এ বছরের ৬ মে মুক্তি পেয়েছে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘অস্তিত্ব’ ছবিটি। ড্রিম বক্সের ব্যানারে ছবিটির প্রযোজক ছিলেন কার্লোস সালেহ। ছবির গল্পটিও লিখেছেন প্রযোজক নিজেই।
ছবির কাহিনী আবর্তিত হয় পরী নামের এক অটিস্টিক মেয়েকে ঘিরে যাকে একটি অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেই স্কুলেরই শিক্ষক ইমতু যে কিনা স্কুলটির পরিচালক, সেই সাথে শিশুদের সমগ্রিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে থাকে। এক সময় স্কুলের সেরা অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ অলিম্পিকে নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নেয় ইমতু। কিন্তু এদিকে ইমতু নিজেই ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এক সময় দেখা যায় সে নিজেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
ছবিতে অটিস্টিক পরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিশা। বরাবরের মত অসাধারণ ছিল তার অভিনয়। ইমতুর চরিত্রে আরেফিন শুভর অভিনয়ও ছিল ভালো। এছাড়া পরীর ভাইয়ের চরিত্রে জোভান, মা, দাদী এবং বাবার চরিত্রে যথাক্রমে সুচরিতা, সুজাতা এবং সুব্রতর অভিনয়ও ছিল বেশ ভালোই। ভিলেন চরিত্রে ডনও ভালো করেছেন। কিন্তু অন্যান্য ছোট চরিত্রগুলোর অভিনয় একদম ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে মুখস্ত সংলাপ হর হর করে বলে দিয়েই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে সবাই।
ছবির ট্রেলার দেখে যেমনটা ভেবেছিলাম ছবি দেখে ততটা ভালো লাগেনি। অ্যাকশন আর ভালোবাসার মিশেলে অন্য রকম কিছু ভেবেছিলাম ছবিটিকে। কিন্তু তা আর হল না। ট্রেলারে যতটুকু অ্যাকশন ছিল, পুরো ছবিতে ততটুকুই অ্যাকশন। আর এমনিতেও ছবিতে আকশনের দরকার ছিল না বোধ করি। পুরো ছবির কাহিনী এত্তটুকু, কিন্তু সেটাকে টেনে লম্বা করার কোন দরকার ছিল না।
ছবির শিল্প নির্দেশনা ভালো ছিল, সেই সাথে ভালো ছিল চিত্রায়ন। বিশেষ করে গানের দৃশ্যগুলো ভালো লেগেছে। তবে টুকটাক অসঙ্গতিও লক্ষ্য করা গেছে। যেমন পরীদের বাসার দরজার রঙ বাইরে থেকে গাঢ় বাদামী আবার ভেতর থেকে হালকা রঙ দেখা যায়। একই দরজার দুই দিকে দুই রঙ হয় জানা ছিল না। আবার পরীর ভাইয়ের বান্ধবীকে ঘরে আঁটসাঁট খাটো প্যান্ট এবং টপ পরে নাচতে দেখা গেছে। সে যতই বড়লোক ঘরের মেয়ে হোক না কেন ঘরে তো মেয়েরা পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এমন পোশাকই পরে। সেখানে এই ধরণের পোশাক পরে নাচানাচি দৃষ্টিকটু লেগেছে। তার ওপর এটা ছিল একটা মফস্বল শহরের কাহিনী, সেখানে এই ব্যাপারটা একদম যায় নি।
আগেই বলেছি ছবির গানের দৃশ্যায়ন ভালো ছিল। সেই সাথে গানগুলোও ছিল শ্রুতিমধুর। বিশেষ করে ‘আয়না বল না’ গানটা ছিল অসাধারণ। কিন্তু ছবির কাহিনীর সাথে হুটহাট করে গান জুড়ে দেওয়ায় একদম ভালো লাগেনি। অটিস্টিক পরীর শিক্ষক ইমতুকে ভালো লাগা সত্ত্বেও এমন স্বাভাবিক ভাবে নাচ গানের কথা চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না। আবার অন্যদিকে ইমতুও শিক্ষক হিসেবে ছাত্রী পরীকে ভালোবাসার নজরে দেখেনি। তাই গান যদি দিতেই হত তবে অন্যভাবে অন্য ধরনের গান জুড়ে দেওয়া যেত।
পরিশেষে বলবো, ছবি দেখে খুব বেশী ভালো লাগেনি কিন্তু খুব বেশী খারাপও লাগেনি। অন্তত এটা ভেবে শান্তি লাগে যে, ভালো ছবির সুদিন আবার ফিরে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