ্গাপসাগরে জেগে উঠা চরে ভুমি পুণরোদ্ধার করে বৃক্ষ রোপন


ছবি-৮ : চর বিজয়ে ভাটার সময় দৃস্টিনন্দন কাকরার বিচরন


ছবি-৯ :মেঘনা মোহনায় জেগে ওঠা একটি চর,এধরনের চর নিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই


নোয়াখালীর দণিাঞ্চলীয় সাগর মোহনায় জেগে উঠা নতুন নতুন চরে ইতোমধ্যে অন্তত এক হাজার বর্গকিলোমিটার চরাঞ্চলে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। আগামী ২০ -২৫ বছরে আরো বিশাল চর জেগে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব চরে পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ, বৃক্ষরোপণ ও মৎস্য প্রকল্পসহ বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া হলে জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির দ্বার উন্মোচিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরই মধ্যে এসব দ্বীপ ও চরের ভূমি গঠনে নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়াও হচ্ছে।নতুন চর ও দ্বীপগুলোয় ২০/৩০ বছরের মধ্যে ভূমির মান উন্নত হলে দেশ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে অন্যদকে এসকল চরের ভূমি প্রয়োজন অনুসারে পরিকল্পিত আবাসন, শিল্পায়ন ও লবনাক্ততা সহিষ্নু কৃষি কাজে ব্যবহার করা যাবে।

হরাইজনটাল বনাম ভার্টিকেল গৃহায়ন প্রসঙ্গ

একথা অনস্বিকার্য যে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোয় এখন গ্রামীণ ও নগর সমাজের ব্যবধান অনেক হ্রাস পেয়েছে , ভৌত ও তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, গণমাধ্যম, শিক্ষা, পেশা ইত্যাদি নগর ও গ্রামীণ সমাজের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করছে। গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিরতর হচ্ছে । গ্রামীণ ও নগর সমাজে এর দৃশ্যমান প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে । গ্রামীণ এলাকায় হরাইজনটাল ও ভার্টিকেল গৃহনির্মাণ ক্ষেত্রেও তা প্রতিফলিত হচ্ছে।

তবে উপরের আলোচনা অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির তুলনায় অধিক মাত্রায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির গতিধারা ও কৃষি জমি সম্প্রসারনের সম্বাবনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় যে বর্তমানে ফসলি জমিতে অনুভুমিকভাবে (হরাইজনটাল) প্রয়োজনীয় নতুন নতুন বাড়ীঘরের বিস্তার ঘটলেও খাদ্য নিরাপত্তার উপর নিকট ভবিষ্যতে এর তেমন কোন ক্ষতিকর প্রভাব পরবেনা বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে মিরাকল কিছু না ঘটলে দেশের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য কৃষিজমি ক্রমবৃদ্ধিমান জনসংখ্যার চাপ কোনমতেই সইতে পারবেনা । এ অবস্থা বিবেচনায় রেখে কৃষি জমি গ্রাসকারী দেশের সার্বিক গৃহায়ন পরিকল্পনার বিষয়টি এখনই গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে । এমনিতেই এখন শহরাঞ্চলে নাফ নদীর বানের লাহান জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে । নীচের সারণীতে বিগত অর্ধশতকে দেশের শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির চিত্রটি দেখা যেতে পারে ।
সারনী-৩ : Inter –Censal Growth of urban Population in Bangladesh, 1974-2011 ( Source : Click This Link )


উপরের সারণীতে দেখা যায় ২০০১ হতে ২০১১ সনে ১০ বছরে শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা ৩ কোটি১০ লক্ষ থেকে বেড়ে ৪ কোটি১৯ লক্ষ তথা ১ কোটিরও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ২০২০ সনের মাঝামাঝিতে শহরাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার পরিমান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে/প্রতিবেদনে ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে মর্মে বলা হয়ে থাকে।


গ্রামীণ এলাকাসহ শহরাঞ্চলে লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষতি মানুষের বাসস্থানের চাহিদা পুরণের জন্য ভার্টিকেল গৃহায়নের কোন বিকল্প এই মহুর্তে দেশে নেই । তবে বিপদটা হল, একদিকে দেশে সম্ভাবনাময় উচ্চ মাত্রার ভুমিকম্পের ঝুঁকি আরদিকে হাইরাইজ ভবনে মনুষ্য সৃষ্ট ঝুঁকির কারণে ভবন ধ্বসে পড়া ,হেলে পড়া, ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া, আগুনে পুড়া যথা তাজরিন ফ্যাসান, গুলসান অগ্নিকান্ড ,চকবাজার অগ্রিকান্ড প্রভৃতি ম্যসাকার কান্ড ঘটে চলেছে বিরামহীনভাবে। ইত্যাকার জীবনঘাতি ও সম্পদহানীর মত মহা দুর্যোগের হাত হতে বাঁচার জন্য শহরাঞ্চলে জনবসতির চাপ কমিয়ে মানুষকে উপযুক্ত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও উন্নতমানের যোগাযোগ অবকাঠামো সৃজনের মাধ্যমে শহরাঞ্চলের মানুষকে গ্রামমুখী আর শহর মুখী মানুষকে গ্রামে ধরে রাখতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় বসবাস ও গৃহায়নকে আকর্ষনীয় করে তুলতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে রাজধানী শহর ঢাকার সাথে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষের যোগাযোগের সময় মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টায় নামিয়ে আনা যায় ২৫০/৩০০ কিলোমিটার বেগের দ্রুতগামী ইলেকট্রিক নিরাপদ ট্রেন সার্ভিস প্রচলনের মাধ্যমে।
ছবি -১০ : The "Bullet Train" of Japan: speeds of up to 320 km/h


গ্রামীণ এলাকায় দেশের জনসংখার প্রায় ৭০ জন বাস করেন । দেশে গৃহহীন মানুষের প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে । ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ সনে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভুমি মন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে বর্তমানে দেশে দুই লাখ ৮১ হাজার মানুষ গৃহহীন এবং ১০ লাখ ৬৯ হাজার মানুষ ভূমিহীন অবস্থায় রয়েছে ( সুত্র : Click This Link )।
অপর দিকে বিভিন্ন মিডিয়া ভাষ্যে দেখা যায় দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষই ভুমিহীন ও প্রায় কোটি খানেক মানুষ গৃহহীন। প্রকৃত তথ্য যাহাই হোক সকলের জন্য মাথা গোজার ঠাই হিসাবে গৃহের প্রয়োজন। এ কথা সত্য যে গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী সিংহভাগ মানুষেরই নীজের বাড়ীঘর আছে যদিউ কাঁচা বাড়ী ঘরের সংখ্যাই বেশী।অঞ্চলভেদে গ্রামীণ জনগনের শতকরা ৫-১০ জনের বেশী পরিবারের ইটের তৈরী পাকা বাড়ী করার সমার্থ নেই,অথচ এদের পাকা বাড়ী নির্মানের জন্য ইটের চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে ইট ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ার প্রভাবে গোটা এলাকার জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র মারাত্বক হুমকীর সন্মুখীন।

এ অবস্থার হাত হতে নিস্কৃতির জন্য নিরাপদ ও টেকসই পরিবেশ বান্ধব গৃহ প্রয়োজন সেটা মাটিরই হোক কিংবা অন্য যে কোন উপকরনেরই হোক ।গ্রামীন এলাকায় কৃষি জমির সংকোচন রোধ করা যায় প্রতিটি ইউনিয়ন বা গ্রামকে গ্রোথ সেন্টার/ভিলেজ সেন্টারে পরিনত করার মাধ্যমে সেখানে পরিকল্পিতভাবে গৃহায়ন করে ।

এখন এই গৃহায়ন কর্মসুচীর সম্প্রসারণটি হরাইজন্টাল হবে না ভার্টিকেল হবে সেটা বিরাট ভাবনার বিষয় । উল্লেখ্য বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে, । এই জোনের ভিতরে অবস্থানকারি এলাকাগুলি অপেক্ষা করছে বড় ধরনের ভুমি কম্পের । এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে ১০০'রও বেশি ভূমিকম্প, তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৫০ বছরে ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে। মতবিরোধ থাকলেও অনেক ভূতাত্ত্বিকগন ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটনকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেছেন। অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন , যে কোনও সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন বাংলাদেশের নিচে জমে ওঠা টেকটনিক প্লেটে চাপ জমে উঠছে কম করে হলেও বিগত ৪০০ বছর ধরে। এই চাপ যখন মুক্ত হবে তখন সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৮.২ রিখটার, এমনকী তা ৯ রিখটারেও পৌঁছতে পারে।এই চাপ যখন মুক্ত হবে তখন সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা দাঁড়াবে প্রায় ৮.২ রিখটার, এমনকী তা ৯ রিখটারেও পৌঁছতে পারে। প্রায় ১৪ কোটি মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তবে এই ভূমিকম্প ঠিক কখন হতে পারে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটা এখনই হতে পারে, আবার ৫০০ বছর পরেও হতে পারে। তবে এ সম্ভাবনাটি বিবেচনায় রেখেই গৃহায়নের রূপকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

