somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লজ্জাবতী বানর

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার বন থেকে লোকালয়ে নেমে এসেছিল এক বিরল প্রজাতির বানর। স্থানীয় লোকজন চিনতে পারেনি অদ্ভুত দর্শন প্রাণীটিকে। তারা সেটিকে পান্ডা ভেবেছিল। মহা উৎসাহে নানা কায়দা-কৌশল করে তারা আটকে ফেলেছিল বানরটিকে। তার খেসারত দিতে হয়েছে নিরীহ বন্য প্রাণীটিকেই। নিজেকে রক্ষা করতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পিছু ধাওয়া করা লোকের হাতে আহত হতে হয়েছে তাকে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। লোকজন আটকে ফেলে বানরটিকে।

এদিকে বন্য প্রাণী আটকের খবর পেয়ে গতকাল রোববার সকালে বিডিআর সদস্যরা এসে বানরটিকে লোকজনের কবল থেকে উদ্ধার করেন। এরপর তাঁরা সিলেট বিভাগীয় বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষক কমিটির কাছে বানরটি হস্তান্তর করেন। বিডিআর সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার জৈন্তাপুরের বন এলাকা থেকে এলাকার কিছু লোক বানরটিকে আটক করে। বিরল প্রজাতির এই বানরটিকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দারুণ কৌতূহল দেখা দেয়। অচেনা প্রাণীটিকে তারা পান্ডা বলে ভেবেছিল। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় ২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ওই দিনই এলাকায় গিয়ে বানরটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল জানান, বানরটি অভুক্ত ছিল। দুই দিন বিভিন্ন রকমের খাবার খাইয়ে এটিকে সতেজ ও খানিকটা সুস্থ করে তোলা হয়। এরপর রোববার বানরটিকে বন বিভাগের হেফাজতে দেওয়া হয়।

সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কমিটির সদস্যসচিব দেলওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, এটি আদৌ পান্ডা নয়। প্রাণীটি বিরল প্রজাতির মধ্যবয়সী লজ্জাবতী বানর। চিরসবুজ ও বৃষ্টিপাত কম এমন এলাকায় এদের বসবাস। বন, ঝোপঝাড়ে কদাচিৎ এরা নেমে আসে। অধিকাংশ সময় লজ্জাবতী বানর বনের লম্বা গাছগুলোর মগডালে থাকে। বাংলাদেশে এর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে এদের বাস রয়েছে।

বন্য প্রাণীবিদ শরীফ খান জানিয়েছেন, লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি নাম Slow loris এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nycticebus coucang। অনেক এলাকায় একে মুখচোরা বানরও বলে। এর কারণ লোকজনের সামনে পড়লে এরা সাধারণত দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। তাছাড়া গভীর জঙ্গলে থাকে বলে এই বানরটি লোকজনের তেমন পরিচিতও নয়।

শরীফ খান জানান, লজ্জাবতী বানর নিশাচর প্রাণী। বিশেষ প্রয়োজন না হলে দিনে এরা চলাচল করে না। বানর হলেও এরা মোটেই বাঁদরামিতে পটু নয়। চালচলন ও স্বভাবেও অন্যান্য বানরের চেয়ে ধীরস্থির। অন্য বানরের মতো এরা সাধারণত হাত দিয়ে খাবার মুখে তোলে না। খাদ্যে সরাসরি মুখ লাগিয়ে খায়। ছোট পোকামাকড়, ছোট পাখি ও ডিম এবং গাছের কচিপাতা এদের খাদ্য। এদের লেজ খুবই ছোট। চট করে চোখে পড়ে না। লেজ ছাড়া আকার ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। এরা গাছের ডাল পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকতে পছন্দ করে। বছরে একবার একটি করে বাচ্চা দেয়। নিজেদের বসত এলাকা ছেড়ে খুব বেশি দূরে এরা যায় না। লজ্জাবতী বানর পোষ মানে। পোষা অবস্থায় কলা বা অন্যান্য ফল খেয়ে খাদ্যাভ্যাস বদলে নিতে পারে। সিলেট ছাড়াও চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলেও একসময় লজ্জাবতী বানরের বসবাস ছিল। তবে দেশে এখন এই নিরীহ প্রাণীটি অত্যন্ত বিপন্ন।

গতকাল দুপুরে বিডিআর সদস্যদের কাছ থেকে বানরটি গ্রহণ করে বন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এটিকে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×