somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুর স্বপ্নভঙ্গ এবং একজন আরিফা

২৭ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলার সাহিত্যপ্রেমিরা অনেকেই হিমু হতে চায়।হ্যাঁ,সেই হিমু ,যে প্রতিরাঁতে খালি পায়ে পথে পথে হেঁটে বেড়ায়।্মাঝে মাঝে সন্দেহজনক চলাফেরার কারনে রাঁত বিরেতে যার ঠিকানা হয় সোজা শ্রীঘর ,সেখানকার পুলিশদের সাথে সে ঘটিয়ে বেড়ায় মজার মজার নানা কীর্তি ।সেই বুদ্ধিদীপ্ত,পাগলাটে,কিছু অলৌ্কিক ক্ষমতার অধিকারী হিমু,যার পাল্লায় পড়ে চোর,বদমাস,গুন্ডারা প্রায়ই হয়ে যায় পুরোদস্তর ভালো মানুষ।আর একজন রুপা হয় চির বিরহীনি।

নাহ।এমন হিমুর দেখা আজ অব্দি বাস্তবে পাইনি।কিন্ত,একজন হিমু ছিল।হিমাদ্রী মজুমদার হিমু।যাকে কোনদিন দেখিনি,ফেসবুকে যার সাথে বন্ধুত্বও হয়নি।যদি হত তাহলে বলতাম-ভাই,তোমাকে স্যলুট।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের ভাড়া বাড়িটার নীল ঘরটা এখনও আগের মতই আছে। এক কোনায় দাঁড়ানো একটা কাঠের পড়ার টেবিল।তাতে শোভা পাচ্ছে ছোটছোট কয়েকটা ক্রেস্ট,বডি স্প্রের বোতলগুলো যেন ঘরের মালিকের ফ্যাশন সচেতনতার কথাই ঘোষনা দিচ্ছে আর দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুঃখী একটি গিটার যে বেচারার মালিক আর কোনদিনও আঙ্গুল ছোয়াবে না তার তারগুলোর গায়ে।
টেবিলে সাজানো এ লেভেলের বইগুলো্রই বা কি হবে?কে আর পরীক্ষা দেবে ওগুলো পড়ে,কেই বা এখন ওগুলো নিয়ে আসবে ঢাকায় নর্থ সাউথে ভর্তি হবার জন্য?
‘দুঃসহ’ আঠারো বছর বয়সী হিমু ভালোবাসত বাস্কেটবল,মাঝে মাঝে শখের গিটারটা নিয়ে চেষ্টা করত বাজাতে,বেশ বাজত।তবে গিটার না, বন্ধু বান্ধবদের কানের বারোটা।মমতাময়ী মা প্রায়ই উপদেশ দিতেন।–বাবা,তুই হিন্দু পরিবারের ছেলে,সংখ্যালঘু,কারো সাথে কোন ঝামেলায় জড়াসনে বাবা,চুপচাপ থাকিস সবসময়।
কিন্ত,অবাধ্য হিমু পারেনি মায়ের কথা রাখতে।তাইতো,দু’বছর আগে সে নাম লেখায় মাদক বিরোধী সংগঠন ‘শিকড়’ এ।অল্প বয়সেই হয়ে ওঠে সেই সংগঠনের এক অপরিহার‌্য অংশ।‘শিকড়ের’ কাজ ছিল মূলত মাদক ব্যবসারোধে আইন শৃঙ্খলাবাহীনিকে সহায়তা করা। হিমু ও তার বন্ধুরা এলাকায় মাদকবিরোধী জোরদার প্রচারনার চালাবার পাশাপাশি চালিয়ে যায় কড়া নজরদারী।এলাকাজুড়ে চলতে থাকা মদ,ইয়াবা ,ফেন্সিডিলের মহোৎসবে পানি ঢেলে দেয় এই দস্যিছেলের দল।সামারফিল্ড স্কুলের শান্ত-শিষ্ট মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী এভাবেই হয়ে ওঠে একজন নিবেদিত সমাজকর্মী।
কিন্ত,এই পুঁচকে ছোড়ার বেয়াড়াপনা কেন সহ্য করবে পেটে লাথ খাওয়া পাঁচলাইশের মাদক ব্যবসায়ীরা?তাই তো তাদের ত্রানকর্তা হিসেবে মঞ্চে আসল শাহ সেলিম টিপু ও তার ছেলে জুনায়েদ। দুই প্রজন্ম ধরে পাঁচলাইশে বসবাসরত টিপু ‘বারভিডার’ সাবেক চেয়ারম্যান,্স্থানীয় মক্কি মসজিদেরও কেষ্টুবিষ্টু।কে জানে হয়তবা সেইজন্যই মাদক ব্যবসায়ীদের এলাকায় আশ্রয় দিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের মত ছোটখাটো (!) পাপ সে ধর্তব্যের মধ্যেই নেয়নি।
মাদকসেবীদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ,ফোনে ক্রমাগত হুমকি কিছুই যখন হিমুকে দমাতে পারল না তখন আর একটি উপায়ই বাকি ছিল তাকে থামানোর।সেটাই বেছে নিল টিপু এন্ড গং।