ভার্টিকেলি গড়ে উঠা ভবনে কৃষি জমির ক্ষতি কম হবে । তবে এ ক্ষত্রে উল্লেখ্য যে বুয়েটের গবেষকদের প্রস্তুতকৃত ভূ-কম্পন-এলাকা ভিত্তিক মানচিত্রে বাংলাদেশকে তটি জোনে ভাগ করা হয়েছে । রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থান জোন ২ এবং ঢাকাতেই হাইরাইজ বিল্ডিং সবচেয়ে বেশী ।
ছবি - ১১: বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। (তথ্যসূত্র:GSB)


ভুতাত্বিকদের মতে যদিও জোন-২-তে থাকা রাজধানী শহর ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা বা ফল্টলাইন নেই। তবে ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হবার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা রয়েছে। সরকারি তথ্যসূত্রমতে, ঢাকায় রাতের বেলায় ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৯০,০০০ লোক হতাহত হবে। দিনের বেলায় হলে হতাহতের সংখ্যা হবে ৭০,০০০। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলের ৩,২৬,০০০ ভবনের উপর পরিচালিত সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এমন তীব্রতার ভূমিকম্পে প্রায় ৭২,০০০ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আরও ৮৫,০০০ ভবন মাঝারি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে । ভুমিকম্পে শুধু দালান ভাঙার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য সম্পদ।

ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন এলাকা রয়েছে অনেক । ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকেও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন। (সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো)

রাজধানী ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় ৭০ হাজার ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে ।ভূগর্ভস্থ নরম মাটি, বিল্ডিং কোড না মানা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ থাকা এসব ভবন চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়া হলেও অপসারণের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভবনগুলোতে এখনো বসবাস করছে লাখ লাখ মানুষ। এদের সরিয়ে নেয়ারও উদ্যোগ নেই কারো। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুই সিটি করপোরেশন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কেউই এর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। ভবন অপসারণের দায়িত্ব নিয়ে সংস্থা তিনটি একে অপরকে কেবল দোষারোপই করছে।
ছবি-১২ : বড় ধরনের ভুমিকম্পের আঘাতে রাজধানীশহর ঢাকার ঝুঁকি পুর্ণ হাইরাইজ ভবনের একটি দৃশ্য


ভুমিকম্প ছাড়াও নিন্মমানের নির্মান কাজ ও অনুমোদিত নক্সা বহির্ভুত ভবনের কাঠামো তৈরীর জন্য অনেক ভবন ইতোমধ্যে দেবে গেছে ,হেলে গেছে ও ভেঙ্গে গেছে
ছবি - ১৩: রাজধানী শহরে বহুতল ভবন ভেঙ্গে পরা ও হেলে যাওয়া বহুতল ভবনের দৃশ্য


শুধু কি তাই রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় বড় শহরাঞ্চলে বহুতল ভবনের পাশেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বস্তি। এসকল বস্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কিছুদিন পরে পরেই দেখা যায় দুর্ঘটনা কিংবা ঘ্টনাক্রমে প্রলয়ংকরী আগুনে পুরে অনেক বস্তিবাসীর জীবনহানীসহ ঘটিবাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ।

রাজধানী শহর ঢাকায় বস্তি ও বস্তিবাসীর সংখ্যা কত? তা কেও সঠিক বলতে পারেনা । বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালে বস্তি শুমারি করেছিলো পরিসংখ্যান ব্যুরো। এরপর সেনিয়ে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়না। প্রতিবছর নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা শুধু কাজের খুঁজেই হাজার হাজার মানুষ ঢাকা আসছেন। ১৯৯৭ সালে মোট ২ হাজার ৯৯১টি বস্তি থাকলেও ২০১৪ সালে বস্তি শুমারি অনুযায়ী ঢাকা শহরের দুই সিটি কর্পোরেশনে সেটি বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯৪টিতে ।বর্তমানে এসব বস্তিতে বাস করছে ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ জন মানুষ । মূলত দারিদ্র্যতা, কাজের সন্ধান, নদী ভাঙ্গন, ডিভোর্স এবং নিরাপত্তাহীনতা জনিত কারণে গ্রাম ছেড়ে শহরাঞ্চলের বস্তিবাসি হচ্ছেন মানুষ । অন্যদিকে দেশে ঠিকানাবিহীন (ভাসমান) মানুষ রয়েছে প্রায় অর্ধকোটি। যাদের কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ছবি-১৪ : রাজধানী শহরে বহুতল ভবনের পাশেই গড়ে উঠা বস্তি


ছবি- ১৫: দিন যাপনের গ্লানি নিয়ে রেললাইনের পাশে ও পতিত জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা মানুষের বাস


ছবি -১৬ :পচা আবর্জনা ও পুতিগন্ধময় জলাশয়ের উপর ঝুপরি ঘরে বস্তিবাসী ও নিন্ম আয়ের মানুষের বাস


স্বাধীনতার পর থেকে সকল সরকারই দারিদ্র নিরসন কল্পে কিছু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড- পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু সরকারের এসব দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমের সঙ্গে মাঝে মাঝে কিছুদিন পরপর বস্তি উচ্ছেদ চরম সাংঘর্ষিক। সরকার একদিকে দরিদ্র জনগণকে শহরে-নগরে আসার সুযোগ দিচ্ছে, শ্রম নিচ্ছে, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো নাগরিক জীবনযাপনের সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নগরে গড়ে তুলতে সহায়তা দিচ্ছে, বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে অথচ সেখানে দরিদ্রদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা করছে না। ফলে দরিদ্ররা বাধ্য হয়ে অস্থায়ী বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। বিবিধ প্রক্রিয়ায় বস্তি উচ্ছেদ,ঘটনাকিংবা দুর্ঘটনায় বস্তি পুড়ে গিয়ে বস্তিবাসিরা নিঃস্ব হচ্ছে । দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের দারিদ্র্য নিরসন প্রক্রিয়ায় দুই ধাপ উপরে উঠেতো তিন ধাপ নিচে পড়ে যাচ্ছে এবং দেশে দরিদ্ররা কেবল দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না এবং অর্জিত সম্পদ রাতারাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শুধু দরিদ্র মানুষের একটু নিশ্চিত ও নিরাপদ আবাসনের অভাবে সরকারের দারিদ্র্য নিরসন সংক্রান্ত সকল বিনিয়োগ বিফলে যাচ্ছে।

বর্তমানে মেগাসিটি ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি। আজ থেকে ২০ বছর আগে যা ছিল এক কোটিরও কম। সুতরাং এ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আগামী ২০ বছর পর কত হবে ঢাকার জনসংখ্যা। ২০১৪ সালে গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতি হাজারে শহরে আসত ২৮ দশমিক ২ জন। ২০১৮ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৬ জনে। দেশের জেলা, বিভাগীয়, থানা শহর বাদ দিয়ে ইউয়িন থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত কি যেন এক শূন্যতা মানুষের মনে বাসা বেঁধেছে তা নির্ণয় করা এখন সময়ের দাবি। গ্রামের মানুষ শহরমুখী হওয়ার কারণে ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা শহরে জনসংখ্যা ২ কোটি ৭৪ লাখে দাঁড়াবে। বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর গুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে এখন তিন নম্বর।
ছবি -১৭ : হাইরাইজ বিল্ডিং নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটি হল ঢাকা


বাংলাদেশের হাইরাইজ বিল্ডিংগুলি কতটুকু ভুমিকম্প সহনশীল তা আলিমুল গাইব আল্লাতায়ালাই জানেন । তাছাড়া রাজুক যে কত টুকু কি তা সকলেই জানেন । ভবনের ডিজাইন অনুমোদনে রয়েছে বহুত তেলেশমাতি কান্ড , সে জন্য মাঝে মাঝেই দেখা যায় কতক ভবন মাটিতে ধেবে গেছে ,অনেক ভবন হেলে গেছে,অনেক ভবন আচমকা ফেটে দো ভাগ হয়ে গেছে । তারপরে সঠিকভাবে স্থাপত্য ডিজাইন পাশ হলেও গুনগতমানের নির্মান উপকরণ ব্যবহৃত হয়না, অনুমোদিত নকশার বাইরে নির্মান কাজ করা হয় ।অর্থাৎ একদিকে ভবনসমুহ রয়েছে ভুমিকম্পের মত পাকৃতিক ঝুঁকিতে অন্যদিকে রয়েছে মনুষ্য সৃষ্ট ঝুঁকির মাঝে এবং এটা যে কোন মহৃর্তে ঘটতে পারে। মনুষ্য সৃষ্ট ঝুঁকি হয়তবা এড়ানো যাবে আইন ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে । কিন্তু উচ্চমাত্রার ভুমিকম্পকে প্রতিরোধ করার কোন রাস্তা নেই মানুষের হাতে। তবে ভুমি কম্পের হাত হতে কিছুটা রক্ষার একটি উপায় হতে পারে পরিকল্পিত নগরায়ন ও গ্রামীণ এলাকায় ভুমিকম্পে টিকে থাকাপযোগী ও ভুমিকম্পের সময় সহজে তরিতবেগে গৃহ হতে নিস্ক্রান্ত হয়ে উন্মোক্ত স্থানে নিরাপদে গমন উপযোগী উপযুক্ত মানের ব্যয় মাশ্রয়ী গৃহায়ন ।

