somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম বালকের হাতে খ্রিস্টান প্রশিক্ষকের ইসলাম গ্রহণ..........

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লিখেছেনঃ আলী হাসান তৈয়ব । ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার


ফিলিপাইনের জাতীয় সাঁতার দলের প্রশিক্ষক, ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি নেয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল কারীম এরসিনাস নিজের ইসলাম গ্রহণের গল্প তুলে ধরেন এভাবে-

আল্লাহর অসংখ্য প্রশংসা যে, (এরসিনাস) খ্রিস্টান পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে তিনি আমাকে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার সৌভাগ্যে ভূষিত করেছেন। আমার জন্ম ও শিক্ষা রাজধানী ম্যানিলার এক খ্রিস্টান পরিবেশে। এখানে কোনো মুসলিম নেই। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলগুলোতেই মুসলিমদের অবস্থান সীমিত। বাল্যকালে আমার পরিবার চাইতো গির্জায় আমি বেশি বেশি সময় দেই। বাবা যখন আমাকে গির্জায় নিয়ে যাবার সুযোগ করতে পারছিলেন না, তখন আমার বয়সে বড় এক ভাই এলেন। তিনি রোজ আমাকে গির্জায় নিয়ে যেতেন।



আমি যখন যৌবনে পা রাখলাম, গির্জায় যেতে কোনো আগ্রহ বোধ করছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজ ধর্ম খ্রিস্টবাদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। এ সম্পর্কে বিস্তর পড়াশুনা শুরু করলাম। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে পেলাম, খ্রিস্ট ধর্মে ক্যাথলিক, প্রোটেস্টান্টসহ নানা বিভক্তি। আমার বিস্ময় বেড়ে গেল যখন দেখলাম ধর্মমতে ব্যাপক বিভক্তি থাকলেও তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান না আনার বেলায় এরা সব একাট্টা।



শিক্ষা জীবন শেষে সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে আমি সৌদি আরব গেলাম। এই প্রথম আমার মুসলিমদের সংস্পর্শে আসা। আগেই বলেছি ফিলিপাইনে থাকতে আমি কোনো মুসলিমের সঙ্গ পাইনি। ফিলিপাইনের মুসলিমরা তাদের অঞ্চলগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকেন। আমরা তাদের সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাই না। সরকারি প্রচার মাধ্যম যা প্রচার করে অগত্যা আমাদেরকে তা-ই বিশ্বাস করতে হয়। মিডিয়া দেশের জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করে, দক্ষিণাঞ্চলে মুসলিমদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যেসব সংঘর্ষ হয় তা রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মুসলমানদের একটি উগ্রগোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরে। যারা কেবল তাদের দেশকে দ্বিখণ্ডিত করতে চায়। পেতে চায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার। আল্লাহর অসংখ্য শুকরিয়া যে, আজ আমি যাদের একজনে পরিণত হয়েছি সেই মুসলিম ভাইদের কারও দিকে কখনো অস্ত্র তাক করিনি।



আমি সৌদি আরবে যাওয়ার পরেই কেবল মুসলিম সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের অবস্থা, আচার ও আকীদা (বিশ্বাস) সম্পর্কে অবহিত হই। আমি যাদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিতাম তাদের মধ্যে এক বালক ছিল। বয়স তার অনূর্ধ্ব তেরো। ক্ষুদে এই মুসলিমের চলাফেরা ও কাজকর্মে লক্ষ্য করতাম দারুণ এক নিয়মানুবর্তিতা। ওর স্বভাব শান্ত। জীবন যাপন সুশৃঙ্খল। আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অন্যথা করে না সে কখনো। যথাসময়ে সালাত আদায়ে তার চেষ্টা দেখার মতো। অবসরের সিংহভাগ সময়ই কাটত তার নিবিষ্টমনে কুরআন তেলাওয়াতে।



মুসলিম বালকটির ছিল তীক্ষ্ন মেধা আর বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। আমি তার কর্মকাণ্ডের প্রতি লক্ষ্য করছি, তার সঙ্গ আমাকে আনন্দ দিচ্ছে- এতটুকু বুঝতে পেরেই সে আমার সামনে একগাদা ইংরেজিতে অনূদিত ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বই উপস্থাপন করল। ইংরেজি অনুবাদসহ কুরআন শরীফের একটি কপিও দিল। সঙ্গে সে এও বলল, 'আপনি এসব পড়লেই আমার সুবিন্যস্ত জীবন যাপনের রহস্য উদ্ধার করতে পারবেন।'



