আমি সুমাইয়া। ঢাকাতে থাকি। খুব ছোটবেলা থেকে এখানেই আছি, আমার গ্রামের স্মৃতি নেই বললেই চলে।
তবে কল্পনার গ্রামের সেই মেঠো পথ ধরে প্রায় হেটে যাই, পুকুরে পা ভিজিয়ে বসে থাকি। কখনো বা পাড়ার মেয়েদের সাথে দর্সি পনা করে বেরাই, আর যখন ঝুম বৃষ্টি হয় তখন পুকুরে নেমে গোসল করি। এই সবই আমার কল্পনা, তবে বাস্তবে আমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করি, যখন এই যান্ত্রিক শহরে বৃষ্টি হয় তখন কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারে না আমি কাউকে না জানিয়ে ঠিকই ছাদে চলে যাই।
আমার এই বৃষ্টি প্রীতির একটা কারন আছে, আম্মু বলেছে আমি যে দিন হয়েছি সে দিন নাকি অনেক বৃষ্টি ছিলো ঝুম বৃষ্টি। আমি তখন আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাহলে আমার নাম বৃষ্টি রাখলে না কেন? আম্মু তখন বলেছিলো তুই আমার প্রথম সন্তান তুই আমার মুখ উজ্জ্বল করে আমাকে সুউচ্চ স্থানে নিয়ে যাবি, আর তাই তোর নাম রেখেছি 'সুমাইয়া' যার অর্থ 'সুউচ্চ'।
আমি তখন আম্মুর কথার কিছুই বুঝতে পারিনি বা বোঝার চেষ্টা করিনি, আম্মু এখন খুব অসুস্থ প্রায় সময় বিছানাতেই বসে শুয়ে কাটায়। তার সেই মমতা থেকে আমি সম্পূর্ন বঞ্চিত। আমার নিজের জন্য তেমন খারাপ লাগে না আমিও আম্মুকে অনেকটা সময় ভালো ভাবে পেয়েছি, কিন্তু ছোট দুই ভাই এর জন্য বেশি কষ্ট হয়। সবথেকে ছোট ভাইটা হওয়ার পর থেকেই আম্মু অসুস্থ, ভাইটার বয়স মাত্র দুই বছর এই বয়সে তার কত অভিমান সবার সাথে কথা বলেনা শুধু চোখের দিকে চেয়ে থাকে হয়তো চোখ দেখেই বুঝে নেয় কে কি বলতে চায়। আমিই তাকে মায়ের আদর দেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু মা তো মা ই।
আমার কলেজ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেই জীবনে এই দূর্যোগ নেমে আসে, আগেই ভালো প্রস্তুতি ছিলো তাই কোন রকমে পরিক্ষা দিয়ে শেষ করি। যতটা ভালো পরিক্ষা দেয়ার কথা ছিলো ততটা ভালো দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
জীবনে ইচ্ছে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সেই ইচ্ছে মনের মধ্যেই পুশে রাখলাম বাস্তব আর করতে পারলাম না।
মা ই কিন্তু একটা পরিবারের সমাইকে সামলে রাখে, আম্মু অসুস্থ হবার পরে বাবা কেমন যেন ছন্ন ছাড়া হয়ে গেছেন, তার ঘরের প্রতি সব দ্বায়িত্ব যেন উবে গেছে আমরা কেমন আছি জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি।
জীবন থেকে সব আশা ভরসা হারিয়ে, আমি কেমন যেন ছন্ন ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনা। ঘর থেকে তেমন বেরও হইনা, কোন ফ্রেন্ড যাতে আমার খোজ খরব নিতে না পারে আগের নাম্বার বন্ধ করে দিয়ে কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ড কে নতুন নাম্বার দিয়ে বলে দেই কেউ যাতে আমার নাম্বার না জানে।
