এ বছরের জানুয়ারিতে হয়ে যাওয়া ১৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরণের পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সে সকল চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘থিঙ্কিং অব হিম’। ১১১ মিনিট ব্যাপ্তি এ ছবিটি প্রথম মুক্তি পায় ২০১২ সালে। পাবলো চেজার পরিচালিত ছবিটি ভারত এবং আর্জেন্টিনার প্রথম যৌথ প্রযোজনার ছবি।
ভিন্ন ধারার এই ছবিটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তৎকালীন সময়ের আর্জেন্টিনার সাংবাদিক ভিক্টরিয়া ওকাম্পুর সম্পর্ককে ঘিরে নির্মিত হয়েছে। সেই সাথে বর্তমানের কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এক অদ্ভুত যোগসূত্রে গাঁথা হয়েছে। ফেলিক্স নামের এক ভূগোল শিক্ষক লাইব্রেরীতে ভিক্টরিয়া ওকাম্পু নামের এক লেখিকার বই খুঁজে পান যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্জেন্টিনা সফর সহ আরও অনেক কিছু তুলে ধরেছেন লেখিকা। বইটি পড়তে পড়তেই কবিগুরুর ব্যাপারে আগ্রহ বেড়ে যায় ফেলিক্সের। কবিগুরুর আরও কিছু বই পড়ে ফেলে সে। কিন্তু তবুও তৃষ্ণা মেটেনা তার। পরিণামে সে রওনা দেয় ভারতের উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য বিশ্বভারতী ভ্রমণ করে আরও জ্ঞান আহরণ করা। আর এখানে এসেই জীবনের অন্য এক মানে খুঁজে পায় ফেলিক্স। আর তাকে এই কাজে সাহায্য করে কমলি নামের এক বাঙালি কন্যা। প্যারালালি বর্তমানের কাহিনীর সাথে সাথে চলতে থাকে কবিগুরুর আর্জেন্টিনা সফর এবং সেখানে ভিক্টরিয়া ওকাম্পুর সাথে পরিচয় এবং তার সাথে কাটানো সময়গুলো। কবিগুরুর ভারতে আসার পর ভিক্টোরিয়ার সাথে চিঠি চালাচালি এবং ভিক্টোরিয়ার ভারতে আসার কাহিনিও উঠে এসেছে ছবিতে। সেই সাথে এটাও দৃশ্যিৎ হয়েছে যে কবিগুরুর ছবি আঁকার ব্যাপারে ভিক্টোরিয়ার উৎসাহ ছিল অসামান্য। এমনকি প্যারিসে কবিগুরুর আঁকা ছবি নিয়ে একক প্রদর্শনীরও সুযোগ করে দেয় ভিক্টোরিয়া।
ছবিটিতে রবি ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি, ভিক্টরিয়া ওকাম্পুর চরিত্রে ছিলেন আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী এলেওনোরা ওয়েক্সলার। বর্তমানের কাহিনী পটে ফেলিক্সের চরিত্রে ছিলেন আর্জেন্টাইন অভিনেতা হেক্টর বোরদানি। কমলি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাইমা সেন। অভিনয়ের কথা যদি আসে তাহলে বলতে হয় সকলের অভিনয় ছিল দেখার মত। বিশেষ করে কবিগুরুর চরিত্রে ভিক্টর ব্যানার্জি একদম মিশে গিয়েছেন। শুধু পোশাক পরিচ্ছদেই নয়, কবিগুরুর চলন বলন খুব নিখুঁতভাবেই রপ্ত করেছেন তিনি।
কবিগুরুর জীবন নিয়ে বলে শুধু তাঁর গান ব্যবহার করা হয়নি ছবিতে, প্রাসঙ্গিক ভাবে লালন শাহের গানও ব্যবহার করা হয়েছে। ছবির দৃশ্যায়ন এবং কালার কারেকশনও যথাযথ ছিল।
আর্ট ফিল্ম ধাঁচের এই ছবিটি অনেকের কাছে বোরিং লাগতে পারে কিন্তু যারা চলচ্চিত্রের মাঝে শৈল্পিক ছোঁয়া খুঁজে থাকেন তাদের জন্য অসাধারণ উপভোগ্য একটি ছবি এটি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৩