somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় গানেরা

০১ লা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালো লাগা গানের তো আর শেষ নেই। দিন যায় আর নতুন নতুন ভালো লাগা গানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারণা ভালোলাগা গানের সাথে বয়সের একটা সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ নিজের তারুণ্যের সময়টাতে যেসব গান জনপ্রিয় হয় সবার একটা ধারণা থাকে যে এ গানগুলোই সেরা। সেজন্য গানের ক্ষেত্রে জেনারেশন গ্যাপটা বেশ প্রকট ভাবেই লক্ষ্য করা যায়।

হঠাৎ মনে হলো এত এত ভালোলাগা গানগুলো থেকে কিছু গান ও গান নিয়ে ভাবনাগুলো ব্যক্তিগত ব্লগে সংরক্ষণ করি। এমন একটি মনে হওয়া থেকেই বারবার শোনা অনেক গান থেকে কয়েকটি তুলে রাখলাম।

বাংলাদেশ
সত্যি স্বীকার করলে বলতে হয় আমার মধ্যে দেশপ্রেম বোধের বেশ ঘাটতি রয়েছে। মহাবিশ্বের অতি ক্ষুদ্র এক কণার মতো ঘুরে বেড়ানো পুরো পৃথিবীটাকেই আমার নিজের দেশ মনে হয়। মনেহয় যেখানে নীল আকাশ রয়েছে, সময়ের বিরতিতে যেখানে পূর্ণিমা আসে তার সবই আমার নিজের। তাপরও কিছু কথা থাকে। এখানকার গাছ আমি চিনি এখানকার ঘাস আমি চিনি এখানকার মাটি আমি চিনি এখানকার বৃষ্টির গন্ধ শুঁকে অভ্যস্ত আমার নাক, শরতের শাদা মেঘমালা অথবা কাশবন। এখানেই একমাত্র আমি পাই আমার ভাষায় নিজের সর্বোচ্চ ভাব প্রকাশের সুযোগ। এদেশ যেমনই হোক ভালো হোক খারাপ হোক তপ্ত হোক বা শীতল, বাঁচি মরি আমি এখানে এদেশেই আছি। কোথাও যাবো না। এখানকার মাটির চাইতে ভালো কেউ আমাকে চিনবে না। তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু তোমার মাঝেই শেষ। আইয়ুব বাচ্চুর এই গানটি হয়তো সে কারণেই এত ভালো লাগে।


ডেজার্ট রোজ
ভূমধ্য সাগরের তীরবর্তী একটি দেশ আলজেরিয়া। বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে আগমন ঘটেছে ডাচ, রোমান, ফ্রেঞ্চ সহ ইউরোপের বিভিন্ন জাতির। তাদের সাথে করে এসেছে তাদের নিজস্ব সংগীত এবং বাদ্যযন্ত্র। যা সময়ের সাথে আলজেরিয়ার স্থানীয় সংগীতের সাথে মিশে মিশে জন্ম নিয়েছে "রাই মিউজিক" এক জনপ্রিয় ধারার। সেই রাই সংগীতকে সাথে করে স্টিং গেয়েছেন তাঁর বিখ্যাত ডেজার্ট রোজ। মাঝেমাঝেই চোখ বন্ধ করে এই গানের সাথে মাথা দোলাই। আই ড্রিম অব রেইন, আই ড্রিম অব গার্ডেন্স ইন দ্যা ডেজার্ট সেন্ড।


