somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনেস্কো স্বীকৃত টাঙ্গাইল শাড়ি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প রূপকল্প

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সামুতে প্রকাশিত ব্লগার কিরকুট এর পোস্ট হতে জানতে পারলাম টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি ।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা একটি সুখবর । বিষয়টি সম্পর্কে ইউনেস্কোর ওয়েব সাইটে ডু মেরে আরো বিস্তারিত
দিক সমুহ দেখে আসলাম । সেখানে টাঙ্গাইল তাঁত শিল্প সম্পর্কে ইউনেস্কোর সংস্লিস্ট ওয়েব সাইটের নীচে লেখা কথাগুলোর কিছু অংশ তুলে দেয়া হল নীচে ।

টাঙ্গাইল শাড়িটি একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা বস্ত্র, যা বাসাক ও ঝোলা সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিল্পকর্ম; এই দুটি সম্প্রদায় যথাক্রমে হিন্দু ও মুসলমানদের নিয়ে গঠিত। শাড়িটি তুলা, রেশম বা পাট দিয়ে বিশেষ এক ধরনের বয়নপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। টাঙ্গাইল শাড়ি তার সূক্ষ্ম বুনন, জটিল নকশা ও স্থানীয় মোটিফের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রতিটি শাড়িই একেকটি শিল্পকর্ম, যা স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার প্রতিফলন বহন করে।

এই শাড়িগুলোর রয়েছে গভীর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং এগুলো সাধারণত বড় উৎসব, বিয়ে ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিধান করা হয়। বয়নপ্রক্রিয়ার মূল কাজগুলো যেমন নকশা তৈরি, সুতা রং করা এবং ঐতিহ্যবাহী তাঁতে কাপড় বোনা সাধারণত পুরুষরাই সম্পাদন করেন। নারীরা সহায়তা করেন ঐতিহ্যবাহী চরকায় সুতা কাটায়, চালের মাড় প্রয়োগে এবং শাড়ির শেষ পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, বিশেষ করে তরুণরা, কাপড় চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতের কাজে সহায়তা করে থাকেন।


ভাল লাগল তাদের ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত টাঙ্গাইল তাঁত শিল্প সংক্রান্ত সুন্দর সুন্দর ছবিগুলি দেখে ।নীচের ওয়েব লিংক
ফলো করে আরো বিস্তারিত জানা যাবে ।
https://ich.unesco.org/en/RL/traditional-saree-weaving-art-of-tangail-02322
সেখানে থাকা কিছু ছবি তুলে দেয়া হল নীচে










টাঙ্গাইল শাড়ির ইউনেস্কো স্বীকৃতির গুরুত্ব ও প্রভাব
সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ি ইউনেস্কোর অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (Intangible Cultural Heritage) হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এটি শুধু একটি বস্ত্র নয়, বরং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরে পরিণত হয়েছে।
এই স্বীকৃতির বহুবিধ গুরুত্ব রয়েছে, যথা :-
১) ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: টাঙ্গাইল শাড়ি এখন বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।
২) তাঁতিদের মর্যাদা বৃদ্ধি: প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যাঁরা এই শিল্প টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে।
৩) ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) সুরক্ষা জোরদার: নকল বা ভিন্ন দেশের নামে টাঙ্গাইল শাড়ি বাজারজাত করার প্রবণতা রোধে এটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।
৪) পর্যটন ও রপ্তানি সম্ভাবনা: সাংস্কৃতিক পর্যটন বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা আরও বাড়বে।

