বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বহু মানুষ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত এক মাসে শুধু ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে তিন শতাধিক মানুষকে আটক করেছে বিজিবি।
তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে সংখ্যায় মানুষ আটক হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।
অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি জানার চেষ্টা করেছে এদের পরিচয় কী এবং কেন এই অনুপ্রবেশ ?২০১৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাতে মহেশপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ৫৮ বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হয়েছে ১২ জন।তার মধ্যে রবু নামের একজন ছোট ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন।
তিনি সপরিবারে থাকতেন ভারতের মুম্বাই শহরে।তার দাবি মতে ভাল কাজের সুযোগ পেতে বাংলাদেশ থেকে তিনি বছর কয়েক আগে ভারতে গিয়েছিলেন, অবৈধ নাগরিক হিসেবে আটক হয়ে তার স্ত্রী ছয় মাস ধরে এখন ভারতের কারাগারে আটক আছেন।তার বক্তব্য
হল,ওখানে বেছে বেছে বাঙালিদের ধরিয়ে দিচ্ছে ভারত সরকার চায়না কোনো ভাবেই বাঙালিরা ওখানে থাকুক ।বিজিবি সূত্র জানাচ্ছে, এরা অনুপ্রবেশকারী। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
তবে সীমান্তবর্তী গ্রামেগুলোর লোকমুখে জানা যায়, এরকম প্রতিদিনই বহু মানুষ ঢুকছে যাদেরবেশির ভাগই ধরা যাচ্ছে না।
সীমান্তবর্তী এলাকার নেপা বাজারে এরকম একজনকে পাওয়া যায় যার পরিচয় উদ্ঘাটনে ভিড় জমিয়েছিল স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
তার দাবি হল, ভারতে দালালকে তিনি ১০ হাজার রুপি দিয়ে তারপর বাংলাদেশে ঢুকেছেন।
আর বাংলাদেশে ঢোকার পর এপারের দালালরা তার মোবাইল এবং টাকাপয়সা সব ছিনিয়ে নিয়েছে।সবুজ নামের
সেই তরুণ জানায় তিনি ব্যাঙ্গালুরু থেকে এসেছেন।তিনি আট কি নয় মাস আগে কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন তার মতো আরো অনেকেই ১০ই ডিসেম্বর রাতে সীমান্ত পার হয়েছেন। কিন্তু সেই দিন বিজিবির হাতে
কেউ আটক হয়নি।তিনি বলেন আমরা একসাথে ঢুকছি চারজন। অন্য লাইনেও পঞ্চাশ জনের মতো ঢুকছে বলে সবুজ
ধারনা করছেন।
তবে মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষেরা বলেছেন, যত সময় যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই অস্বাভাবিক হচ্ছে এবং আগে
কখনোই ভারত থেকে এরকম মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেননি ।অন্যদিকে সীমান্তবর্তী নেপা ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের
সভাপতি বাবু শেখ বলেছেন প্রতিদিনই মানুষ ঢুকছে।আর একশ্রেণীর দালাল চক্র এখন খুবই তৎপর হয়ে উঠছেন।
‘পঞ্চাশ-একশ প্রত্যেক দিনই আসতেছে। আর ওই সকন অনুপ্রবেশকারিদের এই এলাকারই লোকজন শেল্টার দেয় দিচ্ছেন ।
তিনি আরো বলেন এজন্যই মনে হয় আমাদের আইনরক্ষাকারীরা ব্যর্থ হচ্ছেন, কারণ এদের ধরার জন্য একদিকে
বিজিবি যেমন বসে আছেন তেমন অন্যদিকে বিজিবিকে পাহারা দেওয়ার জন্য আছেন দালালচক্রের লোকজন।
মহেশপুর সীমান্তে অনুপ্রবেশের বিষয়টি শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আব্দুর রহমান।
বিজিবির হাতে আটক অনেকের সঙ্গেই তাদের কথা হয়েছে।তারা বলেছেন এমন অনেকে এসেছে যারা এক যুগেরও বেশি
সময় ধরে ভারতে বসবাস করছিলো।আর যারা ধরা পড়ছে তার তিনগুণ বেশিই এখনো ধরা পড়েনি।
তারা যে বর্ণনা দিচ্ছে তাদের নাম ঠিকানায় যা জানা যাচ্ছে তারা বেশিরভাগই মুসলিম।সব থেকে বড় কথা হল, তারা আতঙ্কগ্রস্ত।
এবং আমাদের কাছে যেটা মনে হচ্ছে যে ভারতের এনআরসির প্রভাবেই তারা এখন সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে ফিরে আসছেন।
তারা আরো জানান যে, আমরা যেটা খবর পাচ্ছি আমাদের সোর্সের মাধ্যমে সেটা হল যে সকল লোকজন সিমান্ত পার হচ্ছেন তাদের
বিএসেফরা বর্ডার ক্রস করার জন্য সহযোগিতাও করছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে গোপনে জোরপূর্বক পুশব্যাক চলছে এমনও অভিযোগ নিয়ে ভারতের মানবাধিকার কর্মীরাই সোচ্চার হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায়ও অনুপ্রবেশের খবর আসছে। মাঠ পর্যায়ে বিজিবি এসব তথ্য
জানালেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কোনো কথাই বলতে রাজি না।বিজিবি সদরদপ্তরে যোগাযোগ করেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য
পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এবং সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি ।