অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে এত সবকিছু যখন জমা হচ্ছিল, তখনই একটি লেখা তৈরির গরজবোধ করলাম। আজ-কাল করে প্রায় দিন গড়িয়ে দিয়েছি।অবশেষে নাজুক এবং নিজের জন্য একটি লেখার দায়িতে নিজেই নিলাম।তবে এ বিষয় আমি যুৎসই লোক নই। অভিজ্ঞ কিংবা বিজ্ঞ কোনটাই নই।একটু যোগ্যতা নিয়ে এই লেখাটি ধৃষ্টতা হলেও মন আমাকে বাদ্য করল।
স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল-শোষন-বঞ্চনাহীন,সুখী-সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা লাভের পর এদেশের নির্যাতিত জনগণ আশায় বুক বেঁধেছিল যে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল তারা ভোগ করতে পারবে। শোষন-বঞ্চনার চিরবিদায় হবে। সাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে অর্তনৈতিক মুক্তি আসবে তাদের। কিন্তু স্বাধীনতার পর জনগণের স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। তারা বুঝতে পারে মানচিত্রগত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শাষক আর শোষকের হাত বদল হয়েছে মাত্র। প্রকৃত স্বাধীনতা এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তারপরও এদেশের সাধারন মানুষ আশা করেছিল এক যুগ পরে হলেও স্বাধীনতার সুফল সকলের ঘরে ঘরে পৌছে যাবে। বিশেষ শ্রেণীর জন্যেই কেবল নয়, সর্বহারা থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে এবং মানুষের সর্ব প্রকার মুক্তি সুনিশ্চত হবে। কিন্তু আজ স্বাধীনতার এত গুলো বছর পরও এদেশের সাধারণ জনগণের আশা বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।
বরঞ্চ উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্চে।যতই দিন যাচ্ছে ততই বৈষম্য আর বঞ্চনা মাত্রা প্রকটতর হচ্ছে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ঘুচাবার কোন উদ্যেগ এ যাবত নেইনি কোন সরকার।কারণ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বুর্জোয়া নেতৃত্ই রাষ্ট্রী ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। আজ তারা ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করার কারণে দেশে একদিকে যেমন সাধারণ জনগণের সম্পদ লুন্ঠনের মাধ্যমে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে , অন্যদিকে তেমনি দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে অবিশ্বাস্যভাবে।স্বাধীনতার জন্যে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্বপ্ন ছিল ধনী-দরিদ্রের ব্যবদান ঘুচিয়ে একটি বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করা। অথচ আজও শিক্ষা সুযোগের ক্ষেত্রে চরমতর বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। আক দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক দরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ফলে উচ্চতর পদগুলো ধনীক তথা অভিজাত শ্রেণীর জন্যে এবং কায়িক শ্রম যুক্ত নিম্নতর পদগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে সংরক্ষিত হওয়ার ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। বেসরকারি উদ্যোগে ধনীক শ্রেণীর ছেলে-মেয়ের জন্য গড়ে উঠছে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যে এ ধরণের শিক্ষা গ্রহণ অলীক স্বপ্নের মতো। রাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষা ব্যবাস্থাও অনেকটা সেকেলে এবং দুর্নীতির অভিশাপে অভিশপ্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ তো আজ রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনসমূহের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আজ ছাত্র নামধারী অছাত্র সন্ত্রাসীদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। চর দখলের মত সন্ত্রাসীরা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছে। এতে নীরহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে ক্ষতির মাসুল গুণছে। সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ও লালনের বিকল্প নেই। অথচ আজ আমাদের মধ্য থেকে গণতান্ত্রিক চেতনা যেনো নির্বাসনে চলে গেছে। এখনো, দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়' এই নীতি অনুসৃত হচ্ছে। কৃষি উৎপাদনে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে দুর্যোগকালিন সময়ে কৃষকরা সর্বস্ব হারিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েন। অনেকে হালের গরু এমন কি ভিটে-বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে পথের ভিক্ষুকে পরিণত হন।অথচ আমাদের স্বাধীনতার জন্যে সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে আমাদের কৃষক-শ্রমিক জনগোষ্ঠী। স্বাধীনতার পর থেকে কোন সরকার বেকারত্ব নিরসনের যৌক্তিক এবং কার্যকর উদ্যোগ নেইনি। যার কারনে বেকারত্ব এখন চরম পর্যায় পৌছেছে। এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে বাড়ছে দারিদ্রোর পরিসীমা, বাড়ছে সমাজ বিরুধীকর্মকাণ্ডও। যোগ্যতার মাপকাঠিতে চাকরি না পাওয়ায় দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার তরুণগোষ্ঠী আজ হতাশায় নিমজ্জিত। অনেকে অপরাধ জগতের বাসিন্দা।
এই চিত্রের অবসান হতে পারে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র চর্চা ও সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক লোকদের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে।