somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌরভ ছড়ানো নাম

২৪ শে মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
হাঃ হাঃ হাঃ ... হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে খাদিজা। এই বুঝি পেটে খিল লাগে! হাতে একখানা চিঠি। আর কলিমুল্লাহটা পিছনে পিছনে চেঁচিয়েই যাচ্ছে- ভাবি, ভাল হবে না কিন্তু... ভাইয়াকে বলে দিলে একদম ভাল হবে না কিন্তু...

তার কথাকে পাত্তাই দেয় না খাদিজা। উল্টো গতি পায় উৎসাহ। জানালার পাশে গিয়ে চিঠিটাকে চোখের সামনে ধরে কলিমুল্লাহকে আড়াল করে বলে- আ-হা-হা-হা-হা... এ না-কি প্রে-মে-র ডায়লগ! হাঃ হাঃ হাঃ।

ছোঁ মেরে চিঠিটা কেড়ে নিতে চায় লাজুক কলিমুল্লাহ। পারেনা। ‘ধরা পড়ে গেছি, ধরা পড়ে গেছি’ ভঙ্গিতে বলতে থাকে- ভাবি, এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না... একদম ভাল হচ্ছে না...

কিন্তু খাদিজাকে ঠেকায় কে? চিঠি পড়তে শুরু করে। এদিক-সেদিক হেলে-দুলে নাকি সুরে পড়তে শুরু করে। আঁমাকে কঁলিমুল্লাহ বলে ডেকোনা। হাঃ হাঃ হাঃ।

আবার ছোঁ মারে কলিমুল্লাহ। আবারও ব্যর্থ। জানালার দিক থেকে ঘুরে যায় খাদিজা।

-এঁই নামে ডাকলে বুঁড়া-বুঁড়া লাগে। হাঃ হাঃ হাঃ। হৃঁদয় বলে ডেকো। হাঃ হাঃ হাঃ।

দেবর-ভাবির কাহিনী এতক্ষনে ধরতে পেরেছে চেয়ারে বসে বই পড়তে থাকা আব্দুল্লাহ – প্রেমপত্র লিখতে গিয়ে ধরা পড়েছে বেচারা। এতে মজা পায় আব্দুল্লাহও। মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। প্রশ্রয়ের হাসি। একসময় তার নিজেরওতো এমনই মনে হতো! বেচারার আর দোষ কি? আর মনে মনে বকতে থাকে বাবাকে। তার জন্যইতো আজকে এই অবস্থা! কীসব সেকেলে সেকেলে নাম রাখে – সলিমুল্লাহ, আব্দুল্লাহ, কলিমুল্লাহ... যত্ত সব!

আব্দুল্লাহর চিন্তায় ছেদ পড়ে হঠাৎ। কী যেন চকচক করতে দেখে সে। ভাল করে খেয়াল করে। দেখে- খাদিজার চোখ ছলছল করছে। শেষ বিকেলের তির্যক আলো জানালা অতিক্রম করে সে জল ছুঁয়ে গেছে। খুব ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। কারণ আর কেউ না জানুক, সে তো জানে- খাদিজা দুঃখে কাঁদে না, পাথর হয়ে থাকে। আবার আনন্দের অশ্রু ধরে রাখতে পারে না কিছুতেই। অনেকদিন পর এ দৃশ্য দেখে ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। আবার ভয়ও পায়। তবে কি খাদিজা ভুলে গেছে সেদিনের কাহিনী? নাহ, এমন তো হওয়ার কথা নয়। সেইবার প্রথম যখন তাদের সন্তান হয়, খাদিজার ইচ্ছে ছিল ছেলের নাম রাখবে ‘মেঘ’। তাও আসল নাম না, ডাক নাম। কিন্তু একথা বাবাকে জানাতেই তিনি একনায়কের ভঙ্গিতে ডিক্টেশন জারি করেন- আমার নাতির এমন অমুসলিম নাম রাখা চলবে না। তার নাম হবে ‘এনায়েতউল্লাহ’। খাদিজার স্তব্ধতা সেদিন ভাঙ্গেনি।

২.
খাদিজা-আব্দুল্লাহর সংসারে এক নতুন অতিথি এসেছে আজ। গতকাল সারারাত আজরাইল-ডাক্তারে টানাটানির পর আজ সকালে পৃথিবীর আলো দেখেছে নবাগত ছেলে। সিজারিয়ান বেবী। মায়ের গর্ভে বাচ্চার পজিশন নাকি উল্টা ছিল। মা-ছেলে দুজনেরই প্রাণ যায় যায়। রক্ত লেগেছে এক ব্যাগ। ঐ সময় রক্ত না পেলে কী যে হত, আল্লাহই জানেন। পরিবারের কারো সাথে খাদিজার রক্তের গ্রুপ মিলেনি। এত রাতে কিভাবে রক্ত পায়- সে চিন্তায় সবাই যখন দিশেহারা, তখন কলিমুল্লাহ এক যুবককে নিয়ে আসে। রাত ১২টার সময় রক্ত দিয়ে গেছে অজানা-অচেনা সে যুবক - স্বেচ্ছায়, বিনামূল্যে। ভার্সিটিতে পড়ে সে। নাম সৌরভ। আশ্চর্য লাগে আব্দুল্লাহর। চেনেনা-জানেনা, অথচ এত রাতে এসে রক্ত দিয়ে গেল! শ্রদ্ধা জাগে মনে। তার জন্য দোয়া করতে ভুলে না - আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।

আশংকার সময় কেটে গেছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে নতুন অতিথি। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আব্দুল্লাহর বড় ভাই সলিমুল্লাহ প্রস্তাব দেয়- এ ছেলের নাম বরকতউল্লাহ রাখলে কেমন হয়? পাশ থেকে নরম অথচ দৃঢ় কন্ঠে আব্দুল্লাহর বাবা জানিয়ে দেন- এর নাম হবে ‘সৌরভ’।

নাম শুনে অবাক তাকিয়ে রয় সবাই। ভুল শুনছি না তো? খাদিজা কোন কথা বলে না। তার দু’চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ক’ফোঁটা জল।

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×