এখানে উল্লেখ্য আজ ঘেকে প্রায় ২৮ বছর পুর্বে একবার ভারতে সফর কালীন সময়ে তাঁত শিল্পের অবস্থা পর্যবেক্ষন করে তার আলোকে দেশীয় তাঁত শিল্পের
প্রতিযোগীতায়(বিশেষ করে বিপুল হারে ভারতীয় তাঁতের শাড়ীর অনুপ্রবেশ রোধের বিষয়ে উপযুক্ত কর্ম কৌশল নির্ধারণি বিষয়ে ধারণা নেয়ার একটি প্রয়াস নিয়েছিলাম । সে সময় পশ্চিম বঙ্গের নদিয়া ফুলিয়াতে একটি সার্ভিস সেন্টার পরিদর্শন কালে দেখতে পাওয়া যায় যে সেখানে টাঙ্গাইল হতে অনেক তাঁতী নদিয়া ফুলিয়া এলাকায় দেশান্তরিত হয়ে টাঙ্গাইল শাড়ির আদলে সেখানকার তাঁত শিল্পকে সরকারী সহায়তায় উজ্জিবিত করার প্রয়াসে নিয়োজিত । অনেকদিন ধরেই শুনা যাচ্ছিল ভারত নাকি টাঙ্গাইল শাড়ির GI স্বত্ব নিয়ে যাবে। যাহোক, খোদা রক্ষা করেছেন, তেমনটি হয়নি ।

টাঙ্গাইল শাড়ীকে ইউনেস্কোর এই স্বিকৃতির সম্ভাব্য প্রভাব নিন্মরূপ হতে পারে :-
তাঁতশিল্পে নতুন বিনিয়োগ ও গবেষণা বৃদ্ধি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই পেশার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি, নারীদের কর্মসংস্থান ও আর্থিক ক্ষমতায়ন,টাঙ্গাইল অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসব মিলিয়ে, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি টাঙ্গাইল শাড়িকে কেবল অতীতের ঐতিহ্য হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যতের একটি টেকসই সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এখন প্রয়োজন লোহা গরম থাকতেই হাতুরী লাগানো কেননা ৯ -১২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে ভারতের নয়া দিল্লীতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে, সে হিসাবে টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের হালচাল তাদের স্মরণে থাকবে কিছুদিন । এই বিবেচনায় ইউনেস্কোর সহায়তায় একটি উপযুক্ত প্রকল্প প্রতাবনা তৈরী করে তাদের অর্থায়নে বাস্তবায়নে উদ্যোহী হওয়া ।
একথা সত্য যে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকগকগন এখন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই মহা ব্যস্ততার উপর আছেন , তাছাড়া হাদীর উপর গুলাগুলি নিয়ে সারা দেশ জুরেই বিষাদের ছায়া । তারপরেও দেশের নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বিভাগ নিশ্চয়ই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিবে । উনারা কি ভাবছেন বা কি করবেন সেটা উনাদের বিষয় । তবে এই মহুর্তে আমার ক্ষুদ্র ভাবনায় এবিষয়ে একটি সাধারণ প্রকল্প রূপরেখা তথা প্রকল্প ধারনা আমাদের এই বিশ্ব সেরা বাংলা ব্লগ সামু প্লাট ফর্মে প্রকাশ করার প্রয়াস নিলাম, যদি এটা কোন প্রকারে তাদের নজরে পরে ।সংস্লিষ্ট কতৃপক্ষ এটা কতটুকু আমলে নিবেন জানিনা তবে সকল সুপ্রয়াসের কিছু না কিছু সুফল থাকবে বলেই কামনা করতে পারি।


নীচে ইউনেস্কো স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে টাঙ্গাইল শাড়ীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত প্রকল্প রূপকল্প উপস্থাপন করা হলো।
প্রস্তাবনাটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ, সামাজিক জড়িতকরণ, এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে যাতে টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য সংরক্ষণসহ তাঁতিদের আয়, সামাজিক মর্যাদা ও পর্যটন-ভিত্তিক অর্থনীতি বাড়ানো যায়। এখানে উল্লেখ্য বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর মাধ্যমে দেশজুড়ে তাদের সেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে কারিগরি, আর্থিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এসব কেন্দ্র তাঁতিদের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে এই প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে ।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির শিরোনাম হতে পারে নিন্মরূপ:
“ইউনেস্কো স্বীকৃত টাঙ্গাইল শাড়ি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও টেকসই তাঁত শিল্প ”

প্রকল্পের অবস্থান: টাঙ্গাইল জেলা প্রধান তাঁত অঞ্চলসমূহ ( যথা টাঙ্গাইল সদর , বাজিতপুর , কালিহাতী, বাসাইল, মির্জাপুর এবং সখীপুর) যেখানে মূলত ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি ও অন্যান্য তাঁতবস্ত্র তৈরি হয়

