ভারতের রাজধানী দিল্লির হাউজ কাজি নামে এলাকায় একটা হিন্দু মন্দিরে দইদিন আগে একটি ছোটখাটো হামলার পর থেকে সেই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয় । আর তারপর থেকে সেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ দিল্লি পুলিশের কমিশনারকে তলব করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লির পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন হামলাকারীদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজ চলছে।অন্যদিকে হাউজ কাজি নামে যে এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে সেই এলাকায় হিন্দু এবং মুসলিম সমাজের নেতারা ঘন ঘন শান্তি বৈঠক ও পদযাত্রা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।পুরনো দিল্লির অতি ঘিঞ্জি এলাকা হাউজ কাজিতে রবিবার বেশি রাতে দুই হিন্দু এবং মুসলিম প্রতিবেশীর মধ্যে বাড়ির সামনে মোটরবাইক পার্ক করাকে কেন্দ্র করে ছোটোখাটো একটা ঝামেলা হয়েছিল।আর তারই জেরেই ঘন্টাকয়েক পর স্থানীয় দুর্গা মন্দিরে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
স্থানীয় এমএলএ অলকা লাম্বা বুধবার এক সংবাদ সন্মেলেনে সাংবাদিকদের কাছে বলেন এই এলাকাটা গঙ্গা-যমুনা তেহজিব বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক পীঠস্থান।অথচ এখানেই পার্কিং নিয়ে সামান্য ঝগড়ার জেরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ছড়িয়ে পড়ল যে এলাকায় না কি মব লিঞ্চিং চলছে।হ্যাঁ দুর্গা মন্দিরে পাথর ছোঁড়াতে কিছু কাচ ভেঙেছে বা মন্দিরের ক্ষতি হয়েছে এ কথা যেমন ঠিক তেমন মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বা আগুন লাগানো হয়েছে বলে যে সব রটনা চলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা।অন্যদিকে দুর্গামন্দিরে হামলার এলাকায় গত তিনদিন ধরেই চলছে তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা।চাঁদনি চকের বিজেপি এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধন এলাকা পরিদর্শন করে শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন।তিনি আরো বলেছেন এই ঘটনা যতই যন্ত্রণাদায়ক এবং হৃদয়বিদারক হোক না কেন তারপরও
মহল্লায় সৌহার্দ্য রক্ষা করতেই হবে।পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
আরেকদিকে পুরনো দিল্লির ফতেহপুরী শাহী মসজিদের প্রভাবশালী ইমাম মুফতি মুকাররম আহমেদ জানিয়েছেন প্রায় তিন দশক আগে লালকৃষ্ণ আদভানির রথযাত্রাও কিন্তু এই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল।তখনও কিন্তু আমাদের মসজিদের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়েছিল, ইমামসাহেবকে আঘাত করা হয়েছিল ত্রিশূল দিয়ে।তবে আমরা কিন্তু ওই ঘটনায় তেমন কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে আপোস করেছিলাম কোনও মামলা হয়নি আর কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।আশা করছি এবারেও মুসলিমরা প্রয়োজনে মন্দিরের পুনর্নিমাণে সাহায্য করবে বলে,এই বিষয়টা আপোসে মিটিয়ে নেওয়ারই আবেদন জানান মুফতি মুকারম আহমেদ।ড: সুরেখা নাঈমের মতো এই স্থানীয় বাসিন্দারাও একবাক্যে জানাচ্ছেন, এলাকার সম্প্রীতির পরিবেশ যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে।চাঁদনি চকের হিন্দু-মুসলিমরা যেভাবে একে অন্যের উৎসবে এবং আনন্দে চিরকাল ভাগীদার হয়ে এসেছেন, সেই সংস্কৃতি তারা কিছুতেই নষ্ট হতে দেবেন না।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্রিফ করে আসার পর দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পটনায়ক অবশ্য জানান পরিস্থিতি এখন অনেক নিয়ন্ত্রণে আছে।তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন আমরা এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি আর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাকিদেরও আটক করার চেষ্টা চলছে ।তবে দিল্লির ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চাঁদনি চকে বুধবারও সব দোকানপাট খোলেনি।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার রেশ সেখানে যে এখনও পরিস্থিতি থমথমে করে রেখেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৫০