এই প্রথম ইসলাম সম্পর্কে জানার অভিজ্ঞতা। যত পড়লাম আমার সামনে একে একে অজানা জগত উদ্ভাসিত হতে লাগল। আমি বা আমার মতো অন্য কেউ এ জগতের সন্ধান পাননি। এসব পড়ে আমি খুব প্রভাবিত হলাম। বিশেষ করে যখন কুরআন শরীফের তরজমা পড়লাম। এ কিতাবে যে একক স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে, তা আমার চিন্তার সঙ্গে মিলে গেল। এ চিন্তায় আমি খুব তৃপ্তি ও স্বস্থি বোধ করলাম। এরপর আমি প্রবলভাবে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলাম। এমনকি আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগেই নিজের নতুন নামও (আব্দুল করীম) ঠিক করে ফেললাম। আসলে ইসলামের সঙ্গে আমার এই পরিচয়ের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের পর এই বালকটির প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ। এই পরিচয়ের পরই শুরু হয় হেদায়েতের পথে আমার অভিযাত্রা।



আমি খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন দেখতে লাগলাম আমার সহকর্মীদের সময়মতো সালাত আদায়ের দৃশ্য। আমার কর্মক্ষেত্রেই ছিল মসজিদ। আমি পর্যবেক্ষণ করতাম তাদের সালাত। কী বিস্ময়কর তন্ময়তায় তারা নামাজে নিমগ্ন হত! সবাই একসঙ্গে রুকু করছে, সিজদা করছে! একই ইমামের পেছনে সবাই কত শৃঙ্খলা ও গুরুত্বের সঙ্গে সালাত আদায় করছে! আমার কর্মস্থলের বন্ধুরাও অনুদারতা দেখাননি। তারা আমাকে জেদ্দায় রাখা এই বালকটির মতই সহযোগিতা করেছেন। যথেষ্ট যত্ন-আত্তি করেছেন। তারা যখন আমার ইসলাম সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা, ইসলাম নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা এবং সালাতের ব্যাপারে অনন্ত কৌতূহল লক্ষ্য করলেন, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিতাব পড়তে দিলেন।



তাদের দেয়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছিল পাদ্রীদের সঙ্গে আহমদ দিদাতের সংলাপের বই। আমি অনেক শুনেছি, মুসলমানরা অন্যদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করে। সৌদি আরবে আসার এগে থেকেই আমার মাথায় এই চিত্র আকাঁ ছিল। কিন্তু এখানে এসে আমি এ ধরনের কোনো আচরণ দেখলাম না। সিজওয়ার্টের সঙ্গে আহমদ দিদাতের বিতর্ক অনুষ্ঠানের বই আমার মনে অনেক গভীর প্রভাব সৃষ্টি করল। এই লোকটির ব্যাপারে আমি যার পর নাই বিস্মিত। কিভাবে তিনি একেরপর এক প্রমাণ উপস্থাপন করেন! একটির পিঠে আরেকটি যুক্তি তুলে ধরেন! বর্ণনা আর যুক্তি কোনোটির অভাব নেই তাতে! প্রতিটি আসর পাঠে আমি হেসে মরি আর সিজওয়ার্ট পরাজিত বিষণ্ন হতে থাকে। তার প্রতিক্রিয়া ছিল অতৃপ্ত মানুষের নির্ভুল প্রতিক্রিয়া। তার অবস্থান যে ভ্রান্তির পক্ষে, মুসলমানদের আগে তা খ্রিস্টানও বুঝতে পারছিল।



এক পর্যায়ে আমি আহমদ দিদাতের কাছে চিঠি লিখলাম। এতে আমি তার যুক্তির শাণিত অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসাধারণ ক্ষমতার প্রশংসা করলাম। তার কাছে এ ধরনের অসত্য থেকে সত্য উন্মোচনকারী বিতর্ক ও সংলাপের বেশি বেশি বই চাইলাম।



এখন আমি খ্রিস্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। এতদুদ্দেশে আমার সহকর্মীদের কাছে এ জন্য আমার করণীয় কী তা জানতে চাইলাম। আর সেদিনই আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম। আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসূলের ওপর এবং শেষ দিবসের ওপর। বিশ্বাস স্থাপন করলাম জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কেও। সে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি। আমি নিজের অপরিমেয় সৌভাগ্য অনুভব করলাম। আজ অনুগত মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করি। আমি সালাত আদায়ে মসজিদে যাই। সেখানে সিজদাবনত হয়ে এক অপার্থিব তৃপ্তি ও সুখ বোধ করি। জীবন যাপনেও তেমনি অপূর্ব প্রশান্তির আস্বাদ পাই। আমার অতীত জীবন ছিল বিশৃঙ্খলা আর উদ্দেশ্যহীন হট্টগোলে পূর্ণ। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থার বদলে আজ আলো, শৃঙ্খলা, সচ্চরিত্র ও মূল্যবোধের জীবন দান করেছেন। সত্যিই আমি মুসলিম ভাইদের সঙ্গ পেয়ে সৌভাগ্যবান। সন্দেহ নেই ইসলাম অনেক মহান ধর্ম। এর সঙ্গে জড়িয়ে ধন্য আমার জীবন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×