উপরে বর্ণিত দুরাবস্থা সমুহের কারণে শহরাঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য সুপরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলে সেখানে আবাসন ব্যবস্থা করা যে কারোর জন্যই নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং ও খুবই ব্যয়বহুল ব্যাপার। প্রয়োজন একটি সমন্বিত কার্যক্রম। গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে । গ্রামকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শহরের উপর চাপ কমাতে হলে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের ছুটে আসা কমাতে হবে, শহরের মানুষকে গ্রামে ফেরাতে হবে । এ লক্ষ্যে প্রয়োজন বহুমুখী উদ্যোগ । গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে , নদী ভাঙ্গন রোদ করতে হবে , চর জীবিকায়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে , ঘরে ফেরা কর্মসূচি, গৃহায়ন প্রকল্প, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প জোড়দার করতে হবে ।

রাজধানীসহ বড় বড় শহড় হতে মানুষের চাপ কমাতে হলে বিকেন্দ্রিকরণের কোন বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক ,সামাজিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডের বিকেন্দ্রিকরন করা গেলে বড় বড় শহর গুলিতে গৃহায়নের জন্য চাপ কমবে।তবে মানুষকে ফের গ্রামমুখী করার প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে সেখানে গৃহায়নের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ফসলি কৃষিজমির উপরে চাপ পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকীর সন্মুখীন হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তবে আধুনিক উচ্চ ফলনশীল কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পারব যা উপরে বিস্তারিত ভাগে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সহযোগে অলোচনা করা হয়েছে ।

গ্রামীণ এলাকায় কৃষি জমির সংকোচন রোধ করা যায় প্রতিটি ইউনিয়নকে বা গ্রামকে গ্রোথ সেন্টার/ভিলেজ সেন্টারে পরিনত করে সেখানে পরিকল্পিতভাবে ভুমি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব একতল , দ্বিতল, ত্রিতল ও বহুতল বিশিষ্ট ভবন ( উন্নতমানের সান ড্রাইড কমপ্রেসড মাটির ব্লকের মাটির ঘর, আর সেটা একান্তই সম্ভব না হলে সানড্রাইড কংক্রিট ব্লকের তৈরী দোতলা/তিনতলা ও বহতল ভবন) নির্মাণ করে । উন্নতমানের টিকসই মাটির ঘর নির্মানের কিছু দৃশ্য পরশ পাথর প্রপ্তি পর্ব-১এ দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য গ্রাম পর্যায়ে ভিলেজ সেন্টার নির্মাণ করা হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় আবাসন কেন্দ্র সহ একটি করে ইন্ডাসট্রিয়েল এস্টেট নির্মান করা যায়,যা শিল্প হাব হিসাবে কাজ করবে ।
প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারের রূপকল্প

বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় দেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ বসবাস করেন । এর সাথে শহরাঞ্চল হতে গ্রামমুখি বস্তিবাসী, ভাসমান মানুষ ও ফ্রাট বাড়িতে এক/দুই কামড়ায় গাদাগাদি করে বসবাসকারী নিন্ম অআয়ের প্রায় ১০ ভাগ মানুষকে যুক্ত করে প্রায় ৮০ভাগ জনগুষ্ঠির বসবাসের জন্য ভিলেজ সেন্টার সৃজন করা যেতে পারে । বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬কোটি ৬৫ লক্ষ । এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তথা ১৩ কোটি৩২লক্ষ মানুষের জন্য(প্রতি পরিবারে/খানায় ৪.৪০জন ধরে) মোট ৩ কোটি ২লক্ষ গৃহ ইনিটের প্রয়োজন ।উল্লেখ্য বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৫৭১ টি ইউনিয়ন ও প্রতি ইউনিয়নে ৯টি করে ওয়ার্ড ধরে মোট ৪১,১৩৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯০হাজার গ্রাম রয়েছে। সে হিসাবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ছোটবড় বিভিন্ন আকারে ২/৩টি গ্রাম রয়েছে। এমতাবস্থায় ২/৩ গ্রামগুলিকে নিয়ে গঠিত প্রতিটি ওয়ার্ডের কেন্দ্রস্থলে বন্যামুক্ত অপেক্ষাকৃত উচু স্থানে একটি করে ভিলেজ সেন্টার স্থাপন করা যেতে পারে।দুই/তিনটি গ্রাম নিয়ে গঠিত প্রতি ওয়ার্ড প্রায় গড়ে ৭৩৪টি পরিবার বসবাস করেন । এর মধ্যে নীজ বাড়ীতে থাকতে চাওয়া অবস্থাসম্পন্ন ও অনিচ্ছুক শতকরা ২০ ভাগ হাউজহোল্ড বাদ দিলে বাদবাকী প্রায় ৬০০ পরিবারকে প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে গৃহায়নের জন্য স্থানান্তর করা যেতে পারে।

প্রতিটি ভিলেজ সেন্টারে ৪টি টি ব্লক যথা (ক) ১০০টি মাটির /কাঠের/ সানড্রাইড কংক্রিট ব্লকের তৈরী সৌখীন ঘরের জন্য একটি ব্লক, (খ ) ২০০টি দোতলা ভবনের জন্য একটি ব্লক এবং (গ) ১০০টি ত্রিতল/বহুতল ভবন নির্মাণের ব্লক রাখা যেতে পারে ( তবে এর জন্য প্রতিটি গ্রামে একটি নীড বেইসড ফিজিবিলিটি স্টাডি অবশ্যই করতে হবে)। বিভিন্ন আকারের তবে গড়ে ৯০০বর্গফুটের নীচেনয় এমন একটি করে ইউনিট ধরে প্রতিটি ভবনের জন্য জমির পরিমান হবে গড়ে ৫শতক(সামনে পিছনে বাগানের জন্য জায়গা রেখে)। সে হিসাবে প্রতিটি ভিলেজ সেন্টারে গৃহের জন্য জমির পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ৩০ একর, এর সাথে রাস্তা ,খেলার মাঠ, স্কুল, কলেজ মসজিদ,ক্লিনিক ,কমিউনিটি সেন্টার, ইউটিলিটি সেন্টার, শপিং সেন্টার ও খোলা সবুজ চত্তরের জন্য প্রয়োজন হবে আরো প্রায় ২০ একর ,সে হিসাবে প্রতিটি ভিলেজ সেন্টারের জন্য প্রয়োজন হবে ৫০ একর তথা প্রায় ২০ হেক্টর জমির । নীচের ছবিতে একটি প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারের খসড়া মাষ্টার প্লান প্রদর্শন করা হলো ।
ছবি-১৮ একটি ভিলেজ সেন্টারের খসড়া মাষ্টার প্লান


এখানে প্রসঙ্গগত উল্লেখ করা যায় যে রাজধানী শহর ঢাকার গুলশানের একটি আলীশান ভবনের গোটা কয়েক ফ্লাট/এপার্টমেন্টের মুল্য দিয়েই উপরে প্রস্তাবিত একটি ভিলেজ সেন্টারে পরিবেশ বান্ধব সকল গৃহ নির্মান করা যেতে পারে ।
ছবি-১৯ : গুলশানের একেকটি এপার্টমেন্টের দাম দেখা যায় ৩ কোটি টাকার উপরে


আমি হলফ করে বলতে পারি দেশের সাধারণ মানুষদেরকে বিবিধ প্রকারে শোষন বচ্ছনা করে এবং নানাবিধ উপায়ে অর্জিত সাদা কালো অর্থে বিশেষ একশ্রেণীর বিত্তবানেরা ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, বসুন্ধরায় যে সমস্ত আলীশান বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তা দিয়ে প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে পরিবেশ বান্ধব ব্যয় সাশ্রয়ী গৃহ নির্মাণ করে সারা দেশকে গুলশান বনানীতে পরিনত করা যায়। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে আছে।

বিভিন্ন সংবাদ ভাষ্যে দেখা যায় ১৪২ তলা বিশিষ্ট ‘আইকনিক টাওয়ার নামে একটি আকাশচুম্ভী ভবন নির্মিত হবে ঢাকার পুর্বাচল নতুন শহরে , এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে $৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫হাজার৫০০কোটি টাকা । আকাশচুম্বী ভবনটি নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবনা করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আবাসন নির্মাণ কোম্পানি কেপিসি গ্রুপ,প্রতিষ্ঠাতা কালী পি. চৌধুরী।১৪২ তলা এই টাওয়ারের নকশা এমনভাবেই নাকি তৈরি করা হয়েছে যাতে এই ভবনের দিকে তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে এবং এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুইপাশ থেকেই ’৭১ লেখা ফুটে উঠবে (ভোরের কাগজ, অনলাইন তারিখ: ২২/০৬/২০১৬) । তবে কষ্ট করে ডান দিকে একটু দুরে তাকালে দেখা যাবে পুর্বাচলের পাশেই তারাবো জামদানী তাঁতী এলাকার তাঁতী প্রজন্মের দরিদ্র শিশু তাঁত শ্রমিকটির চোখে আঁকা রয়েছে একটি ছোট্ট তাঁত পল্লীর স্বপ্ন ।
ছবি-২০ :পুর্বাচলের ১৪২ তলা ভবনের পাশে দরিদ্র শিশু তাঁত শিল্পীর চোখে একটি ছোট্ট তাঁত পল্লীর স্বপ্ন