একদিন এক ক্লোজ ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে আমার ফেসবুক আইডি আছে কিনা, আমি ফেসবুকের অনেক নাম শুনেছি কিন্তু তখনো যাতায়াত শুরু করি নি। আমি তাকে বললাম একটা আইডি খুলে দে।
সে আইডি খুলে দিলো। আমার মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করা যেত না। মাঝে মধ্যে আব্বুর মোবাইল থেকে ফেসবুকে যেতাম। অনেক রাতে আব্বু যখন ঘুমিয়ে পরতো তখন আমার সিম আব্বুর মোবাইলে লাগিয়ে ব্যবহার করতাম কোন দিনই আব্বু বুঝতে পারতো না। মোবাইল চার্জে লাগিয়ে ব্যবহার করতাম বলে চার্জও তেমন শেষ হতো না।
কিন্তু একদিন হঠাত করে আব্বুর কল লিস্টে থাকা সব নাম্বার মুছে গেল, আরে এতেই বাধলো বিপত্তি সকালে ঘুম থেকে উঠেই আব্বুর রাগী রাগী সেই ভাষা আর কে শোনে। আর তখনই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো আমি আব্বুকে গিয়ে বললাম মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে এমন হয়, আমি চাইছিলাম আব্বু একটা নতুন মোবাইল কিনুক। আর তখন আমি এই মোবাইল নির্দিধার ব্যবহার করতে পারবো। আমি জানতাম আব্বু আমাকে আমার ভাইদের থেকে একটু বেশিই ভালোবাসে আমার কথা বিশ্বাস করা হার শতকরা ৯৫%।
এর কিছু দিন পরে ইচ্ছে করে সব নাম্বার দিলিট করে দিলাম, আর এতেই কাজ হলো আব্বু একটা খুবই কমদামি মোবাইল কিনে এনে ব্যবহার করা শুরু করলেন। আর আমকে ডেকে বললেন সময় করে এটাকে যেন মোবাইল সাড়ানোর দোকানে নিয়ে ঠিক করে আনি।
আমার ইচ্ছে ছিলো ফেসবুকে ফেক নাম ববহার করবো যাতে আমাকে কেউ চিনতে না পারে, যেই ভাবনা সেই কাজ।
নাম দিলাম মায়াবতি মায়া।
আব্বু প্রায় আমাকে মায়া নামেই ডাকে। তার নাকি একটা মায়া নামে খালা ছিলো, আমি নাকি দেখতে ঠিক তার মত সেই খালা নাকি তাকে মায়ের থেকেও বেশি আদর করতো।
প্রথম যখন ফেসবুকে আসি তখন বিভিন্ন পেইজে দেয়া পোস্ট গুলোই পরতাম, ফ্রেন্ড বলতে সে যে এই আইডি ওপেন করে দিয়েছিলো। তাকে কোন সময়ই অনলাইনে পেতাম না মাঝেমধ্যে জোর করে অনলাইনে আনতাম।
একদিন হঠাত করে একটা রিকুয়েশট আসে নামটা খেয়াল নেই, তবে সাথে সাথেই বলে 'লাইক মাই প্রো পিক' প্রথবে বুঝতে পারিনি, আবার জিজ্ঞেস করে বুঝতে পারলাম কি বলতে চাচ্ছে কিন্তু আমি লাইক দেইনি সেই অপরাধে আমাকে ব্লক করে চলে যায়।
এর পর থেকে প্রায়ই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসতো কারো সাথে কথা হতো, আবার কেউ কেউ বলতো ফেক আইডি। কেউ আবার ফ্রেন্ডলি ভাবে কিছু দিন কথা বলার পরে ফোন নাম্বার চাইতো আমি বলতাম আমার সমস্যা আছে দিতে পারবো না, আর তখনই তাদের আসল রূপ বের হয়ে আসতো অনেক খারাপ কথা শুনতে হতো। আমি কিছুই বলতাম না বেশি খারাপ কিছু বললে ব্লক করে দিতাম। আচ্ছা আপনারাই বলুন ফ্রেন্ড হিসেবে থাকতে হলে কি ফোন নাম্বার নিতেই হয়? আচ্ছা আপনারা অনেকেই তো ফেসবুক ববহার করেন, যারা ছেলে তাদের বলছি জীবনে কয়টা ফেসবুক ফেন্ড আপনার ফোন নাম্বার চাইছে ?