এজ অব লোনলিনেস
এককালে আমার বেশ অনেকজন মঙ্গোলিয়ান বন্ধু-বান্ধব ছিলো। তাদের মাধ্যমে মঙ্গোলিয়ার বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সাথে তাদের ট্র্যাডিশনাল মিউজিকের সাথেও মোটামুটি পরিচিত হই। খালি গলায় এরা এত চমৎকার এবং মিহি সুর তুলতে পারে ব্যাপারটা আমার কল্পনাকেও হার মানায়। কন্ঠের কি অপূর্ব কারুকাজ! মঙ্গোলিয়ান ট্র্যাডিশনাল গানগুলো শুনলে মনে হয়না কারো কন্ঠ থেকে বেড়িয়ে আসছে এটি। মনেহয় প্রকৃতি থেকে আপনাআপনিই আসছে এ সুর। এনিগমার “এজ অব লোলনিনেস” গানটি আগের থেকেই ভালো লাগতো, তারপর যখন জানতে পারলাম গানটি মঙ্গোলিয়ান ট্র্যাডিশনাল গানের ফিউশন তখন দুই ভালোলাগা এক হয়ে ভালোলাগা আরো বাড়িয়ে দিলো।


ইয়া মান হাওয়া
ছোটবেলা থেকেই আরবী ভাষার প্রতি আমাদের একটি ধারণা হয় এটি সম্পুর্ণ ধর্মীয় ভাষা। যার কারণে আরবী সাহিত্য কবিতা গানের দিকে আমরা আর সেভাবে আগ্রহী হইনা এটা জানার পরও যে আরবী সাহিত্য কবিতা গানের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। আরবী ভাষা আমি জানি না, আরবী ভাষায় আমার বিদ্যা হচ্ছে কাইফা হাল, আলহামদুলিল্লাহ্‌ এই পর্যন্তই। কিছু আরব বন্ধুর কল্যাণে আরবী সাহিত্যের ভাবের সাথে একটু একটু পরিচয় হয়। ইংরেজিতে যতটুকু বোঝানো যার আর তার সাথে মৌখিক অঙ্গভঙ্গি এবং অনেকদিন ধরে মেশার কারণে আরবী সাহিত্যে ভাবের গভীরতা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারি। সাথে আফসোসও হয় এই ভেবে যে এদেশের অনেক মানুষ আরবী ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেছে বা এখনও করে যাচ্ছে, কিন্তু সে হিসেবে আরবী সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ সেভাবে নেই। বা থাকলেও কোন কারণে আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। যা আমাদের আরবী সাহিত্যের প্রতি বিমুখতার অন্যতম কারণ। যতদূর শুনেছি “ইয়া মান হাওয়া” গানটি আসলে আরব অঞ্চলে চলে বেড়ানো একটি লোকজ কবিতা। খুব বেশিদিন হয়নি যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েকজন সৌদি আরবের ছাত্র মিলে এটিতে পশ্চিমা সংগীতের অনুকরণে সুরারোপ করেন।


আমার গায়ে যত দুঃখ সয়
উকিল মুন্সীর অন্যান্য গানের মতো এই গানটিও আমার ভীষণ প্রিয়। তবে এখানে লেখার কারণটা একটু ভিন্ন। উকিল মুন্সীর গান শুনে ভাবতাম এক অজ পাড়াগাঁয়ের (যদিও নেত্রকোনা সুনামগঞ্জ গানের জন্য বিখ্যাত) এক মৌলভী কিভবে তাঁর গানে এত চমৎকার ভাব আনতে পারলেন। ভাব থাকলেই তো হবে না, ভাব প্রকাশের জন্য চাই ভাষার শিক্ষা। বাংলা সাহিত্যে বস্তু দিয়ে ভাবের উপমা সেভাবে হয় না। যেমন ব্যথা সওয়ার জন্য শরীর ঠিক আছে কিন্তু দুঃখ আসলেই আমাদের সাথে আনতে হবে মন। কিন্তু অল্প বিস্তর আরবী সাহিত্যের একটু আধটু যা বুঝেছি (অবশ্যই খুবই সামান্য) তাতে আরবী সাহিত্যে এমন উপমা খুব সাধারণ বিষয় এবং এতে তার ভাবের বা পাঠকের কাছে অর্থের ব্যত্যয় ঘটায় না। যেমন ঘটায়নি উকিল মুন্সীর এই গানে। এখানে একটি সন্দেহ মাথায় উঁকি দিয়ে যায়, উকিল মুন্সী কি বাংলার সাথে সাথে আরবী সাহিত্যের ভাবধারায় অনেকটা অনুপ্রাণিত ছিলেন! এবং থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, আরবী নিজ গুণেই অনুপ্রেরণা জোগায়। আশাকরি আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞগণ আরবী সাহিত্য অনুবাদ করে অনুবাদ সাহিত্যে বাংলা ভাষাকে করবেন আরো সমৃদ্ধ, অথবা যদি অনুবাদ থেকে থাকে তাহলে তার প্রচারণা বাড়বেন।