যাহোক কথা হলো এমন একটি আকাশ চুম্বী ভবনের নির্মান ব্যয় দিয়ে হাজার খানেক ভিলেজ সেন্টার স্থাপন করা যায় দারিদ্র পিড়িত এ দেশে। বিত্তশালীরা আকাশ চুম্বী ভবন নির্মাণ করে দেশের মান মর্যাদা বৃদ্ধি করুন তাতে কোন আপত্তি নাই, তবে তাঁরা যদি গ্রামীণ জনগুষ্ঠির জন্য প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে গৃহায়ন কর্মসুচীর অর্থায়নে এগিয়ে আসেন তবে কতই না ভাল হয়।

প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারের জন্য মোট প্রয়োজনীয় জমির পরিমান

সারা দেশের গ্রামীন এলাকায় মোট ৪১১৩৯টি ভিলেজ সেন্টারের জন্য মোট জমির প্রয়োজন হবে ৮ লক্ষ ২৩ হাজার হেক্টর যা দেশের মোট আবাদযোগ্য জমির মাত্র প্রায় ১০ ভাগ । অপরদিকে বর্তমানে গ্রামীন এলাকায় বসবাসকরী দেশের ৭০ ভাগ বা প্রায় ১০ কোটি মানুষের ২ কোটি ২৮ লক্ষ পরিবার ( পরিবার প্রতি গড়ে ২০ শতক হিসাবে) প্রায় ১৬.৮৩ লক্ষ হেক্টর আবাদযোগ্য ভুমি বসতভিটার জন্য দখল করে আছেন যা মোট আবাদযোগ্য ভুমির শতকরা প্রায় ২০ ভাগ । তাই প্রম্তাবিত ভিলেজ সেন্টারের মাধ্যমে সাশ্রয়কৃত ১০ভাগ ভুমি আবাদযোগ্য কৃষি কাজের জন্য নতুন করে যুক্ত হতে পারে । এর ফলে দেশে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় দিকেই খাদ্য নিরাপত্তা আরো জোরদার হতে পারে ।
এ সমস্ত ভিলেজ সেন্টারের পাশেই সৃষ্টি করা যেতে পারে কৃষিকাজ তথা পরিবারের প্রাত্যহিক সবজী চাহিদা পুরণের জন্য কৃষি এলটমেন্ট প্লট । প্রতি প্লটের সাইজ ১৫ফুট × ৩০ফুট হলে প্রতি প্লটের জন্য প্রয়োজন হবে ৪৫০ বর্গফুট যা প্রায় এক শতক পরিমান জমির সমান । সে হিসাবে প্রতিটি ভিলেজ সেন্টারে সুবিধাজনক স্থানে ৬০০টি পরিবারের কৃষি প্লটের জন্য জমির পরিমান হবে প্রায় ৬ একর, এর সাথে কৃষি এলটমেন্ট সাইটে আভ্যন্তরিন রাস্তার জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ৪ একর জমির , মোট কথা ৬০০প্লটের একটি কৃষি এলটমেন্ট সাইটের জন্য প্রয়োজন হবে মাত্র ১০ একর জমির। এটা সম্পুর্ণ ভাবে কৃষির জন্য ফসলী জমি। এর ভিতরে প্রতিটিতে থাকতে পারে সারা বছরই মৌসুমী/অমৌসুমী সবজি ফলানোর জন্য ব্যয় সাস্রয়ি গ্রীন হাউজ, একটি ওয়ার হাউজ ( যেখানে থাকবে বীজ ও সারসহ কৃষি সরঞ্জামের স্টক। সমবায়ের ভিত্তিতে এখান থেকে প্রতিটি প্লট মালিক সবজি বাগান করার জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরন ও সরঞ্জাম যথা কোদাল, নিরানী প্রভৃতি সংগ্রহ করে নিতে পারবে ) থাকবে ব্যয় সাশ্রয়ি ড্রিপিং ইরিগেশন ব্যবস্থা ।
ছবি-২১: কৃষি এলটমেন্ট সাইটের প্লট লে-আউট


বর্তমান বিশ্বে কৃষি ক্ষেত্রে ড্রিপিং ইরিগেশন ও ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেক দেশ ফশলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।কৃষি এলটমেন্ট প্লটে ব্যয় শাস্রয়ীইরিগেশন ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ড্রিপিং ইরিগেশন ও ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইজরাইল কৃষিতে ঈর্ষনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে , উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তারা হেকটর প্রতি ৩০০ টন টমেটু উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে ।
ছবি-২২: ড্রিপিং ইরিগেশন ব্যবস্থায় সবজী চাষের একটি ছবি।
এই লিংক গিয়ে ব্যয় সাস্রয়ি ড্রিপিং ইরিগেশন ব্যবস্থটি দেখা যেতে পারে


হরাইজনটাল ও ভার্টিকেল উভয়দিককে যথাযথভাবে সমন্বয় করে গ্রামীন এলাকায় পরিবেশ বান্ধব টিকসই নিরাপদ গৃহায়নের ব্যবস্থা করা যায় । উল্লেখ্য চীন এ ব্যবস্থায় সফলতা পেয়েছে । ভারত পরীক্ষামুলকভাবে ভিলেজ সেন্টারের মাধ্যমে গৃহায়নের ব্যবস্থা করে কৃষি জমির সংকোচন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কৃষি জমির মালিকানা গ্রামীণ কৃষক পরিবারের হাতেই যথারীতি থাকবে তবে কৃষিকাজ হতে হবে সমবায়ের ভিত্তিতে । ভিলেজ সেন্টার থেকে গ্রামান্তরে কৃষিকাজের জন্য যাতায়াতের সুবিধার্থে থাকতে হবে উপযুক্ত কাঁচা পাকা রাস্তা । প্রতি গ্রামে জনসংখ্যার অনুপাতে কৃষিক্ষেত/খামার সংলগ্ন স্থানে ওয়ার হাউজ তথা খামার বাড়ী তৈরী করে সেখানে রক্ষিত সার,বীজ ও কৃষি সরঞ্জাম যথা ট্রাকটর/পাওয়ার টিলার ও বপন যন্ত্র ,ফসল মারাই যন্ত্র প্রভৃতি সমায়ের ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে।

বাংলাদেশে সেচের জন্য নদী নালা ,খাল, বিলে সারফেস ওয়াটারের দুষ্প্রাপ্যতা এখনই প্রকট আকার ধারণ করছে। অপরদিকে আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল ক্রমান্বয়ে আশংকা জনকভাবে হচ্ছে নিন্মমুখী । এমতাবস্থায় পানি ও ব্যয়সাশ্রয়ী স্প্রীংকলার ইরিগেশনের বিকল্প নেই । তাই প্রতিটি গ্রামে পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থাপনায় এই ষ্প্রিংকলার ইরিগেশন সিসটেম এর প্রচলন করা আবশ্যক হবে ।তা না হলে সেচের অভাবে ফসলী জমির উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যহত হবে।
ছবি -২৩ : ফসলের মাঠে স্প্রিংকলার ইরিগেশনের একটি দৃশ্য


ভিলেজ সেন্টারের জন্য প্রস্তাবিত গৃহের ধরণ ও নির্মাণ উকরণ

ভিলেজ সেন্টারে একতলা,দ্বিতল, ত্রিতল ও বহুতল ভবন নির্মানের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ উপকরন দিয়ে গৃহ নির্মান করা যেতে পারে । ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মাটির ঘর হতে শুরু করে সান-ড্রাইড কমপ্রেসড কংক্রিট ব্লক এবং ঢালাই ছাদের ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে গ্রামীণ এলাকায় পরিবেশ বিনষ্টকারী ইট ভাটায় পুড়ানো ইট দিয়ে ভবনাদি তৈরীকে কঠোরতর বিধি নিষেধের মাধ্যমে নিরোৎসাহিত করা প্রয়োজন হবে।

দেশী ও প্রবাসী বিত্তশালীরা ভিলেজ সেন্টারের একটি ব্লকে নীচের মত সৌখীন মাটির ঘর নির্মাণ করতে পারেন
ছবি-২৪: ব্র্যক ও লিনজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় নির্মিত দোতলা মাটির ঘর


এছাড়াও প্রস্তবিত ভিলেজ সেন্টারে দেশি ও প্রবাসী বিত্তবানেরা নিন্মের চিত্রে দেখানো জাপানী ষ্টাইলের ভুমিকম্প সহনশীল গৃহের আদলে পরিবেশ বান্ধব পাকৃতিক উপকরন যথা কাঠের খুটি বেড়া, পাটাতন, দরজা, জানালা ও খরের ছাউনী দিয়ে তিনতলা সৌখীন বাড়ী নির্মান করতে পারেন ।
ছবি-২৫ : জাপানী স্টাইলে ভুমিকম্পের আঘাত সহনশীল কাঠ ও খরের তৈরী ঘরের ভিতর ও বাহিরের দৃশ্য