না কি আমি মেয়ে বলেই আমার নাম্বার দিতে হবে।
তখন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড পঞ্চাশ এর কাছাকাছি, ছবি দিয়েছি কিন্তু নিজেরটা না।
ফেসবুকে আছি প্রায় তিন মাস ।এখন আর তেমন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না, সবাই একই রকম। আমিও কারো মেসেজ এর উত্তর দেই না, রিকুয়েস্ট আসে রিকুয়েস্ট যায় আবার আসে।
আমি ঘুমতে যাবো ঠিক এমন সময় একটা রিকুয়েস্ট আসে, কিছু না বুঝেই কনফার্ম করে ঘুমিয়ে পরি।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সেই প্রফাইলে যাই গিয়ে দেখি অনেক দিন ধরেই ফেসবুকে আছে কিন্তু কোন ছবি নেই। কিছু কিছু লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আর দেখলাম ছেলেটা ইন এ রিলেশনশীপ। আমি ভাবলাম যাক বাবা এই ছেলে তাহলে মোবাইল নাম্বার চাইবে না।
এর আগে আমি কোন ছেলেকে নিজ থেকে নক করিনি। কিন্তু তাকে করলাম। সাথে সাথেই জবাব ও পেয়ে গেলাম, সেই দিনের মত পরিচয় হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম।
অনেক দিন হয়ে গেছে তাকে আর ফেকবুকে পাচ্ছি না, একদিন আবার হঠাত করে আগমন। আমার কি হলো বলেই দিলাম আপনি ফেসবুকে আসেন না কেন? জবাবটাও ছিলো খুব সাধাসিধে। কথায় কথা আমি তাকে বন্ধু ভাবা শুরু করেছি, আমি চাইনা সেও অন্য দের মত ভুল করুক আর আমি আমার ফ্রেন্ড হারাই এই কারনে তাকে কিছু কথা বলে দিলাম।
কথা গুলোছিলো এই রকম, আমার নাম্বার চাইতে পারবে না, আমার ছবি চাইতে পারবে না, কোন খারাপ কথা বলা যাবে না, খারাপ ইঙ্গিত করেও কোন কথা বলা যাবে না। যেখানে সবাই এই কথা গুলো জবাবে আমাকে খারাপ কিছু কথা বলে সে দেখি কিছুই বললো না, শুধু বললো 'আচ্ছে ঠিক আছে'।
একজন অপরিচিত মানুষ এত কাছের হতে পারে আমার কল্পনাতেও ছিলো না, আমি তাকে আমার জীবনের এমন অনেক কথাও বলেছি যা কেউ জানে না, শুধু আমি ছাড়া। এমনকি মনে মনে কাকে ভালোবাসতাম সেই কথাও বলে দিয়েছি। সেও আমাকে তার কথা বলতো, আমি তাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা তোর প্রেম সম্পর্কে তো কিছুই বললি না? ও আর একটা কথা এর মাঝে আমরা আপনি তুমি ছেড়ে এসে তুই এর বন্ধুত্বে আছি। তার উত্তর শুনে আমি আবাক, তার নাকি কারো সাথে প্রেম নেই আর যে বলছে ইন এ রিলেশনশীপ তা নাকি নিজের সাথেই।
আমি তাকে অনেক সময় পরীক্ষা করতাম আমাকে ভালোবাসে কি না কিন্তু এমন সব জটিল উত্তর দিতো যে এর আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারতাম না।
আমি বুঝতে পারতাম তার মনে কোন কিছু নিয়ে অনেক কষ্ট, হয়তো আমার সাথে গোপন করছে বা বলতে চাচ্ছে না। আমি তাকে বোঝাতাম আমি তোর বন্ধু আমার সাথে সব কথা বলতে পারিস। তার পরেও গোপন করে যেত এটা আমার ধরনা ছিলো এমন কিছু নাও থাকতে পারে।
অসময়র তার কাছথেকে একটা মেসেজ পেলাম, আমাদের বন্ধুত্বের আজকে নাকি ১০০তম দিন । আমি ভাবছি আমার জীবিনের এই ১০০ দিন সত্যি অন্য রকম কেটেছে, একটা আশা নিয়ে বেচেছি যে একজন একটু পরেই আমার খোজ খবর করবে আমি কেমন আছি কি করছি।
আরো অবাক করে দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে একটা কবিতা লিখে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিলো।
সামনে আমার পরীক্ষা, এখন আর ফেসবুকে থাকতে পারবো না, আমি চাচ্ছি সে আমার কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়া রাখুক যাতে ফেসবুকে না থাকলেও আমাদের যোগাযোগ থাকে। কিন্তু সে কোন ভাবেই বুঝতে পারছেনা, আমি একটু সরাসরিই বললাম আমরা কি অন্য কোন মাধমে যোগাযোগ রাখতে পারিনা।
তার সেই কি করা জবাব, ''আমিও জানি তুইও জানিস, ফেসবুক ছড়া অন্য কোন মাধ্যম মানে কি! কিন্তু তুই একটা কথা বলেছিলি মনে আছে?''
