গত ৭-৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকাতে দেশের প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা সফল ভাবে সম্পন্ন করার পর আগামী ৪ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার থেকে সিলেটে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় ই-বাণিজ্য মেলা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা। ‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব’ শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত এ মেলা সিলেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের পৃষ্ঠপোষকতায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে সহায়ক ‘সিলেট ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩ ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’ এর আয়োজক সিলেট জেলা প্রশাসন ও মাসিক ‘কমপিউটার জগৎ’। মেলাটি ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশে ই-কমার্স সম্পর্কে জনসচতেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দেশের প্রথম ই-বাণিজ্য মেলা সফল ভাবে সম্পন্ন হওয়ায়, কমপিউটার জগৎ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই মেলাটি পর্যায়ক্রমে ৬টি বিভাগে করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই অংশ হিসেবে সিলেটে দেশের দ্বিতীয় ই-বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তিনদিনব্যাপি এই মেলায় ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরবে। মেলায় মোট ৪৫টি স্টলসহ ৪৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। মেলা উপলক্ষে পণ্য ও সেবা ক্রেতাদের জন্য বিশেষ সুযোগ যেমন থাকবে, তেমনি এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন রয়েছে।
ই-বাণিজ্য মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে অনলাইন পেমেন্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এসএসএল কমার্জ ও কমজগৎ টেকনোলজিস । গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ই-সুফিয়ানা ও সিজে সফট। মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করছে অর্পণ কমিউনিকেশন লিমিটেড।
এ ছাড়া পার্টনার হিসেবে এখনি ডটকম, ক্রিয়েটিভ পার্টনার হিসেবে ক্রিয়েটিভ আইটি লিমিটেড, গেমিং জোন পার্টনার হিসেবে এএমডি গিগাবাইট, নলেজ পার্টনার হিসেবে বিডিওএসএন, কমিউনিকেশন পার্টনার হিসেবে সফটকল, ব্লগ পার্টনার হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগ ও ওয়েব পার্টনার হিসেবে বাংলানিউজ২৪ ডটকম।
তিন দিনের এ মেলায় অংশ নিচ্ছে এসএসএল কমার্জ, ই-সু ফিয়ানা, কমজগৎ টেকনোলজিস, এখনি ডটকম, বগুড়ার দই, রূপকথার জামদানি, জেডকাইট৯, টি-জোন, ও অনলাইনশপ, অ্যাট২ক্লিকস, বিডিহাট, আপনজোন, ওয়েবশহর (সিটিসেল), অ্যারামেক্স ঢাকা লিমিটেড, জোন ৮৩, বাংলাদেশ পোস্ট অফিস, শাম্মা’স মেহেদী আর্টসহ ঢাকা ও সিলেটের ই-বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযু ক্তি সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার পক্ষ থেকে সিলেট জেলা ই-সেবা কেন্দ্র ও সিলেট সদর, দক্ষিণসু রমা, গোলাপগঞ্জ,
বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রগুলো অংশগ্রহণ করবে।
আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলাকে সহজে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকের মাধ্যমে মেলার বিভিন্ন আপডেট প্রকাশ করা হচ্ছে। আপডেট পেতে িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ঊঈড়সসবৎপবঋধরৎ ঠিকানার পেজ লাইক করতে হবে। এ ছাড়া মেলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.e-commercefair.com/ থেকেও জানা যাবে প্রয়োজনীয় তথ্য।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। হ্রাসকৃত মূল্যে বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে।
আসুন ই-বাণিজ্য সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই
ই-বাণিজ্যের যাত্রা শুরু হয় ৬০ এর দশকে। তবে প্রথমদিকে ই-বাণিজ্যের চিত্র ছিল একটু ভিন্ন। তখন বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদানপ্রদান করত। এই আদান প্রদানের জন্য তারা ইলেক্ট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ (ইডিআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করত। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আর্পানেট (ARPAnet) তৈরি করে যা থেকে আজকের ইন্টারনেট সৃষ্টি হয়। ১৯৭৯ সালে বিখ্যাত ইংরেজ আবিস্কারক এবং উদ্যোক্তা, মাইকেল অল্ডরিচ, ‘টেলিশপিং’ উদ্ভাবন করেন যা থেকে অনলাইন শপিং এর উদ্ভব। ৮০’র দশকে ফ্রান্সে মিনিটেল নামে একটি সার্ভিস চালু হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব চালু হবার আগে এটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন সার্ভিস। ওই একই সময়ে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ট্রাভেল কোম্পানী থমসন হলিডে তাদের ওয়েবসাইট প্রথম বি-টু-বি অনলাইন শপিং চালু করে। তবে ই-কমার্সের সত্যিকারের ব্যাপ্তি ঘটে ৯০ এর দশকে। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউণ্ডেশন (এনএসএফ) বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেট চালু করার উপরে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার পরে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে ই-কমার্সেরও প্রসার ঘটে।