উল্লেখ্য এ ধরনের প্রায় ২৫০ বছরের পুরাতন বাড়ীঘর সমৃদ্ধ জাপানের Gokayama Historic ভিলেজ সেন্টারটি ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে ।
ছবি-২৬ : জাপানের Gokayama Historic ভিলেজ সেন্টার


এছাড়া ভিলেজ সেন্টারে ব্যয় সাশ্রয়ী শিপিং কনটেইনারে একতল ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে ।
ছবি-২৭: একটি Shipping Container village


ছবি২৮ :একটি দ্বিতল শিপিং কনটেইনার হাউজ : মুল্য $২৫০০ মার্কিন ডলার/সেট


ছবি ২৯ : বায়ো-কম্পোজিটের তৈরী(পাট,ছোবরা,বাঁশ তন্তু) রুফ টাইলস ঘরের ছবি



দেশে জুট কম্পোজিট শিল্প কারখানা স্থাপন সম্ভাবনা প্রসঙ্গ

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদ ভাষ্য হতে দেখা যায় যে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার।
ছবি-৩০: খুলনার খালিশপুরের একটি রস্ট্রায়ত্ব জুট মিলের ভিতরের দৃশ্য (ছবিসুত্র : প্রথমআলো )


এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবশ্য বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মিছিল-সমাবেশের মত কর্মসূচী চালিয়ে আসছিল গত কয়েকদিন ধরে। বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা যেখানে বাড়ছে, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদনে বৈচিত্রতা আনা হলে শ্রমিক ছাঁটাই নয়, বরং নতুন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে যুক্তি দিয়ে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
ছবি-৩১ : এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনার খালিশপুরে ৯ টি জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা অনশন ধর্মঘটও পালন করেন


বিদায়ী শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিককে অবসরকালীন সুবিধাসহ সকল পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে গত ২রা জুলাই প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষনায়উল্লেখ করা হয়েছে ।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলে ২৪ হাজার ৮৬৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক আরো প্রায় প্রায় ২৬ হাজার শ্রমিক আছে। এই ২৬ হাজার শ্রমিকের বিষয়ে কি করা হবে তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি ।উল্লেখ্য গত ৪৮ বছরে এই পাটকলগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ নাকি ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ।
সরকার দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পঞ্চাশ শতাংশ নগদ এবং বাকি অর্ধেক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে জানা যায় । সরকার এবং প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে মিলগুলো চালু থাকবে বলে বলা হয়েছে । পিপিপি’র আওতায় আধুনিকায়ন করে এ সকল পাটকলকে উৎপাদনমুখী করা হবে। যারা সুস্থ, সক্ষম শ্রমিক তাদের দিয়েই মিলগুলো চালানো হবে। শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ চাকরিবিধি অনুযায়ী পরিশোধের পাশাপাশি নির্ধারিত হারে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সুবিধাও নাকি দেয়া হবে

দেশর লোকসানী রাস্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলির বিহিত করনের বিষয়ে এটা একটি মন্দের ভাল উদ্যোগ ,তবে এটা আরো অনেক আগে করা হলে লোকসানের পরিমান অনেক কম হতো। এসাথে যুগের পর যোগ ধরে চলে আসা এসব লোকসানের জন্য দায়ীদের নামে বেনামে গড়ে তোলা সম্পদের হিসাবটাও খতিয়ে দেখলে ভাল হত । যাহোক, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য এসমস্ত জুট মিলে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি আছে তা বিদ্যমান কাঠামোর আওতায় আধুনিকিকরণ করাহলেও তা দিয়ে সনাতনি পন্য যথা দড়ি, রসি, চট, ছালা, ব্যগ ছাড়া আর কিছু তৈরী করা যাবে বলে মনে হয়না । আন্তর্জাতিক বাজারে এখন এ সমস্ত পাটজাত পণ্যের চাহিদা নাই বললেই চলে । দেশীয় বাজারেও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমেই কমছে । তাই এই জুট মিল গুলিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে জুট কম্পোজিট ম্যনুফেকচারিং মিলে পরিনত করা এখন সময়ের দাবী।
ছবি-৩২ : প্রস্তাবিত জুট কম্পোজিট মিলের একটি ছবি


জুট কম্পোজিট দিয়ে সুলভে টিকসই গৃহ নির্মান করা যাবে বিধায় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে জুট কম্পোজিট মিলে পরিনত করা গেলে সেখানকার উৎপাদিত জুট কম্পোজিট মেটেরিয়েলস প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে গৃহায়নের কাজে বহুলাংশে ব্যবহার করা যাবে ।বিশেষ করে শিপিং কনটেইনার জাতীয় গৃহগুলির দেয়ালের জন্য জুট কম্পোজিট শীট ও ছাদের জন্য জুট কম্পোজিট টাইলস ব্যবহার করা যাবে।
ছবি -৩৩: পাকৃতিক তন্তু (জুট, ছোবরা) কম্পোজিট ম্যটেরিয়েলস দিয়ে তৈরী একটি ঘরের ছবি


এ ধরনের জুট কম্পোজিট দ্রব্যের বিপুল চাহিদা দেশেই তৈরী হবে, পাটজাত পন্য রফতানীর জন্য বিদেশের বাজারের মুখাপেক্ষী হতে হবেনা বরং এটা আমদানী বিকল্প হিসাবে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে আমদানী খাতের জন্য বিপুল পরিমান কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটাবে।
উল্লেখ্য প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপে (পিপিপি)(A Public-private partnership (PPP) is defined as a long-term contract between a private party and a government agency for providing a public asset or service, in which the private party bears significant risk and management responsibility (World Bank, 2012). পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত এ সমস্ত পাটকলগুলির জন্য পুঁজি বাজারে বন্ড/শেয়ার ছেড়ে দেশে রেমিটেন্স প্রদানকারী প্রবাসীদেরকে আগ্রহী করে তুলতে পারলে কম্পোজিট জুট মিল স্থাপনের জন্য অর্থায়নের কোন অভাব হবেনা।

ভিলেজ সেন্টারে গৃহায়নের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় ইন্ডাসট্রিয়াল এস্টেট/শিল্প পার্ক স্থাপন

গ্রামের মানুষকে শহর বিমুখ ও শহড়ের মানুষকে গ্রাম মুখী করতে হলে গ্রামীন এলাকায় শহরের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত গৃহায়নের পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প খাতেও আধুনিক অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সৃজন করা একান্ত প্রয়োজন। সে লক্ষে একদিকে (ক) প্রতিটি ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে সুবিধাজনক স্থানে ইন্ডাসট্রিয়াল এস্টেট তথা শিল্প পার্ক স্থাপন, অন্যদিকে (খ) প্রতিটি গ্রামে সুবিধামুলক স্থানে কৃষিকাজ ও গবাদীপশু খামার (যথা হাস, মুরগী , গবাদি পশু , প্লান্ট নার্সারী, বৈচিত্রময় অধীক মুল্য সংযোজনকারী ও রপ্তানী উপযোগী সবজি এবং ফুলের (যথা রজনী গন্ধা, অর্কিড জাতীয় ফুল, জারবেরা ফুল ইত্যাদি)বাগান সৃজন বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে

ক) ইন্ডাসট্রিয়াল এস্টেট/গ্রামীণ শিল্প পার্ক

প্রতিটি ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে সুবিধাজনক স্থানে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ একর জায়গায় একটি করে ইন্ডাসট্রিয়াল এস্টেট বা শিল্প পার্ক স্থাপন করা যেতে পারে ।
ছবি-৩৪ : প্রস্তাবিত ইন্ডাসট্রয়াল ইউনিট/গ্রামীন শিল্প পার্কের ছবি


এমস্ত শিল্পপার্কে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ বড় বড় শহরাঞ্চল হতে শিল্প কারখানা এ সমম্ত গ্রামীন শিল্প পার্কে স্তানান্তরিত করা যেতে পারে । এখানে উল্লেখ্য যে তৈরী পোশাক শিল্প কারখানা গুলি বলতে গেলে রাজধানী শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ও শহর উপকন্ঠে অবস্থিত । শহরের প্রাণকেন্দ্র ও শহর উপকন্ঠে স্থাপিত বহুতল বিশিষ্ট পোশাক কারখানা গুলির ফেকটরী ভবনসহ অন্যান্য সকল প্রকার ভৌত অবকাঠামোর ব্যয় মাত্রাতিরিক্তভাবে বেশী।শহরাঞ্চলে অবস্থিত পোশাক শিল্পকারখানার ভৌত অবকাঠামোর পিছনে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে বিপুল পরিমান বিনিয়োগকৃত অর্থের ঋণের সুদ আসল পরিশোধের অর্থ পন্যের উৎপাদন ব্যয়ের সাথে যুক্ত হয়ে পন্যটির ইউনিট কষ্ট অনেক বেশী হয় যা শ্রমিকদেরকে নিন্মহারে মজুরী দিয়ে পুষিয়ে নেয়া নেয়া হয় ।শহরাঞ্চলে অবস্থিত ব্যয় বহুল ভৌত অবকাঠামো ব্যবহারের কারণে মোটা অংকের ব্যাংক লোন নিয়ে পিপলস মানির অপচয়সহ শ্রমিক শোষনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলা হয় । অপর দিকে কারখানাগুলি শহর কেন্দ্রিক হওয়ায় পোশাক কর্মীরাও বাধ্য হয়ে নিন্মমানের ঘরে কষ্টে শিষ্টে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয় শহরকেন্দ্রিক পোশাক শিল্পটি আরো বহুবিধ নাগরিক সমস্য যথা ট্রাফিক জ্যাম কেননা ৪/৫ জনের পার্টনারশীপে গড়ে উঠা প্রায় হাজার পাচেক ছোট বড় পোশাক শিল্পের মালিক তাদের পরিবার পরিজন এবং তৈরী পোশাক সহায়ক অন্যান্য শিল্প ও আমদানী রপ্তানীকারক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক প্রাইভেট কার রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণও বটে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই প্রায় অর্ধেক। আর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৪। বাস আছে ৩৯ হাজার ৭৮২টি। সাম্প্রতিক সময়ে সব ধরনের যানবাহনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। কারণ, প্রতি মাসে প্রায় দেড় হাজার শুধু ব্যক্তিগত গাড়িই নিবন্ধিত হচ্ছে বলে জানা যায় ।