সত্যি আমি আমার জীবনে এমন কাউকে দেখি নি যে আমার কথার এতটা মর্যাদা দিয়েছে, তারপরেও আমি বললাম দোস্ত একটু ভেবে দেখ প্লিজ।
আমার সরাসরি অনুরোধে সে তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিলো। আর আমিও সুযোগ পেলাম আর আমার মোবাইল নাম্বারও তাকে দিয়ে দিলাম।
যে দিন ফেসবুকে আসতে পারতাম না আমাকে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিয়ে আমার কথা জিজ্জেস করতো, বেশ কয়েকটা মেসেজ আদান প্রদানের পরেই বলতো যা লেখাপড়া কর আর মেসেজ দিতে হবে না। সে আমাকে কখনোই কল দিতো না আর আমিও দেওয়ার সাহস করি নি, কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগতো।
আমি আর সে সেম ইয়ারে ছিলাম কিন্তু তার কোন কিছুই বুঝতে পারতাম না, কখন লেখাপড়া করে বা কখন পরিক্ষা হয় কিছুই জানতাম না।
আমার যেদিন পরিক্ষা শেষ হবে সেই দিন নাকি সে আমকে সার্প্রাইজ দিবে কিন্তু কি সার্প্রাইজ তা বুঝতে পারলাম না। বিকেল বেলা হঠাত করে তার ফোন কল, আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম কি হলো এতদিন পরে আজকে ফোন! আমি ধরলাম কিন্তু ভয়ে কথা বলতে পারলাম না। সে অনেক বার হ্যালো হ্যালো করে রেখে দিলো। কিছুক্ষন পরে আবার কল, এবার হ্যালো হ্যালো করার পরে বললো এতাই ছিলো আমার সার্প্রাইজ।
আমি সত্যি অবাব হয়েছিলাম। সেই দিন আর কথা বলা হয় নি। আমি রাতে তা ফেসবুকে অনেক গুলো মেসেজ দিলাম কিন্তু কোন রিপলাই নেই। ফেসবুকেই নেই।
কি আর করা মোবাইলে মেসেজ দিলাম মোবাইল বন্ধ।
সকালে একটা রিপলাই পেলাম, সে কিছু দিনের জন্য ফেসবুকে আসতে পারবে না, আর আমাকে কল দেয়ার জন্য সরি বললো।
আসল কথা হচ্ছে তার মোবাইলে কথা বলার ভংগি আসলেই মোহনীয়, ফেসবুক থেকেও সুন্দর করে কথা বলতে পারে আর কন্ঠ স্বর শুনে আমি আর কথা বলতে পারি নি যদি আমার কথা বলা সে পছন্দ না করে।
বিকেলে তার মোবাইলে কল দিলাম সব গুলোই বন্ধ বলছে। কি করা ফেসবুকে গিয়ে দেখি আইডি ডিএকটিভ করা। তাহলে কি আমি আমার এই সেরা বন্ধুকে হারিয়ে ফেলছি!
