somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ওই চলচ্চিত্রটি কয়েক মিনিটের বেশি দেখতে পারিনি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হামিদ মীর
আমি ওই চলচ্চিত্রটি কয়েক মিনিটের বেশি দেখতে পারিনি। এই ভয়াবহ চলচ্চিত্রটির বিবরণ দেয়াও আমার জন্য অনেক কষ্টকর। আমি শুধু এতটুকু বলব, এই চলচ্চিত্রের কয়েকটি দৃশ্য দেখে স্যাম ভাসেলির বিপরীতে ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসবাদকে অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে। আমেরিকার জন্য এটা বড় পুরস্কার, এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী স্যাম ভাসেলি এত বড় অপকর্ম করার পরও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশ্রয়েই আছে

আমার কষ্ট ও যন্ত্রণা ছিল বর্ণনাতীত। এটা আমার সাংবাদিকতাসুলভ অনুসন্ধিৎসু মনোভাবের কারণে। আমি সিএনএনে ইসলামবিরোধী একটি চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় বিক্ষোভের খবর দেখার পর ইন্টারনেটে ওই চলচ্চিত্রটি খোঁজা শুরু করি। আমার এক সহকর্মী কোথাও থেকে ভিডিওটি ডাউনলোড করে আমার কাজ সহজ করে দেন। আমি যখন ওই চলচ্চিত্রটি দেখা শুরু করি তখন আমার কাছে মনে হতে লাগল কেউ যেন আমার মন ও মস্তিষ্কে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।

আমি নিজেকে অনেক শক্ত মনের মানুষ বলে জানি। কিন্তু স্যাম ভাসেলির নির্মিত ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের এই চলচ্চিত্র বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদ। কারণ এই চলচ্চিত্রের দৃশ্য এবং সংলাপগুলো বোমা বিস্ফোরণের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আল কায়েদার হামলায় তিন হাজার লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে ইউটিউবে প্রচারিত এই ভিডিওচিত্রটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্ষক্ষরণ ঘটিয়েছে।

আমি ওই চলচ্চিত্রটি কয়েক মিনিটের বেশি দেখতে পারিনি। এই ভয়াবহ চলচ্চিত্রটির বিবরণ দেয়াও আমার জন্য অনেক কষ্টকর। আমি শুধু এতটুকু বলব, এই চলচ্চিত্রের কয়েকটি দৃশ্য দেখে স্যাম ভাসেলির বিপরীতে ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসবাদকে অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে। আমেরিকার জন্য এটা বড় পুরস্কার, এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী স্যাম ভাসেলি এত বড় অপকর্ম করার পরও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশ্রয়েই আছে।

আল্লাহতায়ালার কাছে লাখো কৃতজ্ঞতা যে, আজ পর্যন্ত কোথাও কোনো মুসলমান হজরত ঈসা (আ.) অথবা অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে এ ধরনের বেয়াদবি করেননি।

আমেরিকার পক্ষ থেকে আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলোর ওপর অনেক অভিযোগ আরোপ করা হয়। অথচ দ্বীনি মাদ্রাসার ছাত্ররা কখনো খৃস্টান অথবা ইহুদি ধর্মের এমন অবমাননার কথা চিন্তাও করে না যা করেছে স্যাম ভাসেলি ইসলাম ও ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে।

আমার আফসোস হয়, এ ব্যাপারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাবাক ওবামা ও তার প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া লোকদেখানো। এই চলচ্চিত্রকে আমেরিকার প্রশাসনবিরোধী হিসেবে অভিহিত করাই যথেষ্ট নয়। বরং এটাও স্বীকার করতে হবে কিছু খৃস্টান ও ইহুদি সন্ত্রাসী আমেরিকাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা করছে। তারা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল কায়েদা, তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।

আমি বারাক ওবামার কাছে স্যাম ভাসেলির মতো সন্ত্রাসীর বিচার প্রার্থনা করব না, তবে আমেরিকান মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে আবেদন করব, তারা যেন এটা খুঁজে বের করেন তাদের দেশের সন্ত্রাসীদের কোন কোন গোপন সংগঠন সহযোগিতা করে।

আমি বিশ্বাস করি, ডেরি জনস ও স্যাম ভাসেলি গোটা আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করে না। আমেরিকায় রমস ক্লার্কের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন, যিনি এক পাকিস্তানি ডাক্তার আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বে আজ আমেরিকা রমস ক্লার্কের দেশ হিসেবে পরিচিত নয়, পরিচিত হচ্ছে স্যাম ভাসেলির দ্বারা।

স্যাম ভাসেলির সন্ত্রাসবাদ আমাকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মুসলমানদের প্রিয় নবীকে অবমাননা করায় খৃস্টান বাদশাহর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তলোয়ার হাতে নিয়েছিলেন। আর শেষ পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দস বিজয় করেছিলেন। কিন্তু আফসোস, আজ মুসলিম বিশ্বের কোনো শাসকের মধ্যে এই অনুভূতি ও উদ্যমটুকু নেই যে, নবীজির অবমাননাকারী কুচক্রীদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে।