ঢাকা মহানগরের মোট সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশ জুড়েই চলাচল করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অথচ এগুলো বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। ফ্লাইওভার দিয়েও যানজট কমানো যাচ্ছেনা ।রাজধানীতে নিন্ম ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ও ব্যপকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী রিক্সাকে যানজটের জন্য দায়ী করে তাদের উপর দমন পিড়নমুলক ব্যবস্থা নেয়ার পরেও রিক্সামুক্ত রোটগুলিতে যানজটের জন্য প্রাইভেট কারগুলিই বেশী দায়ী। যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রনের জন্য অনেকেই অনেক ধরনের পরামর্শ রাখছেন , কেও বলছেন নিবন্ধন ফি বাড়ানোর জন্য, কেও বলছেন গাড়ীর উপরে উচ্চহারে টেক্স বসিয়ে একে দুঃপ্রাপ্য করার জন্য। কেও কিন্তু বলছেননা প্রসাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বিকেন্দ্রীকরন করে গাড়ীর মালিকদেরকে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ী সমেত শহরহতে নিস্ক্রান্ত করে গ্রামমুখী করার কথা। বরং অনেকেই বলছেন গ্রামের মানুষকে শহরমুখী হওয়া বন্ধ করতে হবে। নিন্ম আয়ের বস্তিবাসী , দিনমজুর ,রিক্সাওয়ালা, ফেরিওয়ালা , ভাসমান মানুষদের বিবিধ পন্থায় গ্রামে ফেরত পাঠাতে হবে । রাজধানীর আলিসান বিলাসবহুল ভবনে যারা কোনমতে মাথা গুজার ঠাই করে নিয়েছেন তারা তারস্বরে বলছেন ঠাই ঠাই ছোট সে তরী, আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। প্রাইভেট গাড়ীর সংখ্যা কমানোতো দুরে থাক বরং বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দিয়ে (যথা সরকারী ও করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ী কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থা করা ) প্রাইভেট গাড়ীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যাদের ক্ষমতা আছে তারা যত পারুন গাড়ী কিনুন কোন অপত্তি নাই ( শুধু গাড়ী ক্রয়ের অর্থটা অবশ্যই সাদা হতে হবে ) তবে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে শহর হতে গ্রামে স্থানান্তরিত করা গেলেই কেবল রাজধানী শহর ঢাকাসহ বড় বড় শহরের যানজট কমবে।নগর সমাজে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
ছবি- ৩৫ : রাজধানী শহরে রিক্সামুক্ত সড়ক ও ফ্লাই ওভারে মহা সমারোহে প্রাইভেট কার সৃষ্ট যানজটের দৃশ্য


বিবিধ ধরনের কড়াকড়ি বিধি নিষেধের ভেড়াজালে ফেলে ও উপযুক্ত ভৌত কাঠামো ও আর্থিক প্রনোদনা দিয়ে পোশাক কারখনা গুলিকে সহজেই প্রস্তাবিত গ্রামীণ ইন্ডাসট্রিয়েল এস্টেটে/শিল্পপার্কে স্থানান্তর করা যেতে পারে ।শুধু প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে দেশে চারলেইন মটর হাইওয়ে নেট ওয়ার্ক গড়ে তোলা ।উল্লেখ্য শ্রীলংকায় তৈরী পোশাক শিল্পগুলিকে শহরাঞ্চল হতে গ্রামীন এলাকায় স্থানান্তর/স্থাপনের প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছে।
ডেইলি মিরর রিপোর্ট করেছেযে শ্রীলংকা ২০০৬ সনে তাদের নতুন প্রস্তাবিত রপ্তানীমুখী ৩০০ পোশাক কারখানার মধ্যে ৫০ টিই স্থাপন করবে গ্রামীন এলাকায় ।
ছবি-৩৬ : শ্রীলংকায় শহড় হতে দুরে গ্রামীন এলাকায় স্থাপিত তৈরী পোশাক শিল্প কারখানা


যাহোক, শহর কেন্দ্রিক শিল্প কারখানা গুলিকে গ্রামীণ শিল্প পার্কে স্থানান্তরিত করা হলে শিল্প শ্রমিকদের বাসস্থানের সমস্যাও থাকবেনা, কারণ তারা প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে নির্মিত গৃহে বসবাস করেই তাদের কর্মস্থলে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে । উল্লেখ্য রাজধানী শহর ঢাকাসহ অন্যান্য বড় বড় শহরাঞ্চলে অবস্থিত পোশাক শিল্প কর্মীগন মাসিক আয়ের সিংহভাগই ব্যয় করে তাদের বাসস্থানের ভাড়া মিটাতে । গ্রামীণ শিল্প পার্কে পোশাক শিল্প কারখানা স্থাপন করা হলে এ শিল্প খাতের ভৌত অবকাঠামোগত ব্যয় সংকোচন ছাড়াও অপেক্ষাকৃত স্বল্প মজুরীতেও কর্মী পাওয়া যাবে । এমন অবস্থায় এদেশের তৈরী পোশাক এর দামের সাথে পৃথিবীর কোন দেশই টেক্কা দিতে পারবেনা মহজে । এখাতের রফতানী আয় বর্তমানের ৩৪ বিলিয়ন ডলার হতে ৫০/৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যেতে পারে অল্প সময়ের ব্যবধানে।

অপরদিকে প্রস্তাবিত শিল্প পার্কে এ ধরনের কারখানা ভবনের নির্মাণ কাজে জুট কম্পোজিট মেটেরিয়েলস ব্যবহার করে দেশের পাট শিল্পকে দেয়া যায় নতুন মাত্রা , পাটকলগুলি হতে শ্রমিক বিদায় না করে তাদেরকে আকর্ষনীয় মজুরীতে নিয়োজিত করা যায় সহজেই।
ছবি -৩৭ : জুট কম্পোজিট মেটেরিয়াল দ্বারা নির্মানকরা যাবে নীচের ছবির মত ব্যয় সাস্রয়ী কারখানা ভবন


গ্রামীন শিল্প পার্কে শুধু যে শহরাঞ্চলের শিল্প কারখানাগুলিকেই স্থানান্তর করা যাবে তাই নয় , সনাতন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লুপ্তপ্রায় গ্রামীন কুটির শিল্পগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে শিল্প পার্কে গড়ে তুলে লাভজনক শিল্প হিসাবে পরিনত করা যায় ।বাংলাদেশে কুটিরশিল্পের মধ্যে হস্তচালিত তাঁত শিল্প এখনো প্রধান ।দেশের তাঁত নিবির এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁতের উৎপাদন ব্যবস্থা । প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁত শিল্পে জড়িত আছে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ।দেশের প্রায় ৫ লক্ষ তাঁতের মধ্যে যথাযথ পৃষ্ট পোশকতার অভাবে প্রায় এক তৃতিয়াংশ তাঁত অলস হয়ে আছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ।তাই গ্রামীণ শিল্প পার্কে পরিকল্পিত ভাবে তাতঁ শেড নির্মান করে ও সেখানে তাঁত বস্ত্রের বয়ন পুর্ব ও বয়নোত্তর সেবার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সহায়ক যন্ত্রপাতি দিয়ে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা যায় । এ ব্লগে জুন ২০১৬ সনে পূর্বাচলে উচ্চবিত্তের ১৪২ তলার আকাশ চুম্বী স্বপ্ন :: পাশের গায়ে দরিত্র তাঁতী প্রজন্মের স্বপ্ন: একটি ছোট্ট তাঁত পল্লী শীর্ষক পোষ্টে বিস্তারিতভাবে দেখানো হয়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁত পল্লী সৃজন করে কিভাবে সেখানে তাঁত শেড নির্মান করে উৎপাদন কর্মকান্ড পরিচালনা করা যায় এবং সেখানে তাঁত শিল্পকর্মীদেরকে আবাসনের সুবিধা দেয়া যায়।