আমি তার মোবাইলেই সরি বলে কয়েকটা মেসেজ দিলাম। আর তার ডেলিভারি রিপোর্ট এর অপেক্ষায় আছি। কোন খবর নেই।
আমি ভাবছি হয়তো আমি হারিয়ে ফেললাম এই সেরা বন্ধুকে।
পরদিন বিকেলে মেসেজ এর ডেলিভারি রিপোর্ট আসলো কিন্তু কোন রিপলাই নেই।
আমি কি ভেবে তাকে ফোন দিলাম, কেউ ধরলোনা। আমার তখন রাগ হচ্ছিলো আরে কথা বলিনি তার জন্য তো অনেক বার সরি বললাম আর পরেও আমার কল ধরলো না। প্রায় দশ বারের মত কল দিয়েছি ধরেনি।
এবার তার উপর আমার রাগ হওয়া শুরু হলো। ঘন্টা খানেক পরে আবার কল দিলাম আর মনে মনে ভাবলাম এই বারই শেষ বারের মত কল দিচ্ছি। সাথে সাথেই ফোন ধরে তার সে কি কথা যে আমরা কত দিন এভাবে কথা বলেছি, আমার মনেই হচ্ছে না এই ছেলেটার সাথে এই প্রথম কন্ঠে কথা বলছি। সে কল না ধরার সব কারন আমি জানতে চাওয়ার আগেই খুলে বললো। তার মোবাইলে টাকা নেই আর ও যাখানে আছে সেখানে মোবাইল চার্জ ইতে হলে অনেক দূরে যেতে হয় আর তখন তার মোবাইলে চার্জ ছিলো না।
এর পরে আমার একটু রাগ করে আসলো।
এরপর থেকে আমাদের প্রায় কথা হতো এমনকি একদিন কথা না হলে আমার কেমন যেন খারাপ লাগা কাজ করতো। আমি তাকে সব সময় বন্ধুই ভাবতাম তবে মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলে ফেলতা যা সাধারনত বন্ধু বন্ধুকে বলে না বন্ধু থেকে একটু বেশি হলেই বলা যায়। তবে সেই কথা গুলো শোনার পরে সে যা বলতো শুনতে মনে হতো সে কোন অপরাধ করে ফেলেছে।
আমি এই টুকু বলতে পারি ও অসাধারন ভাবে কথা বলতে পারে, যা কোন মানুষকে কথার জাদুতে ভুলিয়ে রাখতে পারবে।
সামনে আমার জন্মদিন, আমি চাইছিলাম এর আগেই তার সাথে একদিন দেখা করবো। কিন্তু পরক্ষনেই আবার মনে হতো, সে আমাকে যেমন ভেবেছে আমি যদি তেমন না হই? যদিও সে বার বারই বলতো আমি তোর সাথে বন্ধুত্ব করেছি তোর মন দেখে তোকে দেখে না। আমি আসস্থ হতে পারতাম না, আর তাই দেখা করতে ভয় লাগতো। এর থেকেও আরো বড় কারন জীবনে খুব কম সুখ পেয়েছি আর সেই সুখ বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি।
আর কেন যেন মনে হয় আমার জীবনে সুখই দুঃখের একমাত্র কারন।
আর এই সুখ যদি দুঃখ হয়ে ধরা দেয়। যতই ভালো বন্ধু হোক না কেন তাকে আমি চিনি না, এমনকি ছবি পর্যন্ত দেখি নি।
আমি তাকে অনেক বার বলেছি ফেসবুকে ছবি দেয়ার জন্য, কিন্তু যেহেতু আমি দেইনি আর তাই সেই দেয় নি। যদিও একবার তাকে মিথ্যে কথা বলেছিলাম, আমি আমার এক ফ্রেন্ড এর ছবি দিয়ে তাকে বলেছি এটা আমার ছবি কিন্তু এর পরেও সে তার ছবি দেয় নি।
আমি পরে বুঝতে পারলাম হততো তার কোন সমস্যা আছে। আমি আমার ছবির বেপারে সত্য কথাও তাকে পরে বলে দিয়েছি। একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমি তাকে প্রথমেই বলেছিলাম কখনো আমার সাথে দখা করতে চাইতেপারবেন না। আমি জানি সে এই কথা এখনো মনে রেখেছে।
আগামী পরসু আমার জন্মদিন।
সে বলে রেখেছে জন্মদিনে আমাকে একটা সার্প্রাইজ দিবে। আমি জানি তার সার্প্রাইজ তো! আমি অবাক হবোই।
আমি অপেক্ষায় আছি সেই দিনের জন্য। আর তার সার্প্রাইজ এর জন্য।
রাত বারটা বাজার সাথে সাথেই আমাকে কল করে সবার আগে উইস করলো।
আমি তাকে বললাম, কিরে আমার সার্প্রাইজ কই।
ও বললো, সবুর করুন ম্যাডাম আপনাকে দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
জানেন তো সবুরে ম্যাওয়া ফলে। কিছুক্ষন কথা বলার পরে সে ফোণ রেখে দিলো আমিও বললাম আচ্ছা অনেকেই ফোন দিচ্ছিলো তাই কিছু বললাম না। সাধারনত আমাদের কথা আধা ঘন্টার আগে শেষ হয় না, আর সর্বোচ্চ যে কত তার কোন হিসেব নেই।
সকালে তার কাছথেকে একটা মেসেজ পেলাম, ''মায়া একটু পরে তোকে কল দিয়ে যা করতে বলবো তাই করবি, যদি তুই কথা দিস তাহলেই বলবো। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারিস তুই যে কাজ পছন্দ করিস না আমি সেই রকম কোন কাজ করবো না।''
আমিও তার অন্ধ ভক্তের মত তাকে কথা দিলাম।
শেষে কল দিলো ঠিক বিকেল পাচটার দিকে। আমি বললাম, তোর কি হইছে? এই তোর একটু পর!