গত ২৭ এপ্রিল হিমাদ্রীকে জুনায়েদ ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায় তাদের ‘ফরহাদ ম্যানশন’ নামক বাড়ির ছাদে,সেখানে মারধরের পর তার পেছনে লেলিয়ে দেয় তিনটি পোষা জার্মান ডোবারম্যান কুকুর।প্রান বাঁচাতে হিমাদ্রী ছাদের রেলিংয়ের ওপর উঠে পড়লে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হয়।মাথার পেছনেসহ সারা শরীরে গুরুতর আঘাত ও ক্ষতিগ্রস্থ ফুসফুস নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যূর সাথে লড়াই করে অবশেষে ২৩ শে মে পৃথীবিকে বিদায় জানায় এই সাহসী প্রান।
হিমাদ্রীর মৃত্যূ কি আমাদের সোশ্যাল অ্যক্টিভিজমের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলবে?কয়েকদিন যাবৎ মাথায় ঘুরছিল তখনই আশা ফিরে পেলাম পেপারে আরিফার খবর পড়ে।রাজশাহীর নোনাপুকুর গ্রামের কোয়েল উচ্চবিদ্যালয়েরক্লাস এইটের ছাত্রী আরিফা।গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। কিশোরী আরিফা তার সহপাঠী ও স্থানীয় ১৫ জন কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে একটি মাদকবিরোধী গণগবেষণা দল গঠন করে। তাদের নজরদারিতে নোনাপুকুর গ্রামের মাদক ব্যবসা লাটে ওঠে।আমিনুল ইসলাম নামের একজন মাদক ব্যবসায়ী আরিফার বাবা ও ভাইকে মারধর করে। তাঁদের ফসলের ক্ষতি করে। তার পরও দমেনি আরিফার দল ।এক বছর আগে আমিনুল ইসলাম আরিফার ওপর হামলা চালা‌য়। আহত হয়ে আরিফাকে ১২ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে আমিনুল গ্রেপ্তার হয়। তারপর জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার হত্যার হুমকি দেয় আরিফাকে।আমিনুলের হুমকিতে আরিফা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পরামর্শে থানায় যায়। কিন্তু পুলিশ আগের অভিযোগটিই সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করে প্রসিকিউশন দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়ে পঠিয়েছে।খবর পেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে নিরাপত্তা নিবাসে রেখেছেন।
গত ২১ জুনের প্রথম আলো থেকে জানা যায়-
‘আরিফা একটুও ভেঙে পড়েনি। মাদকবিরোধী আন্দোলন থেকে সরে আসবে কি না জানতে চাইলে সে মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়ের কথা জানায়। আরিফার কথা, ‘তার একটা জীবনের বিনিময়ে যদি গ্রাম মাদকমুক্ত হয়, তাও ভালো। কিন্তু আজকে সে আন্দোলন ছেড়ে দেবে, কালকে ওই ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে তার ভাইটিই যদি নেশায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার পরিবারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। সে তা হতে দেবে না।’

কোন এক দৃশ্যমান অথচ অদৃশ্য শক্তির বলে হিমাদ্রী হত্যা মামলার লোক দেখানো কাজ যখন চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে তখন একজন সাহসী আরিফার উত্থান আমাদের বাঁচতে শেখায়,লড়তে শেখায়। মাদক বিরোধী দিবসে সবার মোবাইলে গন মেসেজ পাঠানো মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সাধারন বেতনভূক কর্মকর্তাটি যখন আমাদের পাশের বাড়িতে বসবাস করে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যট কিনে আবার একটি ডুপ্লেক্স বানানোর পায়তারা করে ,এই হিমাদ্রী কিংবা আরিফাদের দিকে তাকিয়েই তখন বলতে ইচ্ছে করে ‘না,সবকিছু চলে যাবেনা নষ্টদের অধিকারে'।
সূত্রঃ Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×