তাঁত পল্লীটির ভিতরে নিন্মের চিত্রের মত তাঁতশেড ও তাঁতীদের আবাসনের জন্য একটি লে-আউট প্লান দেয়া হয়েছিল ,যার আদলে প্রস্তাবিত গ্রামীন শিল্প পার্কে কর্মসুচী বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
ছবি-৩৮ : তাঁতশেড ও তাঁতীদের আবাসনের জন্য একটি লে-আউট প্লান


সেই পোষ্টে থাকা প্রকল্প বিবরণীতে তুলে ধরা হয়েছিল যে মাত্র ৯৫৮৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ ব্যয়ে ( প্রতিটি পল্লীর জন্য ৩২ কোটি টাকা ) দেশের ৩০০ তাঁত নিবীড় এলাকায় ৩০০ তাঁত পল্লী স্থাপন করা যায় ।এই বিনিয়োগ ব্যয় পুর্বাচলের একটি আকাশচুম্বি ভবনের রিভাইসড বিনিয়োগ ব্যয়ের এক তৃতিয়াংশ মাত্র । এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ১.৫০ লক্ষ হত দরিদ্র ও নদী ভাংগন কবলিত সহায় সম্বলহীন পরিবারের পুর্ণবাসন সহ ৬.০০ লক্ষ তাঁতীর প্রত্যক্ষ পুর্ণ কর্ম সংস্থান করা যাবে যারফলে দেশে বাৎসরিক প্রায় ৭৪ কোটি মিটার অতিরিক্ত তাঁত বস্র উৎপাদন সম্ভব হবে ।

সামুতে প্রকাশিত সেই পোষ্টটি দেশের নীতিনির্ধারকগন দেখেছেন কিনা জানিনা । তবে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে দেখেছি গত ১৮.০৯.২০১৮ তারিখে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি স্থাপন শীর্ষক একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্লকল্পটির কার্য পরিধির মধ্যে ২০১৬ সনে সামুতে প্রকাশিত আমার প্রস্তাবিত প্রকল্প রুপরেখার অনেক বিষয়ের প্রতিফলন দেখে খুশি হয়েছি । প্রকল্পটির বাস্তায়নকাল জানুয়ারি ২০১৭ - ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ জন তাঁতি পরিবারকে পুনর্বাসনের নিমিত্ত আবাস-কাম-কারখানা স্থাপনের জন্য ফ্ল্যাট ও তাঁত শেড বরাদ্দ/নির্মান; ৮০৬৪ টি তাঁত বয়নশেড নির্মাণ করে প্রায় ১০ লক্ষ গ্রামীণ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষমাত্রা রয়েছে বলে দেখা যায়।প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে দেখে ভাল রাগছে । কামনা করি এখন দেশের নীতি নির্ধারকেরা তাতঁ নিবির এলাকার গ্রামীন শিল্প পার্কে তাঁত শেড ও অবাসন সুবিধা সৃজন করেন।

আধুনিক বৈচিত্রময় কৃষি খামার সৃজন

দেশের গ্রামীন এলাকায় গবাদি পশু ও হাসমুগরী পালন একটি লাভজনক উৎপাদন কর্মকান্ড ।প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো ও অর্থের অভাবে গ্রামীণ এলাকার আগ্রহী উদ্ধোক্তাগন এধরনের খামার স্থাপন করতে পারছেন না। তাই গ্রামীণ শিল্প পার্কে কোলাহল মুক্ত এক কর্ণারে হাসমুরগী ও গবাদিপশুর জন্য বনিজ্যিকভাবে লাভজনক মিনিখামার উপযোগী নিন্মের চিত্রের মত অবকাঠামো সৃজনকরা যায় ।এর জন্য খুবই সহজ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন হবে ।
ছবি –৩৯: ছবি – প্রস্তাবিত গ্রামীণ শিল্প পার্কের কৃষি জোনে ছোট একটি গরুর খামার


ছবি –৪০: প্রস্তাবিত গ্রামীণ শিল্প পার্কের কৃষি জোনে ছোট একটি মুরগীর খামার


কৃষি নির্ভর শিল্প কর্মসুচী

দেশের ভিতরে নিবিরভাবে অধিক আম ও আনারস উৎপাদনকারী এলাকায় অবস্থিত গ্রামীন শিল্পপার্কে আম ও অনারস প্রক্রিয়াকরন করে অধীক মুল্যসংযোজনকারী দ্রব্যাদি যথা জুস ও জ্যাম তৈরী করার জন্য নিন্মের চিত্রের মত মিনি প্লান্ট স্থাপন করা যেতে পারে ।
ছবি-৪১ : আম ও আনারসের জুস ও ফলের জ্যাম তৈরীর জন্য একটি মিনি প্লান্টের ছবি



গ্রীন হাউজে/ স্বচ্ছ নেট ঘেরা হাউজ ফুলের চাষ

উল্লেখ্য দেশে এখন অধিক মুল্যসংযোজনক্ষম দেশী বিদেশী ফুলের চাষ হচ্ছে। লাভজনক অনেক ফুলের জন্য প্রয়োজন আলো বাতাস নিয়ন্ত্রনক্ষম গ্রীন হাউজ বা নেট হাউজের ।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইউরোপের মুল্যবান জারবেরা ফুল এখন বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে,জানা যায় জারবেরা ফুলের চাষে এক বিঘা জমি থেকে কোটি টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে ।
ছবি –৪২: অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত রঙ্গীন জারবেরা ফুল


এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ যে ময়মনসিংহের ত্রীশালের গ্রামীণ এলাকায় নেটহাউজে বানিজ্যিক ভিত্তিতে জারবেরা (gerbera)ফুলের চাষ হচ্ছে বলে দেখা যায় ।
ছবি -৪৩: নেট-হাউজে জারবেরা ফুলের আবাদ (ভিতরাঙ্গনের দৃশ্য)


ছবি -৪৪ : ইউরোপিয়ান বাজারে জারবেরা ফুলের খুচরা বিক্রয় মুল্যের একটি নমুনা (সুত্র ফুলের নীচে দেয়া আছে)


এটার খুচরা বাজার দামের নমুনা দেখে যে কেও এর লাভজনক অধিক মুল্যসংযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা পেতে পারেন।উল্লেখ্য এর খুচরা বাজার দাম অবশ্য সুপারষ্টোর টু স্টোর উঠা নামা করে ব্যপক হারে । তবে এর এক একটি স্টিকের দাম কোন অংশেই বাংলাদেশী মুদ্রায় ২০০ টাকার নীচে নয় । বাংলাদেশের অভিজাত ফুলের বাজারে এই ফুলের একটি স্টিকের দাম ২০টাকা বলে জানা যায় । এই ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হলো কাটফ্লাওয়ারগুলি ফুলদানীতে অনেক দিন পর্যন্ত তাজা থাকে ।দেশের অর্কিড ও রজনী গন্ধাফুলের রপ্তানী সম্ভাবনার কথা সকলেরই জানা তাই এর কথা আর নাই বা বললাম । তবে অর্কিড ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন আর রজনী গন্ধার সুবাস নীতে নিতে না হয় আজকের এই লেখাটির ইতি টানার দিকেই এগিয়ে যাই ।
ছবি-৪৫ : রজনীগন্ধা ও টবে চাষকৃত অর্কিড ফুলের ছবি



তবে এই সমস্ত অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফুলকে ইউরোপীয়ান বাজারে রপ্তানী করতে হলে দেশে আন্তর্জাতিকমানের আধুনিক টেস্টিং সরঞ্জাম ও বিশেযজ্ঞ সম্বলিত একটি পুর্ণাঙ্গ সাইটোসেনিটারী টেষ্টিং লেবরেটরী ও নিন্মের ছবির মত রপ্তানী উপযোগী ফুল প্যকেজিং কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে এবং বিশ্সস্ততার সহিত সাইটোসেনিটারী টেষ্ট সার্টিফিকেট ইস্যু করতে হবে। এর অন্যথা হলে সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মুক্ত( কোভিড১৯) ভুয়া সনদধারী যাত্রী বুঝাই প্লেনের ইটালী হতে দেশে ফেরত আসার মত করুন দশা বরণ করতে হবে।
ছবি-৪৬:সাইটোসেনিটারী টেষ্টিং লেবরেটরী ও রপ্তানী উপযোগী ফুল প্যকেজিং কেন্দ্র


উল্লেখ্য গ্রহনযোগ্য আন্তর্জাতিক মানের সাইটোসেনিটারী টেস্টের কারণে থাইল্যান্ড প্রতি বছর প্রায় কোটি ১০ কোটি ডলার মুল্যের (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮৫০কোটি টাকা ) শুধু অর্কিড জাতীয় ফুলই বিদেশে রপ্তনী করে থাকে এছাড়া অন্য ফুল রপ্তানীতো তাদের আছেই । তাই থাইল্যন্ডের মত আন্তর্জাতিক মানের সাইটোসেনিটারী লেবরেটরী স্থাপন ও পরিচালন করতে পারলে রপ্তানী বাজারে কৃষিখাতে মহাবিপ্লব ঘটে যাবে। গ্রামীণ এলাকাতেই প্রফিটেবল রপ্তানী মুখী কর্মকান্ড শুরু হয়ে যাবে ব্যপক হারে । মানুষ শহরমুখী না হয়ে বরং গ্রামমুখী হবে, তখন তাদের বাসস্থানের বর্ধিত চাহিদা মিটাতে হলে প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টার গুরুত্বপুর্ণ সহায়ক ভুমিকা পালন করবে ।