ও এর কোন জবাব না দিয়ে বললো, একটা সাদাকাগজে তোর নাম আর মোবাইল নাম্বার লেখ। আমি বললাম তারপর?
সে আরো বললো, সেই কাগজটা নিয়ে তোর বাসার কাছের মিস্টার বেকারিতে গিয়ে কাউন্টারে জমা দিলেই পেয়ে যাবি তোর সার্প্রাইজ।
আমি বললাম আরে এটা তো আমার খুব পরিচিত দোকান, সে আরো বললো তোর যেতে ইচ্ছে না হলে যে কাউকে পাঠাতে পারিস, আর সাথে মোবাইল নিতে ভুলে না যেন।
আমিও এমনটাই ভেবেছিলাম আমি যাবো না। অন্য কাউকে পাঠাবো, কিন্তু কাকে পাঠানো যায়? আমাদের উপরের তলার আপুকে পাঠালে কেমন হয়। আমি মনে মনে এইটাও ভাবছিলাম যে ও আসে পাশেই আছে আরা আমি যখন ভিতরে যাবো আমাকে দেখে নিবে। তাই সেই আপুকেই বাছাই করলাম।
আপু গেছেন অনেকক্ষন হলো, কিন্তু এখনো ফিরে আসেন নি। এত দেরি তো লাগার কথা না, তাহলে কি ও আমাকে ভেবে আপুর সাথেই কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। যদিও আপুকে বুঝিয়েই বলেছি সব কিছু।
আপু ফিরে আসছেন। তার হাতে একটা মাঝারি সাইজের কেক এর বক্স। দেরি হলো কেন জিজ্ঞেস করতেই বলনেল, এইসম ছেলেদের আমার চেনা আছে এরা দূর থেকে ফলো করে বাসা পর্যন্ত চলে আসে। আমি আপুকে বললাম তো কি বুঝলেন? আপু হাসতে হাসতে বললো এমন রাস্তা পেচিয়ে আসছি এই এলাকার হলেই চিনতে পারবে না। আর অন্য এলাকার হলে তো প্রশ্নই উঠেনা।
এবার আমি আপুকে বুঝিয়ে বললাম, সে অন্যদের মত না। আপুর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে তাকে ফোন দিলাম, কেউ ধরলো না আবার দিলাম এবারও কেউ ধরলো না। আমার অন্য রকম ভয় লাগা কাজ করছে।
আমার এক হাতে তার দেয়া কেক আর এক হাতে আমার ফোন,
হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো। কানে দিয়ে অন্য আর একজনের কন্ঠে বলা কথা গুলো শুধু শুনে গেলাম। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, হাতের কেক আর মোবাইল পরে গেল।
তার দেয়া কেকে লেখাছিলো, friendship never end।
দোস্ত তুই আমাকে এমন সার্প্রাইজ দিবে আমি জীবিনেও ভাবতে পারিনি। হত মরনেও ভাবতে পারবো না। দোস্ত তুই যেখানেই থাকিস যেই জগত এই থাকিস ভালো থাকিস ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৬