বিলি জেন
মাইকেল জ্যাকসন মারা গেলে বিশ্ববাসীর সাথে সাথে আমার কাছেও দ্রুতই খবর পৌঁছে যায়। কিন্তু প্রিয় গায়ক মারা গেলেন সেজন্য কেন জানি কোনরকম অনুভূতি হলো না। তার কিছুদিন পর কোন এক শপিং মলে শুনি মাইকেল জ্যাকসনের এই গানটি বাজছে। শোনামাত্র মুহুর্তে মনে হলো মাইকেল জ্যাকসন তো মারা গেছেন। মনে হওয়া মাত্রই আক্ষরিক অর্থেই আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো। কেন জানি মাইকেল জ্যাকসনের অন্যান্য গানের চাইতে এই গানটা আমার বেশি প্রিয়।


লাইক এ ভার্জিন
না, ম্যাডোনার এই গানটিই আমার কাছে সবচাইতে প্রিয় নয়, তারপরও গানটি প্রায়ই শুনি। এই গানটিতে কেমন ম্যাডোনার গলাকে অনেক বেশি শিশুতোষ মনেহয়। শুনতে ভালো লাগে।


সামডে সামওয়ে
মাইকেল লার্নস টু রক-এর এই গানটি প্রথমে যতটা আকৃষ্ট করতে পেরেছিলো তার চাইতে বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলাম গানটির ভিডিও চিত্র দেখে। অদ্ভুত এক ভিডিওচিত্র। দেখলে মনেহয় পুরোটা সময় ক্যামেরা কোথাও থামেনি, পুরোটা এক টেকে নেয়া। আসলেই তাই নাকি জানিনা তবে ভিডিওটি আপনি দেখলেও বিভ্রান্ত হতে পারেন। ওয়ান্ট টু স্টার্ট এ নিউ লাইফ বাট ইটস সিমস টু বি র‍্যাদার এবসার্ড, হোয়েন আই নো দ্যাট ট্রুথ ইজ দ্যাট আই অলওয়েজ থিংক অব ইউ। গানটির কথা আর আলাদা করে নাই বললাম। প্রিয় গানের অন্যতম।


আর কথা না বাড়িয়ে এলভিসের একটা গান দিয়ে আজকের মতো বিদায় হই। "লেটস রক"। আমার পরিচিত একজন একবার বলেছিলো, ২/১বার জেলে না গেলে নাকি জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়! আমার পরিচিতের কথা সত্য কিনা জানিনা, তবে এলভিসের এই গানটি যে কখনও পুরানো হবে না সেটা বিলক্ষণ জানি।


শেষ হয়েও হয়না শেষ। ইদানিং কালের শোনা একটা টিভি নাটকের গানের লিংক দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। দারুণ ভালো লেগে গেছে গানটি।
চল জটিল হয়ে যাই


আপডেট

জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল
আমার ভালোলাগার তালিকায় এই গানটি না থাকাটা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বেশি প্রিয়রা কেমন জানি একটু আড়ালেই থেকে যায়! স্যাড টু সে আই অ্যাম অন মাই ওয়ে, ওন্ট বি ব্যাক ফর ম্যানি এ ডে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১২
২৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×