আমাদের দেশের সরকার (পাকিস্তান) নবী ও কোরআন অবমাননার মিথ্যে অপবাদে নিজের দেশের গরিব অমুসলিমদের গ্রেফতারে কোনো বিলম্ব করেনি। অথচ আমেরিকান সেনারা যখন কুরআন জ্বালিয়ে দেয়, স্যাম ভাসেলিরা যখন ইসলামের নবীর ওপর কুঠারাঘাত করে তখন শুধু মৌখিক প্রতিবাদকেই যথেষ্ট মনে করে। লিবিয়া-ইয়েমেনে আমেরিকান কূটনীতিকদের ওপর হামলা হলে আমেরিকা সেখানে সেনা পাঠানোর হুমকি দেয়, অথচ আমরা নিজ দেশে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ছাড়া কিছুই করতে পারি না।

আমাদের স্বীকার করতে হবে, আজ আমরা সালাহুদ্দীন আইয়ুবীকে স্মরণ তো করতে পারি, কিন্তু সালাহউদ্দিন আইয়ুবি হওয়ার সাহস দেখাতে পারি না। সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ছিলেন মাত্র একজন ব্যক্তি। কিন্তু তিনি নিজের বীরত্ব ও বাহাদুরি দিয়ে এমন এক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন যাতে আরব, তুর্কি, কুর্দি এমন নানা ভাষাভাষী মুসলমান অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ওই বাহিনীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল ঈমানি স্পৃহা। আর ওই ঈমানি স্পৃহা নিশ্চিহ্ন করার জন্য শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে ভাষাগত, বংশীয় ও গোত্রের বিভেদ উস্কে দিয়েছে।

কে না জানে, বৃটেনের সেনা কর্মকর্তা কর্নেল লার্নস মুসলমানদের ঐক্য ভাঙতে তাদের মধ্যে জাতিপূজার ভূত এমনভাবে উস্কে দিয়েছে যে, আরব ও তুর্কিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াই সংঘটিত হযেছে।

আজ আমাদের কাছে পারমাণবিক শক্তি আছে, কিন্তু নেই ঈমানি স্পৃহা। আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা পারমাণবিক শক্তিকেও হাস্যকর বানিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, আমাদের বাঁচানোর জন্য পারমাণবিক শক্তি অর্জন করা হয়নি, বরং পারমাণবিক শক্তিকেই সবসময় শত্রুদের থেকে রক্ষা করতে হচ্ছে।

আমাদের নিস্পৃহতার অবস্থা এমন যে, আমরা আমাদের শত্রুদের খুশি করতে পরস্পরের ওপর গুলি চালাচ্ছি। অন্যজনকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছি। আবার এর বিচারের জন্য শত্রুদেরই শরণাপন্ন হচ্ছি। গত এগার বছরে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার মিত্র পাকিস্তানের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যে, দেশীয় লোকদের গুম করা হচ্ছে। এমনকি গুম হওয়া ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে ইতিমধ্যে আমেরিকার একটি প্রতিনিধি দলকে ডেকে পাকিস্তানে আনা হয়েছে। এটাকেই বলা হয়, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা।

ভাবনার বিষয় হলো, আমাদের আইন আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। আমরা পরস্পরকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সুতরাং আমরা আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বাণীকে কীভাবে সংরক্ষণ করব?

আমার জানা মতে, আমেরিকা ও হল্যান্ডে এমন দুটি ফিল্ম বানানো হচ্ছে যাতে মুসলমানদের শিয়া-সুন্নি মতাদর্শের বিরোধকে উস্কে দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি ফিল্ম ইরানের বিরুদ্ধে। এতে শিয়া-সুন্নি বিরোধ উস্কে দেয়ার পাশাপাশি ইরান ও আরবের মধ্যে বংশীয় বিভেদ নতুন করে তাজা করার চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয়টি সিরিয়ার শিয়া-সুন্নি মতপার্থক্যের ব্যাপারে।

একটি পশ্চিমা টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের অবস্থার ওপর একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানো হচ্ছে। এতে বালুচ ও পশতুদের মধ্যে বিভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টা আছে।

এসব ব্যাপারে অন্য কোনো কলামে বলব। আজ শুধু এতটুকু বলতে চাই, অভিন্ন নবীর উম্মতেরা একটু ভাবুন। পশতুন কোনো বালুচের শত্রু না, বালুচ কোনো হাজারহা সম্প্রদায়ের শত্রু না, সিন্ধিরাও কোনো মুহাজিরের শত্রু না। বরং সবার বড় পরিচয় মুসলমান। আমাদের আসল শত্রু হলো যে আমাদের নবীর ব্যাপারে বেয়াদবি করেছে। শত্রুরা আমাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছে। আমরা পরস্পরে মারছি এবং মরছি। তবে আসুন, এখন আমাদের সবার শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই।

দৈনিক জং-এর সৌজন্যে। উর্দু থেকে অনুবাদ: জহির উদ্দিন বাবর

হামিদ মীর: পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক; প্রধান নির্বাহী, জিও টিভি
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×