প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে আবাসন ও শিল্পায়ন কর্মসুচী বাস্তবায়ন রূপরেখা

উপরের আলোচনায় হরাইজন্টাল বনাম ভার্টিকেল গৃহায়নের বৈপরিত্বের ( Dichotomy) প্রেক্ষাপটে দেশের আবাসন ও খাদ্য শস্যের দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি ধারণাপত্র তুলে ধরা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় অধিক হারে গৃহায়ন ও কৃষিভিত্তিক অবকাঠামো সৃজনে প্রস্তাবিত রূপকল্পের সম্ভাবনা, এর অর্থায়ন পক্রিয়া ও সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকসহ সকল সচেতন নাগরিকের চিন্তাভাবনার দোয়ারে প্রাথমিক পর্যায়ে খানিকটা ছোয়া লাগানোর প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে মাত্র।বড় আকারের অর্থ বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে প্রস্তবনাটি আপাতত অনেকটা ইউটুপিয়ান মনে হতে পারে। তার পরেও বলব গ্রামীণ এলাকায় যত্র তত্র হরাইজনটাল গৃহায়ন বিস্তৃতি ঘটিয়ে বাড়ীঘর নির্মাণ করা হলে দেশের কৃষি ভুমি গ্রাস কোন মতেই ঠেকানো যাবেনা। অন্যদিকে বর্তমান হারে নাফ নদীর বানের লাহান মানুষের শহরমুখী হয়ে সেখানে জীবনের সব অর্জন দিয়ে হাইরা্ইজ ভবনের চাহিদা ও যোগান বাড়ালে সম্ভাব্য ভুমিকম্পের বিশাল আঘাততো দুরের কথা, বর্তমানে ক্রমবর্ধমানহারে বেড়ে চলা অন্যান্য নাগরিক অসুবিধাসমুহ কোনমতেই এড়ানো সম্ভব হবেনা । ইত্যাকার অবস্থার প্রেক্ষিতে একদিকে যেমন বাপ দাদার ভিটামাটি ছেড়ে প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টারে আবাস গড়ার জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ কিংবা বাধ্য করা সহজ কর্ম নয় তেমনি নগর জীবনে অভ্যস্ত জনগুষ্ঠিকে গ্রামমুখী করাও একটি বিরাট চ্যালেঞ্জিং ব্যপার বটে।

তার পরেও বলব প্রস্তাবিত রূপকল্পটি বাস্তবায়ন একেবারেই অবাস্তব ও অসম্ভব কোন ব্যাপার নয় ।উল্লেখ্য অনেক উন্নত দেশও বর্তমানে তাদের রুরাল এলাকায় গৃহায়ন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক, ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো সৃজনে কর্মসুচী গ্রহন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আজ থেকে পাঁচ বছর পুর্বে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে অবস্থিত নর্থ ল্যানার্কশায়ারর্কশায়ার কাউন্সিলের পরিকল্পনাবিদগন £২০০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ ব্যয়ে(বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২.১ হাজার কোটি টাকা) ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ভিলেজ সেন্টারে১০৪০ টি নতুন গৃহ নির্মানের অনুমোদন দিয়েছে

সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ব্যপার হলো এই ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রথম প্রস্তাবটি Hamilton-based Banks Property নামক একটি অর্থলগ্নীকারী বেসরকারী বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেখানকার গ্রামীন এলাকার কমিউনিটি গ্রুপের সাথে ঘনিষ্টভাবে আলাপ আলোচনা ও মতামত জরীপের মাধ্যমে প্রণয়ন করে ল্যানার্কশায়ার কাউন্সিলের কাছে দাখিল করেছিল।
উল্লেখ্য,সেখানে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩০০০বাড়ী নির্মাণের লক্ষমাত্রা তাদের রয়েছে। এই ভিলেজ ডেভলপমেন্ট প্রকল্পটি সেখানে সরাসরি ২৫০০জন নির্মাণ শ্রমিকের পুর্ণ কর্মসংস্থানসহ নর্থ ল্যনার্কশায়ার সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতিতে সামগ্রীক ভাবে ১ বিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ) অবদান রাখতে পারবে মর্মে বলা হয়েছে যা মোট বিনিয়োগ ব্যয়ের প্রায় পাঁচ গুণ।
ছবি -৪৭ : Hamilton-based Banks Property ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাষ্টার প্লান


এ পোষ্টে প্রস্তাবিত গৃহায়ন রূপকল্পটি আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তবায়নযোগ্য মনে হলেও সরকারী ও এনজিও পর্যায়ে দেশে বিদেশে প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কর্মকান্ডের সাথে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে এটা একেবারেই অসম্ভব নয় বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আশির দশকের শেষ ভাগে সরকারী উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা ভিত্তিক গ্রোথ সেন্টারে আবাসন ও শিল্পপার্কে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচলালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশের একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায় একটি সম্ভাবতা সমীক্ষা পরিচালনা করে । উক্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা স্টাডির সাথে কনসালটেন্ট হিসাবে কিছুটা সংস্লিষ্ট ছিলাম । চান্দিনা এলাকার কর্মসুচীটির বিষয়ে চান্দিনা ও আশেপাশের ক্রস সেকশন অফ পিপলের সাথে ঘনিষ্টভাবে আলাপ আলোচনায় ও খোলামেলা মতবিনিময়ে সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগীতা ও প্রকল্প এলাকায় সৃজিত অবকাঠামোতে তাদের আবাসন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সম্মতি থাকবে বলে প্রতিভাত হয়েছিল । পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন ও উপজেলা পদ্ধতি রহিত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির কার্যক্রম আর বেশি দুর আগায়নি। যাহোক, সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টার কর্মসুচীটি বাস্তবায়ীত হতে পারে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও দেশী বিদেশী অর্থায়নের বিষয়ে অন্য একটি পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা আছে।

একথা অবশ্য অনস্বীকার্য যে, প্রস্তাবিত ভিলেজ সেন্টার ভিত্তিক আবাসন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডসমৃদ্ধ রূপকল্পটি একসাথে দেশের সকল স্থানে বাস্তবায়ন করা একটি বিশাল ব্যয় বহুল কর্মকন্ড । তাই একে পর্যায়ক্রমে ১০/২০ বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে গ্রামীণ এলাকায় মোটামোটি ভাবে বহুতল বিশিষ্ট বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বান্ধব বাড়ী/ভবন/দালানে গৃহায়ন কর্মসূচী এখন থেকেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে । অপরিকল্পিতভাবে যত্র তত্র গৃহ নির্মাণ করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভয়াবহ বিপর্যয়ে নিপতিত হওয়ার অশনিসংকেতগুলি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে এখন থেকেই গণসচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। আসন্ন বিপর্যয় প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুর্বাহ্নেই গণসচেতনতা সৃজন আমাদের সকলেরই প্রাথমিক দায়ীত্ব ও কর্তব্য।



দীর্ঘ সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে পোষ্টটি পাঠের জন্য ধন্যবাদ

ছবিও তথ্য সুত্র লেখাটির ভিতরে যথাস্থানে লিংক আকারে উল্লেখ করা হয়েছে, সকলের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ।

উৎসর্গ :
এ ব্লগের জনপ্রিয় ও গুণী ব্লগার শ্রদ্ধেয় আহমেদ জী এস, ঠাকুরমাহমুদ, খায়রুল আহসান, আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম, শায়মা, জুন, বিদ্রোহী ভৃগু,মনিরা সুলতানা, রোকসানা লেইস , কাজী ফাতেমা ছবি, সোহানী, মলাসইলমুইনা,সেলিম আনোয়ার, পুলকঢালী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মাহমুদুর রহমান সুজন, পদাতিক চৌধুরি,পগলা জগাই, রাজীব নুর, নেওয়াজ আলি, কল্পদ্রুম, জোবাইর, নতুন নকিব, মাহমুদ রহমান (মাহমুদ),মোঃ মাইদুল সরকার, পুলক ঢালী,তারেক ফাহিম, কাওসার চৌধুরী, সুপারডুপার, করুণাধারা,মুক্তা নীল, স্বপ্নের শঙ্খচিল, অন্তরন্তর, মিরোরডডল, সোহানাজোহা,নজসু ও চাঁদগাজী(যিনি বিশেষ একটি অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভিন্ন একটি পোষ্ট দিয়ে অনুপ্রাণীত করেছেন) ও কাল্পনিক_ভালবাসাসহ সকল ব্লগার। মাটির ঘর প্রসঙ্গে তাঁদের মুল্যবান লাইক ও গঠনমুলক বিভিন্ন প্রাসঙ্গীক মন্ত্যব্যগুলি এ নিবন্ধটি লেখার বিষয়ে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে। সকলের প্রতি জানাই অন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৩৭
৫২টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×