somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা, রক্তগঙ্গা বহমান
নাহি নাহি ভয় তবু হবে জয়, জয় শেখ মুজিবুর রহমান।'
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময়, বেদনার দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে বাঙালি হারায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এদিন কাকডাকা ভোরে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বাঙালি জাতির ললাটে এঁটে দেয় কলঙ্কের তিলক। যে কলঙ্ক থেকে দেশ-জাতি আজো পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। এখনো ফাঁসির দ-প্রাপ্ত কয়েকজন খুনি বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। সারাদেশসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট ভোর ৬টায় ধানম-ির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ সময় সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এ কর্মসূচিতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানরাও অংশ নেবেন। তারা বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করবেন। থাকবেন বিদেশি কূটনীতিকসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছিল অটুট বন্ধন, আত্মার আত্মীয়তা। প্রত্যেকটি বাঙালির হৃদয়ে ছিল তার প্রতিচ্ছবি, যা এখনো জ্বলজ্বল করছে সবার মনে। তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা যার ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছুই ছিল না। জনগণের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন। জনগণের ভালোবাসাই ছিল তার একমাত্র সম্পদ। যে সম্পদ কেউ কোনোদিন কেড়েও নিতে পারে না। আর পারেনি বলেই ১৫ আগস্ট এলেই তা গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। তাকে কোনো বাঙালি হত্যা করতে পারে এমন বিশ্বাস কারও মনে কোনোদিন ছিল না, যা ছিল না বঙ্গবন্ধুর মনেও। আর তাই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও ঘনিষ্ঠজনদের শত অনুরোধ উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতি হয়েও বঙ্গভবনের মতো সুরক্ষিত স্থানে না থেকে সাধারণ মানুষের মতো থেকেছেন ধানম-িতে অরক্ষিত নিজ বাড়িতে। প্রতিটি মুহূর্ত থেকেছেন গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে। আর এতেই তার কাল হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী ওই ঘাতকচক্র হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে, যা ছিল পৃথিবীতে বিরল ও মর্মান্তিক ঘটনা। মহাত্মা গান্ধী, লুথার কিং, লিংকন, লুমুম্বা, কেনেডি, ইন্দিরা গান্ধী পর্যন্ত রাজনৈতিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু কাউকেই বঙ্গবন্ধুর মতো সপরিবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়নি। এদিন ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, জামালসহ ২২ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও এই নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন। যে কাজটি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও করার সাহস করেনি, সেটিই করল এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তখনই ঘটানো হয় এ নৃশংস ঘটনা। পরিসমাপ্তি ঘটে একটি ইতিহাসের। সে থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার আকাশ-বাতাস ও মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা, যা কোনোদিন হয়নি, হবেও না। পৃথিবীতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, তার কর্ম।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। এতে ১৫ জন আসামির মৃত্যুদ- দেন জজ আদালত। এর বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করলে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের একক বেঞ্চ ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখেন। অপর ৩ জনকে বেকসুর খালাস দেয়। পরবর্তীতে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্তরা ২০০৭ সালের ৭ আগস্ট লিভ টু আপিল করলে ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। আপিলে খুনিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিলাত ডিভিশন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয় ২০১০ সালে। এর ফলে দীর্ঘদিন পর কলঙ্কমুক্ত হয় বাঙালি জাতি। বুক থেকে নামে শোকের পাথর। বিগত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত পুনঃসিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ওইদিন সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর দিবসটি আবারো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ওই বছর ১০ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বলেছেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জনগণের কাছ থেকে তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। পনের কোটি বাঙালির অন্তরে গ্রোথিত রয়েছে তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার সংগ্রামী জীবনাদর্শ।
৬টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর বিভিন্ন শাখা কমিটির নেতারা। সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল সোয়া ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও বাদ জোহর মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল। আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আলতাফ হোসেন, শেখ হারুন অর রশিদ, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ও সুজিত রায় নন্দী ও দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়া সকাল ১১টায় মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। সকাল ৮টায় মিরপুর গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান। সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টায় মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে প্রার্থনা অনুষ্ঠান। বাদ আসর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ ও ইফতার মাহফিল।
আগামীকাল ১৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×