১. প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ (Executive Summary)
ইউনেস্কো স্বীকৃত টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি তাঁতীদের গতিশীল অনুশীলন, ডিজাইন উদ্ভাবন, বাজার প্রবেশ, পর্যটন সংযোগ ও সামাজিক সেবায় সমন্বিত বিনিয়োগ করবে। প্রকল্পটি ৩ বছর মেয়াদ কালে ( বাস্তবায়ন কাল ) প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজাইন ও মানোন্নয়ন ল্যাব, তাঁতি আবাসন/ক্লাস্টার উন্নয়ন, বাজার ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও জিআই/পেটেন্ট সহায়তা, এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন ও গ্যালারি এইসকল প্রধান অঙ্গ নিয়ে কাজ করবে।

২. প্রকল্পের প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা
ইউনেস্কো স্বীকৃতিতে টাঙ্গাইল শাড়ির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে শিল্পটির ভোক্তা-প্রতিশ্রুতি ও সাংস্কৃতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে; কিন্তু বাস্তবে যদিও অনেক তাঁতি বংশেগত জ্ঞানে দক্ষ, তাদের আয়ের সুযোগ, আধুনিক ডিজাইন দক্ষতা ও বাজার প্রবেশ সীমিত।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কাজটিতে আকর্ষণ ফিরিয়ে আনা, নারীর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভৌগোলিক ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার।
সরকারী, এনজিও ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত সহায়তায় একটি কেন্দ্রীয় উদ্যোগ দ্রুত ফল দেবে।

৩. প্রকল্প লক্ষ্য (Objectives)
মূল লক্ষ্য: টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তাঁতিদের আয় ও জীবনমান ৩ বছরের মধ্যে টেকশইভাবে বৃদ্ধি করা।

উপলক্ষ্যসমূহ:
১) প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে অর্থাৎ ৩ বছরে ১,২০০ জন (পুরুষ ও নারী মিলিয়ে) তাঁতিকে প্রশিক্ষণ ও অনুশিক্ষণ দেয়া।
২) উপরে বলা ৫টি কমিউনিটি তাঁত ক্লাস্টারকে প্রকল্পভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তি ও সামাজিক সেবা দেয়া।
৩) ডিজাইন ল্যাব ও গ্যালারি স্থাপন করে বার্ষিক ১২ টি নতুন টাঙ্গাইল নকশা তৈরী কিংবা সংগ্রহ করা।
৪) স্থানীয় পর্যটন ও রপ্তানি চ্যানেল উন্নয়নের মাধ্যমে তাঁতি পরিবারের গড় আয় কমপক্ষে ২৫% বৃদ্ধি করা (৩ বছরের মধ্যে)।
৫) টাঙ্গাইল শাড়ি ঐতিহ্যের জন্য Geographical Indication ( GI) /লগো রেজিস্ট্রেশন এবং ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা।

৪. কার্যক্রম (Components & Activities)
কম্পোনেন্ট ১: অবকাঠামো ও তাঁত নিবীর এলাকার উন্নয়ন
১টি রিজেনারেটেড টাঙ্গাইল রিসোর্স সেন্টার (TRC): প্রশিক্ষণ কক্ষ, ডিজাইন ল্যাব, প্রদর্শনী স্থান ও প্রশাসনিক অফিস স্থাপন।
৫টি কমিউনিটি তাঁত নিবীর রেনোভেশন: তাঁতি গৃহ সংস্কার, ছোট প্যাকেজিং সেন্টার, স্থানীয় দোকান ও ট্যুরিস্ট-ফেসিং গ্যালারি।
কার্যক্রম: জমি/বাড়ি চুক্তি, রেনোভেশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

অঙ্গ - ২ : প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও তরুণ/নারী অনুদান
প্রফেশনাল টেক্সটাইল প্রশিক্ষণ (বয়ন, রং, ফিনিশিং) মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে।
ডিজাইন ও শিল্পকলা : ডিজিটাল ডিজাইন কর্মশালা ( Computer Aided Design (CAD) for textiles, pattern making)।
নারীর জন্য বিশেষ সেলফ এন্টারপ্রাইজ মাইক্রোগ্রান্ট ও স্টার্টার কিট।
কমিউনিটি কেন্দ্রে সমন্বিত সামাজিক কার্যক্রম (সচেতনতা, স্বাস্থ্য, আর্থিক সেভিংস গ্রুপ)।

অঙ্গ ৩ : ডিজাইন ল্যাব, আর্ট ও প্রোটোটাইপিং
ডিজাইন ল্যাব স্থাপন: নতুন নকশা গবেষণা, বুনন দ্রুত প্রোটোটাইপিং, ছোট -বড় পরীক্ষামূলক উত্পাদন।
দেশীয়/আন্তর্জাতিক ডিজাইনার রেসিডেন্সি (বছরে ২-৩ টি ) এবং ইনোভেটিভ শাড়ি তৈরীর কর্মশালা।

অঙ্গ ৪ : বাজার উন্নয়ন, ব্র্যান্ডিং ও ই-কমার্স
ব্র্যান্ডিং: টাঙ্গাইল GI সাপোর্ট, লোগো ও প্যাকেজিং নকশা উদ্ভাবন ।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইন্টিগ্রেশন: স্থানীয় ব্র্যান্ড শপ ও আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লেসেস লিস্টিং।
ব্যবসা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং: মূল্য নির্ধারণ, কস্টিং, অর্ডার পূরণ ও কাস্টমার সার্ভিস ট্রেনিং।
বার্ষিক ফ্যাশন শো/প্রদর্শনী এবং ট্যুরিস্ট ফোকাসড ইভেন্ট।

অঙ্গ ৫ : ট্যুরিজম, গ্যালারি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
টাঙ্গাইল শাড়ি গ্যালারি (TRC-র অংশ) + লাইভ তাঁত প্রদর্শনী।
হ্যান্ডস-অন ওয়ার্কশপ পর্যটকদের জন্য; তাঁত-ট্যুর প্যাকেজ বিকাশ।
লোকাল হস্তশিল্প প্রদর্শনী /মেলা আয়োজন।

অঙ্গ ৬ : নীতি ও অংশীদারিত্ব, জিআই সুরক্ষা
GI (Geographical Indication ) এবং কপিরাইট/প্রোটেকশন কার্যক্রমে সহায়তা।
সরকারি সংস্থা (বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড), ইউনেস্কো লোকাল অফিস, জেলা প্রশাসন, এনজিও ও বেসরকারি অংশীদার সঙ্গে সমন্বয়।

অঙ্গ ৭: মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন ও শেয়ারিং লার্নিং
মূল্যায়ন, মধ্যকালীন পর্যালোচনা, এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারিং রিপোর্টিং

৫. প্রকল্প লক্ষ্যমাত্রা ও ফলাফল

মোট প্রশিক্ষিত: ১,২০০ জন (মাসে গড় ৪০ জন প্রশিক্ষণ ধরে)।
নতুন ডিজাইন তৈরী/সংগ্রহ: ৩৬টি (৩ বছরে)।
৫ টি তাঁত নিবীর এলাকায় তাঁতগৃহ উন্নয়ন করা ।
স্থানীয় পর্যটক প্রবাহ বাড়ানো: গ্যালারি উদ্বোধনের পরে প্রথম বছরে গড়ে ৫,০০০ দর্শক লক্ষ্য।
তাঁতী পরিবারের গড় আয় বৃদ্ধি: প্রকল্প শেষে গড়ে ২৫% (মূল আয় সমীক্ষার মাধ্যমে যাচাই)।
GI রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন ও ব্র্যান্ডিং মেট্রিক: ১টি অঞ্চলভিত্তিক GI ও ট্রেডমার্ক প্রক্রিয়া।

৬. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (Governance & Partnerships)
প্রকল্প প্রশাসন ইউনিট (PMU): প্রকল্প এলাকায় একটি সমন্বিত PMU স্থাপন; প্রকল্প পরিচালক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ফাইন্যান্স অফিসার, মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন অফিসার, কমিউনিটি লিংক/লিয়াজো অফিসার।
স্টিয়ারিং কমিটি: চেয়ারম্যান বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ( চেয়ার) , টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক, ইউনেস্কো প্রতিনিধিত্ব, স্থানীয় এনজিও ও তাঁত প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি।

অংশীদার: বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, স্থানীয় এনজিও প্রকৃত অংশীদার তালিকা প্রজেক্ট স্টেজে চূড়ান্ত করা , শিল্প উদ্যোক্তা ও বাণিজ্যিক অংশীদার নির্ধারণ করা ।

৭. ঝুঁকি ও প্রশমন (Risks & Mitigation)
ঝুঁকি: তাঁত পেশার প্রতি রয়েছে তরুণ প্রজন্মের অনীহা। এর প্রশমন হল : তরুণদের জন্য স্টার্ট আপ গ্রান্ট প্রদা ও ডিজাইন কোচিং।
ঝুঁকি: বাজারে নকল পণ্যের বর্ধিত প্রতিযোগিতা। প্রশমন: GI ও ব্র্যান্ডিং, কনসিউমার অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা ।
ঝুঁকি: প্রকল্প-অর্থায়ন বিলম্ব। প্রশমন: কোর প্রকল্প হিসাবে তালিকাভুক্ত করা , মাল্টি-স্ট্রিম অর্থায়ন (সরকারি+ডোনর+প্রাইভেট)।
ঝুঁকি: স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া। এর প্রশমন হল এন্টারপ্রাইজ মডেল, কো-অপারেটিভ সাপোর্ট, এবং বাজার চুক্তি করা।

৮. স্বনির্ভরতা পরিকল্পনা (Sustainability Plan)
কো-অপারেটিভ/এসোসিয়েশন মডেল: তাঁতি সমবায় সমতি সমুহকে সংগঠিত করে ব্যবসার স্বয়ংপর্যাপ্ততা অর্জন করা।
রেভেনিউ জেনারেশন: গ্যালারি প্রবেশ মূল্য, ওয়ার্কশপ ফি, ই-কমার্স কমিশন, ডিজাইন-সার্ভিস ফি প্রভৃতি ।
শুরু থেকে শেষ ধাপ: একবার দক্ষতা ও বাজার কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হলে স্থানীয় পরিচালনায় প্রকল্পটি হস্তান্তর সম্ভব।
পুনরুজ্জীবন তহবিল: মোট আয়ের ৫–১০% একটি রিজার্ভ ফাণ্ডে জমা করে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা যেতে পারে ।

৯. মোট প্রাককলিত ব্যয় (৩ বছরের আনুমানিক খরচ ১০ কোটির টাকার মত ধার্য করা যেতে পারে )

নিন্মে প্রদত্ত প্রতিটি আইটেম এর ব্যয় প্রাককলন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বিভাগ, ও এন্ড বিভাগ , সমবায় বিভাগ ও প্রকৌশল শাখা নিরোপন করতে পারেন ।

১) ইনফ্রাস্ট্রাকচার (TRC রেনোভেশন; টাঙ্গাইলে অবস্থিত বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের বিদ্যমান সার্ভিসেস এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারকে )
২) যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ( তাঁত , ডাইং, ফিনিসিং , প্রোটোটাইপ মেশিন)
৩)প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা (ট্রেনার্স, প্রশিক্ষণ উপকরণ)
৪)ডিজাইন ল্যাব ও আর্ট রেসিডেন্সি
৫) বাজার উন্নয়ন ও ব্র্যান্ডিং (ই-কমার্স)
৬)তাঁতী আবাসন/ক্লাস্টার-সাপোর্ট (মাইক্রো-ইনফ্রাট্রাকচার)
৭) ট্যুরিজম/গ্যালারি নির্মাণ ও ইভেন্ট বাজেট
৮) মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন ও রিপোর্টিং
৯) জনবল
১০) রক্ষনাবেক্ষন
১১) কন্টিনজেন্সি (%)

১০. বাস্তবায়ন সময়সূচি (৩ বছর , প্রস্তাবিত পর্যায় ( ফেজিং) হতে পারে নিন্মরূপ:
পর্যায় ১ : মাস ১–৬ (প্রস্তুতি ও স্থাপনা):
স্টিয়ারিং কমিটি গঠন, PMU নিয়োগ, জমি/স্থানিক তৈরি, TRC-র রেনোভেশন, অংশীদার চুক্তি ঠিক করা।

পর্যায় ২: মাস ৭-১৮ (প্রশিক্ষণ ও ডিজাইন ল্যব চালু):
প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু করা , ডিজাইন ল্যাব আরম্ভ, প্রোটোটাইপিং, মহিলা উদ্যোক্তা গ্রান্ট বিতরণ।

পর্যায় ৩ : মাস ১৯-৩০ (বাজার ও পর্যটন সংযোগ):
গ্যালারি ও স্থায়ী প্রদর্শনী চালু, ই-কমার্স লিস্টিং, ফ্যাশন/হস্তশিল্প মেলা, পর্যটক প্যাকেজ শুরু।

পর্যায় ৪: মাস ৩১-৩৬ (মনিটরিং, স্কেলিং ও হস্তান্তর):
মাঝামাঝি মূল্যায়ন, সাসটেইনেবিলিটি পরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ, PMU-র ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া এবং সমাপ্তি রিপোর্ট।

১১. মনিটরিং ও মূল্যায়ন (M&E)
বার্ষিক বেসলাইন, মিড-টার্ম (১৮ মাস) এবং এন্ডলাইন (৩৬ মাস) মূল্যায়ন।
প্রধান প্রধান প্রকল্প আউটপুট এর নিয়মিত রিপোর্টিং (প্রশিক্ষিত সংখ্যা, বিক্রয় পরিমাণ, গড় আয়, পর্যটক সংখ্যা, ডিজাইন কালেকশন লঞ্চ ইত্যাদি)।অংশীদার এবং কমিউনিটি-ফোকাস গ্রুপ থেকে ক্য ফিডব্যাক ।

১২. সম্ভাব্য সহায়তা ও ফান্ডিং মডেল
মিশ্র অর্থায়ন: সরকার (বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড/স্থানীয় সরকার), আন্তর্জাতিক ডোনার (ইউনেস্কো গ্রান্ট, ইউরোপীয় বা জাইকা/আইএডিবি/বিশ্বব্যাংক প্রকল্প ফান্ড), এনজিও অংশীদান, প্রাইভেট সেক্টর স্পন্সরশিপ ও স্থানীয় ব্যবসায়িক অংশীদার।
অংশিক কো-ফাইন্যান্সিং: বিখ্যাত ডিজাইন হাউস বা রিটেইলারদের off-take বা pre-order চুক্তি।

সাসটেইনিং রাজস্ব: গ্যালারি ফি, ওয়ার্কশপ ফি, ই-কমার্স কমিশন প্রভৃতি থেকে অর্জিত আয় হতে ।

১৩. প্রত্যাশিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
তাঁতি পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা বেড়ে যাবে; নারীদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়বে; টাঙ্গাইল-ভিত্তিক পর্যটন ও হালকা ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে; সাংস্কৃতিক ধারার রক্ষা ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংতেও সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড প্রনীতব্য প্রকল্প দলিলের সাথে নিন্মোক্ত সংযুক্তিসমুহ থাকতে হবে :
১) প্রতিষ্ঠানিক গ্রিড: PMU-র স্টাফিং প্ল্যান।
২) অঙ্গ ভিত্তিক বিস্তারিত বাজেট (প্রতিটি খাতের উপ-বিবরণ)
৩)সম্ভাব্য স্থানীয় অংশীদারদের তালিকা (বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও অফিস, স্থানীয় এনজিও) প্রকৃত নাম ও যোগাযোগ সংযুক্ত করা যাবে।
৪)প্রস্তাবিত সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া (selection criteria) প্রশিক্ষণার্থী ও নতুন করে তাঁত শিল্প সংস্লিস্ট ব্যবসা শুরুর জন্য সম্ভাব্য অনুদান প্রার্থীর জন্য ।
৫) প্রস্তাবিত অবকাঠামো ও গ্যালারি ডিজাইন স্কেচ ও প্রস্তাবিত প্রদর্শনী পরিকল্পনা।

আশা করি এই সাধারণ খসড়া প্রস্তবনাকে আরো সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড উপযুক্ত প্রকল্প দলিল প্রনয়ন করে টাঙ্গাইল শাড়ীর সংরক্ষন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির সুফল পাওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×